মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১২

রোহিঙ্গা : রাষ্ট্রবিহীন মানুষ






ছোট ছোট নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসতে থাকা স্রোতের মতো মানুষগুলোই রোহিঙ্গা। কিন্তু আসলেই রোহিঙ্গা কারা, কী তাদের পরিচয়? মিয়ানমারে তাদের সংকট কী? এই সংকট কি সাময়িক, নাকি বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যতের বড় কোনো ঝুঁকি? বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাহিনী জানা থাকলেও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের গল্প অনেকটাই অজানা আমাদের।
রোহিঙ্গা কারা?
নবম-দশম শতাব্দীতে আরাকান রাজ্য 'রোহান' কিংবা 'রোহাঙ' নামে পরিচিত ছিল, সেই অঞ্চলের অধিবাসী হিসেবেই 'রোহিঙ্গা' শব্দের উদ্ভব। ঠিক কবে থেকে এই শব্দ ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তা জানা যায় না। মিয়ানমার সরকার 'রোহিঙ্গা' বলে কোনো শব্দের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। রোহিঙ্গারা পূর্বতন বর্মা, অধুনা মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের মুসলমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সংখ্যায় প্রায় ২০ লাখ রোহিঙ্গার অধিকাংশ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পাশে উত্তর রাখাইন রাজ্য নামে নামকরণ করা পূর্ববর্তী আরাকান রাজ্যের তিনটি টাউনশিপে বাস করে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও উগ্র রাখাইনদের সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ও এথনিক ক্লিনজিংয়ের শিকার হয়ে প্রায় ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।


বাংলা-আরাকান সম্পর্ক
ইতিহাসের পাতা থেকে

১৪০৪ সালে বর্মার প্যাগান শাসকরা আরাকান দখল করে নিলে আরাকান রাজা মিন-স-মুন (মতান্তরে রাজা নারামেইখলা) পূর্বদিকে পালিয়ে বাংলায় চলে আসেন। বাংলার গৌড় সালতানাত তখন দিলি্লর মোগল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। মিন-স-মুন আশ্রয় নেওয়ার পরে দীর্ঘদিন গৌড় সুলতানের অধীনে রাজকর্মচারী হিসেবে কাজ করেন।
১৪২৯ সালে সুলতান নাদির শাহ মিন-স-মুনকে তাঁর হারানো রাজ্য ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হন। সালতানাতের অস্ত্র ও সেনা সহায়তায় মিন-স-মুন পরের বছর তাঁর রাজ্য পুনরুদ্ধারে সক্ষম হন। এর ফলে ১৪৩০ থেকে ১৫৩১ সাল পর্যন্ত ১০০ বছর আরাকান রাজা গৌড় সালতানাতের পরোক্ষ শাসনাধীন ছিলেন। এ সময় এই অঞ্চলে মুসলমানদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। এ সময়কার আরাকান রাজারা যদিও ধর্মে বৌদ্ধ ছিলেন, কিন্তু সালতানাতের প্রতি আনুগত্য প্রকাশে তাঁরা মুসলিম পদবি ধারণ করতেন। এ সময়কার আরাকানি মুদ্রায় কলেমা ও পার্সিয়ান লিপি চালু ছিল। এ সময় মিন-স-মুনের ভাই আলী খান এবং ছেলে কলিমা শাহ নামে পদবি নিয়ে বা-সো-প্রু যথাক্রমে রামু ও চট্টগ্রামের আশপাশের আরো কিছু অঞ্চল পর্যন্ত আরাকান রাজ্য বিস্তৃত করেন। এই রাজবংশের দ্বাদশ রাজা যুবক শাহ পদবিধারী রাজা মিন-বিনের শাসনকালে ১৫৩১ থেকে ১৫৫৩ সাল পর্যন্ত আরাকান রাজ্য সমৃদ্ধির চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। তিনি বাংলার সালতানাত থেকে নিজেকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করেন। রাজা মিন-বিন পর্তুগিজদের তাঁর সেনাবাহিনী গড়ে তোলার জন্য নিয়োগ দেন এবং পর্তুগিজ সহযোগিতায় একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলেন।
এ সময় বাংলার শাসকরা মোগল শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে মোগল সম্রাট হুমায়ুন বাংলা আক্রমণ করেন। বাংলার এই অস্থিরতার সুযোগে আরাকান রাজা মিন-বিন পূর্ব বাংলার এক বিশাল অংশ দখল করে নেন। পরবর্তী ১২০ বছর এই এলাকা আরাকান রাজার অধীনে ছিল। মিন-বিন পূর্ব বাংলার দখল করা অংশগুলো স্থানীয় রাজাদের মাধ্যমে শাসন করতেন। চট্টগ্রামে আরাকান রাজের গভর্নরের দপ্তরে এই রাজারা খাজনা প্রদান করতেন। এ সময় এ অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে নানা রকম সামাজিক সম্পর্কের সূত্রপাত হয় এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাসহ বাংলা ভাষার কিছু অপভ্রংশ ছোট আকারে হলেও আরাকানে পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হলো, আরাকান স্বাধীনতা অর্জনের পর ও ১৭৮৪ সালে ব্রিটিশ শাসন আসার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৫০ বছর এই অঞ্চলের রাজসভায় মুসলিম রীতিনীতি ও সংস্কৃতি চালু ছিল। তবে অনেক রোহিঙ্গানেতা দাবি করেন, অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে তাঁদের পূর্বপুরুষরা আরাকানে বসতি গেড়েছিলেন। তাঁরা মনে করেন, সপ্তম শতকে আসা পার্সিয়ান বণিকদের মাধ্যমে এখানে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর উদ্ভব হয় এবং পরবর্তী সময় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মুসলমানরাও ধীরে ধীরে এখানে রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচিত ও আত্তীকৃত হয়ে পড়েন। তাঁদের এই দাবিকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না সহজে। 'আরাকান' শব্দটি আরবি অথবা পার্সি ভাষার কোনো শব্দের অপভ্রংশ হিসেবেই মনে করা হয়। তবে গৌড়ের সুলতানদের পরোক্ষ শাসন শুরু হওয়ারও প্রায় ১০০ বছর আগে আরব ভূবিদ রাশিদ উদ্দিন ১৩১০ সালেই এই এলাকাকে 'রাহান' নামে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু অনেক পরে, ১৫৮৬ সালের দিকে, ব্রিটিশ পর্যটক রালফ ফ্লিচ এই এলাকাকে বর্ণনা করেছেন 'রোকন' নামে। স্পষ্টতই বোঝা যায়, এই এলাকায় একসময় মুসলমানদের শক্ত রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। আরাকান বা অধুনা উত্তর রাখাইন প্রদেশের ভূমিপুত্র হিসেবে দাবিদার বর্তমান রাখাইনদের তুলনায় মুসলমানরা এই অঞ্চলে খুব বেশি দেরিতে আসেননি। যত দূর জানা যায়, ৯৫৭ সালের দিকে মোঙ্গলদের সময় এই অঞ্চলে রাখাইনরা বসতি স্থাপন করে।
  
স্বাধীন বর্মায় বৈষম্যের শিকার
পূর্ব পাকিস্তানে যোগ দিতে চেয়েছিল তারা

১৭৮৪ সালে ব্রিটিশরা আরাকান দখল করে নিলে আবারও বাংলা ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে বর্মার যোগাযোগ বেড়ে যায়। এ সময় বর্মার বনজ সম্পদ আহরণ ও অন্যান্য কাজে ব্রিটিশরা ব্যাপকসংখ্যক ভারতীয়কে মিয়ানমারে নিয়ে যায়। ভাগ্যান্বষণে অনেক ভারতীয়, বিশেষ করে বাঙালিরাও সেখানে ভিড় করে। স্থানীয় রাখাইনদের তুলনায় তারা ব্রিটিশদের কাছে বেশি গুরুত্ব লাভ করে এবং সরকারি পদে আসীন হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার দিকে, ১৯৪২ সালে, জাপানিরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে মিয়ানমার দখল করে নেয়। স্থানীয় রাখাইনরা এ সময় জাপানিদের পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্ত জনগণকে আক্রমণ করে। তাদের আক্রমণের শিকার হয় মূলত রোহিঙ্গা মুসলমানরা। ১৯৪২ সালের ২৮ মার্চ রাখাইন অধ্যুষিত মিমবিয়া ও ম্রোহাং টাউনশিপে প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করে রাখাইনরা। পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে উত্তর রাখাইন অঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার রাখাইনকে হত্যা করে রোহিঙ্গারা। সংঘাত তীব্র হলে জাপানিদের সহায়তায় রাখাইনরা রোহিঙ্গাদের কোণঠাসা করে ফেলে।
১৯৪৫ সাল পর্যন্ত মিয়ানমার জাপানিদের দখলে থাকে। এই তিন বছরে কমপক্ষে ২০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে তৎকালীন বাংলায় চলে আসে। সেই যাত্রা এখনো থামেনি। ১৯৪৫ সালে ব্রিটিশরা আবারও মিয়ানমার দখল করে নেয়। এই দখলে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। ব্রিটিশরা এ সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে সহায়তার বিনিময়ে উত্তর রাখাইনে মুসলমানদের জন্য আলাদা একটি রাজ্য গঠন করে দেবে তারা। কিন্তু আরো অনেক প্রতিশ্রুতির মতোই ব্রিটিশরাজ এই প্রতিশ্রুতিও রাখেনি।
১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ ভাগের সময় রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ আরাকান রাজ্যকে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এ নিয়ে জিন্নাহর সঙ্গে যোগাযোগ করেন রোহিঙ্গানেতারা। রোহিঙ্গারা একটি বড় সশস্ত্র গ্রুপও তৈরি করে এবং মংদু ও বুথিধাং এলাকাকে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগ নেয়। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, রোহিঙ্গাদের এই উদ্যোগ ছিল আত্মঘাতী এবং মিয়ানমারে বৈষম্যের শিকার হওয়ার পেছনে এটি একটি বড় কারণ। মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সেই সময়কার রোহিঙ্গা উদ্যোগকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে চিহ্নিত করে এসেছে। বাংলাদেশে যেভাবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সরাসরি সহায়তা করার কারণে বিহারি উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠী সাধারণ মানুষের ঘৃণার শিকার হয়েছে, রোহিঙ্গারা সরাসরি সহায়তা না করলেও মিয়ানমারে একই ভাবে বিরূপ জনমতের শিকার। ১৯৬২ সালে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর ধীরে ধীরে রোহিঙ্গাদের প্রতি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৭০ সালের পর থেকে সেনাবাহিনীতে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী থেকে নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে থেকে সরকারি চাকরিতে থাকা রোহিঙ্গারা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হয়।
  
১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন
রোহিঙ্গারা হয়ে পড়ে রাষ্ট্রহারা

১৫ অক্টোবর ১৯৮২ সালে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা নাগরিকত্ব আইন প্রকাশ করে। এই আইনে মিয়ানমারে তিন ধরনের নাগরিকত্বে বিধান রাখা হয়_পূর্ণাঙ্গ, সহযোগী এবং অভিবাসী। এই নতুন আইনে বলা হয়, ১৮২৩ সালে মিয়ানমারে ব্রিটিশ শাসন শুরু হওয়ার পূর্ববর্তী সময়ে মিয়ানমারে বাস করা ১৩৫টি গোত্রভুক্ত মানুষই মিয়ানমারের পূর্ণাঙ্গ নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে। রোহিঙ্গাদের গোত্র হিসেবে অস্বীকার করে সামরিক সরকার। তারা দাবি করে 'রোহিঙ্গা' বলে কোনো গোত্র তাদের দেশে নেই, এই জনগোষ্ঠী আদতে পূর্ব বাংলা থেকে যাওয়া অবৈধ জনগোষ্ঠী, যারা ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরবর্তী মিয়ানমারে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী তারা মিয়ানমারের নাগরিক হতে পারবে না। মিয়ানমারের সামরিক সরকার ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে আরাকান রাজ্যের দীর্ঘ কয়েক শতাব্দীর সামাজিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগকে অস্বীকার করে। আইনে 'সহযোগী নাগরিক' হিসেবে শুধু তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, যারা ১৯৪৮ সালের নাগরিকত্ব অ্যাক্টে ইতিমধ্যেই আবেদন করেছে। এ ছাড়া 'অভিবাসী নাগরিক' (মিয়ানমারের বাইরে জন্ম নিয়েছে এমন মানুষদের নাগরিকত্ব) হিসেবে কয়েকটি শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়, যেগুলো 'যথাযোগ্যভাবে প্রমাণসাপেক্ষ' বলে বলা হয়, যারা মিয়ানমারের স্বাধীনতার আগে (৪ জানুয়ারি ১৯৪৮) এ দেশে প্রবেশ করেছে, মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় ভাষায় দক্ষ এবং যাদের সন্তান মিয়ানমারে জন্মগ্রহণ করেছে, তারাই এই ধারায় নাগরিকত্ব পেতে পারে। যুগ যুগ ধরে আরাকানে থাকা রোহিঙ্গাদের পক্ষে ১৯৪৮ সালের আগে প্রবেশ করা সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করা ছিল অসম্ভব। এ ছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা প্রধানত নিরক্ষর এই জনগোষ্ঠীর পক্ষে মিয়ানমারের রাষ্ট্রভাষায় 'দক্ষতা' প্রমাণ হয়ে পড়ে দুরূহ; কারণ রাষ্ট্রীয়ভাবে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন যে 'কেন্দ্রীয় কমিটি' এই নাগরিকত্ব প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল, তারা প্রায় প্রকাশ্যেই রোহিঙ্গাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব দেখায়। সুতরাং রোহিঙ্গারা আর নাগরিকত্ব পায় না। তারা হয়ে পড়ে উদ্বাস্তু, কয়েক পুরুষ ধরে বাস করা নিজেদের ভিটেমাটিতে তারা হয়ে পড়ে কয়েদি। বিশ্বের বুকে জন্ম নেয় রাষ্ট্রবিহীন সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী।

তেরঙা কার্ডে ঠাঁই হয়নি তাদের
১৯৮৯ সাল থেকে মিয়ানমার তিন ধরনের নাগরিক কার্ডের প্রচলন করে। পূর্ণাঙ্গ নাগরিকদের জন্য গোলাপি, সহযোগী নাগরিকদের জন্য নীল এবং অভিযোজিত নাগরিকদের জন্য সবুজ রঙের কার্ড দেওয়া হয়। চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পড়াশোনা-চিকিৎসাসেবাসহ সব ধরনের কাজকর্মে এই কার্ডের ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু রোহিঙ্গাদের কোনো ধরনের কার্ড দেওয়া হয় না। এর ফলে রোহিঙ্গাদের পক্ষে মিয়ানমারে টিকে থাকা দুরূহ হয়ে পড়ে। ১৯৯৪ সাল থেকে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্মনিবন্ধন বন্ধ করে দেয় মিয়ানমার সরকার। পরে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনের চাপে রোহিঙ্গাদের তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। এ সময় রোহিঙ্গাদের দেওয়া হয় সাদা কার্ড, যেখানে জন্মস্থান এবং তারিখ লেখা হয় না। এর ফলে এই কার্ড মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না এবং রোহিঙ্গাদের কোনো কাজেও আসে না। কয়েক বছর পর এই কার্ডও বন্ধ করে দেয় সরকার। রোহিঙ্গাদের নাম শুধু তালিকাভুক্ত করে রাখা হয় নাসাকা বাহিনীর খাতায়।
  
নিজ গ্রামের উন্মুক্ত কারাগারে
মিয়ানমার জান্তা রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। আর তাই 'বহিরাগত' হিসেবে চিহ্নিত এসব রোহিঙ্গাকে রাখা হয়েছে কারাগারে। না, আট লাখ রোহিঙ্গাকে বন্দি করার মতো বড় কারাগার মিয়ানমার তৈরি করতে পারেনি, তাই রোহিঙ্গারা নিজ গ্রামেই বন্দি। মিয়ানমারের অন্য কোনো অঞ্চলে যাওয়ার কথা তো দূরূহ, পাশের গ্রামে যাওয়ারও কোনো অনুমতি নেই তাদের। নিজ গ্রামের বাইরে যেতে হলে তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাসাকার কাছ থেকে ট্রাভেল পাস নিতে হয়। এই ট্রাভেল পাস নিয়েই তারা গ্রামের বাইরে যেতে পারে। কিন্তু ট্রাভেল পাস পাওয়া কঠিন বিষয়। এ জন্য নাসাকাকে দিতে হয় বড় অঙ্কের ঘুষ। তার পরও রক্ষা নেই। যদি ট্রাভেল পাসে উলি্লখিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজ গ্রামে ফিরতে ব্যর্থ হয় কোনো রোহিঙ্গা, তা হলে তার নাম কাটা যায় ওই গ্রামের তালিকাভুক্তি থেকে। সে তখন নিজ গ্রাম নামের কারাগারেও অবৈধ হয়ে পড়ে। তাদের ঠাঁই হয় জান্তা সরকারের জেলখানায়।

বিয়েতে বাধা, সন্তান ধারণে নিয়ন্ত্রণ!
১৯৯০ সালে আরাকান রাজ্যে স্থানীয় আইন জারি করা হয়। আইনটিতে উত্তর আরাকানে বাস করা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই আইন অনুযায়ী এই অঞ্চলে বাস করা রোহিঙ্গাদের বিয়ের আগে সরকারি অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। এই অনুমোদনের দায়িত্বে রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাসাকা। সাধারণত বিয়ের অনুমোদন পাওয়া খুবই কঠিন। সরকারি ফির পাশপাশি এ জন্য বিপুল পরিমাণ ঘুষ দিতে হয় নাসাকার লোকজনকে। তার পরও বিয়ের অনুমতি পেতে অধিকাংশ সময় বছরের পর বছর চলে যায়। এই অনুমোদন পাওয়া খুব কষ্টকর এবং প্রায় ক্ষেত্রেই অসম্ভব। তাই রোহিঙ্গাদের পক্ষে বৈধভাবে বিয়ে করার হার খুবই কম। রোহিঙ্গারা নিজ গোষ্ঠীর বাইরে বিয়ে করতে পারে না। যদিও মিয়ানমারে এ রকম কোনো রাষ্ট্রীয় আইন নেই, তবু রোহিঙ্গারা নিজেদের বাইরে স্থানীয় কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন আইনের ফাঁকে ফেলে ১০ বছর পর্যন্ত জেল দেওয়ার নজির আছে।
২০০৫ সালে নাসাকা বাহিনী পুনর্গঠন করা হয়। এ সময় দীর্ঘদিন বিয়ে সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয় নাসাকা। পরের বছর যখন আবার আবেদন গ্রহণ চালু হয়, তখন নিয়মকে করা হয় আরো কঠোর। তখন থেকে আবেদনের সঙ্গে নবদম্পতিকে মুচলেকা দিয়ে বলতে হয় যে এই দম্পতি দুইয়ের অধিক সন্তান নেবে না।
তবে দীর্ঘদিন ধরে বৈধভাবে বিয়ে করতে বাধার সম্মুখীন হওয়ায় রোহিঙ্গাদের পারিবারিক জীবন হয়ে পড়েছে অমানবিক। বিয়ের জন্য তথাকথিত অনুমোদন পাওয়ার আগেই যেসব রোহিঙ্গা মুসলিম ধর্মমতে বিয়ে করছে, তারা সন্তান নিতে পারছে না। কেউ সন্তান ধারণ করলে তাকে গোপনে গর্ভপাত করাতে হচ্ছে। তার পরও যেসব শিশুর জন্ম হচ্ছে, তাদের অন্য কোনো বৈধ দম্পতির সন্তান হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে হচ্ছে। এমন ভুরি ভুরি নজিরও আছে, যেখানে রোহিঙ্গা দম্পতি নিজেদের সন্তানকে তাদের বাবা-মায়ের সন্তান হিসেবে তালিকাভুক্ত করাতে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই সন্তান ধারণ করলে বাংলাদেশে চলে গেছে এবং সেখানেই বাংলাদেশে বসবাসকারী উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের কাছে সন্তানকে রেখে আবার ফিরে এসেছে। চলতি সপ্তাহেও একটি পরিত্যক্ত নৌকা থেকে এ রকম এক নবজাতককে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
   চিকিৎসা ও শিক্ষায় সীমিত অধিকার
রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারের নাগরিক অধিকার অনেক দূরের ব্যাপার। সরকারি চাকরি তাদের জন্য নিষিদ্ধ। উত্তর আরাকানের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে রোহিঙ্গাদের জন্য নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্যসেবা চালু আছে। কিন্তু এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাখাইন এবং বার্মিজ নাগরিকরা স্থানীয় রাখাইন ভাষায় কথা বলার কারণে রোহিঙ্গারা সেখানে গিয়ে পূর্ণ চিকিৎসা নিতে পারে না। সরকারি বড় হাসপাতালে তাদের প্রবেশ পদ্ধতিগতভাবে নিষিদ্ধ। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য কোনো স্বাস্থ্যসেবার উদ্যোগ নিতে পারে না। এমনকি রোহিঙ্গা মহিলাদের জরুরি ধাত্রীবিদ্যা শেখানোর উদ্যোগ নিয়েও মিয়ানমার সরকারের কাছে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে সেবা সংস্থাগুলো।
চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপের কারণে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এমনকি অতি গুরুতর অসুস্থ রোগীকেও গ্রামের বাইরে নিয়ে যেতে হলে আগে ট্রাভেল পাসের জন্য অনুমতি নিতে হয়। এ কারণে অনেক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বাংলাদেশে চলে আসে। এদের অধিকাংশই আর ফিরে যায় না।
শিক্ষার ক্ষেত্রেও রোহিঙ্গারা বৈষম্যের শিকার। ধীরে ধীরে তাদের অধিকার সংকুচিত করে ফেলেছে মিয়ানমার সরকার। রোহিঙ্গাদের মধ্যে অশিক্ষার হার ৮০ শতাংশ, যা মিয়ানমারের সাধারণ অশিক্ষার হারের দ্বিগুণ। উত্তর আরাকানের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এমনিতেই মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা খুব কম; কিন্তু গ্রামের বাইরের সেই স্কুলগুলোতে পড়তে গেলেও ট্রাভেল পাস নিতে হয় রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ার অনুমোদন বন্ধ করা হয় ২০০১ সালে। তখন থেকে শুধু দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে ঘরে বসে রোহিঙ্গারা উচ্চশিক্ষা পেতে পারত এবং পরীক্ষা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারত। ২০০৫ সাল থেকে এই নিয়মও বন্ধ করে দেয় মিয়ানমার জান্তা।
 অপারেশন নাগামিন
বাংলাদেশে প্রথম উদ্বাস্তু ঢেউ-১৯৭৮

১৯৭৪ সালে জান্তা সরকার চালু করে ইমার্জেন্সি ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট। এই অ্যাক্টে বলা হয়_ভারত, চীন ও বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ করাই আইনের উদ্দেশ্য। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নাগরিক কার্ড বহন করা বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু এ সময় কোনো রোহিঙ্গাকে নাগরিক কার্ড দেওয়া হয় না, তাদের দেওয়া হয় 'অভিবাসী কার্ড'; যে কার্ড প্রমাণ করে যে তারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়। প্রথমদিকে এ রকম কার্ডে কোনো সমস্যা বোঝা না গেলেও, আসল সমস্যা শুরু হয় কয়েক বছর পর। ১৯৭৭ সালে সামরিক সরকার শুরু করে 'অপারেশন নাগামিন' বা 'ড্রাগন রাজ'। এই অপারেশনে অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করার নামে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় রাখাইনরা। ১৯৭৮ সালের মে মাসের মধ্যে কমপক্ষে দুই লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
   
বাংলাদেশে উদ্বাস্তুদের দ্বিতীয় জোয়ার : ১৯৯১-৯২
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, বাকি সব নাগরিক অধিকার সংকুচিত করে ফেললেও ১৯৯০ সালের নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক অধিকার না থাকা মিয়ানমারে ভোট বিষয়ে সরকারের অভিজ্ঞতার অভাবই হয়তো রোহিঙ্গাদেরও ভোটার করার ভুল করে বসে সরকার। ব্রিটিশ শাসনকালে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার ছিল, তাই জান্তা সরকার বিষয়টিকে আলাদাভাবে দেখেনি।
এই নির্বাচনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় অং সাং সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিজয়ী হয়। মিয়ানমারের এই নির্বাচনে এনএলডি ৪৮৫টি আসনের মধ্যে ৩৯২টি আসন পেলেও জান্তা সরকার সুচির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে। এতে করে মিয়ানমারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে অসন্তোষ আর বিক্ষোভ। ২১টি এথনিক গ্রুপ মিলে তৈরি হয় 'ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স অব বর্মা' যা ড্যাব নামে পরিচিতি পায়। ড্যাব ঘোষণা করে, সামরিক সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র ছিনিয়ে আনতে তারা সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করবে। রোহিঙ্গাদের দুটি সংগঠন অল বর্মা মুসলিম ইউনিয়ন এবং আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামিক ফ্রন্টও যৌথ বিবৃতিতে জানায়, তারাও সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে শামিল হবে।
সামরিক একনায়করা যা করে, এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জনরোষকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পর্যবসিত করতে আক্রমণ শুরু হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। উস্কে দেওয়া হয় স্থানীয় রাখাইনদের। একই সঙ্গে চলে সামরিক অভিযান। নির্যাতন মাত্রা ছাড়া করে রোহিঙ্গাদের আরেকবার ঠেলে দেওয়া হয় বাংলাদেশের দিকে। বড় আকারের রোহিঙ্গা শরণার্থী আগমনের দ্বিতীয় পর্যায় ঘটে এ সময়। ১৯৯১ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ সরকার জানায়, পূর্ববর্তী ছয় মাসে অন্তত দুই লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ সময় থাইল্যান্ড এবং বিশেষ করে মালয়েশিয়াতেও ব্যাপকসংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করে। আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজি হয়। ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সব বহিরাগত উদ্বাস্তুকে ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও মিয়ানমারের অসহযোগিতায় সেটি শেষপর্যন্ত সম্ভব হয়নি। ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশও আবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।
 সতর্ক থাক বাংলাদেশ!
দায় আন্তর্জাতিক মানবগোষ্ঠীর

রোহিঙ্গা যে আমাদের জন্য মিয়ানমারের চাপিয়ে দেওয়া একটি বড় বিপদ, সে বিষয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখনো সচেতন নয়। অধিকাংশ লোকই একে দেখছে একটি মানবিক বিপর্যয় ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা কোনো সাময়িক বিপর্যয় নয়, দীর্ঘ কয়েক যুগের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলে আসা এথনিক ক্লিনজিং। মিয়ানমার সরকার চায় এই প্রায় ২০ লাখ রোহিঙ্গার দায় সব সময়ের জন্য বাংলাদেশের কাঁধে চাপিয়ে দিতে। মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তারা প্রায়ই প্রকাশ্যে এই রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি হিসেবে আখ্যায়িত করে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশকে সতর্ক হতে হবে। শুধু ভাষা, ধর্ম কিংবা নৃতাত্তি্বক গঠনে সাদৃশ্য থাকার কারণেই মিয়ানমারের ২০ লাখ লোকের দায় বাংলাদেশ নিতে পারে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত প্রহরা শিথিল না করার একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের উচিত হবে না বিশ্বের কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করে এই অবস্থান থেকে সরে আসা। রোহিঙ্গা সমস্যার সঙ্গে বাংলাদেশ কোনোভাবেই যুক্ত হতে পারে না। ইতিমধ্যে যে বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা এ দেশে অনুপ্রবেশ করেছে তাদেরও ফেরত দানের ব্যাপারে বাংলাদেশকে বড় আকারে উদ্যোগ নিতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যদি এদের ফেরত দেওয়া না যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন। মিয়ানমার এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো বদ্ধ দেশ নয়। গণতন্ত্রের পথে দেশটি এক পা-দুই পা করে অগ্রসর হচ্ছে। নিজেদের সভ্যদেশ হিসেবে প্রমাণ করতে হলে মিয়ানমারের উচিত দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা। একটি দেশের মধ্যে শতাব্দীর পর শতাব্দী বাস করে আসা বড় একটি জনগোষ্ঠী নাগরিকত্ববিহীন থাকতে পারে না। পৃথিবীর সব মানুষেরই একটি দেশ পাওয়া জন্মগত অধিকার, মিয়ানমারের সেনাশাসকরা গায়ের জোরে সেই অধিকার অস্বীকার করবেন, সেটি চলতে পারে না। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব যদি দেওয়া না যায়, তা হলে আগামী দিনের ইতিহাসে একালের বিশ্ব নেতৃত্বকে প্রশ্নের মুখেই পড়তে হবে।
  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন