রবিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৩

নির্মল সেন : জানা-অজানা কথা


বাংলাদেশে এখন নিরাপদে বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। তাই আজকাল নেই স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা। দেশ ও জাতির এমন এক চরম দুঃসময়ে চলে গেলেন নির্মল সেন, যার কলমের একটি শ্রেষ্ঠ লেখার শিরোনাম ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’। এটা তার ব্যক্তিগত বিপদতাড়িত আকুতি নয়, বরং সমকালে জাতি যে সঙ্কটে ছিল বিপন্ন, তারই প্রতিফলন। আর ওই উপসম্পাদকীয় কলামের বক্তব্যের সাথে আজকের বাংলাদেশের বৈরী সময়ের বিস্ময়কর মিল। প্রবীণ সাংবাদিক নির্মল সেনের লেখাটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব পেয়েছে তার সৎ সাহস, দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেমের নিরিখে। অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলায় ১৯৭৩ সালের ১৬ মার্চ সে লেখা ছাপা হয়েছিল। আজকের মতো তখনো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়।
সে নিবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার মাত্র ৯ দিন আগে, ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ম্যান্ডেট লাভের সে নির্বাচনে আগে থেকেই ক্ষমতাসীন, আওয়ামী লীগই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত, এটা যেমন সত্য; তেমন এ কথাও অনস্বীকার্য, এ দেশের নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ ও সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনী অনিয়ম, সন্ত্রাস ও কারচুপির সূচনাও তখন। বিরোধী দলের সম্ভাবনাময় ও প্রতিবাদী নেতাদের বিজয় নস্যাৎ করে পার্লামেন্টে অবাধ আধিপত্যের লক্ষ্যেই সেদিন ক্ষমতাসীনেরা এই অন্যায়, অনৈতিক ও লজ্জাকর ভূমিকায় নেমেছিলেন। এর শিকার হয়ে যারা তখন মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি কিংবা সর্বাধিক ভোট পেয়েও ঘোষিত হননি নির্বাচিত হিসেবে, তাদের মধ্যে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল, ড. আলীম আল রাজী, রাশেদ খান মেনন, আবদুর রশীদ ইঞ্জিনিয়ার, কাজী হাতেম আলী প্রমুখ। তাদের মধ্যে শেষোক্ত জন অর্থাৎ কমরেড হাতেম আলী ছিলেন সাংবাদিক নির্মল সেনের রাজনৈতিক সংগঠন শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের অন্যতম নেতা। নরসিংদীর এই ত্যাগী ও সাধারণ জীবনযাপনকারী মানুষটি সম্পর্কে আমার জানার সুযোগ হয়েছিল ঘটনাক্রমে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডে হাতেম আলীর বোনের পরিবার আর আমরা বহু দিন পাশাপাশি ফ্যাটে ছিলাম। তার ভগ্নিপতি মরহুম প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে নির্মল সেন সম্পর্কেও অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়েছিল। নির্মল সেনের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী কাজী হাতেম আলী মাঝে মাঝে আসতেন বোনের বাসায়। সেই সুবাদে আমার পরিচয় ঘটে তার সাথে। দীর্ঘ শ্মশ্রুমণ্ডিত মানুষটি কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। নির্মল সেনের বিভিন্ন লেখা, বক্তব্য ও সাক্ষাৎকারে বারবার এসেছে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে ক্ষমতার নির্লজ্জ প্রয়োগ এবং তার ছোট দলটির বড় প্রার্থী, হাতেম আলীর বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার ট্র্যাজেডির কথা।
নির্মল সেন ছাত্ররাজনীতি, শ্রমিক-রাজনীতি এবং বৃহত্তর রাজনীতিÑ তিনটিতেই সম্পৃক্ত ছিলেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন অনেক সময়ে। সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক মিশনের মাঝে সাংবাদিকতায় এসেছেন। সেটাকে আকস্মিক ঘটনা না বলে তার সামগ্রিক রাজনীতির অনুকূল ও সহায়ক ভূমিকা বলাই শ্রেয়। তিনি ছিলেন নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট রাজনীতির সংগঠক। ১৯৫৮ সালে প্রথম সামরিক শাসন জারি করার পর যেকোনো সময়ে তার ধরা পড়ার আশঙ্কা ছিল। আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ইত্তেফাকের মালিক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ছিলেন কমিউনিজমবিরোধী এবং মার্কিনপন্থী হিসেবে অভিহিত, জননেতা সোহরাওয়ার্দীর ঘোর সমর্থক। তবে ব্যক্তিজীবনে ছিলেন উদারমনা। তাই নির্মল বাবুর মতো একজন ‘মার্কা মারা’ কমিউনিস্টের ইত্তেফাকে কাজ নিতে অসুবিধা হয়নি। অবশ্য হয়নি শেষ রক্ষা। বহু রাজনৈতিক নেতাকর্মীই নানা অভিযোগে গ্রেফতার হচ্ছিলেন জেনারেল আইয়ুবের সামরিক সরকারের হাতে। নির্মল সেনও বন্দী হয়ে কয়েক বছর জেলে কাটাতে বাধ্য হলেন।
১৯৬১ সালে নির্মল সেন মুক্তি পেয়ে আবার পত্রিকার জগতে ফিরে আসেন। তখন থেকে একটানা অর্ধশতাব্দী বিস্তৃত সাংবাদিকজীবন। কাজ করেছেন এমনকি, বহুলালোচিত গভর্নর মোনেম খানের দৈনিক পয়গাম পত্রিকায়ও। এখন বামপন্থী ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী মহলের কাছে ‘জেহাদ’ শব্দটি ভয়াবহ অর্থ বহন করে। অথচ তারাই এক সময়ে জনগণের মুক্তির ‘জেহাদে’ অবতীর্ণ হওয়ার ঘোষণা দিতেন রাজনীতির ময়দানে। আর এখন ইসলাম ধর্ম সংশ্লিষ্ট বইপুস্তক ‘জেহাদি’ হিসেবে অনেকের কাছে বিষম আপত্তিকর ও অপরাধতুল্য! কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হলো, নির্মল সেনদের সহকর্মী বামপন্থীরাও তাদের ঘোষিত শত্রু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মতো জেহাদ-আতঙ্কে ভুগছেন। যা হোক, ‘জেহাদ’ নামের দৈনিক পত্রিকায় নির্মল সেন, আবেদ খান, আবদুল গাফফার চৌধুরীর মতো বামপন্থীরা স্বেচ্ছায় সাগ্রহে কাজ করেছেন। কোনো কোনো বামপন্থীর সাংবাদিকতার হাতেখড়ি সেখানেই এবং তারা পরবর্তীকালে সাংবাদিক হিসেবে সুপরিচিত হয়েছেন। জানা যায়, দৈনিক জেহাদ পত্রিকার মালিক ছিলেন বিখ্যাত খোশরোজ কিতাব মহলের স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দীন আহমদ। দৈনিক আজাদ-খ্যাত সম্পাদক, সাহিত্যিক ও ভাষাসৈনিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন এই স্বল্পায়ু পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছিলেন। পত্রিকাটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তদানীন্তন মুসলিম লীগ সরকারের কোনো কোনো বড় নেতাও উপস্থিত ছিলেন পুরান ঢাকায়। শামসুদ্দীন সাহেব পরে হন দৈনিক পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, আর নির্মল সেনও শুরুতেই এতে যোগ দেন বার্তা বিভাগের পালাপ্রধানরূপে। মাঝে কিছু দিন সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় কাজ করেছেন। এর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। বারবার মালিকানা বদলের সাথে এই পত্রিকার মতাদর্শও বদলে গেছে। প্রায় তিন দশক ধরে পত্রিকাটি একটি ইসলামপন্থী দলের ঘনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে।
দৈনিক পাকিস্তানে (পরে দৈনিক বাংলা) নির্মল সেনের কর্মজীবন সাংবাদিকদের জন্য আদর্শস্থানীয়। পাক আমলে আইয়ুব খান সরকারের প্রেস ট্রাস্টের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়েছে এটি। বাংলাদেশ আমলেও শেষ পর্যন্ত ছিল সরকারপরিচালিত। তবে নির্মল সেনের মতো দক্ষ লিখিয়ে ও সমাজঘনিষ্ঠ সাংবাদিকেরা এর মধ্যেই বিভিন্ন সময়ে সাহসিকতার সাথে জনগণের অধিকার ও সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। দৈনিক পাকিস্তান আত্মপ্রকাশ করে ১৯৬৪ সালের ৬ অক্টোবর। স্বৈরাচারী শাসক আইয়ুব খানের ক্ষমতার ভিত্তি, কথিত বুনিয়াদি গণতন্ত্র, তথা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে সরকার এই পত্রিকা বের করেছিল। দুই মাস পরেই ছিল আইয়ুব ‘পুনর্নির্বাচিত’ হওয়ার প্রহসনমূলক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। অন্য দিকে নির্মল সেনসহ দৈনিক পাকিস্তানের সাংবাদিকদের অনেকেই ছিলেন সেই সরকারের ঘোর বিরোধী।
নির্মল সেন দৈনিক পাকিস্তান (পরে বাংলা) প্রকাশের দিনটি থেকে ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা সরকার ঐতিহ্যবাহী পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩৩ বছর একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। পরিবারের মা-ভাইসহ সবাই দেশ ছেড়ে গেছেন, তিনি যাননি। বামপন্থী রাজনীতি অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন, তিনি ছাড়েননি। তিন দশকে অনেকেই ওই পত্রিকা ছেড়ে গেছেন, তিনি ছাড়েননি। নির্মল সেন দৈনিক বাংলায় লিখতেন ‘অণিকেত’ নামে। আরেকজন সহকারী সম্পাদক কবি শামসুর রাহমান লিখতেন ‘মৈনাক’ নামে। দৈনিক বাংলার সম্পাদকীয় বিভাগে মেধাবী ও খ্যাতনামা লেখকদের যে সমাহার ছিল, তা অতুলনীয়। সেখানে ওই দু’জন ছাড়াও ছিলেন সানাউল্লাহ নূরী, হাসান হাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ, ফজল শাহাবুদ্দীন, খোন্দকার আলী আশরাফ প্রমুখ।
নির্মল সেন অকৃতদার। রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় আকর্ণ নিমজ্জিত মানুষটির ঠিকানা ছিল মূলত প্রেস কাব ও পার্টি অফিস। এ হিসেবে ‘অনিকেত’ (ঠিকানা বা আবাস নেই যার) ছিলেন বলা যায়। ২০০৩ সালে যখন স্ট্রোকে চিরতরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন বয়স প্রায় ৭৫। এর আগ পর্যন্ত দেখা যেত, পাজামা-পাঞ্জাবি আর স্যান্ডেল পরা মানুষটি দ্রুত গতিতে তোপখানা রোডের ফুটপাথে হাঁটছেন। গন্তব্য জাতীয় প্রেস কাব। অনেক সময় কাব চত্বরে নবীন-প্রবীণ নির্বিশেষে সাংবাদিকদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে আলাপে মশগুল দেখা যেত তাকে।
নির্মল সেনের বিখ্যাত কলাম ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’। এ নামে বইও আছে তার। ‘জান দেব তো গ্যাস দেব না’, ‘লজ্জা দিলে তো আবরণ দিলে না কেন?’সহ অনেক লেখার জন্য সাংবাদিকেরা তো বটেই, সচেতন নাগরিকেরাও তাকে মনে রাখবেন। স্বাধীনতার পরবর্তী বৈরী পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি একবার বলেছিলেন, নিজ দেশের সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা এবং গণতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপের কথা সরাসরি বলা যায় না। তাই ইথিওপিয়ার স্বৈরাচারী শাসক ও দুর্ভিক্ষের দৃষ্টান্ত দিয়ে বক্তব্য বোঝাতে হয়।
নির্মল সেনের উপসম্পাদকীয় কলাম শুধু বিষয় ও বক্তব্য নয়, ভাষা ও প্রকাশভঙ্গির দিক দিয়েও অনন্য। ছোট ছোট বাক্যে, সহজ শব্দচয়নে চমৎকারভাবে লিখে যেতেন। তাই তার লেখা হয়ে উঠত প্রাঞ্জল ও গতিময়। সুখপাঠ্য এই লেখাগুলো পড়া শুরু করলে শেষ না করে থামা যেত না। আমার সাংবাদিকজীবনের প্রথম দিকে দীর্ঘ বাক্যে লিখতাম অনেক সময়। একজন সিনিয়র সাংবাদিক তখন উপদেশ দিলেন নির্মল সেনের লেখা পড়তে। ভাবলাম, বয়স যত বাড়ে লেখায় বাক্যের দৈর্ঘ্য কি ততই কমে যায়?
নব্বই দশকের প্রথম দিকে আমাদের সাংবাদিকসমাজ জাতীয় রাজনীতির প্রভাবে অন্যান্য পেশাজীবীর মতো দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। নির্মল সেন এটা মেনে নিতে পারেননি। ১৯৯৭ সালে দৈনিক বাংলা বন্ধ করে দিয়ে এর সাংবাদিক-কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা দিতে আওয়ামী লীগ সরকার টালবাহানা শুরু করে। তখন তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন। বৃদ্ধ বয়সেও নির্মল সেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতে শামিল হয়ে অনশন পর্যন্ত করেছেন। তখন বলেছিলেন, “সাংবাদিক ইউনিয়ন দু’ভাগ হয়ে যাওয়ার পর আর কোনো পক্ষের অনুষ্ঠানে যাই না। তবে দৈনিক বাংলার স্টাফদের এই আন্দোলন বিশেষ কোনো গ্রুপের নয় বলে এতে অংশ নিচ্ছি।” সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবির আন্দোলনে কিছু দিন আগে ঢাকায় এসে অংশ নিয়েছেন। তখন প্রেস কাব গেটে হুইল চেয়ারে বসে নির্মল সেন শেষবারের মতো আহ্বান জানান সাংবাদিক ঐক্যের। স্বস্তির বিষয় হলো, পেশাগত মর্যাদা, নিরাপত্তা ও দাবিদাওয়া আদায় তথা সংবাদপত্রসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্বার্থে সাংবাদিকদের বিভাজন দূর করার উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে।
নির্মল সেন রাজনৈতিক মতাদর্শের বেলায় আজীবন বামেই ছিলেন। ‘ডান-বাম’ কুচকাওয়াজ করেননি রাজনীতির ময়দানে। প্রথম বয়সেই আরএসপির বিপ্লবের দীক্ষা নিয়েছিলেন (কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীও ছাত্রজীবনে এ দলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন)। প্রথম আলো নির্মল সেনের মৃত্যু সংবাদে লিখেছে, ‘আরএসপি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের নীতিতে বিশ্বাসী ছিল।’ ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান জন্মের পর ‘লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়, ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’ ধ্বনি তুলে ভারতে কমিউনিস্টরা বি’টি রণদীভের নেতৃত্বে সশস্ত্র তৎপরতায় অবতীর্ণ হন। ’৪৮ সালে অন্ধপ্রদেশের তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ এবং ’৫০ সালে রাজশাহী অঞ্চলে সাঁওতাল বিদ্রোহ এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। নির্মল সেনদের দল এ দেশে গোপনে কাজ করত। ’৪৮ সালেই তিনি গ্রেফতার হন ডিগ্রি পরীক্ষার ঠিক আগের দিন। এরপর বহুদিন কারাগারে কাটিয়ে এক সময়ে তিনি ডিগ্রি ও মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছাত্রজীবনের ইতি টানেন। বরিশালে বিএম কলেজে ভিপি পদে নির্বাচন করার সময় তার কর্মী হিসেবে পোস্টার আঁকতেন গোলাম মুস্তাফা, যিনি পরে অভিনেতা হিসেবে বিখ্যাত হয়েছিলেন।
পঞ্চাশের দশকে গোপন কমিউনিস্ট সংগঠনের সিদ্ধান্তমাফিক আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে দফতর সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। পরে পার্টির নির্দেশেই বামপন্থীদের আপন সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নে ফিরেছেন।
নির্মল সেনের সাংবাদিক পরিচয়ের সাথে রাজনৈতিক ভূমিকাও ছিল। অতএব তার সমর্থক যেমন ছিল, তেমনি ছিল সমালোচকও। রাজনীতি করলে পক্ষ-বিপক্ষ আর বিতর্ক থাকবেই। তাই নির্মল সেনেরও রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিন্নমত, এমনকি বিরোধিতার অবকাশ ছিল। তবুও তার কতগুলো বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা স্বীকার করে নিতে হয়। তিনি আজীবন নির্লোভ ত্যাগী জীবন যাপন করে গেছেন। তার মতাদর্শ বহু লোক গ্রহণ করল কি করল না; তার দল ক্ষমতার রাজনীতিতে সফল হয়েছে কি হয়নিÑ এসব বিবেচনা না করে নিজ চিন্তাচেতনা ও মতবাদে ছিলেন অটল অবিচল। আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন বিপ্লবে বিশ্বাস করেছেন, সমাজবাদী রাষ্ট্র ও সমাজই কৃষক শ্রমিকের সার্বিক মুক্তির গ্যারান্টি। কৈশোর ও তারুণ্যে উদ্বুদ্ধ ছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবে। গত শতকের চল্লিশের দশকের প্রথম ভাগে যোগ দেন রেভল্যুশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টি বা আরএসপিতে, যারা অস্ত্রপ্রয়োগে ও সহিংস উপায়ে কমিউনিস্ট বিপ্লবে বিশ্বাসী ছিলেন। দলটি পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল। আরএসপির বাংলা করলে অর্থ দাঁড়ায়Ñ বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক পার্টি। নির্মল সেন সর্বশেষ যে দল গঠন করে আমৃত্যু জড়িত ছিলেন, সেই ুদ্র দলটির নাম গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি। অর্থাৎ নির্মল সেন বিপ্লবের ধ্যানধারণা ত্যাগ করেননি কখনো। আর গণতন্ত্র বলতে তিনি বামপন্থীদের উচ্চারিত ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ই বুঝতেন, প্রচলিত ‘বুর্জোয়া গণতন্ত্র’ নয়।
নির্মল সেনের নামের সাথে সম্ভবত স্কুলজীবনেই পরিচয় ঘটেছিল আমার। তখনো তিনি সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা। ’৬৯ সালে একটা ছোট ঘটনা ঘটে, যার তাৎপর্য ছিল বড়। তা হলো ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের মাঝেই হঠাৎ পত্রিকায় দেখেছিলাম শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের আত্মপ্রকাশের খবর। পাকিস্তান আমলে সমাজতন্ত্র বা সমাজবাদের কথা বলা সরকারের দৃষ্টিতে যেমন নিদারুণ আপত্তিকর ছিল, তেমনি অন্যদের কাছে মনে হতো চমক লাগানো ব্যাপার। শুধু ধর্মীয় মহলই নয়, গণতন্ত্রী হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক মহলেও সমাজতন্ত্রে বিষয়ে আপত্তি ও বিরোধিতা ছিল। নির্মল সেনের সাথে যারা কৃষক শ্রমিক সমাজবাদী দলের প্রতিষ্ঠায় ছিলেন তাদের মধ্যে শ্রমিক নেতা রুহুল আমিন কায়সার (নোয়াখালী) ও মোখলেসুর রহমান, ব্রিটিশ আমলের সশস্ত্র রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িত অতীন রায় (কুমিল্লা) ও ‘মহারাজ’ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী (কিশোরগঞ্জ), আইনজীবী খান সাইফুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। বৃদ্ধ ত্রৈলোক্যনাথ কিছু দিন পরই চিকিৎসার্থে কলকাতা গিয়ে সেখানে মারা যান। সাইফুর রহমান রাজনীতি ত্যাগ করে আইন ব্যবসায়ে পুরো মনোযোগ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দক্ষ আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যা মামলায় আসামিপক্ষের অন্যতম প্রধান আইনজীবী হিসেবে তিনি পেশাগত ভূমিকা পালন করেছেন যথাসাধ্য।
আরো অনেক সাংবাদিক ও রাজনীতিকের মতো নির্মল সেনও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে তৎপর ছিলেন। তখন নানাভাবে সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বই লিখেছেন বেশ কয়েকটি। প্রকাশিত আটটি বইয়ের মধ্যে একটি বই স্মৃতিচারণমূলকÑ আমার জীবনে ’৭১-এর যুদ্ধ। এটি এক সময় সম্ভবত অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক খবরের কাগজে ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছিল। সে লেখা বিশেষ দৃষ্টিকোণ এবং নানা অজানা তথ্য ও অভিজ্ঞতার কারণে বেশ আকর্ষণ করত পাঠকদের। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণার জন্য বইটি গুরুত্বপূর্ণ। এতে এমন অনেক অপ্রিয় সত্য আছে, যা আওয়ামী মহলের কাছে মোটেও উপাদেয় হবে না। নির্মল সেন বলতে চেয়েছেন, (ক) আওয়ামী লীগের যুদ্ধের পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি ছিল না, (খ) যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের একটা বড় অংশেরই স্বাধীনতার লক্ষ্য সম্পর্কে ছিল না সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ধারণা, (গ) শুধু নতুন একটা দেশ পেলেই জনগণের মুক্তি আসবে না, অর্থাৎ নিছক রাজনৈতিক স্বাধীনতা পূরণ করবে না জাতির প্রত্যাশা। প্রয়োজন অর্থনৈতিক শোষণ আর সামাজিক বৈষম্যের অবসান। নির্মল সেন ’৭১-এ বামপন্থীদের সঙ্কট ও দুর্ভোগও তুলে ধরেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আরো অনেকের মতো নির্মল সেন দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তার পরিবারের সবাই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই সেখানে গিয়ে স্থায়ী বসতি গড়েছিলেন। যুদ্ধের সময় তার মা থাকতেন এক পুত্রের কাছে, কলকাতা থেকে অনেক দূরে। একটি চমকপ্রদ ঘটনার উল্লেখ আছে নির্মল সেনের বইতে। ’৭১-এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি ছদ্মবেশে ঢাকায় ছিলেন বেশ কিছুদিন। যুদ্ধকবলিত স্বদেশে ঢাকা নগরীর পরিস্থিতি দেখা এবং দলের লোকজনের খোঁজখবর নিতে ফিরে এসেছিলেন। ধরে নেয়া যায়, নিরাপত্তার স্বার্থে নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য তিনি সম্ভাব্য সব উপায় অবলম্বন করেছিলেন। তখন অনেকেই নাম পাল্টে, মুসলমান সেজে, লম্বা দাড়ি রেখে, মাথা কামিয়ে, টুপি লাগিয়ে, ভিন্ন পোশাক পরে পরিচয় লুকাতেন। নির্মল সেনের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জেনেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ‘আবদুল খালেক’ নামে ঘুরে বেড়াতেন। তখন ঢাকায় রায়েরবাজারসহ কোথায় কোথায় গেছেন, কার সাথে দেখা হয়েছে, এসব উল্লেখ করেছেন নিজেই। বামপন্থী হিসেবে আত্মগোপন করা এবং অন্য দলে ঢুকে পড়াসহ বিচিত্র অভিজ্ঞতা তার ছিল। অতএব ’৭১-এ যুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলোতে একেবারে রাজধানী ঢাকায় Camouflage  করে ঘোরাফেরা তার মতো ঝানু কমিউনিস্টের পক্ষে অসম্ভব ছিল না।
নির্মল সেন শ্রমিক-রাজনীতির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। ’৬৯ সালে এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুটমিলে গঠন করেন সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন। ১৯৮৪-’৯৪ সালে ছিলেন এর সাধারণ সম্পাদক। তার ট্রেড ইউনিয়নের এই তৎপরতা সাংবাদিক অঙ্গনেও ছিল। সাংবাদিকদের রুটি-রুজি এবং পেশাগত নিরাপত্তা ও মর্যাদার দাবি আদায়ের আন্দোলনে তিনি বহু বছর মহানগর ও জাতীয় পর্যায়ে সক্রিয় থেকেছেন। নির্মল সেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কয়েক বছর ধরে। তখন মুজিব আমলের ঘটনাবহুল সময়। সরকারপ্রধানের সাথে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক সত্ত্বেও নির্মল সেন সাংবাদিকদের দাবিদাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কাছে নতজানু হননি। নিজের লেখায় তখনকার বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেছেন। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর পর একদলীয় ব্যবস্থার আওতায় গণহারে সংবাদপত্র নিধনের অবিশ্বাস্য ট্র্যাজেডি নেমে এসেছিল। চারটি দৈনিক পত্রিকা সরকারি নিয়ন্ত্রণে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়ে আর সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়। উপায় না দেখে সাংবাদিকদের অনেকেই তখনকার একমাত্র বৈধ দল বাকশালে (আওয়ামী লীগের ঈষৎ পরিবর্তিত রূপ) যোগ দেন। নির্মল সেনসহ সাংবাদিক নেতাদের জন্য এটা ছিল এক মহাপরীক্ষা। প্রবীণ রাজনীতিক আতাউর রহমান খান সংসদে বিরোধী গ্রুপের প্রধান হয়েও ‘নতুন’ এই দলে যোগ দিলেন। এ দেশের কিংবদন্তিতুল্য বামপন্থী নেতা, হাজী দানেশ পর্যন্ত একই পথ ধরলেন। এমন পরিস্থিতিতেও বিএফইউজে সভাপতি নির্মল সেন এবং ডিইউজে সভাপতি কামাল লোহানী বাকশালে যোগ দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে নির্মল সেন নিজের বক্তব্য ও লেখায় বিস্তারিত জানিয়ে গেছেন। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয় তার একটি স্মরণীয় উক্তির কথা। একদলীয় শাসনব্যবস্থার অবসানে বহুদলীয় ব্যবস্থা তথা গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছিল। নির্মল সেন বলেছিলেন, ‘সেদিন যেন আমার বুকের ওপর থেকে একটি ভারী পাথর সরে গিয়েছিল।’
নির্মল সেন বামপন্থী ছিলেন। অতএব ডানপন্থীরা তাকে পছন্দ করার কথা নয়। আবার তিনি এমন বামপন্থীও ছিলেন না, যারা নানা ঘটনাপ্রবাহ আর বিভিন্ন অবস্থান গ্রহণের পর এখনকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বলয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বলা চলে, নির্মল সেন দেশের দু’টি বড় দল থেকেই সমদূরত্ব রেখে চলতেন রাজনীতির ক্ষেত্রে। ১৯৮৬ সালে এরশাদ আমলের বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিরোধিতা করে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট থেকে বামপন্থী ৫ দল বেরিয়ে আলাদা জোট হিসেবে মাঠে তৎপর থাকে। এই বামজোটের একজন প্রধান নেতা ছিলেন নির্মল সেন। মজার ব্যাপার হলো, ১৫ দল থেকে ৫ দল কমে গেলে যেখানে বাকি থাকে ১০টি দল, সে ক্ষেত্রে জোটটি এরপর ‘৮ দল’ হিসেবে গণ্য হয়েছে সবার কাছে। দু’টি দলের হদিস মেলেনি। সত্যিই, খাতার অঙ্ক আর রাজনীতির অঙ্ক এক নয়। যা হোক, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ৮ দল, খালেদা জিয়ার ৭ দল ও জামায়াতে ইসলামীর সাথে ৫ দলও তাদের সীমিত সাধ্য নিয়ে তৎপর ছিল। আন্দোলনের শেষপর্বে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে এরশাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ‘তিন জোটের রূপরেখা’ প্রণীত হয়। নির্মল সেন এ ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন।
এক বছর আগে আবার স্ট্রোকে বাকশক্তি সম্পূর্ণ লোপ না পাওয়া পর্যন্ত মুখে বলে অন্যকে দিয়ে কলাম লেখাতেন নির্মল সেন। এভাবে গ্রামের বাড়ি থেকে লেখা পাঠাতেন আমার দেশসহ বিভিন্ন দৈনিকে। কয়েক বছর আগে নিজ এলাকায় সড়ক ও সেতুর দুরবস্থায় মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ তুলে ধরেছিলেন। দেখিয়েছিলেন, খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকাও এখনো কতটা পশ্চাৎপদ। এ দিকে সরকার ‘ডিজিটাল’ দেশ বানানোর ব্যস্ততার মাঝে ২০২১ সালের স্বপ্ন দেখছে!
এবার মৃত্যুর আগে নির্মল সেন হাসপাতালে ছিলেন দুই সপ্তাহের বেশি। এ সময়ে দেশের দু’টি বড় দলের মধ্যে প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাকে সেখানে দেখতে গিয়েছেন। জানা গেছে, ২২ তারিখে ঢাকার উদ্দেশে শেষবারের মতো রওনার আগে গোপালগঞ্জে পরিজন ও সাংবাদিকদের কাছে তিনি শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন চারটি। (১) গ্রামে নিজের বাড়িতে মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা (এ জন্য দেড় একর জমি দান করে গেছেন), (২) তাকে মরণোত্তর কোনো পদক বা সম্মাননা সরকার দিলে তা প্রত্যাখ্যান করা, (৩) মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালে মৃত্যুকালে তাকে যে কথাগুলো বলে গেছেন, তা বামপন্থী নেতাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা, (৪) শ্মশানে দাহ না করে তার মরদেহ মানুষের কল্যাণে কোনো মেডিক্যাল কলেজে দান করা (বিএসএমএমইউকে দেয়া হয়েছে)। ভাসানী কী বলে গেছেন, তা জানতে আগ্রহ সবার।
নির্মল সেনের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তিনি যে শোষণহীন সমাজ চেয়েছেন, তার সম্ভাবনা আজো দেখা যাচ্ছে না। স্বাভাবিক মৃত্যুর যে নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন দেশের মানুষের জন্য ত্রিশ বছর আগে, তা এখন প্রায় দুর্লভ। গুম, খুন, হামলা, হত্যা, অত্যাচার অপহরণ, ক্রসফায়ার-এনকাউন্টার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্ষমতার তাণ্ডব আর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস মিলে শান্তিতে বেঁচে থাকা তো দূরের কথা, স্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়ার আশা করাও এখন কঠিন। এই চরম অস্বাভাবিকতার মাঝে নির্মল সেনের কথা মনে পড়বে বারবার। আজ চাই তার মতো স্পষ্টবাদী, সমাজসচেতন, সাহসী ও সুদক্ষ কলামিস্ট তথা সাংবাদিক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন