শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের লড়াই ও বাংলাদেশ

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এশিয়ায় বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্কবাণী উচ্চারিত হচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরে। এর মধ্যে এই অঞ্চলের আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্কে যেমন নানা ধরনের উত্থান-পতন ও উত্তেজনা লক্ষ করা যায়, তেমনিভাবে আইএস বা আলকায়েদার মতো সংবেদনশীল আঞ্চলিক জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা নিয়েও নানা কথা বলা হয়। অন্তরালে দক্ষিণ এশিয়ার আফগানিস্তান থেকে শুরু করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার পর্যন্ত সব দেশে এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ করা যায়। এই অস্থিরতা কোনো ক্ষেত্রে জাতিতাত্ত্বিক উত্তেজনাও তৈরি করছে। 
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের এই লড়াইয়ে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে সব দেশের স্বার্থ একই সমান্তরালে অগ্রসর হয়নি। তবে মোটা দাগের দু’টি ধারার একটির শীর্ষে রয়েছে চীন আর অন্যটির পুরোধা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চীনের সাথে প্রভাব বিস্তারের এই সমীকরণে রাশিয়াকে দেখা যায় এক কাতারে। অন্য দিকে, আমেরিকা ও ভারতকে প্রভাব বিস্তারের এ লড়াইয়ে অভিন্ন সমীকরণে অগ্রসর হতে দেখা যায়। তবে এর পরও প্রতিটি দেশকেই পরস্পরের সাথে কমপার্টমেন্টাল বা নিজস্ব স্বার্থকেন্দ্রিক সম্পর্ক বজায় রাখতে দেখা যায়।

দক্ষিণ এশিয়ার তুলনামূলক ক্ষুদ্র দেশগুলোর কোনো কোনোটিকে বৃহৎ শক্তির ক্ষমতার আড়ালে নিজস্ব নিরাপত্তা অন্বেষণ করতে দেখা যায়। আবার দু-একটি দেশ একক দিকে ঝুঁকে না পড়ে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অনুসরণকে তাদের জাতীয় স্বার্থের অনুকূল মনে করে। এ সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের দক্ষতা ও দূরদৃষ্টির ওপর নির্ভর করে কতটা ভারসাম্য তাদের পক্ষে রক্ষা সম্ভব হচ্ছে ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোতে গত দুই দশক ধরে সবচেয়ে প্রভাব ও দাপটের সাথে আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে। এ ক্ষেত্রে মনমোহন সিংয়ের খানিকটা দুর্বলচিত্ত শাসনের দশকের পর নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ক্ষমতায় এসে নীতিকৌশলে নতুন মাত্রা যোগ করে। ঐতিহ্যগতভাবে ভারত বিভাগের পর থেকে কংগ্রেসের নমনীয় সমাজতান্ত্রিক নীতি জোটনিরপেক্ষ গোষ্ঠী তৈরিতে দেশটিকে অগ্রণী ভূমিকা পালনে উদ্বুদ্ধ করলেও আন্তর্জাতিক বলয় অনুসরণে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছাকাছি থাকে ভারত। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর বিশ্বের দেশে দেশে নীতিকৌশলের পরিবর্তনের এক ধরনের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এ সময় ভারত প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ব্যাপারে রুশনির্ভরতা একেবারেই শেষ না করে সোভিয়েত প্রযুক্তি নিয়ে নিজেরা বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির প্রচেষ্টা নেয়। একই সাথে পাশ্চাত্যের কাছ থেকে আধুনিক প্রযুক্তি ও সমরাস্ত্র কেনার উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে ইসরাইলের সাথে ভারতের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠায় এই ইহুদি দেশটির কাছ থেকে গোয়েন্দা সামগ্রীসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমরাস্ত্র কেনে নয়া দিল্লি। এটি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ওপরও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে।

স্নায়ুযুদ্ধকালে দক্ষিণ এশিয়ার দুই বৈরী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রথমটি সোভিয়েত ও শেষোক্তটি আমেরিকান বলয়ে ছিল। স্নায়ুযুদ্ধের পর আমেরিকা ও ভারত উভয়েই একে অপরের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক নির্মাণে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সর্বশেষ ইউপিএ শাসনের এক দশকে এ ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি হয়। মার্কিন-ভারত পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। দক্ষিণ এশিয়ার মোড়ল হিসেবে আমেরিকা স্বীকৃতি দেয় ভারতকে। এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র দেশগুলোর ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার থেকে যুক্তরাষ্ট্র অনেক ক্ষেত্রে নিবৃত্ত হয়।

আমেরিকান নীতিপ্রণেতারা মনে করতে থাকেন, এশিয়ায় চীনা উত্থান ও প্রভাব বিস্তারকে ঠেকাতে হলে ভারত-চীন বিরোধকে চাঙ্গা রাখতে হবে। একই সাথে চীনের প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে ভারতকে সহযোগিতা এবং সাহায্য দিতে হবে। ভারতের নিজস্ব স্বার্থে ছাড় না দেয়ার এক ধরনের মানসিকতার কারণে ইউপিএ জমানায় ভারত-মার্কিন কৌশলগত সম্পর্ক নির্মাণ প্রচেষ্টা আশানুরূপ আগায়নি। আমেরিকা বিজেপিকে ক্ষমতায় আসতে সহযোগিতা করে আশা করে যে দেশটির লক্ষ অর্জনে বিজেপি সরকার সাহায্য করতে পারবে। বিজেপি শাসনের এক বছরের বেশি সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ওবামা-মোদি একাধিক শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হন। এসব বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্গীকারের বিষয় প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু চুক্তিও সম্পাদিত হয়।

ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এশিয়ায় ভারত-মার্কিন বলয় সৃষ্টির ব্যাপারে যতটা আগ্রহী, ততটা সমর্থন ক্ষমতাসীনেরা সামরিক-বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে পাচ্ছে বলে মনে হয় না। এর মধ্যেও দুই দেশের সম্পর্কে বেশ অগ্রগতি হচ্ছে। মোদি ক্ষমতায় আসার পর কিছুটা সময় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদের আমলা পরিবর্তন করেছেন। মোদিকে অবশ্য পররাষ্ট্র সম্পর্কের কৌশলগত মিত্র পরিবর্তন করতে গিয়ে প্রতিরক্ষার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। আমেরিকার সাথে বড় রকমের প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পাদনের পর রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এর পর রাশিয়া ভারতের প্রধান প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে এমন অত্যাধুনিক অস্ত্র সম্ভার দেয়, যা আগে কোনো মিত্র দেশও পায়নি। মোদি আমেরিকার সাথে সম্পর্ক অধিক ঘনিষ্ঠ করেও এ কারণে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছেন। যেটি অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবে সম্ভব হয়ে উঠছে না।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত কখনো পাকিস্তানের রাজনীতি পরিবর্তন করার পর্যায়ে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেনি। দুটি দেশের মধ্যে জন্মকাল থেকে দুই দফা বড় যুদ্ধ এবং মাঝে মধ্যে সঙ্ঘাত লেগে থাকায় ভারত আস্থা অর্জনের সম্পর্ক কখনো তৈরি করতে পারেনি বৈরী প্রতিবেশী দেশটির সাথে। পাকিস্তানের সবচেয়ে উদার রাজনীতিবিদও ভারতের প্রসঙ্গ এলে ব্যতিক্রম ছাড়া কৌশলগত স্বার্থের বাইরে কথা বলতে চান না। এর একটি বড় কারণ হলো কূটনৈতিক সম্পর্কের বাইরে গোপন বা গোয়েন্দা তৎপরতার ওপর দুই দেশ বেশি মাত্রায় নির্ভর করেছে। পাকিস্তানি নীতিনির্ধারকদের ধারণা, ভারত উপমহাদেশে নেহরু ডকট্রিনের অখণ্ড প্রভাববলয় সৃষ্টির নীতি থেকে সরে আসতে পারছে না। ইসলামাবাদের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ভারতের সমর্থনদানে মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে পাকিস্তান ভেঙে দেয়া। বেলুচিস্তান ও খায়বার পাখতুনখোয়ায় যে অস্থিরতা ও সহিংসতা চলছে, তার পেছনে গোপন ইন্ধন রয়েছে ভারতের। ভারতও মনে করে কাশ্মির, উত্তর-পূর্ব ভারত ও পাঞ্জাবে অস্থিরতার পেছনে পাকিস্তানের বিশেষভাবে আইএসআইর ইন্ধন সক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এই অবিশ্বাসের কারণে পাকিস্তান কৌশলগত সম্পর্ক নির্ধারণের ব্যাপারে থাকে অতিমাত্রায় সতর্ক। আমেরিকার সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কে ওঠানামা থাকলেও চীনের সাথে সবসময় আস্থার সম্পর্ক বজায় রেখেছে ইসলামাবাদ। আমেরিকা ভারতের প্রতি অধিক ঝুঁকে পড়ায় রাশিয়ার সাথেও সম্পর্ক উত্তোরণে মনোযোগী হয়েছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারত উল্লেখযোগ্য কোনো কিছু করতে না পারলেও দেশকে বিভক্ত করে শক্তিহীন করার প্রচেষ্টাকে নিজস্ব কৌশলের অংশ করে নিয়েছে। বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাকামীদের সাথে গোপন যোগসূত্র তৈরি করেছে নয়া দিল্লি। এমনকি পাকিস্তানি তালেবানদের সাথেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্ক থাকার বিষয়ে পাকিস্তান বিশ্ব ফোরামে বারবার প্রমাণাদি উপস্থাপন করেছে। এর পাল্টা হিসেবে পাকিস্তানও চেয়েছে কাশ্মির, উত্তর-পূর্ব ভারত ও পাঞ্জাবের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে এবং তাদের তৎপরতায় ইন্ধন দিতে। এই পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থায় উভয় দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদিও এজন্য পাকিস্তানকে মূল্য দিতে হয়েছে তুলনামূলক বেশি।

শ্রীলঙ্কা হলো ভারতের এমন এক প্রতিবেশী, যে দেশটির জনসংখ্যা কম হলেও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম। শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু তামিলদের সাথে রয়েছে ভারতের তামিল রাজ্যের মূল জনগোষ্ঠীর জাতিতাত্ত্বিক সম্পর্ক। উভয় গোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাসও অভিন্ন। তামিলদের সাথে এই বিশেষ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কায় তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে নয়া দিল্লি। কিন্তু রাজিব গান্ধীর সময়ে এসে নয়াদিল্লি তামিলদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করতে চাইলে পরিস্থিতি ভারতের প্রতিকূলে চলে যায়। রাজিব গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কংগ্রেস ও তাদের শাসনকালে নয়াদিল্লি সরকারের সাথে তামিল আন্দোলনের স্থায়ী বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এটাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসের সরকার শক্তি প্রয়োগ করে তামিল বিদ্রোহের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়।
ভারতের সাথে এ নিয়ে শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের টানাপড়েনে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে চীন ও পাকিস্তান বিশেষ গুরুত্ব পেতে শুরু করে। তামিল বিদ্রোহ দমন এবং দেশটির অবকাঠামো বিনির্মাণে এ দুই দেশের বিশেষ সহযোগিতার কারণে একান্ত নিকট প্রতিবেশী হওয়া সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার রাজনীতি ও শাসন পরিচালনা ভারতের প্রভাব কমে আসে। মৈত্রিপালা সিরিসেনার কাছে রাজাপাকসের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে এই বিন্যাস পাল্টে যাবে বলে ধারণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত সিরিসেনা সরকার একধরনের ভারসাম্যমূলক নীতি গ্রহণ করে। এ নীতির ফলে পাশ্চাত্য ও ভারতের সাথে কলম্বোর সম্পর্ক বেশ খানিকটা ঘনিষ্ঠ হলেও চীন-পাকিস্তানের সাথে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্কের অবসান ঘটেনি। খুব দ্রত এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে বলেও মনে হয় না।

দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ নেপালে প্রভূত প্রাকৃতিক সম্পদ ও কৌশলগত গুরুত্বের অধিকারী হলেও স্থলবেষ্টিত অবস্থা এই হিমালয়ান দেশটিকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে তোলে। এই নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে নেপালের রাজা বীরেন্দ্র বিক্রম শাহ এর আগে চীনের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এ প্রচেষ্টা ফলবতী হয়নি নয়াদিল্লির প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য বাধার কারণে। রাজা বীরেন্দ্রের সপরিবারে নিহত হওয়ার পেছনে চীনের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগকে দায়ী মনে করা হয় নেপালে। এর ধারাবাহিকতায় নেপালে রাজতন্ত্রেরই অবসান হয়। কিন্তু রাজতন্ত্র বিলোপের পর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নতুন সংবিধান প্রণয়নের কাজ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। এই প্রতিবন্ধকতার জন্য নেপালের অনেক রাজনীতিবিদ নয়া দিল্লিকে দায়ী করেন।

রাজতন্ত্রের পতনের পর দীর্ঘ সময় পার করে সম্প্রতি নেপালের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল নেপালি কংগ্রেস, নেপালি কমিউনিস্ট পার্টি ও মাওবাদীরা একমত হয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও অনুমোদন করে। এতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মাধেসিদের স্বায়ত্তশাসন, প্রদেশ বিভাজন ও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত দাবি পুরো মেনে নেয়া হয়নি। ভারত চেয়েছিল তাদের দাবি মেনেই সংবিধান গ্রহণ করা হোক। সংবিধান সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অনুমোদিত হলে নেপালের ওপর অঘোষিত অবরোধ আরোপ করে নয়া দিল্লি। এর ফলে সৃষ্ট দুর্দশা নেপালি রাজনীতিবিদদের মধ্যে এক ধরনের জাতীয়তাবাদী ঐক্য সৃষ্টি করে। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কে পি শর্মা ওলি ভারতের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা সত্ত্বেও নতুন প্রধানমন্ত্রী হন। ভারতের অবরোধের মুখে নেপাল চীনের সাথে বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়। এভারেস্টের নিচ দিয়ে টানেল তৈরি করে চীন-নেপাল স্থল যোগযোগ প্রতিষ্ঠার চুক্তি হয়। নতুন পরিস্থিতিতে নেপালের ওপর ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে আসছে দিল্লির নিয়ন্ত্রণ।

সর্বশেষ সার্কের সদস্য হওয়া আফগানিস্তান কৌশলগত অবস্থানের কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। দেশটির সাথে পাকিস্তান, চীন, ইরান ও মধ্য এশিয়ার সীমান্ত রয়েছে। পশতুন, উজবেক ও তাজিক এই তিন প্রধান জাতিতাত্ত্বিক ধারায় বিভক্ত আফগানিস্তান। পশতুন জনগোষ্ঠীর একটি অংশ পাকিস্তানে, আরেকটি অংশ বসবাস করে আফগানিস্তানে। এটি দুই দেশের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক যেমন তৈরি করেছে তেমনিভাবে বৈরিতার কারণও হয়ে আছে। দুই দেশের সীমান্তরেখা ডুরান্ট লাইনকে অনেক পশতুনই সীমান্ত হিসেবে স্বীকার করেন না। এ সীমান্তের দুই পারের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঐতিহাসিক কাল থেকে ছিল সহজ সামাজিক ও যোগাযোগের ব্যবস্থা। তালেবানদের আমেরিকা সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন এই যোগাযোগকে কঠিন করে তুলেছে। এর পরও পাকিস্তান যেখানে আফগানিস্তানের তালেবানদের সাথে গোপনে সমর্থন দেয়, সেখানে আফগানিস্তানের সরকারের সাথে তালেবান পতনের পর থেকে বিশেষ সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে নয়াদিল্লি। এমনকি পাকিস্তানের সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্রভাবে লড়াইরত পাক তালেবানদেরও গোপনে ইন্ধন দিচ্ছে ভারত। আফগানিস্তানে পাক-ভারত দুই দেশের এই স্বার্থসম্পৃক্ততা সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠাকে দুরূহ করে তুলেছে। শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানের পরিস্থিতি কী অবয়ব নেয়, তার প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার ওপর বিশেষভাবে পড়তে পারে। সেখানে চীন-পাকিস্তান ও ভারত-আমেরিকা মোটা দাগে একই লাইনে কাজ করছে। যদিও পাক-মার্কিন একধরনের সম্পর্ক পরস্পরের স্বার্থে সবসময় বজায় থাকতে দেখা গেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ছোট দেশ হলেও ভূ-কৌশলগত কারণে মালদ্বীপের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। দেশটির ১০০ ভাগ জনসংখ্যা মুসলিম। কিন্তু পরিবেশগত কারণে ভঙ্গুর এ দেশটির কয়েক লাখ জনগোষ্ঠী জাতীয়ভাবে বড় কোনো অবকাঠামো তৈরি করতে পারেনি। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা প্রতিবেশী দেশগুলোর সহায়তার ওপর নির্ভর করে। মালদ্বীপের দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুম একধরনের ভারসাম্য রক্ষা করতেন পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে। মোহাম্মদ নাশিদ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত দেশটির নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে বলে মনে করা হয়। একপর্যায়ে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। পরে একাধিকবার নির্বাচন করেও নাশিদ ক্ষমতায় যেতে পারেননি। এজন্য অবশ্য তিনি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না করার জন্য ভারতকে অভিযুক্ত করেন।
মালদ্বীপে বর্তমানে ক্ষমতাসীন আমিন গাইয়ুম মামুন আবদুল গাইয়ুমের জ্ঞাতি ভাই। নেপথ্যে থেকে মামুনের পরামর্শে দেশ চলছে বলে মনে করা হয়। এখানে দৃশ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো সঙ্কট দেখা যায় না। কিন্তু নেপথ্যে রয়েছে ভারত-চীন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লড়াই। অর্থনৈতিক ক্ষমতার কারণে চীন প্রভাব বিস্তারে যতটা এগিয়ে যেতে পারে, ততটা পারে না ভারত। এর পরও মালদ্বীপে ক্ষমতার উত্থান-পতন যেকোনো সময় ঘটতে পারে।

ভুটান হলো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু জাতীয় আয়ের ক্ষুদ্র দেশ। স্থলবেষ্টিত এই দেশটি নেপালের মতোই বিশেষভাবে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। যদিও এর অন্যতম প্রতিবেশী দেশ হলো চীন। নেপালি বংশো™ভূত জনগোষ্ঠী রয়েছে এখানে অনেক। নেপালের মতোই ভুটানের সাথে শক্তিমান সম্পর্ক সৃষ্টির উদ্যোগ রয়েছে বেইজিংয়ের। এ জন্য বিশেষভাবে সতর্ক নয়া দিল্লি। ক্ষমতায় আসার পর বিদেশ সফরের জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম থিম্পুকে বেছে নেয়ার মধ্যেই ভারতের কাছে ভুটানের বিশেষ গুরুত্বের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তবে ভুটানে ভারতের প্রভাব আরো অনেক দিন থাকলে এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পরিস্থিতি বেশি দিন নাও থাকতে পারে। ভুটানের উন্নয়নে চীনের প্যাকেজ প্রস্তাবের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে দেশটির। ফলে ভুটানে পররাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন বিন্যাস আসার সম্ভাবনা রয়েছে অদূরভবিষ্যতে।

মিয়ানমার দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সন্ধিস্থলের দেশ। এটি আশিয়ানের সদস্য, আবার সার্কের সদস্য করার ব্যাপারেও প্রস্তাব রয়েছে মিয়ানমারের সামনে। চল্লিশের দশকের শেষ দিকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে কয়েক বছর ছাড়া সামরিক সরকারের অধীনে চলে এসেছে বহু জাতিগোষ্ঠী সমৃদ্ধ এ দেশটি। ২০১০ সাল থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপান্তরের একটি প্রক্রিয়া চলছে মিয়ানমারে। এর গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে আগামী ৮ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত হতে পারে দীর্ঘকাল পর প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার। যদিও সাংবিধানিক বিধিনিষেধের কারণে বিরোধী নেত্রী অং সান সু কির দল নির্বাচনে জয়ী হলেও তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। ২৫ শতাংশ সংসদ সদস্য পদ আইন সভার উভয় কক্ষে সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত থাকায় রাষ্ট্রশাসনে সামরিক বাহিনীর শক্তিমান ভূমিকা থেকে যাবে।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই পাশ্চাত্য চাইছে মিয়ানমারে পশ্চিমের অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক প্রভাব বাড়াতে। সামরিক জান্তার আমলে এ ক্ষেত্রে চীনা প্রভাব ছিল অনেকটাই একচ্ছত্র। পাশ্চাত্য সমর্থনপুষ্ট অং সান সু কির দল এনএলডি জয়ী হলেও তার পক্ষে একতরফা কোনো পাশ্চাত্যাশ্রয়ী ব্যবস্থা কায়েম করা দেশটিতে সম্ভব হবে না। সু কি নিজে এটি উপলব্ধি করতে পারেন বলে নির্বাচনের আগেই চীন সফর করে সেখানকার শীর্ষ স্থানীয় নীতিনির্ধারকদের সাথে কথা বলে এসেছেন।

গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথ ধরে পশ্চিমা বিনিয়োগকারীরা মিয়ানমারে প্রবেশের আগেই ভারত সামরিক সরকারের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে। এর মাধ্যমে দিল্লি সেখানকার তেল-গ্যাস ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করেছে। উত্তর-পূর্ব ভারতে বিদ্রোহ দমনে সহযোগিতার জন্য মিয়ানমারের সাথে সমঝোতায় পৌঁছেছে। মিয়ানমারে প্রভাববলয় সৃষ্টির যে প্রতিযোগিতা পাশ্চাত্য, চীন, রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে চলছে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ অবয়ব পেতে পারে নভেম্বরের নির্বাচনের পর।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এখন একক গুরুত্বপূর্ণ দেশ যেখানে ভারতের প্রভাব অনেকটাই একতরফা। নব্বইয়ের দশকের দ্বিতীয়ার্ধেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার এখানে ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু সে সময়ে পররাষ্ট্র সম্পর্কে এক ধরনের ভারসাম্য ছিল। এটি ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পর সেভাবে দেখা যায়নি।

বাংলাদেশে ভারতের একতরফা প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়ক হয় আমেরিকার এই অঞ্চলে অনুসৃত নীতি। এশিয়ায় প্রভাববলয় সৃষ্টির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের হয় বিশেষ সমঝোতা। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ওবামা নির্বিশেষে সব মার্কিন নেতা এশিয়ায় চীন-রাশিয়া অক্ষের বিপরীতে প্রভাব বলয় বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারতকে মিত্র হিসেবে পাওয়ার কৌশল অনুমোদন করেছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান ছাড়া অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাপারে নয়াদিল্লির দৃষ্টিভঙ্গিকে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রতি দেয় ভারতকে। এমনকি দুই প্রেসিডেন্টই ভারত সফরকালে এশিয়ার নেতা হিসেবে উল্লেখ করে ভারতকে।

যত দূর জানা যায়, বাংলাদেশ নিয়ে এ ব্যাপারে ২০০৬ সালে ভারত-আমেরিকা একটি গোপন সমঝোতা তৈরি হয়। এর অংশ হিসেবে জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের একতরফা সরকারের শাসন শুরু হয় ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে। ক্ষমতায় আসার আগেই ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কী কী এজেন্ডা ঢাকার সরকার বাস্তবায়ন করবে তারও একটি সম্মত সিদ্ধান্ত হয়। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহ দমনে একসাথে কাজ করা, ভারতকে ট্রানজিট বা করিডোর দেয়া, বিশেষ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সুবিধা দেয়া, ভারতবিরোধী রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে ইসলামপন্থীদের দমন ও যুদ্ধাপরাধের বিচার আয়োজন করা সম্মত সিদ্ধান্তের অংশ বলে জানা যায়। 
গত ৭ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এসব এজেন্ডা বাস্তবায়নে বড় ধরনের কোনো মতপার্থক্য দেখা দেয়নি। যদিও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিআই সরকারের বিদায়ের পর নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষমতায় এলে অনেকেই দিল্লির নীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করেছিলেন। তবে এটাই বাস্তব যে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের সাথে শেখ হাসিনা সরকারের আন্তঃসরকার সম্পর্কের বাইরে কংগ্রেস-আওয়ামী লীগ আন্তঃদল সম্পর্কের যে বন্ধন ছিল, সেটা এখন বিজেপির সাথে নেই।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে যে একতরফা ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সে নির্বাচনের ব্যাপারে এর বিরোধিতাকারী যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের অন্য দেশগুলোকে জানানো হয়েছিল এটি হলো নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। শিগগিরই আরেকটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়সীমা সর্বোচ্চ দুই বছর হবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারির নির্বাচনের পর ক্ষমতা সংহত করতে অনেকখানি সফল হয় হাসিনা সরকার। এরপর ২০১৯ সালের আগে শাসক দল আর কোনো নির্বাচন না দেয়ার নতুন ঘোষণা দেয়। সরকারের সাথে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বিরোধিতাকারী পাশ্চাত্যের সব দেশ কাজ করলেও তারা কখনো এ নির্বাচনের বৈধতা দেয়নি। বরং তাদের অবস্থান পরিবর্তন না হওয়ার ঘোষণা বারবার দিয়েছে।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দুই বছর পূর্তি ঘনিয়ে আসার পর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ নানা দিক থেকে বাড়ছে। এই চাপ আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশ থেকে যে আসছে, এ ব্যাপারে সংশয় নেই। কিন্তু ভারত থেকেও কি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য চাপ আসছে? এ প্রশ্নের জবাবে যতটুকু জানা যায়, নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরকালে এ ধরনের নির্বাচনের ব্যাপারে হাসিনা-খালেদা দু’জনের সাথেই কথা বলেছেন।

নয়াদিল্লি মনে করছে, ভারতীয় স্বার্থ বিবেচনায় বাংলাদেশে তাদের প্রথম, দ্বিতীয় এমনকি তৃতীয় পছন্দের দল হবে নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগ। কিন্তু একক সমর্থন দিয়ে শক্তির জোরে এ সরকারকে কতটা ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা যাবে তা নিয়ে সন্দিহান দিল্লির অনেকে। এ জন্য তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য নতুন নির্বাচনের পরামর্শ দিচ্ছে ঢাকাকে। একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে বিএনপিকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে চাইছে দিল্লি। আওয়ামী লীগের একটি অংশ মনে করে, এ ধরনের নির্বাচনের অনুষ্ঠান করেও দলকে আবারো ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতে পারে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির অংশগ্রহণমূলক যেকোনো নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাফল্যের ব্যাপারে সন্দিহান। বিশেষত তিনি ক্ষমতার বাইরে থেকে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথেই প্রশাসনে নিরপেক্ষ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাবে বলে মনে করেন। তার ধারণা এতে নির্বাচনের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা যাবে না এবং দলের বিপর্যয় ঘটবে। এ নিয়ে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে একটি সূক্ষ্ম মতভেদ রয়েছে বলে মনে করা হয় যদিও এখনো পর্যন্ত দুই দেশের সরকারের মধ্যে সহযোগিতা ও নির্ভরতার সম্পর্কে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

ধারণা করা হয় শেখ হাসিনা নির্বাচন ছাড়া ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে যেতে একটি বিকল্প ভাবনাও ভাবছেন। সেটি হলো নির্বাচনের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের পাশাপাশি দিল্লি থেকে চাপ আসতে থাকলে বেইজিং-মস্কোর সমর্থন দিয়ে তিনি বাকি মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন। এ ধরনের একটি বিকল্প ব্যবস্থার জন্য এ দু’টি দেশের সাথে বিশেষ সম্পর্ক তৈরির প্রচেষ্টা বেশ এগিয়েও গেছে। এ ধরনের আয়োজন দেখে নির্বাচনের জন্য চাপ দিয়ে দিল্লি ঢাকার সাথে বিশেষ সম্পর্ক নষ্টের ঝুঁকি না-ও নিতে পারে বলে শেখ হাসিনা ধারণা করছেন। আর বলয় পরিবর্তনের যেকোনো চেষ্টার ক্ষেত্রে বড় রকমের ঝুঁকি যে থাকে, সেটি তার অজানা নয়। তবে ঝুঁকি গ্রহণের শক্তি সাহস ও প্রবণতা শেখ হাসিনার রক্তের মধ্যেই রয়েছে বলে তার ঘনিষ্ঠজনেরা বলে থাকেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন