সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৩

পিল্লাই সতর্ক করলেন...


জাতিসংঘের মানবাধিকার-সংক্রান্ত হাইকমিশনারের অফিসের (Office of the United Nations High Commissioner for Human Rights) কার্যক্রম, এখতিয়ার ও ভূমিকা সম্পর্কে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা কতোটা জানেন বলা মুশকিল। রাজনীতিবিদরা তাদের কর্মকাণ্ডের দায় বহন করতে না চাইলেও নিজের দেশের নাগরিকদের মানবাধিকার লংঘন করলে তার দায় আন্তর্জাতিক ভাবে এড়িয়ে যাবার সুযোগ নাই বললেই চলে। পার পেয়ে যাবার সম্ভাবনা কম। জাতিসংঘের মানবাধিকার-সংক্রান্ত হাইকমশনার নাভি পিল্লাই সেটাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে করিয়ে দিয়েছেন। এভাবে বলেন নি যে আপনারা ভাল ভাবে চলুন, হিংসাবিবাদ কম করুন। বরং সুনির্দিষ্ট ভাবে ধরিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ রোম চুক্তির (Rome Statutes) সদস্যরাষ্ট্র। রোম চুক্তি হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠিত করবার আন্তর্জাতিক চুক্তি। গৃহীত হয়েছিল ১৯৯৮ সালে এবং প্রজোনীয়সংখ্যক রাষ্ট্র এতে স্বার দিলে ২০০২ সাল থেকে কাজ করতে শুরু করেছে। আজ অবধি বাংলাদেশসহ ১২২টি দেশ এই চুক্তির অধীনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্যরাষ্ট্র (State Party)। তার মানে তারা এই চুক্তি ও আদালতের বিধিবিধান এবং তার সিদ্ধান্ত ও রায় মেনে চলবে। ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বার করলেও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের মতা ও এখতিয়ার মেনে নিতে সম্মত হয় নি। সেটা তারা জাতিসংঘকে জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের প্রতিনিধি এই চুক্তি স্বার করলেও তার কোন আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কোন আইনি বাধ্যবাধকতা মানতে তারা সম্মত নয়। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক আদালত গঠিত হোক, তাতে তাদের আপত্তি নাই, তাদের কোন কাজে তারা বাধা দেবে না, কিন্তু তাদের কার্যকলাপের ওপর কোন খবরদারির এখতিয়ার এই আদালতের থাকবে না। ভারত প্রথম থেকেই এই চুক্তি স্বার করে নি, পার্টি বা সদস্যরাষ্ট্র হওয়া তো দূরের কথা। 
চুক্তিতে সম্মতি দেওয়া (ratify) এবং আদালতের মতা ও এখতিয়ারের পরিমণ্ডলে প্রবেশের অর্থ হচ্ছে সদস্যরাষ্ট্রের অধীন এলাকায় কোন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আপনাআপনি তা সে অপরাধকে আমলে নিতে ও বিচার করতে পারবে। বাংলাদেশ চুক্তিতে সম্মতি ও আদালতের এখতিয়ার মেনে নিয়েছে ২৩ মার্চ ২০১০ তারিখে এবং তা কার্যকর হতে শুরু করেছে ১ জুন ২০১০ তারিখ থেকে। বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধিত হয় ৯ জুলাই ২০০৯। ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয় ২৫ মার্চ ২০১০ সালে। অর্থাৎ রোম চুক্তির বলে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সম্মতি ও তার এখতিয়ারের পরিমণ্ডলে প্রবেশের দুই দিন পর। নাভি পিল্লাই বাংলাদেশকে সে কারণেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে বাংলাদেশ রোম চুক্তির সদস্যরাষ্ট্র। তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ার মানতে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। 
রোম চুক্তির কথা মনে করিয়ে দিয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে তিনি বলেছেন : ÒIn other situations, we have seen cases of political or election related violence where the perpetrators of such acts- including political leadership- have faced prosecutionÓ । এটা কূটনৈতিক ভাষায় সাবধান ও সতর্ক করে দেওয়া। সহজ বাংলায় বোঝার মতো করে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় : এর আগে অন্য অনেক দেশে রাজনীতি বা নির্বাচন কেন্দ্র করে সহিংসতার জন্য অভিযুক্তদের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। রাজনৈতিক নেতারাও বাদ যান নি। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদের েেত্র তার ব্যতিক্রম হবে এমন ভাববার কোন কারণ নাই। বেশ কড়া কথা। কথাটা সকলেরই ভেবে দেখা দরকার। 
অনেকে বলছেন, পিল্লাই সম্ভবত কেনিয়ার ছয় মন্ত্রীর কথা বলছেন। তাদের মধ্যে আছেন ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার উহুরু কেনিয়াত্তা, শিল্পমন্ত্রী হেনরি কগসে, শিামন্ত্রী উইলিয়াম রুটো, ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ফ্রান্সিস মুতাহাওরা, পুলিশ কমিশনার মহাম্মদ হোসেন আলী এবং একজন আমলা জোসুয়া আরব সাং। কেনিয়ার এরা ‘ওকাম্পো সিক্স’ নামে খ্যাত। মতায় থেকে এরা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছেন, যাতে কমপে ১২০০ মানুষের জীবন ঝরে গিয়েছে। রাজনৈতিক নেতা, আমলা ও পুলিশ অফিসার কেউই দায় এড়াতে পারেন নি। বাংলাদেশে এখন যারা মতায় আছেন তারাও দায় এড়াতে পারবেন এটা ভাবার কোন কারণ নাই। 
সংঘাত ও সহিংসতায় প্রাণহানি কোনভাবেই গ্রহণ করা যায় না। পিল্লাই উল্লেখ করেছেন যে, গাড়ি থেকে আরোহীদের নেমে যাবার বা আত্মরার সুযোগ না দিয়ে আগুন দেওয়া হচ্ছে। আগুনে মানুষ পুড়ছে, মানুষ মরছে। এভাবে নিরীহ মানুষের মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই ধরনের ঘটনা ঘটছে প্রধানত ঢাকায়। যারা আন্দোলন করছেন তারাও এই দায় থেকে মুক্ত নন। কিন্তু কারা আসলে এভাবে আগুনে পুড়িয়ে মারছে তার তদন্ত হওয়া দরকার। বিরোধী দল বারবার বলছে এই ধরনের নাশকতার সঙ্গে তারা জড়িত নয়। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা সরকারকে অভিযুক্ত করছে। আন্দোলনকারীদের প থেকেও বারবার একই কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সরকারপীয় গণমাধ্যমগুলো তথ্য-প্রমাণ ছাড়া বিরোধী দলকেই দায়ী করতে চাইছে। কিন্তু কোন তথ্যই শেষ পর্যন্ত গোপন থাকে না। গোপন রাখা যায় না। 

দুই 
গত কয়েক দশকে রাষ্ট্র ও সরকারের ‘সার্বভৌমত্ব’ ধারণায় বড়সড় পরিবর্তন ঘটেছে। বিশ্ববাস্তবতা এমন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিম্বা ন্যাটো বাহিনী অন্যায় যুদ্ধে কতো ল মানুষ হত্যা করল তাতে হয়তো কিছুই আসবে-যাবে না, কিন্তু বিশ্বব্যবস্থার প্রান্তসীমায় বাংলাদেশের মতো একটি দেশের রাজনীতিবিদরা যদি তাদের দেশের জনগণের নাগরিক ও মানবিক অধিকার ভঙ্গ করেন, তাহলে লিবিয়া বা সিরিয়ার মতো তাদের বিরুদ্ধে সৈন্য পাঠানো হতে পারে। সেটা হতে পারে শান্তি বাহিনী, কিম্বা আন্তর্জাতিক শক্তি সমর্থিত সশস্ত্র পেশাদার সৈনিকÑ তথাকথিত বিদ্রোহী, যাদের কাজ মতাসীনদের পতন ঘটানো। আন্তর্জাতিক পরাশক্তি বাংলাদেশকে কিভাবে মূল্যায়ন করছে তার ওপর সেই সব নির্ভর করে। একে বলা হয় মানবাধিকার রার জন্য একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তপে। এর একটা মধুর পরিভাষা আছে হিউমেনিটারিয়ান ইনটারভেনশন। জাতিসংঘের হিউমেন রাইটস হাইকমিশনার নাভি পিল্লাইয়ের সতর্কবাণী শুনে মনে হচ্ছে, আমরা বিপদের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছি। 
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির গতিবিধির ওপর প্রখর নজর না রাখলে বাংলাদেশ আসলেই গভীর খাদে নিপ্তি হতে পারে। এই কথা আমি আজ নয়, কমপে এক দেড় দশক ধরে বলে আসছি। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। এ দেশে রাজনীতি করতে হলে প্যালেস্টাইন, ইরাক, আফগানিস্তান, কসোভো, চেচনিয়া, তিউনিসিয়া, মিসর, ইরান, পাকিস্তানসহ মুসলিম দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চরিত্র ও ফলাফল গভীর মনোনিবেশের সঙ্গে পাঠ করা দরকার। বিশেষত ইসলাম সম্পর্কে বদ্ধমূল বিরূপ ধারণা, মুসলিম দেশ ও মুসলমানদের প্রতি পাশ্চাত্যের সাধারণ বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং সেই পরিপ্রেেিত রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসংঘাতে পরাশক্তির রাজনৈতিক ও সামরিক ভূমিকা সম্পর্কে সজাগ, পরিপূর্ণ ও প্রাজ্ঞ ধারণা ছাড়া বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সংস্কার কিম্বা উন্নতির রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়া কঠিন। সে কাজ কঠিন, রীতিমতো হিমালয় মাথায় নিয়ে চলার শামিল। কিন্তু কঠিন হলেও কখনোই অসম্ভব ছিল না, এখনো নয়। কিন্তু আমরা সেই রাজনীতির বিকাশ চাই নি। আমরা সমাজের বিভাজন ও বিভক্তির কারণ নিরপে ও নির্মোহ জায়গা থেকে বোঝার চেষ্টা করিনি। পুরা তকে আরো বাড়তে দিয়েছি। একাত্তরে আমাদের রক্তাক্ত ও তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ধর্ম বিশেষত ইসলামের রাজনৈতিক ভূমিকার সম্পর্কে খুবই সঙ্গত ভীতি আছে। কিন্তু একে মোকাবেলা করবার সঠিক পথ কী হবে তা নিয়ে মুক্ত ভাবে আলাপ-আলোচনার পরিবেশ আমরা আজো তৈরি করতে পারে নি। আত্মপরিচয়, ধর্ম ও রাজনীতির জটিল সম্পর্ক বোঝা ও তাদের দ্বন্দ্ব মীমাংসার জন্য সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ মত তৈরির জন্য যে বুদ্ধিবৃত্তিক দূরদৃষ্টি ও প্রজ্ঞার দরকার, আমরা তা অর্জন করা দূরে থাক, তার প্রয়োজনীয়তাটুকুও বুঝি নি। এখনো বুঝি না। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। 
তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কয়েক দশকে রাষ্ট্রের ‘সার্বভৌমত্ব’ সম্পর্কে ধারণার েেত্র ব্যাপক পরিবর্তন। এক দিকে রাষ্ট্র নিজে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তির মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক েেত্র তার সার্বভৌম এখতিয়ারে ছাড় দিচ্ছে, এখতিয়ারের পরিমণ্ডল সংকীর্ণ করে আনছে কিম্বা এখতিয়ার তুলে দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার হাতে। তদুপরি টিকফার মতো দ্বিপীয় চুক্তি তো আছেই। যার অর্থ হচ্ছে ‘রাষ্ট্র’ ও ‘সরকার’ বলতে আমরা এতকাল যা বুঝে এসেছি সেই সার্বভৌম রাষ্ট্র আর সরকার এখন নাই। অর্থনৈতিক ত্রে থেকে রাষ্ট্রের সার্বভৌম এখতিয়ার বহুজাতিক কোম্পানি ও পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের যুগে অনেক আগেই গত হয়েছে। সবচেয়ে সৎ ও জনপ্রিয় কাউকে বসালেও রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ভাবে যেসব বহুপীয় ও দ্বিপীয় চুক্তিবন্ধনে নিজেকে বন্দী করেছে তার বাধ্যবাধকতার কারণে চাইলেও কেউ গণমানুষের স্বার্থে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে কি না সন্দেহ। ততটুকুই সম্ভব যতটুকু পুঁজির নৈর্ব্যক্তিক লজিক বা ‘অর্থনৈতিক’ মতার বিরুদ্ধে জনগণের ‘রাজনৈতিক’ মতা তৈয়ার করা যায়। জনগণের রাজনৈতিক মতাই আসলে সার্বভৌম মতা, যার আরেক নাম গণশক্তি। তার মানে হচ্ছে জনগণের সার্বভৌম মতা নতুন ভাবে গঠন না করা গেলে অর্থনৈতিক বিকাশও সম্ভব নয়। আজ পর্যন্ত যতগুলো দেশ পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিগড় কিছুটা ভাঙতে পেরেছে তারা পরাশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গণমতার চর্চা করেছে। অর্থাৎ নতুন বাস্তবতায় বিদ্যমান রাষ্ট্র বহাল রেখে অত্যন্ত সৎ ও যোগ্যদের ব্যক্তিরা মতায় আসলেই জনগণের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন সম্ভব হয় নি। দরকার হয়েছে শক্তি ও সাহস জনগণের শক্তির ওপর নির্ভরশীল দৃঢ়চিত্ত নেতৃত্ব। 
এই হোল অর্থনৈতিক দিক। অন্য দিকে ‘সার্বজনীন মানবাধিকার’ সংক্রান্ত ঘোষণা, সনদ, চুক্তি বা প্রস্তাবে স্বার ও সম্মতি দিয়ে রাষ্ট্র মেনে নিয়েছে নাগরিকদের নাগরিকতা ও আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধানের দায় রাষ্ট্রের একচেটিয়া নয়। অর্থাৎ নাগরিক অধিকার মানব কি মানব না কিম্বা মানলে কতটুকু মানব সেই সব এখতিয়ার পুরাপুরি রাষ্ট্রের ওপর ন্যস্ত নয় আর। বরং রাষ্ট্র কিম্বা মতাসীন সরকার আদৌ তার নাগরিকদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার রা করছে কি না সেটা দেখভাল করবে আন্তর্জাতিক শক্তি এবং সেই শক্তির তরফে জাতিসংঘের মানবাধিকার রা-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ধনী ও শক্তিশালী রাষ্ট্রের হাত মোচড়ানো কঠিন, জোর খাটানো অসম্ভব। কিন্তু ছোট ও দুর্বল দেশকে শায়েস্তা ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শক্তিশালী দেশগুলো দেখা যায় প্রায়ই হিউমেনিটারিয়ান ইন্টারভেনশানের অস্ত্র ব্যবহারে সদাই ব্যাগ্র থাকে। রেজিম চেইঞ্জ বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সরকার উৎখাত বা বদল, কিম্বা ‘নেশান বিল্ডিং’ বা যুদ্ধে একটি জনগোষ্ঠিকে বিধ্বস্ত ও ধ্বংস করে দিয়ে তাদের ‘জাতি’ হিসাবে গড়বার তামাশা এই হস্তেেপর নীতি ও কৌশলেরই সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী জড়িত। দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রা আশু কর্তব্য হয়ে উঠেছে। 
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের এই হুঁশিয়ারির রাজনৈতিক তাৎপর্য কী সেটা এই মুহূর্তে নির্ধারণ করা যাবে না। এর মধ্য দিয়ে তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকেও সতর্ক করলেন, সজাগ হতে বললেন। জাতিসঙ্ঘ যাই করুক বাংলাদেশের পরিস্থিতি সরাসরি এখন দিল্লির ভূমিকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে মতাসীনদের বিরুদ্ধে আন্দোলন এখন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দিল্লির হস্তেেপর বিরুদ্ধে সংগ্রামে রূপ নিচ্ছে। এ লড়াই আসলে সার্বভৌমত্ব রার লড়াইয়ে পরিণত হতে চলেছে। ভারতের পত্রপত্রিকায় ক্রমাগত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে। জনগণের আত্মমর্যাদা বোধ ও স্বাধীন সত্তা আরো অপমানিত হলে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে শুধু দিল্লির নয় আন্তর্জাতিক মাথাব্যথার কারণ হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দিল্লির হস্তপে বন্ধ করাই এর প্রাথমিক সমাধান। নইলে এ লড়াই চরিত্রের দিক থেকে সার্বভৌমত্ব রার লড়াইয়ে রূপ নিতে বাধ্য। 
নবনেথেম ‘নাবি’ পিল্লাই মানবাধিকার কর্মীদের কাছে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি তামিল, কিন্তু দণি আফ্রিকার মানুষ। দণি আফ্রিকার হাইকোর্টে তিনিই প্রথম নারী বিচারক, যিনি বর্ণে সাদা নন। আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে) তিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের কাছে তিনি তখন থেকেই পরিচিত। রুয়ান্ডার গণহত্যা বিচারের জন্য গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনালের তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের হাইকমিশনার হিসাবে তিনি চার বছরের জন্য যোগ দিয়েছিলেন ২০০৮ সালে; মেয়াদ ২০১২ সালে শেষ হয়েছে, কিন্তু তারপর আরো দুই বছরের জন্য তাঁর দায়িত্বের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। 
নবনেথেম ‘নাভি’ পিল্লাইয়ের সতর্কবাণী আমরা ইতবাচক হিসাবেই নিচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণেরও একে ইতিবাচক নজরদারি হিসাবেই দেখবে। কিন্তু একই সঙ্গে এই আশংকার কথাও তাঁকে জানিয়ে দেওয়া দরকার যে, এই সতর্কবাণী বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক নজরদারির অধীনে নিয়ে গিয়ে পরাশক্তির হস্তেেপর শর্ত তৈরি করার পদপে যেন না হয়। সত্যিকার অর্থেই তাঁর হুঁশিয়ারি যেন মানবতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যারা অপরাধ করছে তাদের জন্য হুঁশিয়ারি হয়। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর যেন কোন আঘাত না হয়। 
এই আশা করি। 
২ ডিসেম্বর ২০১৩। ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২০। আরশিনগর। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন