সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

১৯৭১-এর যুদ্ধ

(এক)
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালে ৩০ মার্চ ভারতের পার্লামেন্টে বলেন, পূর্ব বঙ্গের সাড়ে সাত কোটি লোক তাদের স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম শুরু করেছেন, ভারত তাকে সাহায্য না করে পারে না। ভারত তাই সংগ্রামে সাহায্য করেই যাবে। ১৯৭১-এর ৩ ডিসেম্বর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রকাশ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু আসলে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ৩০ মার্চ থেকে। আমার বাড়ি পদ্মানদীর ধারে। পদ্মা পেরিয়ে পৌঁছানো যায় ভারতের সীমানায়। ভারত থেকে এক রেজিমেন্ট সৈন্য এসে ঢুঁ মেরেছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে; পাকবাহিনী কতটা সামরিক প্রস্তুতিতে আছে সেটি ওজন করার জন্য। কিন্তু তারা বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। এ থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে বুঝতে পারি যে, আজ হোক, কিছু দিন পরে হোক, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হওয়া খুবই সম্ভব। ১৯৬৫ সালে নভেম্বর মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বেধেছিল কাশ্মির নিয়ে। যুদ্ধ চলেছিল ২২ দিন। যার মীমাংসা হতে পেরেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায়, তাসখন্দে বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরু মারা যান ২৭ মে ১৯৬৪ সালে। এরপর প্রধানমন্ত্রী হন গলজারিলাল নন্দ (২৭ মে-৯ জুন; ১৯৬৪)। এরপর প্রধানমন্ত্রী হন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। তিনি তাসখন্দে চুক্তিপত্র সহি করে আকর্ষিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান (১১ জানুয়ারি, ১৯৬৬)। তার মৃত্যুর পর আবার গুলজারিলাল নন্দ প্রধানমন্ত্রী হন (১১-২৪ জানুয়ারি, ১৯৬৬)। পরে জওয়াহেরলাল নেহরুর মেয়ে ইন্দিরা গান্ধী হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। শাস্ত্রীর মন্ত্রিসভায় ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন তথ্য ও প্রচারমন্ত্রী। কাশ্মির নিয়ে ভারত পাকিস্তানের গণ্ডগোল শুরু হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাস থেকেই। কাশ্মির ইন্দিরা গান্ধীর পূর্বপুরুষের দেশ। ইন্দিরা গান্ধী মনে করেন, এ সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান তাকে করতেই হবে। ইন্দিরা গান্ধী মনে করেন, সাবেক পাকিস্তানকে যদি ভেঙে ফেলা যায়, তবে পশ্চিম পাকিস্তান একা কাশ্মির নিয়ে যুদ্ধ করার ক্ষমতা আর রাখবে না। তখন থেকেই ইন্দিরা গান্ধী ভাবতে শুরু করেন সাবেক পাকিস্তনকে ভেঙে দেয়ার কথা। আর ১৯৭১ সালে তিনি পেয়ে যান এই সুযোগ। ১৯৭১-এ যা ঘটেছে, তাকে উপলব্ধি করতে হলে ইন্দিরা গান্ধীর এই চিন্তা-চেতনাকে বিশেষভাবে বিবেচনায় নিতে হয়। আমি যা বলছি সেটি ঠিক, আমার মৌলিক চিন্তার ফল নয়। ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের একটি সংখ্যায় ইন্দিরা গান্ধীর তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে হস্তক্ষেপের কারণ সম্পর্কে এ রকম একটি বিশ্লেষণ ছিল। বিলাতের দ্য গার্ডিয়ান একটি বিখ্যাত পত্রিকা। এর একজন সাংবাদিক, সাস্থি ব্রত (Sasthi Brata) এসেছিলেন ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশে। ত্রিপুরা থেকে তিনি আসেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের কুমিল্লা জেলায়। সাস্থি ব্রত দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি রিপোর্ট লেখেন যে, ভারতের কমান্ডো বাহিনীর লোকেরা পূর্ব পাকিস্তানে ব্রিজ ওড়াচ্ছে, রেললাইন তুলে ফেলছে। কিন্তু এটি তারা করছে মুক্তিযোদ্ধা সেজে। (Big brother goes to war by Sasthi Brata, The Guardian, September-18, 1971, page-9)। সাস্থি ব্রতের এই রিপোর্ট পড়লে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সেপ্টেম্বর মাস থেকেই ভারতের কমান্ডো বাহিনীর লোকেরা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে এসে আক্রমণ শুরু করেছিল। সাস্থি ব্রতের পক্ষে কুমিল্লায় এসে সংবাদ সংগ্রহ করা কঠিন কাজ ছিল না। কারণ সাস্থি ব্রত ব্রিটিশ নাগরিক হলেও ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি কুমিল্লা অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন স্থানীয় মুসলিম কৃষকের মতো সাজ-পোশাক পরে। ৩ ডিসেম্বর থেকে ভারত-পাকিস্তান  প্রকাশ্য যুদ্ধ শুরু হয়, যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ, এভাবে দেয়া যেতে পারে :
ডিসেম্বর ৩ : পাকিস্তান বিমানবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বোমাবর্ষণ করে ভারতের অমৃতসর, অবন্তিপুর, আম্বালা, আগ্রা, জোতপুর, পাঠানকোট, শ্রীনগর ও উত্তর লাইয়ে। আর এই একই সাথে পাক স্থল বাহিনীর সৈন্যরা তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সুলেমানকি, খেমকারেন, ছাম ও পুঞ্চে ভারী আক্রমণ চালায়। ভারতীয় বিমানবাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালায় পশ্চিম পাকিস্তানের চান্দেরি, শিয়ালকোট, সার্বোদা, মুরিদ, মিনওয়ালি, মাশরুর (করাচির কাছে), বিসালওয়ালা (রাওয়ালপিন্ডির কাছে) এবং লাহোরের কাছে চাঙ্গা ও মাঙ্গাতে।
৪ ডিসেম্বর : পাকিস্তান ঘোষণা করে যে, সে এখন ভারতের সাথে যুদ্ধাবস্থায় আছে। কারণ ভারতীয় বাহিনী প্রথম পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকতে শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ডাকা হয় জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন। 
৫ ডিসেম্বর : পাকিস্তান পশ্চিম রণাঙ্গনে লঙ্গিওয়ালা নামক স্থানে ভারী আক্রমণ চালায়। আক্রমণ চালায় কাশ্মিরের পুঞ্চে। ভারতের নৌবাহিনীর জাহাজ করাচি বন্দরে গোলাবর্ষণ করে। পূর্ব রণাঙ্গনে ভারত পাকিস্তানের ডুবোজাহাজ গাজীকে ডুবিয়ে দেয়। গাজী আসলে পাকিস্তানের ডুবোজাহাজ ছিল না। গাজী ছিল একটি বিরাট ডুবোজাহাজ, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে দিয়েছিল ধার হিসেবে। গাজী ডুবোজাহাজকে আসলে ডুবিয়েছিল সোভিয়েত যুদ্ধজাহাজ। সোভিয়েত ইউনিয়নের গোপন নৌঘাঁটি ছিল ভারতের বিশাখাপত্তম বন্দরের কাছে। গাজী এভাবে ডুবে যাওয়ায় পাকিস্তান বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় জাহাজ ডুবানোর ক্ষমতা হারায়। এটিকে বলা যায় পাকিস্তানের জন্য ছিল একটা বড় রকমেরই ক্ষতি। গাজী জাহাজ ডোবার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নেয় বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নৌবহর পাঠানোর। যুদ্ধ নিতে থাকে ভিন্নতর রূপ। সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি এভাবে ভারতের পক্ষ না গ্রহণ করত, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো চাইতো না নৌবহর পাঠাতে। সোভিয়েত নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নৌবহর পাঠাতে উদ্যোগী করেছিল, যা পরে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করে।
নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক উত্থাপিত প্রস্তাবে একমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া আর সব দেশ শান্তির পক্ষে ভোট দেয়। কিন্তু যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়ন এর বিপক্ষে ভোট দেয়, তাই নিরাপত্তা পরিষদের শান্তির প্রস্তাব হয়ে যায় বাতিল। 
৬ ডিসেম্বর : ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর আক্রমণে পাক বাহিনী ছাম (Cham) থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় বাহিনী হিলি ও ফেনী দখল করে। হিলিতে হলো প্রচণ্ড যুদ্ধ। মারা যায় বহু ভারতীয় সৈন্য। ভারত ধারণা করতে পারেনি হিলি দখল করতে গিয়ে তার এত সৈন্য ক্ষয় হবে। ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে একটা পৃথক স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেন। ভারত এটি করতে বাধ্য হয় মূলত মার্কিন চাপে। 
৭ ডিসেম্বর : ভারত যশোর, কুষ্টিয়া, সিলেট ও মৌলভীবাজার দখল করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে শান্তি প্রস্তাব ওঠায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত ছাড়া আর সব দেশ শান্তি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। ভারত সাধারণ পরিষদের শান্তি প্রস্তাবকে মানে না। অস্বীকার করে শান্তির পক্ষে বিশ্ব জনমতকে। যেহেতু জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের কোনো প্রস্তাব তার কোনো সদস্য দেশের জন্য বাধ্যতামূলক নয়, তাই ভারত এ প্রস্তাবকে অস্বীকার করতে পারে। যদিও একমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত ছাড়া সব দেশই সাধারণ পরিষদে ভোট দিয়েছিল যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে। 
৮ ডিসেম্বর : ভারত কর্তৃক কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া দখল ও ঢাকার পথে যাত্রা শুরু। এরপর 
৯ ডিসেম্বর ভারত কর্তৃক উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ। 
১০ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক মেঘনা নদী অতিক্রম। 
১১ ডিসেম্বর জামালপুর ও ময়মনসিংহ দখল। 
১২ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ দখলের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। 
১৩ ডিসেম্বর মার্কিন সপ্তম নৌবহরের জাহাজ এবং বিখ্যাত মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ ‘এন্টারপ্রাইজ’ বঙ্গোপসাগরে এসে পৌঁছায়। এন্টারপ্রাইজ জাহাজ ছিল পরমাণুশক্তিচালিত। এত বড় বিমানবাহী জাহাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর একটিও ছিল না। 
১৪ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে আর একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করে। কিন্তু এবারো সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দেয়। ফলে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়।
১৫ ডিসেম্বর ভারতীয় পদাতিক বাহিনী ঢাকা প্রবেশ করতে আরম্ভ করে। অন্য দিকে মার্কিন নৌবহর এসে পৌঁছায় বাংলাদেশের সমুদ্র তটভূমির খুব কাছে। 
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জেনারেল নিয়াজি ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু এ সময় ঠিক কী ঘটেছিল, তা এখনো হয়ে আছে রহস্যময়। অনেকের মতে, এ সময় যা কিছু ঘটেছিল তার সব কিছুই ঘটেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে বলেছিল ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করতে। পাকিস্তান তাই আত্মসমর্পণ করেছিল ভারতের কাছে। বিষয়টি আসলেই নিষ্পত্তি হতে পেরেছিল মার্কিন পরামর্শে। না হলে মার্কিন মেরিন সেনারা অবতরণ করত বাংলাদেশের মাটিতে। পাক বাহিনীর প্রায় ৯৫ হাজার সৈন্যকে ভারতীয় বাহিনী নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যায় ভারতে। রাখেনি বাংলাদেশে। ১৭ ডিসেম্বর ভারত পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। ভারত বন্দী পাক সৈন্যদের ভারতে রাখে ভালোভাবে। পরে ১৯৭২ সালে ৩ জুলাই সিমলাতে পাকিস্তানের সাথে একটা বিশেষ চুক্তি করে সব পাক যুদ্ধবন্দীকে যেতে দেয় পাকিস্তানে। পাক বাহিনীর কাউকেই ভারত বিচার করতে চায় না যুদ্ধবন্দী হিসেবে। সিমলা চুক্তিতে ভারতের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। অন্য দিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করেছিলেন পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো। সব কিছুই যেন ঘটেছিল একটা পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে। ১৯৭১-এর যুদ্ধকে তাই বলা যায় না ভারতের একপক্ষীয় বিজয় হিসেবে। যুদ্ধ শেষ হয়েছিল মূলত মার্কিন চাপে। অন্য দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নও চায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কোনো সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে। ইন্দিরা গান্ধী চাননি যুদ্ধ প্রলম্বিত হোক। কারণ কেবল সামরিক কারণেই নয়, ভারত এ সময় পড়েছিল অর্থনৈতিক বিপর্যয়েরই মধ্যে। ভারত সরকার ১৯৭১ সালে বাধ্য হন ৭০০ কোটি ভারতীয় মুদ্রা ঘাটতি ব্যয় করতে। এ রকম ব্যয়বহুল যুদ্ধ ভারত চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গতি রাখত না। ভারতের অর্থনীতি প্রলম্বিত যুদ্ধের উপযোগী ছিল না। ঘাটতি ব্যয় করার জন্য ভারতে ঘটেছিল দ্রুত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এ ছাড়া আরেকটি কারণ ছিল। ভারতে মনে করা হচ্ছিল, বাংলাদেশে যুদ্ধ বেশি দিন ধরে চললে বাংলাদেশের একটা বিরাট অংশ চলে যেতে পারে চীনপন্থী কমিউনিস্টদের নিয়ন্ত্রণে, যা ভারতের জন্য হয়ে উঠবে আরেকটি জটিল সমস্যা।
আমি ছিলাম কলকাতায়। লোকমুখে শুনতে পেতাম, চীনপন্থী কমিউনিস্ট মুহাম্মদ তোয়াহার নাম। ১৯৭১ সালে পশ্চিম বাংলায় কেবল চীনপন্থী কমিউনিস্টদের নিয়েই মাঠে-ঘাটে আলোচনা হতে শুনেছি। কাউকে বলতে শুনিনি জামায়াতে ইসলামীর কথা। কাউকে বলতে শুনিনি গোলাম আযম সম্পর্কে কোনো কথা বলতে। ভারতের ভয় ছিল একটি মাত্র দলকেÑ সেটি ছিল প্রধানত মুহাম্মদ তোয়াহার কমিউনিস্ট পার্টি। ১৯৭১ সালে কারো পক্ষে স্বপ্নেও ভাবা সম্ভব হয়নি যে, আর মাত্র ২০ বছরের মধ্যে বিরাট সামরিক শক্তিধর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবে। সোভিয়েত ইউনিয়নে থাকবে না সমাজতন্ত্র। থাকবে না একদলের রাজত্ব। সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় রিপাবলিক রাশিয়ায় মানুষ দাবি করবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের। অন্য দিকে চীনে বিলুপ্ত হবে মাওবাদ। চীনের কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় থাকলেও অনুসরণ করবে মুক্তবাজার অর্থনীতিকে। আমাদের দেশের অনেককে বলতে শুনছি, একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আর একবার। কিন্তু আমরা একাত্তরের দুনিয়ায় এখন আর বাস করছি না। ১৯৭১-এ পাকিস্তানের হাতে ছিল না পারমাণবিক অস্ত্র। পাকিস্তান এখন ভারতের যেকোনো জায়গায় পরমাণু বোমা নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেপণাস্ত্র রাখে। এই উপমহাদেশে কোনো যুদ্ধ শুরু হলে সেটি গ্রহণ করবে যথেষ্ট মারাত্মক রূপ। হাতিয়ার কেবল একপক্ষ থেকেই যে গর্জাবে, তা মোটেও নয়।
বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ক’দিন আগে দিলেন অদ্ভুত এক বিবৃতি। তিনি বললেন, চীন বাংলাদেশে কেবল অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই চাচ্ছে না, সে বাংলাদেশকে দেখতে চায় একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে। এই স্বাধীন ও সার্বভৌম কথাটি যথেষ্ট গুরুত্ববহ। এ ছাড়া ক’দিন আগে চীন দাবি তুলেছে, ভারতে অরুণাচল রাজ্য আসলে হলো চীনের এলাকা। বর্তমান সময়ে চীনের এ দাবি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তাই যারা বলছেন, একাত্তরের হাতিয়ার আবার গর্জে ওঠার কথা, তাদের চিন্তা-চেতনা আটকে আছে আজ থেকে ৪২ বছর আগের অবস্থায়। তাদের চিন্তা-চেতনা হাল নাগাদ নয়। পত্রিকার খবরে পড়লামÑ বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে দু’টি সাবমেরিন ক্রয় করার কথা ভাবছে। ভারতের নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা ভারতের বিখ্যাত দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশ সাবমেরিন কিনে কী করবে? কিন্তু বাংলাদেশ সম্ভবত চীনের কাছ থেকে ডুবোজাহাজ কিনতেই যাচ্ছে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। তার আছে আপন প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে সুগঠিত করার অধিকার। ভারত এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
একটি দেশের জনমত বদলায়। বাংলাদেশের জনমতও বিরাটভাবেই বদলে গেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে যেমন বন্ধুরাষ্ট্র ভেবেছে, এখন আর তা ভাবতে যাচ্ছে না। এটিও হলো একটি বড় রকমের বিচার্য।
১৯৭১-এ ভারত ছিল চারটি কমান্ড দ্বারা বিভক্ত। প্রত্যেক কমান্ড পরিচালিত হয় এক একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেলের দ্বারা। প্রত্যেক কমান্ড একাধিক এলাকায় বিভক্ত, যার ভার ন্যস্ত এক একজন মেজর জেনারেলের ওপর। প্রত্যেক মেজর জেনারেলের এলাকা আবার উপএলাকায় বিভক্ত, যার প্রত্যেকটির ভার ন্যস্ত থাকে একজন ব্রিগেডিয়ারের ওপর। ভারতের দক্ষিণ কমান্ডের সদর দফতর হলো পুনা (পুনে)। মধ্য কমান্ডের সদর দফতর হলো লক্ষেèৗ। পশ্চিম কমান্ডের সদর দফতর হলো সিমলা। আর পূর্ব কমান্ডের সদর দফতর হলো কলকাতা। ১৯৭১ সালে কলকাতা কমান্ডের ভার ছিল জগজিৎ সিং অররার (শিখ) ওপর। তার অধীনে ছিলেন একাধিক মেজর জেনারেল। এসব মেজর জেনারেলের মধ্যে একজন ছিলেন জে এফ আর জ্যাকব (ইহুদি)। জ্যাকব পরে নিযুক্তি পান লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে। জ্যাকব ১৯৭১ সালে যুদ্ধ নিয়ে Surrender at Dacca নামে একটি বই লেখেন। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০১ সালে। বইটির অনেক কথা কতটা সত্য তা নিয়ে উঠেছে অনেক প্রশ্ন। জ্যাকব তার বইতে বলেছেন, মুক্তিবাহিনী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো বড় অভিযানে অংশ নিতে চাইত না। তারা চাইত ভারতীয় সৈন্যবাহিনী সবকিছু করুক। অথচ সাস্থি ব্রত দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় যা লিখেছেন, তা পড়লে মনে হয়, ভারত ইচ্ছা করেই চাইত না মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা। 
১৯৭১ সালে ঢাকায় প্রথম প্রবেশ করেন ভারতের ব্রিগেডিয়ার আর এন মিশ্র। তিনি ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। গ্রামে গ্রামে তারা ভারতীয় সৈন্যকে দিয়েছেন খেতে। নৌকা দিয়ে সাহায্য করেছেন নদী-নালা, খাল-বিল অতিক্রম করতে। বলেছেন, পাকবাহিনী কোথায় পেতে রেখেছে স্থলমাইন। এসব সংবাদ না পেলে আরো ভারতীয় সৈন্য হারাত প্রাণ। তিনি ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের মানুষকে। কিন্তু জ্যাকবের লেখায় এসব কোনো বিষয় সেভাবে আলোচিত হয়নি। সেখানে কেবলই আছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধের জয়গান। আমি সেনাবাহিনীর কেউ নই। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পড়েছিলাম ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের কথা। এই যুদ্ধে ভারতের জেনারেল রণক্ষেত্র থেকে প্রাণ নিয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। দেখিয়েছিলেন পরম কাপুরুষতা। ভারতের বাহিনী ১৯৭১ সালে মাত্র ৯ বছরের মধ্যে বিরাটভাবে সামরিক কুশলতা অর্জন করতে পেরেছিল, তা আমার মনে হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪০ সালে হিটলারের বাহিনী অনেক দ্রুতগতিতে এগিয়ে এসে এক সপ্তাহের মধ্যে অধিকার করেছিল ফ্রান্সের রাজধানী পারি শহর। কিন্তু আগরতলা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ৪০ মাইলের কাছাকাছি পথ আসতে ভারতীয় সৈন্যদের প্রায় লেগেছিল ১৪ দিন। ভারতীয় সৈন্যদের অগ্রগতি মোটেও ক্ষিপ্রতাসম্পন্ন ছিল না। এর সাথে কোনো তুলনা চলে না দ্বিতীয় মহাসমরে অংশ নেয়া জার্মান সৈন্যদের। ১৯৬২ সালে চীনা সৈন্যরা হিমালয় ফ্রন্টে ভারতীয় সৈন্যদের থেকে দেখিয়েছিল অনেক উন্নত রণ কৌশল। ১৯৭১-এর যুদ্ধকে নিয়ে তুলনামূলক কোনো আলোচনা হয়নি। তাই আমি বলছি এসব কথা। ভারত যেভাবে ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মানুষের সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছিল, কোনো বিদেশী সৈন্য আর এক দেশে গিয়ে লড়াই করার সময় অতটা সাহায্য সহযোগিতা আশা করতেই পারে না। ভারতের সমর শক্তি ১৯৭১-এর তুলনায় অনেক বেড়েছে। ভারতের হাতেও এখন আছে পারমাণবিক অস্ত্র। কিন্তু ভারত খুবই জনবহুল দেশ। যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারে ভারতের যত লোকের মৃত্যু হবে, পাকিস্তানে তা হবে না। কারণ, পাকিস্তান ভারতের মতো অত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ নয়। পাকিস্তান ইচ্ছা করলেই অনেক সহজেই তার মানুষকে দেশের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় ছড়িয়ে দিতে পারবে। যেটা ভারত পারবে না। পাকিস্তানের কথা আসছে কারণ, আন্তর্জাতিক মহলে অনেককে বলতে শোনা যাচ্ছে যে, ভারত যদি বাংলাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে চায়, তবে পাকিস্তান শেষপর্যন্ত নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারবে না। অনেকে এমন কথাও বলেন যে, পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র না থাকলে ভারত বাংলাদেশে নাকি এতদিন সামরিক হস্তক্ষেপ করেই বসত। বাংলাদেশ আসলে আছে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের ছত্রছায়ায়। এসব কথা কতটা সত্য, আমরা তা জানি না। তবে আন্তর্জাতিক মহলে এরকম একটি ধারণা প্রচলিত আছে।
আমরা আলোচনা করছিলাম, ১৯৭১-এর যুদ্ধ নিয়ে। ১৯৭১-এর যুদ্ধ সামরিক দিক থেকে ছিল একটা খুবই মামুলি যুদ্ধ। এতে বাংলাদেশের বিরাট ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এ কথা বলেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। যুদ্ধ যেমনই হোক, সেটাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে যথেষ্ট ঘোরালো। শান্তি কামনা করলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। তাই বাংলাদেশের মতো গরিব দেশকেও ভাবতে হচ্ছে চীনের কাছ থেকে সাবমেরিন ক্রয়ের কথা। আজ যখন পেছনের দিকে তাকাই, তখন অতীতের অনেক কথাই মনে হয় বিভ্রান্তিকর। 
বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তান চেয়েছিল বলেই পাকিস্তান হতে পেরেছিল। না হলে হতে পারত না। যেসব অঞ্চল নিয়ে সাবেক পাকিস্তান হয়েছিল, তাতে ১৯৪৬ সালে যে ভোট হয়, তাতে একমাত্র তখনকার বাংলাদেশ ও সিন্ধুতেই মুসলিম লীগ হতে পেরেছিল ভোটে জয়ী। পাঞ্জাব, সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানে মুসলিম লীগ বিজয়ী হতে পারেনি। আজ ইতিহাস পড়ানো হচ্ছে এমনভাবে যে, বাংলাদেশের মানুষের ওপরে এক সময় কেউ যেন পাকিস্তান চাপিয়ে দিয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ঠিক হয় যে, তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের প্রাদেশিক আইনসভার ভোটের মাধ্যমে ঠিক হবে যে, তদানীন্তন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্তি হবে, না একটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে। সুভাষচন্দ্র বসুর বড় ভাই শরৎচন্দ্র বসু এবং মুসলিম লীগের নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রস্তাব তোলেন, পৃথক স্বাধীন বাংলা গঠনের দাবিতে। জিন্নাহ সাহেব বলেন, স্বাধীন বাংলা গঠনে তার কোনো আপত্তি নেই; কিন্তু কংগ্রেস নেতারা করেন এর বিরোধিতা। প্রাদেশিক পরিষদে পাস হতে পারে না স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্রের দাবি। কংগ্রেস নেতারা বিরোধিতা করার কারণেই এটা হতে পারে না। ভোট হয়েছিল হিন্দু প্রধান ও মুসলমান প্রধান জেলাগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে পৃথক পৃথকভাবে। ক’দিন আগে কোনো এক টেলিটকে কোনো প্রাজ্ঞ অধ্যাপককে বলতে শুনলামÑ পাকিস্তান হয়েছিল কেবলই মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার কারণে। কিন্তু ঘটনা তা ছিল না। ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান চেয়েছিলেন পৃথক স্বাধীন বাংলাদেশ। পৃথক স্বাধীন বাংলাদেশের দাবির বিরোধিতা করেছিলেন কংগ্রেসের বিখ্যাত নেতা মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী। কিন্তু সমর্থন জানিয়েছিলেন মুসলিম লীগের বিখ্যাত নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। যারা বাংলা ভাগের পক্ষে ভোট দেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসু। আমরা আলোচনা করছিলাম ১৯৭১ সালের যুদ্ধ নিয়ে। জ্যোতি বসু ছিলেন চীনপন্থী কমিউনিস্ট। তিনি এ সময় চাননি সাবেক পাকিস্তান ভেঙে যাওয়া। এই ইতিহাস খুব বেশি লোক জানে না। শুধু এই নয়, জ্যোতি বসুরা বলেন যে, শেখ মুজিব হলেন সিআইএ’র চর। এসব ইতিহাসের কথা যখন ভাবি, তখন আমার মনে বিস্ময় জাগে। রাজনৈতিক নেতারা কতভাবে তাদের মত বদলিয়ে চলেন। ১৯৬৪ সালে পূর্ব-পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি বিভক্ত হয় চীনপন্থী ও মস্কোপন্থীতে। তাজউদ্দীন ভারতে গিয়ে গড়েন স্বাধীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। এ সময় ইন্দিরা গান্ধীর ওপরেও মস্কোপন্থীদের ছিল বড় রকমের প্রভাব। ইন্দিরা গান্ধীর দু’জন বড় উপদেষ্টা দুর্গাপ্রসাদ ধর ও পি এন হ্যাক্সার ছিলেন মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং (শিখ) ছিলেন মস্কো ঘেঁষা। ভারতে তখন ছিল বিশেষ মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট প্রতিপত্তি। দুর্গাপ্রসাদ ধরের প্রচেষ্টাতে হতে পারে ১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট ভারত-সোভিয়েত শান্তি-মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি, যা ইন্দিরা গান্ধীকে সাহস জুগিয়েছিল পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে। মস্কো থেকে ১৯৭১ সালে কয়েকজন সমর বিশেষজ্ঞ দিল্লিতে এসে রচনা করেছিলেন ১৯৭১-এর রণ পরিকল্পনা। তারাই বিশেষভাবে ছকে দিয়েছিলেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানকে ১১টি ভাগে বিভক্ত করে সমর পরিচালনা করতে। তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বাতলে দিয়েছিল কিভাবে করতে হবে সাঁড়াশি অভিযান। ১৯৭১-এর যুদ্ধ নিয়ে তেমনভাবে কোনো আলোচনা এখনো হয়নি। তবে হওয়া দরকার।
দেশে ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে আমরা তা আন্দাজ করতে পারছি না। ভারত থেকে সুজাতা সিং কী বলে গেলেন, তা নিয়ে থাকছে প্রশ্ন। কিন্তু বিশ্বরাজনীতির ছক নানাভাবেই বদলে যেতে বসেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলেও দেশ হিসেবে রাশিয়া এককভাবে এখনো একটি বিরাট শক্তি। ৩ ডিসেম্বর দেখা গেল, জামায়াতে ইসলামী নেতাদের সাথে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে বাংলাদেশে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক হতে। যেটার কথা আগে কখনো ভাবা যায়নি। রাশিয়া গুরুত্ব দিচ্ছে জামায়াতকে। রাশিয়া আর এখন হয়ে থাকতে চাচ্ছে না ১৯৭১-এর মতো ভারতবান্ধব দেশ হয়ে। মনে হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতির সমীকরণ নানাভাবেই বদলে যেতে চলেছে।
পরিশিষ্ট : ভারতীয় সৈন্য পূর্ব রণাঙ্গনে মৃত হন ১০৪৭ জন; পশ্চিম রণাঙ্গনে ১৪২৬ জন। নিখোঁজ পূর্ব রণাঙ্গনে ৮৯ জন; কিন্তু পশ্চিম রণাঙ্গনে ২১৪৯ জন। আহত পূর্ব রণাঙ্গনে ৩০৪২ জন এবং পশ্চিম রণাঙ্গনে ৩৬১১ জন। উপরের এই হিসাব ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জগজীবন রাম ভারতের লোকসভায় দিয়েছিলেন যুদ্ধের পরে পরে। পাকিস্তানের কত সৈন্য আহত, নিখোঁজ বা মারা যান তার হিসাব জানা নেই। ১৪ দিনের যুদ্ধে কতজন মুক্তিযোদ্ধা আহত, নিহত ও নিখোঁজ হন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এই হিসাব থেকে দেখা যায় যে, ভারত তার পশ্চিম রণাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল পূর্ব রণাঙ্গনের থেকে বেশি। (শেষ)
প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন