সোমবার, ২ এপ্রিল, ২০১২

সমুদ্রসীমা বিষয়ক রায় : কিছু অর্জন, কিছু বিসর্জন



জার্মানির হামবুর্গ শহরে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সি (ITLOS) বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির রায় প্রদান করে ১৪ মার্চ। ১৫১ পৃষ্ঠাব্যাপী ৫০৬টি অনুচ্ছেদের এই রায়ে বাংলাদেশের জয় হয়েছে বলে প্রচারণা চললেও সত্যতা এই যে, বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমা নিয়ে অনেক ব্যাপারে বাংলাদেশের নীতিগত ও অধিকারগত হার হয়েছে, আবার কিছু ব্যাপারে অর্জনও হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসে নিজেদের দেশের কন্টিনেন্টাল শেলফ বা মহী সোপানের সমুদ্র সীমানা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেনি। তাই বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য সালিশী আদালতের কাছে বাংলাদেশের নিবেদন ছিল যে, সমুদ্রসীমা বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন UNCLOS III অনুযায়ী সমুদ্রতট থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে (১ নটিক্যাল মাইল=১.৮৫২ কিলোমিটার) মহী সোপানের সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের (ITLOS) এক্তিয়ারে পড়ে (অনুচ্ছেদ ৪১, ৪২, ৪৩)। মিয়ানমার সমুদ্র সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়ে ITLOS-এর এক্তিয়ার সম্পর্কে সম্মতি জানালেও বলে, বর্তমান ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা ঠিক হবে না (অনুচ্ছেদ ৪৪, ৪৫)। ট্রাইব্যুনাল উভয় দেশের কথা শুনে প্রথমে কন্টিনেন্টাল শেলফের ২০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে Exclusive Economic Zone (EEZ)-এর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয় (অনুচ্ছেদ ৪৯, ৫০)।
সমুদ্র তটবর্তী দুটি পাশাপাশি দেশের রাষ্ট্রীয় সমুদ্র বা টেরিটরিয়াল সী বিষয়ে বাংলাদেশ বলে, সেন্ট মার্টিনস দ্বীপের দক্ষিণে সাগরসীমা নিয়ে ১৯৭৪ ও ২০০৮ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা চুক্তি আছে (অনুচ্ছেদ ৫৭, ৫৮)। মিয়ানমার এতে আপত্তি করে বলে (অনুচ্ছেদ ৬৫) ঐ সমঝোতাগুলো ছিল জাহাজ চলাচল বিষয়ক, সীমানা নির্ধারণের চুক্তি নয়, বা ঐ কাজ যথাযথ কর্তৃপক্ষ দ্বারা হয়নি (অনুচ্ছেদ ৮৩)। ট্রাইব্যুনাল মিয়ানমারের যুক্তির প্রতি সমর্থন জানায় (অনুচ্ছেদ ৯২, ৯৩, ৯৮)। বাংলাদেশ ওই চুক্তির প্রয়োগ সম্পর্কে নানা প্রমাণ দেখালেও (অনুচ্ছেদ ১০১, ১০২, ১০৩) মিয়ানমার তা অগ্রাহ্য করে (অনুচ্ছেদ ১০৭, ১০৮, ১০৯)। ট্রাইব্যুনালও বাংলাদেশের দাবি গ্রহণযোগ্য মনে করেনি (অনুচ্ছেদ ১১৫, ১১৮, ১২৫)। মিয়ানমার বলে, সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ তার স্থলসীমানার (নাফ নদের মুখ) ভেতরে পড়ে, তাই একে পৃথকভাবে দেখা হোক (অনুচ্ছেদ ১৩১, ১৩২)। ট্রাইব্যুনাল মিয়ানমারের যুক্তিকে মেনে নিয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ধরে বাংলাদেশকে উত্তর ও পূর্ব প্রান্তে সমদূরত্ব রেখা এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সর্বাধিক ১২ নটিক্যাল মাইল টেরিটরিয়াল সির অধিকারই প্রদান করে (অনুচ্ছেদ ৩৩৭)। ফলে বাংলাদেশ সমুদ্রতটের দক্ষিণ সীমানা সেন্ট মার্টিনস দ্বীপের দক্ষিণ থেকে মূল ভূখন্ডে টেকনাফের কাছে সরে আসে।
বাংলাদেশ তার এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন নির্ধারণের জন্য সমদূরত্ব নীতির বিরোধিতা করে প্রাকৃতিক সমুদ্রতল গঠনের বিবেচনায় নায্যতার নীতি গ্রহণের কথা বলে (অনুচ্ছেদ ২১৬)। মিয়ানমার সমদূরত্ব নীতি অবলম্বনের কথা বলে (অনুচ্ছেদ ২১৮, ২২৩)। বাংলাদেশ তার সমুদ্রতট অবতল হওয়ায় নায্যতার প্রয়োজনে EEZ বিভাজন রেখাটি ২১৫ Azimuth বরাবর নির্ধারণ করার দাবি জানায়। (Azimuth বলতে ভূ-পৃষ্ঠের একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর উপরে ঘড়ির ঘূর্ণনে সরাসরি উত্তর ০, পূর্ব ৯০, দক্ষিণ ১৮০, পশ্চিম ২৭০, মোট ৩৬০ বৃত্ত বুঝায়)। ট্রাইব্যুনাল নাফ নদের মুখকে সমদূরত্ব রেখা শুরুর বিন্দু সাব্যস্ত করে (অনুচ্ছেদ ২৭২)। বাংলাদেশ UNCLOS III-এর ৭৬.১ ধারার পলিপাতন নীতি দাবি করলেও (অনুচ্ছেদ ২৭৬, ২৭৭) ট্রাইব্যুনাল সমদূরত্বের নীতিই গ্রহণ করে (অনুচ্ছেদ ২৯৩)। বাংলাদেশের দেওয়া বঙ্গীয় সমুদ্রে পলিপাতনের বিবরণ (অনুচ্ছেদ ৩২০) দিলে মিয়ানমার তার প্রতি আপত্তি জানায় (অনুচ্ছেদ ৩২১)। ট্রাইব্যুনাল মিয়ানমারের দেওয়া আপত্তিকে গ্রহণ করে বাংলাদেশের যুক্তি অগ্রাহ্য করে (অনুচ্ছেদ ৩২২)। মিয়ানমার নাফ নদের মুখকে ভিত্তি ধরে ২৩২ Azimuth বরাবর সমদূরত্ব রেখায় এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন এলাকা ভাগ করার দাবি জানায় (অনুচ্ছেদ ২৬৮, ২৬৯)। অতঃপর ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের অবতল সমুদ্রতটের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় এনে (অনুচ্ছেদ ২৯৭) সমদূরত্ব রেখাটি ২১৫ Azimuth বরাবর ধরে (অনুচ্ছেদ ৩৩৪) উভয় দেশের ২০০ নটিক্যাল মাইল এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন এলাকা ভাগ করে দেয়।
ট্রাইব্যুনাল কন্টিনেন্টাল শেলফ বা মহী সোপান নির্ধারণের ক্ষেত্রে উদ্যোগী হলে মিয়ানমার বলে ২০০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বেই উভয় দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হয়ে গেছে (অনুচ্ছেদ ৩৪৩)। বাংলাদেশ এর প্রতি আপত্তি জানায় (অনুচ্ছেদ ৩৫৪)। UNCLOS III-এর ৭৬ ধারার ৫ উপধারা অনুযায়ী কোনো দেশের মহীসোপানের সীমা ২৫০০ মিটার গভীরতা থেকে ১০০ নটিক্যাল মাইলের বেশি হতে পারবে না। ৬ উপধারা অনুযায়ী মহীসোপানের সীমা তটরেখা থেকে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত হতে পারবে, তবে পার্শ্ববর্তী দু’দেশের পলিপাতন বিভাজন রেখার খাঁড়ি অতিক্রম করবে না। বাংলাদেশ  UNCLOS III-এর ৭৬.৫ ধারা অনুযায়ী Natural Prolongation-এর যুক্তি দিলে ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করে না (অনুচ্ছেদ ৪৩৮, ৪৪১, ৪৪৮, ৪৬০)। ট্রাইব্যুনাল বলে, বাংলাদেশ ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহী সোপানের যে দাবি করে তা মিয়ানমারের ২০০ নটিক্যাল মাইল এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক এলাকা। যেহেতু দুই দেশের ইইজেড এলাকা একে অপরের উপর পড়ছে না সেহেতু ইইজেড ভাগাভাগির প্রশ্নই ওঠে না (অনুচ্ছেদ ৪৭১)। অতঃপর ট্রাইব্যুনাল সমদূরত্ব রেখাটিই ২১৫ Azimuth বরাবর প্রলম্বিত করে উভয় দেশের কন্টিনেন্টাল শেলফ বা মহী সোপান চূড়ান্তভাবে ভাগ করে দেয় (অনুচ্ছেদ ৪৬২, ৫০৫)।
সমুদ্রসীমা বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে বাংলাদেশ সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম বরাবর তার এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন এলাকা হারিয়েছে। সমুদ্রসীমা নির্ধারণে Natural Prolongation নীতির বদলে সমদূরত্ব নীতি প্রয়োগ হওয়ায় বাংলাদেশ ২০০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে ১৫০ নটিক্যাল মাইল মহী সোপানের বিস্তীর্ণ এলাকা হারিয়েছে। এই এলাকায় বাংলাদেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ২০টি গভীর সমুদ্র ব্লকের ডিএস-০৮-১৮, ডিএস-০৮-২২, ডিএস-০৮-২৩, ডিএস-০৮-২৬, ডিএস-০৮-২৭, ডিএস-০৮-২৮, ব্লক পুরোপুরি এবং ডিএস-০৮-১৩, ডিএস-০৮-১৭, ডিএস-০৮-২১, ডিএস-০৮-২৫ ব্লক আংশিক হাতছাড়া হয়েছে। তাছাড়া সেন্ট মার্টিন্স সংলগ্ন অগভীর ১৮নং ব্লকটির কিছু এলাকাও হাতছাড়া হচ্ছে।

সমুদ্রসীমা নির্ধারণই প্রাপ্তি : বাংলাদেশ হারিয়েছে বেশি : তেল-গ্যাসের ৬টি ব্লক পুরোপুরি ও ৪টি আংশিক হাতছাড়া

মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলার রায়ে বাংলাদেশ হারিয়েছে বেশি। সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়া ছাড়া সবক্ষেত্রেই হেরেছে দেশটি। মিয়ানমারের সব দাবিকেই প্রাধান্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত। এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের একটি বড় অংশ হারিয়েছে বাংলাদেশ। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে নির্মিত ছয়টি ব্লক পুরোপুরি হাতছাড়া হয়ে গেছে। আরও চারটি ব্লকের আংশিক পেয়ে গেছে মিয়ানমার। এতে সমুদ্রে সম্ভাব্য তেল-গ্যাসের এক-তৃতীয়াংশ হারাল বাংলাদেশ। ২০০ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রসীমা
প্রাপ্তির মাঝেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। সেন্টমার্টিন ইউনিয়নকে দেশটির ভূখণ্ডের মূল সীমানার বাইরে ধরেই সমুদ্রসীমার হিসাব করা হয়েছে। টেকনাফকে সর্বশেষ সীমানা ধরে ২০০ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রসীমা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশকে।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল’ অব দ্য সি (ইটলজ)-এর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির রায় পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। নদী, সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা এ রায় পর্যালোচনায় বাংলাদেশের বিশাল হারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাদের মতে, বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমা নিয়ে বেশিরভাগ বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিগত ও অধিকারগত হার হয়েছে। অর্জন কেবল বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়া। ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গ কি.মি. সমুদ্রসীমা প্রাপ্তির গল্পও সঠিক নয়। ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পরই এ পরিমাণ সমুদ্র বাংলাদেশের অধিকারে আসবে। আর ‘না বুঝে হৈ চৈ এবং আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যমে জাতিকে ধোঁকা দেয়ায় সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি করে গত ১৪ মার্চ জার্মানির হামবুর্গ শহরে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ১৫১ পৃষ্ঠার রায় দেয়। ৫০৬টি অনুচ্ছেদের এ রায়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দাবি এবং আইনি লড়াইয়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। তবে মামলার শুনানিতে উত্থাপিত দু’দেশের যুক্তির ক্ষেত্রে মিয়ানমারের যুক্তি ও দাবিগুলোই রায়ে প্রাধান্য পেয়েছে।
রায়ের ৪৯ ও ৫০ অনুচ্ছেদে দেখা যায়, উভয় দেশের যুক্তি শুনে আদালত প্রথমে মহীসোপানের ২০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়।
এক্ষেত্রে মিয়ানমারের দাবি অনুযায়ী সেন্টমার্টিন দ্বীপকে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ধরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা হয়। রায়ের ৩৩৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ সীমানা সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ থেকে সরিয়ে এনে টেকনাফ ধরা হয়। আর সে অনুযায়ী টেকনাফকে দক্ষিণ সীমানা ধরে বাংলাদেশকে উত্তর ও পূর্ব প্রান্তে সমদূরত্ব রেখা এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমদিকে সর্বাধিক ১২ নটিক্যাল মাইল টেরিটরিয়াল সমুদ্রের মালিকানা দেয়া হয়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে মিয়ানমারের সঙ্গে ১৯৭৪ ও ২০০৮ সালে সমঝোতা চুক্তি আছে বলে বাংলাদেশ পক্ষের কৌঁসুলিরা যুক্তি তুলে ধরলেও আদালতে তা পাত্তা পায়নি। বরং পাল্টা যুক্তিকে গ্রহণ করে আদালত মিয়ানমারের পক্ষে রায় দেয়।
পলিপাতন বিভাজন রেখার যুক্তিতে বাংলাদেশের মহীসোপানের দাবিটিও গ্রহণ করেনি আদালত। সমুদ্রসীমা আইনের ৫ ও ৬ নং উপধারা অনুযায়ী ‘মহীসোপানের সীমা ২৫০০ মিটার গভীরতা থেকে ১০০ নটিক্যাল মাইলের বেশি হতে পারবে না। আবার মহীসোপানের সীমা তটরেখা থেকে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত হতে পারবে; তবে পার্শ্ববর্তী দু’দেশের পলিপাতন বিভাজন রেখার খাঁড়ি অতিক্রম করবে না।’ এ যুক্তি তুলে ধরে বাংলাদেশ মহীসোপানের দাবি করলে মিয়ানমারের বিরোধিতায় আদালত তা গ্রহণ করেনি।
এতে বাংলাদেশ সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম বরাবর তার এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন এলাকা হারিয়েছে। সমুদ্রসীমা নির্ধারণে ঘধঃঁত্ধষ চত্ড়ষড়হমধঃরড়হ নীতির বদলে সমদূরত্ব নীতি প্রয়োগ করায় বাংলাদেশ ২০০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে ১৫০ নটিক্যাল মাইল মহীসোপানের বিস্তীর্ণ এলাকা হারিয়েছে। এ এলাকায় বাংলাদেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ২০টি গভীর সমুদ্র ব্লকের ১৮, ২২, ২৩, ২৬, ২৭ ও ২৮ ব্লক পুরোপুরি এবং ১৩, ১৭, ২১ ও ২৫ নম্বর ব্লক আংশিক হাতছাড়া হয়ে গেছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলার রায়ের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, ‘ঘধঃঁত্ধষ চত্ড়ষড়হমধঃরড়হ নীতিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হলে বাংলাদেশের লাভের সুযোগ ছিল। মিয়ানমারের দাবি অনুযায়ী সমদূরত্ব নীতিতে সীমা নির্ধারণ করায় আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্লক হারিয়েছি। এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের ক্ষেত্রেও আমাদের হার বেশি।’ ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গ কি.মি. সমুদ্র প্রাপ্তির সরকারি প্রচারণার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পরই উল্লিখিত পরিমাণ সমুদ্র বাংলাদেশের অধিকারে আসবে। আর এজন্য ২০১৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ওই মামলায় বাংলাদেশকে জিততে হবে।’
পরিবেশ বিজ্ঞানী, ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রব বলেন, ‘রায়ের পর থেকে আমরা যা বলে এসেছি, তা-ই সঠিক হলো। সমুদ্র জয় তো দূরে থাক, মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তিতে আমরা মোটেই লাভবান হইনি। বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বাংলাদেশের মূল দাবিকৃত বিপুল সমুদ্রাঞ্চল পেয়েছে মিয়ানমার। ফলে মিয়ানমার তার দাবিকৃত মহীসোপানের হাইড্রো-কার্বনসমৃদ্ধ (গ্যাস ও খনিজ তেল) বেশিরভাগ ব্লকের মালিকানা পেয়েছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ দূরবর্তী গভীর সমুদ্রের তুলনামূলকভাবে কম সম্ভাবনাময় অঞ্চলেই এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের মালিকানা পেয়েছে।’ ড. আবদুর রব বলেন, ‘আমরা যে হেরে এসেছি—এ বিষয়ে এরই মধ্যে তথ্যভিত্তিক লিখেছেন ড. ফেরদৌস কোরেশী, প্রকৌশলী ম. ইনামুল হকসহ অনেকেই। আর না বুঝে হৈ চৈ এবং আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যমে সরকার জাতিকে ধোঁকা দিয়েছে। এটা ঠিক হয়নি।’
পানি, পরিবেশ ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান মিঞা বলেন, ‘সমুদ্রসীমা নিয়ে সরকার যা বলছে, তা সঠিক নয়। কালাকানুনের ব্যাখ্যা আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারলে এবং গোটা বিষয় বুঝে পদক্ষেপ নিলে আমরা আরও বেশি পেতে পারতাম। তাহলে হেরে এসে মিথ্যাচার করে জাতিকে লজ্জা দিতে হতো না। বিষয়টি নিয়ে আরও স্টাডি করছি। পরে বিস্তারিত বলা যাবে।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন