বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ফারাক্কার ফাঁদ

বাংলাদেশে খবরটা সবাই পড়েছেন বেশ উৎসুক হয়ে, আগ্রহের সাথে। ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দেখা করে ফরাক্কা বাঁধ ভেঙে দেয়ার দাবি করেছেন। গঙ্গা নদীর পানির ওপর ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যা ন্যায্য হিস্যা সেই পানি জবরদস্তি করে ভারত কেড়ে নিয়ে রেখেছে এই ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করে, পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা দিয়ে। তাই বাংলাদেশের সবার চোখে, এটি বাংলাদেশের চরম স্বার্থহানিকর ঘটনা ও ভারতের দুষমনীর প্রতীক হলো ফারাক্কা বাঁধ। সেই ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে দেয়ার কথা বলছেন ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। যেন আল্লাহর দুনিয়ার ন্যায়-ইনসাফের ঘণ্টা আপন উদ্যোগে বেজে ওঠার ইঙ্গিত-ইশারা এটি। তবে মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এই দাবি করেছেন বাংলাদেশের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে নয়, বিহারের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে। কারণ বিহার এখন গঙ্গা নদীপ্রবাহের উপচানো পানিতে বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। উৎপত্তিগত দিক থেকে গঙ্গা নদী ভারতের যেসব প্রদেশ আগে ডিঙিয়ে এরপর বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ক্রমানুসারে ভারতের সেসব প্রদেশ বা রাজ্যগুলো হলো সবার আগে উত্তর প্রদেশ এরপর বিহার, এরপর পশ্চিমবঙ্গ হয়ে শেষে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলা। তো নীতিশ কুমারের দাবি কি আমাদের জন্য ইনসাফের ইশারা? এটি বুঝবার জন্য আমাদের সবার কান খাড়া হয়েছে, সন্দেহ নেই।


এটি এক মুখ্যমন্ত্রীকে দেয়া এক প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের আনুষ্ঠানিক অ্যাপয়েন্টমেন্ট যেহেতু অনুমান করা ভুল হবে না যে তা অনেক আগেই ঠিক করা হয়েছিল। তবে শুধু এক মুখ্যমন্ত্রীকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ নয়। এর আরো বহু গভীর মাত্রা আছে। প্রথমত নীতিশ বিহারের এক আঞ্চলিক দল জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর সভাপতি ও মুখ্যমন্ত্রী। না এতটুকুই নয়। গত ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির নরেন্দ্র মোদি নিরঙ্কুশভাবে জিতে আসার পর ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে যে মোদি ঝড় উঠেছিল সে ঝড় থামছিলই না। শেষে সবচেয়ে শক্তভাবে থেমে উল্টো দিকে প্রথম তা ঘুরেছিল গত নভেম্বর ২০১৫, বিহারের প্রাদেশিক (বিধানসভা) নির্বাচনে। নীতিশ কুমারের নেতৃত্বে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক জোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হয়েছিল। ওই জোটে বিহারের আর এক বড় আঞ্চলিক দল লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর ছিল সোনিয়া গান্ধীর খোদ কংগ্রেস পার্টি। এক কথায় বললে বিজেপিবিরোধী শক্ত জোট ছিল সেটি। ফলে সেই শক্ত জোটের সবার প্রতিনিধি হলেন নীতিশ কুমার। আরো আছে।


আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনেও যদি বিজেপির হার হয় তবে ভারতের রাজনীতি আর এক নতুন দিকে মোড় নেবে। ওই হারকে পুঁজি করে ভারতের পরবর্তী লোকসভা (২০১৯) নির্বাচনে বিজেপির মোদিকে হারানোর লক্ষ্যে সে দিকে তাকিয়ে গড়ে তোলা শুরু হয়ে যাবে ওই আগামী নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলোর জোট গঠন। সম্ভাব্য ওই আঞ্চলিক দলের জোট গঠনের মূল নেতা হবেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এবং পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জি। এই জোটের মূল লক্ষ্য হবে বিজেপি ও মোদির ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে কেন্দ্রের ক্ষমতা দখল। গত কেন্দ্রীয় নির্বাচনে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে কংগ্রেস ক্রমে শুকিয়ে ছোট হতে হতে কোনো এক আঞ্চলিক দলের সমান প্রভাবে দল হয়ে গেছে অনেক আগেই। ফলে নীতিশ-মমতাসহ নানান আঞ্চলিক দলের মিলিত জোট বনাম বিজেপির মোদি এই হবে মূল ক্ষমতার লড়াই। যার তাৎপর্য ভারত রাষ্ট্রের জন্মগঠন সূত্রে দুর্বলতা বা ত্রুটি-ভুতুড়ে কেন্দ্র বনাম রাজ্য এর বিবাদ; সেই ‘কেন্দ্র-রাজ্য’ ক্ষমতার লড়াই মুখ্য হয়ে ওঠা। অতএব মোদি সেই নীতিশ কুমারকে সাক্ষাতের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছিলেন।


ফসলের মাঠ ও শহরও ডুবে যাওয়া বিহারের এবারের বন্যার প্রভাব হয়েছিল মারাত্মক। টানাটানিতে চলা রাজ্য আর তুলনামূলক উদ্বৃত্তে চলা রাজ্য এই ভিত্তিতে যদি ভারতের রাজ্যগুলোকে ভাগ করি তবে বাংলা ও বিহার টানাটানিতে চলা রাজ্যের অন্তর্গত। ওই দিকে এই বন্যায় মানুষের যা ক্ষয়ক্ষতি এক কথায় বিহার রাজ্য সরকারের পক্ষে তা পূরণ অসম্ভব। ফলে যেটি সম্ভব তা হলো তাৎক্ষণিক কিছু ত্রাণ বিতরণ। সারকথায় বিহারের জনগণের ক্ষোভ মোকাবেলা কঠিন। ওই দিকে বন্যা কেন হলো, এর সাথে কী ফারাক্কা বাঁধ দেয়ার কোনো সম্পর্ক নেই? অবশ্যই আছে। গঙ্গার মতো প্রবল বিপুল পলিমাটিবাহী নদীর ক্ষেত্রে এর ওপর বাঁধ দিলে সে প্রভাব আরো জটিল ও মারাত্মক হবে। অতএব সব মিলিয়ে এর দায় কার কেন্দ্র না রাজ্যের এই বলে দায় ঠেলাঠেলির এক বিরাট ক্ষেত্র হলো বন্যা ও বাঁধ ইস্যু। বিশেষত যখন বাঁধ দেয়া ও মেইন্টেন্যান্স ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্ত এই দায় কেন্দ্রের; ওদিকে বন্যা হলে তা মোকাবেলা ও ত্রাণ বিতরণ রাজ্যের। এসব কথা সাক্ষাতের আগেই আগাম ভেবে নিয়েছিলেন নীতিশ ও মোদি দুজনেই কারণ, ওই সাক্ষাৎ থেকে দায় ঠেলাঠেলি শুরুর এক বিরাট সম্ভাবনা তা দু’জনেই জানতেন। নীতিশ মোদির কাছে এসে নিজ শহর বিহারের জনগণকে এটি দেখাতে চেয়েছিলেন মূল সমস্যা ফরাক্কা বাঁধ। অর্থাৎ দায় কেন্দ্রের।

মোদির কাছে বাঁধ ভেঙে দেয়ার কথা তুলে, দাবি জানিয়ে তিনি সে অর্থ করতে চেয়েছিলেন যে দায় কেন্দ্রের। আর মোদি সেকথা টের পেয়ে সাথে সাথে বাঁধ কর্তৃপক্ষকে বাঁধের সব গেট খুলে দেয়ার নির্দেশ জারি করেন। এভাবে তিনি বুঝাতে চাইলেন রাজ্য যা চেয়েছে তিনি তৎক্ষণাৎ তাই দিয়ে দিয়েছেন, সুতরাং কেন্দ্রের দায় নেই। বন্যার কারণে বিহারের জনগণের যদি কোনো কষ্ট ক্ষোভ থেকে থাকে তবে এর দায় ত্রাণের পরিমাণ কম অথবা বিতরণে রাজ্য সরকারের সমস্যাজাত। নীতিশ- মোদির সাক্ষাৎ ছিল ২৩ আগস্ট। ফলে ওই দিনের প্রথমার্ধে ঘটনাবলি ছিল নীতিশের বাঁধ ভেঙে দেয়ার দাবি জানান আর মোদির সব গেট খুলে দেয়ার নির্দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।


কিন্তু গঙ্গার ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে ভারতেই আরো পক্ষ আছে, কেবল নীতিশ আর মোদি নন। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান হলো ফারাক্কা বাঁধ তার স্বার্থের পক্ষে। কারণ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে গঙ্গার পানি শেষে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছানোর বদলে সেই পানি বাংলাদেশে ঢুকবার আগেই তা কেটে আলাদা খাল খুঁড়ে টেনে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে ফেলা হয়েছে। এভাবে হুগলি নদী ধরে শেষে ওই পানি কলকাতা বন্দরে নিয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলা হয়েছে। মনে করা হয়েছিল যে হুগলি নদীতে পড়া পলিমাটি এই অতিরিক্ত পানির তোড়ে অপসারণ হয়ে যাবে যাতে এভাবে কলকাতার ডায়মন্ড হারবার বন্দরের নাব্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে পানি টেনে আনার পরও তা দিয়ে পলিমাটি পর্যাপ্ত বা কাম্যমাফিক সরানো যায়নি। ফলে বন্দরের এই নাব্যতা সঙ্কট খুব মেটেনি তো বটেই উল্টো নাব্যতা রক্ষা যতটুকু হচ্ছে তা বজায় রাখতে গিয়ে প্রত্যেক বর্ষা মওসুমে ওই সংযোগ খাল (৪০ কিমি) ও নদীর দুই পাড় উপচে পড়া পানিতে এলাকায় বন্যা হচ্ছে। ফলে বিহার ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গেও নাব্যতা রক্ষার কাফফারা হিসেবে প্রতি বছর বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। 
কিন্তু এসব সত্ত্বেও নীতিশের বাঁধ ভেঙে দেয়ার দাবির কয়েক ঘণ্টা পরে ওই দিনই ভারতের এনডিটিভি মমতাকে জিজ্ঞেস করছে দেখা যায় যে নীতিশের ওই দাবির পর মমতার প্রতিক্রিয়া কী? ক্লিপে দেখা যাচ্ছে, মমতা এর কোনো জবাব না দিয়ে এড়িয়ে চলে যান। এতে এনডিটিভির রিপোর্টার মন্তব্য করে এটি মমতার কৌশলগত নিশ্চুপ থাকা। পরে কলকাতার নদী ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র ক্যামেরার সামনে দাবি করেন ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে দিলে নাকি ২০০ কিমি নদী শুকিয়ে যাবে। তাই তার মতে নীতিশের দাবি আজিব বা রিডিকুলাস। পরে এ রিপোর্টের অন্য অংশ থেকে জানা যায় মমতা বলছেন, বিহারে বন্যার কারণ মনুষ্যসৃষ্ট কারণ সঠিক সময়ে বাঁধের পানি ছাড়া হয় না। ফলে পুরা ব্যাপারটায় কেন্দ্রের দায়।


মমতার এই বক্তব্যের পরে বিজেপি শিবিরে টনক নড়ে। তারা আবার ভেবে মূল্যায়ন করে দেখে যে ভোটের রাজনীতির দিকে লক্ষ রেখে রাজনীতিকদের কথা সাজানো ও পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপের লড়াইয়ে তারা পিছিয়ে পড়ে গেছে। কারণ নীতিশ আর মমতার ভাষ্যে ভিন্নতা আছে। এর সুবিধা বিজেপির পক্ষে কাজে লাগানো হয়নি। তাই আবার নতুন করে দোষারোপ সাজানোর উদ্যোগ নেয় তারা। বিহারের রাজনীতিতে নীতিশ কুমারের প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি নেতা হলেন সুশীল কমার মোদি। তিনি একদিন পরে অর্থাৎ ২৫ আগস্ট মিডিয়ায় এক বিবৃতি পাঠিয়ে দাবি করলেন, নীতিশের ফারাক্কা ভেঙে দেয়ার দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং যেহেতু নীতিশের বিহার সরকার বন্যা মোকাবেলায় যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়নি, ত্রাণ ঠিকমতো বিতরণ করতে পারেনি। সেই খামতি আড়াল করতে সে এখন বাঁধ ভেঙে দেয়ার দাবি তুলেছে। অর্থাৎ তিনি মমতার পক্ষে দাঁড়িয়ে মমতা-নীতিশের বক্তব্য-অবস্থানের বিরোধ বড় করে দিতে চাইলেন। এ ছাড়া বন্যার কারণ বাঁধ নয় বলে বাঁধকে দায়ী হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিতে চাইলেন তিনি। আর এর চেয়েও বড় কথা তিনি ইচ্ছা করে এক বিভ্রান্তি তৈরি করলেন। বন্যা হওয়া-না-হওয়ার জন্য বাঁধ দায়ী কি না এটি এক জিনিস। কিন্তু তিনি দাবি করলেন ফারাক্কা বাঁধ নয়, রাজ্য সরকারের ত্রাণ ঠিকমতো বিতরণ ব্যবস্থাপনা না করতে পারাটাই যেন বন্যার কারণ। এই হলো ভারতের আগামী কেন্দ্র-রাজ্য লড়াই প্রকট হয়ে ওঠার আগেই পরস্পরের দোষারোপ করে দায় ঠেলাঠেলির ভোটের রাজনীতি।
ঘটনার এখানেই শেষ না। কারণ গঙ্গা ও ফারাক্কা বাঁধ দেয়ার সাথে যুক্ত পক্ষ দেশে-বিদেশে অনেক। এবার বাংলাদেশ অংশ। এখানে দুই মন্ত্রীর পরস্পরবিরোধী দুই বক্তব্য নিয়ে এক রিপোর্ট করেছে সরকার ঘনিষ্ঠ বিডিনিউজ২৪ গত ২৮ আগস্ট।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নির্বাচনী এলাকা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, যেটি ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়ার জন্য বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। রোববার ভেড়ামারা উপজেলার চর গোলাপনগরে পদ্মা নদীর পাড়ে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের সময় ফারাক্কা ব্যারাজের প্রভাব নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানাচ্ছেন। তিনি লিখছন তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, ‘অভিন্ন নদীর ওপর একতরফা গেট খুলে দেয়াটা সঠিক কাজ নয়। এ বিষয়ে আমাদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে,তার হিসাব করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করব।’ একই সময়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মায়া চাঁদপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় ফারাক্কা ব্যারাজ নিয়ে কথা বলেন। আওয়ামী লীগ নেতা মায়াকে উদ্ধৃত করে বিডিনিউজ২৪ লিখেছে, ‘একসময় আমরা বলেছি ফারাক্কার বাঁধ আমাদের জন্য মারণফাঁদ। কিন্তু এখন তা ভারতের জন্য মারণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ তারা ফারাক্কার পুরো বাঁধ ছেড়ে দিলে কিংবা ভেঙে দিলে আমাদের দেশে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। পদ্মার পানি এখনো বিপদসীমার নিচে আছে। ফারাক্কার পানি আমাদের কোনো ধরনের সমস্যা হবে না বলে আমরা মনে করি।’ অর্থাৎ সঙ্কীর্ণ করে যার যার নির্বাচনী এলাকার মানুষকে বুঝ দেয়ার বক্তৃতা এগুলো। ঠিক সামগ্রিক সরকারের স্বার্থের দিক থেকে দেয়া অবস্থান নয়।


সেটি আমরা পাই গত ০২ সেপ্টেম্বর কলকাতার সাংবাদিক রঞ্জন বসুর লেখা বাংলা ট্রিবিউনে ‘ফারাক্কার গেট খোলা নিয়ে অপপ্রচারে ‘বিরক্ত’ বাংলাদেশ’ শিরোনামে। ওই লেখায় দাবি করা হয়েছে, নতুন করে গেট খোলার কোনো ঘটনাই ঘটেনি কারণ বর্ষার সময় সব গেট খোলাই থাকে। ফলে নতুন করে গেট না খুললেও মিডিয়ার তা প্রচার হয়েছে। হয়তো এই দাবি সত্য। কিন্তু ওই লেখায় দাবি করা হয়েছে আমাদের দিল্লি দূতাবাস নাকি দাবি করেছে, ‘পদ্মায় বাড়তি পানির স্রোতে রাজশাহী বা অন্য কোথাও কি বন্যা হয়েছে বলে খবর এসেছে?’ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। দেখা যাছে, এই অংশ আবার আর এক চরম প্রান্তিক বা সব কিছু অস্বীকারের চেষ্টা। ওপরের দুই মন্ত্রীর বক্তব্যসহ বিডিনিউজের রিপোর্টের প্রমাণ। এ ছাড়া গত ২৮ আগস্ট বিডিনিউজ২৪ এর ১.৪৬ মিনিটের এক ভিডিও ক্লিপ রিপোর্টের শিরোনাম হলো ‘রাজশাহীর শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল’।

সারকথায় বললে, এই লেখায় ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ নিয়ে প্রকাশিত সব কোণের সংশ্লিষ্টদের প্রায় সব পক্ষের বক্তব্যগুলোকে পাখির একটা চোখে একসাথে দেখলে যেমন হয়। 
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন