মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১২

হুমায়ূন, ক্যান্সার ও কৃষি



হুমায়ূন আহমেদ বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাস যুক্তরাষ্ট্রে চিকিত্সা করেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৯ জুলাই তিনি মারা যান। সারা দেশে হুমায়ূন পাঠক ও ভক্তদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমরা সবাই ব্যথিত। ক্যান্সার রোগ সম্প্রতিকালে ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। তারা কেউ বিখ্যাত নয়, ফলে তাদের কথা আমরা জানতে পারি না। তাদের মৃত্যু আমাদের নজরের বাইরে ঘটছে। ক্যান্সার বা কর্কট রোগে মৃত্যু ‘স্বাভাবিক’ মৃত্যু নয়। অথচ এই মৃত্যু ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে ক্রমেই। মানুষ মাত্রই মরণশীল। হুমায়ূন তার ডাক্তারকে প্রশ্ন করেছিলেন, আমি কি মারা যাব? ডাক্তার বলেছিলেন, হ্যাঁ। আমরা সবাই মরব। কিন্তু পরক্ষণেই বলেছিলেন, তবে আমি তোমাকে ক্যান্সারে এত তাড়াতাড়ি মরতে দেব না। সেটা ঘটেনি। মানুষ মরে, এটা স্বাভাবিক এবং অবধারিত; কিন্তু মানুষকে ক্যান্সারে মরতে হবে—এটা অস্বাভাবিক এবং তা অবধারিত হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। অথচ ক্যান্সারে মৃত্যুকে আজকাল আমরা স্বাভাবিক ধরে নিয়েছি। এটা ভয়াবহ ব্যাপার। হুমায়ূনের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। অথচ ক্যান্সারে আমাদের মৃত্যু হতে হবে কেন এই অতি প্রাথমিক প্রশ্ন আমরা করছি না। প্রশ্ন করতেও ভুলে গিয়েছি। ক্যান্সার কি একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে? হুমায়ূনের ভাই জাফর ইকবাল বলেছেন, মৃত্যু তার ক্যান্সারে হয়নি, হয়েছে কোনো একটি অজানা ইনফেকশনে। সেটা হলেও তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন, এটা তো ঠিক। হুমায়ূনের শোকে আমরা শোকাহত। এভাবেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া আরও হাজারো মানুষের আত্মীয়-স্বজনদের বুকফাটা কান্না আমরা কেউ শুনতে চাই না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৮ সালের হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭৬ লাখ মৃত্যুর কারণ ক্যান্সার। সব কারণে মৃত্যুর হিসাব ধরলে প্রতি ১০০টি মৃত্যুর মধ্যে ১৩টিই ঘটে ক্যান্সারে।
বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা কত তার কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য এখনও নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রায় দেড় লাখ মানুষ মারা যায়, আক্রান্ত হয় প্রায় ২ লাখ মানুষ। এত মানুষের চিকিত্সা নিশ্চয়ই হয় না, অনেকের তো ধরাই পড়ে না; কিন্তু তারা মরে ঠিকই। আজকাল গ্রামে-গঞ্জেও ক্যান্সারে মৃত্যুর কথা অনেক বেশি শোনা যাচ্ছে। 
 
শুনেছি হুমায়ূন আহমেদ একটি ক্যান্সার হাসপাতাল করতে চেয়েছিলেন। এটা নিঃসন্দেহে তার ভালো চিন্তার পরিচয়। বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিত্সার যে ব্যবস্থা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম, আর প্রাইভেট হাসপাতালে গেলে জায়গা-জমি, বাড়িঘর বিক্রি ছাড়া চিকিত্সা হবে না। বিত্তবানরা বিদেশে গিয়ে চিকিত্সা করান, কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ বাধ্য হয়ে। তাদেরও বিরাট অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে। ক্যান্সার চিকিত্সা নিয়ে চিন্তাভাবনা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
ক্যান্সার হওয়ার পর চিকিত্সা কেমন হবে তা খুব আলোচিত হয়। কিন্তু এই আলোচনা কেন হয় না যে ক্যান্সারের কারণ কী? আমি কোনো ডাক্তারি লেখা লিখছি না যে একটি তালিকা করে বলব ক্যান্সারের কারণগুলো কী! কিন্তু এটুকু আজ বলতে চাই, ক্যান্সারের কতগুলো জানা কারণ রয়েছে। যেমন—তামাক সেবন বা ধূমপান। তাছাড়া আরও বেশকিছু কারণ রয়েছে যার প্রতি আমরা নজর দিচ্ছি না।
সেরকম অন্য একটি প্রধান কারণ সম্পর্কে বলার জন্যই এই লেখা। হুমায়ূনের মৃত্যুকে উপলক্ষ করে লিখলে অনেকের বিশেষত হুমায়ূন ভক্তদের মনোযোগ পেতে পারি, সেই ভরসায় তার কথা দিয়ে শুরু করেছি। ক্যান্সারের আরেকটি প্রধান বিশ্বস্বীকৃত কারণ হচ্ছে, এখনকার খাদ্য উত্পাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা এবং রাসায়নিক বা তথাকথিত আধুনিক কৃষি। সোজা কথায়, খাদ্য ব্যবস্থাকে প্রকৃতিবিরুদ্ধ করে তার নানান পর্যায়ে বিকৃতি ঘটানো এবং পরিণতিতে খাদ্যকে বিষাক্ত করে তোলা। অথচ নদীমাতৃক এই দেশ পলিমাটিতে সমৃদ্ধ। তদুপরি প্রাণবৈচিত্র্যের সূতিকাগার। বাংলাদেশকে রাসায়নিক কৃষির বিষাক্ত পথে নিয়ে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না। বিজ্ঞান ও কৃেকৗশল আমাদের দরকার; কিন্তু প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রাণ রক্ষার বিজ্ঞান আত্মস্থ করার পরিবর্তে তাকেই আমরা ‘আধুনিক’ বিজ্ঞান বলে চালিয়ে যাচ্ছি যা আমাদের খাদ্য ব্যবস্থাক বিষাক্ত করে তোলে। আমরা আর্সেনিকের বিষে ও ক্যান্সারে মরি। আমাদের হুঁশ হচ্ছে না।
আমাদের দেশ এখনও কৃষিতে সমৃদ্ধ, বোধ করি এ নিয়ে কেউ তর্ক করবেন না। দেশের মানুষের খাদ্য সরবরাহের জন্য এখনও আমরা দেশের খাদ্য উত্পাদনের ওপর নির্ভরশীল এবং সেটাই হওয়া উচিত। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হতে পারা যে কোনো দেশের মানুষের জন্য সৌভাগ্যের। সে দিক থেকে দেখতে গেলে বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ, এখানে খাদ্য ফসলের বৈচিত্র্য ঐতিহাসিকভাবেই অন্য অনেক দেশের চেয়ে বেশি। তাকে রক্ষা করে অধিক ফলনের সম্ভাবনাও পৃথিবীর অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু আমরা সেদিকে যেতে চাই না। তাই আমাদের এত সুন্দর কৃষি ব্যবস্থাকে প্যান্ট-শার্ট পরানোর মতো আধুনিক করতে গিয়ে আমরা ধ্বংস করেছি। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে সেচ ও উফশী বীজনির্ভর করে তুলেছি। একেই নাম দেয়া হয়েছে ‘আধুনিক কৃষি’। ষাটের দশকে বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনেই তত্কালীন আয়ুব খান সরকার এই কৃষি পদ্ধতি চালু করেছিলেন, যার মূলেই ছিল রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার। ফোর্ড এবং রকফেলার ফাউন্ডেশন সহযোগিতা করেছিল এসব বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে কৃষিকে ‘উন্নত’ করতে। কারণ এসব বিষাক্ত দ্রব্যের বাজার চেয়েছিল তারা। এই আধুনিক কৃষির আরেক নাম দেয়া হয়েছে ‘সবুজ বিপ্লব’ বা এত্ববহ জবাড়ষঁঃরড়হ। এই বিপ্লব অধিক উত্পাদন করে মানুষকে ক্ষুধা থেকে বাঁচানোর কথা বলে জনগণের আস্থা অর্জন করেছিল। আসলে এর মূল কাজ ছিল ল্যাবরেটরিতে উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বীজের সঙ্গে কৃত্রিম সার ও কীটনাশক এবং তার সঙ্গে সেচ ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।
আমাদের দেশে কৃষিতে সরকারি সাহায্য মানেই হচ্ছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের জন্য ঋণ দেয়া কিংবা সরবরাহের ব্যবস্থা করা। আমাদের ‘স্বাধীনতা’র ধারণা কত অগভীর সেটা বোঝা যায় পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে এত সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করার পরও কৃষি কিন্তু বন্দী রইল সেই আয়ুব খানের আধুনিক কৃষির খাপের মধ্যে। আশ্চর্যের বৈ কী! একে রেখে দেয়া হলো মহা গৌরবের সঙ্গে। বিশ্বব্যাংক নিয়ে এখন সরকারের মহা বিপ্লবীপনা দেখছি; কিন্তু আধুনিক কৃষির বেলায় বিশ্বব্যাংক যখন বলেছে সার-কীটনাশকে ভর্তুকি দিতে তখন কম দামে সেসব কৃষকের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে, আর যখন তারা বলল আর ভর্তুকি দেয়া যাবে না তখন কৃষক বেশি দামেই কিনতে বাধ্য হলো। কৃষিটাই হয়ে গেছে রাসায়নিক। সার-বিষ না কিনলে তো কৃষি ঋণও পাওয়া যায় না। আবার যে বীজ সরকারের কাছ থেকে নেবেন বা বাজার থেকে কিনবেন, সে বীজটাই এমন যে সার-কীটনাশক ছাড়া ফলন পাওয়া কঠিন। একটা ভয়াবহ জালে আমরা আটকে পড়ে গেছি।

নির্দিষ্ট যে কিছু ফসলের জন্য সরকারের কৃষি উপকরণ সহায়তা দেয়া হয়, সেটা অবশ্যই উচ্চ ফলনশীল বীজ কিংবা হাইব্রিড হতে হবে। আধুনিক কৃষি শুরু হওয়ার পর থেকে সার-কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। বার্ষিক কৃষি পরিসংখ্যান গ্রন্থে (ণবধত্নড়ড়শ ড়ভ অমত্রপঁষঃঁত্ধষ ঝঃধঃরংঃরপং রহ ইধহমষধফবংয, ২০০৯) দেখেছি, ১৯৯৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ ক্রমে বেড়েই চলেছে। ১৯৯৩ সালে ছিল ৭৬৬০.৩৯ মেট্রিক টন, ২০০৭ সালে তা হয়েছে ৩৭৭১২.২০ মেট্রিক টন, অর্থাত্ ৩৯২ ভাগ বেড়েছে। উল্লেখ্য, হাইব্রিড ধান ও অন্য ফসলের হাইব্রিড বীজের ব্যবহার ১৯৯৮ সাল থেকে অনেক গুণ বেড়ে গেছে। সরকার পরিবর্তন হলেও সার বিষ ব্যবহারে খুব একটা পরিবর্তন আসে না, কিন্তু বর্তমান সরকার উন্নত প্রযুক্তির নামে কৃষিতে হাইব্রিড বীজের ব্যবহার বাড়িয়ে এবং কৃষিকে আরও বেশি বিষাক্ত করে সফলতার বাহ্বা নিচ্ছে। আমরা বোকা বনে আছি।
বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৩০০ কোটি মানুষের প্রধান কৃষিখাদ্য ফসল হচ্ছে ধান। এই ধানই আধুনিক কৃষির প্রধান ফসল, একে রাসায়নিক সার-কীটনাশক দিয়ে বিষাক্ত করে ফেলা হচ্ছে। ধানে নানা রকম কীটনাশকের ব্যবহার হয়। সরকার দাবি করছে, উফশীর পর হাইব্রিড ধান এনে তারা দেশের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে সক্ষম হয়েছেন। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী হাইব্রিডের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন এবং অন্য কারও কোনো বক্তব্য তিনি শুনতে চান না। তার এই না চাওয়া এক ধরনের ভীতির সৃষ্টি করে। তিনি জিএম প্রযুক্তির পক্ষে আছেন, যা সবই রাসায়নিক নির্ভর। হাইব্রিড ধান চাষে উফশীর চেয়েও বেশি পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় এবং এই ধানের ভাত মোটেও খাওয়া যায় না। খেয়ে শরীর ভালো থাকে না। কিন্তু সে কথা গরিব কৃষকের, কে শুনবে তাদের কথা!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা কৃষিতে খুব আগ্রহী এবং তারাই আবার কীটনাশকের বিক্রেতা। খোদ মার্কিন দেশে ৭০ বছর আগে থেকে রাসায়নিক কীটনাশকনির্ভর কৃষি করছে, যেখানে বিশাল কৃষি জমিতে হেলিকপ্টার দিয়ে কীটনাশক ছিটাতে হয়। তারা আজ মহাবিপদে আছে। সেখানে ক্যান্সার, অটিজম এবং পার্কিন্সন রোগের ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্কের তথ্য থেকে জানা যায়, খাদ্য উত্পাদনে বছরে ৮৮৮ মিলিয়ন পাউন্ড কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়, জনপ্রতি ৩ পাউন্ড কীটনাশক খেতে হয়। বাচ্চারা যে খাবার ও পানি খায় তাতে কমপক্ষে তিন ধরনের কীটনাশক থাকে। প্রায় ৯৪ শতাংশ খাবার পানিতে Atrazine নামক একটি কীটনাশক থাকে যা ইউরোপে নিষিদ্ধ। কারণ এর ফলে শরীরে হরমোনের কাজ এলোমেলো হয়ে যায় [http://www.whatsonmyfood.org/]
বিশ্বব্যাপী গত ৫০ বছরে কীটনাশকের ব্যবহার ১০ গুণ বেড়েছে। এই কীটনাশকে প্রায় ১৫,০০০ রাসায়নিক-মিশ্রিত পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহার হয়েছে। এখানে বিশ্বের মোট কৃষি জমির মাত্র ১.৪ ভাগ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের মোট কীটনাশকের ৩.৬ ভাগ ব্যবহার হচ্ছে। http://www.cancercliniconline.com/6065/index.html
ক্যান্সার নিয়ে আমরা যদি আসলেই উদ্বিগ্ন হই এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে চাই তাহলে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষি উত্পাদন থেকে আমাদের দ্রুত সরে এসে সত্যিকার অর্থে ‘আধুনিক’ হতে হবে। সেটা হচ্ছে প্রকৃতি ও খাদ্য ব্যবস্থাকে দূষিত না করে চাষাবাদ করা। খাদ্য উত্পাদনকে অবশ্যই কীটনাশকমুক্ত করতে হবে। এছাড়া ক্যান্সার থেকে মুক্তি মিলবে না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের শিক্ষিত সমাজ এখনও এই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে নারাজ। তারা নামিদামি মানুষের মৃত্যু ঘটলে (অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে) শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করেন, কিন্তু এই ফুলগুলোও যে বাণিজ্যিকভাবে কীটনাশক দিয়ে উত্পাদন করা, ফুলও যে বিষাক্ত হয়ে গেছে, তারা নিজেরাও তা জানেন না। এটাই হচ্ছে ভাগ্যের পরিহাস।
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস বইটি লিখে অনেককে সাহস জুগিয়েছেন। তিনি বোধ হয় ধরে নিয়েছিলেন ক্যান্সার রোগী বাড়বে, কমবে না। হুমায়ূন আহমেদ ক্যান্সার হাসপাতাল করার ইচ্ছা করেছিলেন। তিনি ক্যান্সারকে দেখেছিলেন, ক্যান্সারের কারণকে দেখেননি। তিনি যদি বাংলাদেশের কৃষিকে কীটনাশকমুক্ত করার ব্যবস্থার কথা বলতেন, আমি খুশি হতাম। ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য খাদ্যকে বিষমুক্ত বা কীটনাশকমুক্ত না করলে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। এই রোগ থেকে আমাদের অবোধ শিশুরাও রেহাই পাবে না।
ভাবছিলাম হুমায়ূন যদি এমন একটি গল্প লিখে যেতেন যেখানে হিমু হলুদ পাঞ্জাবি পরে জ্যোত্স্নায় এমন এক সবুজ ধান গাছের বিছানায় শুয়ে আছে যেখানে কোনো রাসায়নিক সার বা বিষ ব্যবহার হয়নি, তাহলে মন্দ হতো না। তখন তার ভক্তদের পরিবেশ, প্রকৃতি, প্রাণ রক্ষার আন্দোলনে শরিক করা হয়তো আরও সহজ হতো। নুহাশ পল্লীতে তিনি সার ও কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করে গেছেন কিনা জানি না। সাহিত্য কৃষি ম্যানুয়েল নয়, কিন্তু সাহিত্য বা নন্দনকলা যখন প্রকৃতির সঙ্গে মানুষ কীভাবে নতুন ও আরও গভীর সম্পর্ক পাততে পারে সেই সম্ভাবনা দেখায় তখন তার মর্যাদা ও তাত্পর্য বর্তমানকেও ছাড়িয়ে যায়।
আমরা সবাই মরব, কিন্তু কেউ যেন ক্যান্সারে না মরি তার স্বার্থে ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানানোর জন্যই এই লেখা। এই আহ্বানের মধ্য দিয়েই আমি ক্যান্সারে অকালে প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই এবং একই সঙ্গে হাজার হাজার কৃষক বা গ্রামের মানুষ, যারা ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন, তাদের পক্ষ থেকে বলছি, কতকাল আমরা আধুনিক কৃষির ঘোরে থাকব? একটুও কি হুঁশ হবে না?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন