রবিবার, ২৯ জুলাই, ২০১২

রোজা সুস্থতার প্রাকৃতিক দাওয়াই


রোজা পার্সিয়ান শব্দ, আরবীতে  যা সিয়াম এবং বাংলায় উপবাস। এ উপবাসব্রত জীবজগতের প্রাণীদেহ সুস্থতায় অপরিহার্য প্রাকৃতিক দাওয়াই। প্রকৃতিতে সবাই যার যার নিজস্ব নিয়মে এ অমূল্য দাওয়াই গ্রহণ করে নিজেদেরকে প্রকৃতির সদস্যভুক্ত রাখার যোগ্যতা প্রমাণ করে, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। কিন্তু অনুষ্ঠানসর্বস্ব কাঠামোগত মুসলমান সম্প্রদায় রোজাকে ইসলামী পরিভাষা জ্ঞান করে তা মুসলমান সম্প্রদায়ের সর্বজনীন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরিণত করেছে, যা সওম বা উপবাসব্রতের প্রাকৃতিক ভাব-দর্শন, সুমহান তাৎপর্য এবং অকৃত্রিম শিক্ষা পরিপন্থী। তাদের শরীয়ত মতে, সুর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও  যৌনমিলন হতে বিরত থাকার নাম রোজা। পক্ষান্তরে পবিত্র গ্রন্থ কোরআন মতে, সিয়াম প্রকৃতির স্বভাবগত অভ্যাস, যার কল্যাণে স্রষ্টায় বিশ্বাসীরা পূর্ণতা পায় এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর নির্দেশ-“ হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ওপর ‘সিয়াম’ (উপবাস) বিধিবদ্ধ করা হলো যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরও বলবৎ ছিলো, যেনো তোমরা সচেতন বা নিরাপদ থাকো” (সূরা বাকারা:১৮৩)। প্রচলিত রোজায় দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক উৎকর্ষতার মহৌষধ সিয়ামের সুফল ও কল্যাণ অনুপস্থিত কেন তার তত্ত্ব-তালাশ এবং প্রতিকার ভাবনাই মূলত: এ নিবন্ধের প্রতিপাদ্য।

রোজা প্রাকৃতিক জীবনধারায় অবিচ্ছেদ্য
মানুষ প্রকৃতির ছাত্র।  প্রাকৃতিক নিয়ম-কানুনই মানুষের ধরণ-ধারণ; মানুষ তার ধারক-বাহক অর্থাৎ মানুষও প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে চিন্তা -চেতনায় স্বাধীন মানুষ স্বেচ্ছাচারি হয়ে প্রকৃতির স্বাভাবিক গতি প্রবাহে ছেদ ঘটায়, বিঘœ সৃষ্টি করে। ফলে বিপর্যয় নেমে আসে। এ ক্ষিপর্যয় যেমন ব্যক্তিগত শারীরিক-মানসিক, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে তা সমষ্টিগত মহাপ্রলয়। আর প্রাকৃতিক বিধি-বিধানে সবকিছু এক দেহের মতো মিলেমিশে একাকার থাকলেই কেবল  দেহ-মন শান্তি সুখের উল্লাসে নেচে  ওঠে। সচেতন মানুষের জীবনধারা সে লক্ষ্যেই অবিরাম প্রবাহমান। তারা আজীবন সুস্থ, সবল এবং নিরাপদ থাকে তাদের সঞ্জীবনী শক্তি সচল থাকার কারণে।
অন্যান্য জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মতো রোজা বা উপবাস রীতিটিও মানুষ প্রকৃতি থেকেই আত্মস্থ করেছে। প্রকৃতিতে গাছ-পালা একটি নির্দিষ্ট  মওসুমে তাদের  সব  পাতা ছেড়ে দেয়। তখন অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ  এগুলোর শাখা-প্রশাখা বা ডাল-পালা ছেঁটে দেয় অর্থাৎ গাছ-পালা তখন উপোস থেকে আবার নতুন জীবন-যৌবন লাভ করে পর্যাপ্ত ফল দান করে। মাটিও নির্দিষ্ট একটি মওসুমে ঠন্ঠনে শুষ্ক জীবনের পর আবার পানি পেয়ে নতুন উর্বরা শক্তি ধারণ করে। অর্থাৎ গোলাকার পৃথিবীতে সব জায়গার অবস্থা সবসময় একই থাকে না। কোনো স্থান জলমগ্ন থাকলে অন্যস্থান তখন হয়তো শুষ্ক থাকে। সৌরজগতে সুর্য-চন্দ্রের প্রভাব সর্বত্র সমভাবে পড়ে না। সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী যার যার কক্ষপথে ঘূর্ণনের ফলে পৃথিবীর একেক অঞ্চল একেক সময় সূর্য-চন্দ্রের আলোবঞ্চিত থাকে। আবার কখনো কখনো সুর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয়। এগুলো সবই রোজা Ñ প্রকৃতির রোজা। অর্থাৎ নিয়মের মধ্যে অনিয়ম; কিছু সময়ের জন্য চিরাচরিত নিয়ম বা প্রথা ভেঙে নতুন  ডাইমেনশন সৃষ্টি করা। এভাবে ভাঙ্গা-গড়ার খেলাই প্রকৃতির রোজা। সমগ্র সৃষ্টিজগৎ যাবতীয় সৃষ্টির ধারাবাহিক প্রবাহের মধ্যে নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য তাদের চিরাচরিত নিয়ম  বন্ধ রাখে বা  উল্টে দেয়। এ কারণে মানুষও তাদের নিজস্ব তৈরী মেশিনপত্র বা ইঞ্জিন পরবর্তী বছরের জন্য সম্ভাব্য বির্পযয় ও ঝুঁকিমুক্ত থেকে  নিরাপদ রাখার চেষ্টায় বছরে একবার ‘ডাউন’ করে।


রোজার শিক্ষায় মানুষই দিশারী
মানুষের যাবতীয় শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা  প্রকৃতি পাঠ করে এবং প্রকৃতি ধারণ করেই অর্জিত। মানুষ নিজেই প্রাকৃতিক জীব। তবে তার পূন:উৎপাদন, লালন-পালন ও রক্ষা করার ক্ষমতা থাকায় সে ব্যতিক্রম। আশরাফুল মাখলুকাত- শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এ ধরনের সৃষ্টিশীল মানুষই রব্বের খলিফা বা প্রতিনিধি। রোজা মানুষের মধ্যে উল্লেখিত গুন বা চেতনা জাগিয়ে তাকে “মুত্তাকী” বা সচেতন (conscious) বানায়। এ ধরনের জাগ্রত চিত্ত বা সচেতন ব্যক্তিরাই বিশ্বের সর্বত্র সর্বাধিক মর্যাদাবান। কুরআন মতে, “ তোমাদের মধ্যে সে-ই অধিক মর্যাদাবান, যে অধিক সচেতন”(সূরা হুজরাত)।
এই সচেতনতার জীবনাচার অনুশীলনই রোজা, যা প্রকৃতির ধারাবাহিক পরম্পরায় মানুষের মধ্যেও জারি রয়েছে। প্রকৃতির সমস্ত জীব-অণুজীব, প্রাণী-উদ্ভিদসহ সবাই কোনো না কোনোভাবে রোজার অনুশীলন করে থাকে। একইভাবে বলা যায় যে, পৃথিবীতে  কোনো মানব সম্প্রদায়ই নেই, যারা রোজা বা উপবাসব্রতের সংগে সম্পৃক্ত নয়।  কেননা, স্বেচ্ছাচারি মন  বা অবচেতন হৃদয়- মন চেতনায় ফেরত আনতে এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় রোজা বা উপবাসব্রত প্রকৃতির জীবনধারায় সর্বোত্তম কলা-কৌশল। এজন্য রোজা সুশৃংখল এবং সুসভ্য সমাজ গঠনে মানবসম্প্রদায়ের মধ্যেও অপরিহার্য জীবনপ্রণালী। উপবাসে জীবনের উপলব্ধি, নিজেকে জানা ও চেনা-বোঝার অনুভূতি তীক্ষè ও প্রখর হয়। এতে মানুষ তার ভাব, ভাষা ও কাজের সুসমন্বয় ঘটিয়ে স্ব-ভাবে স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হয়। আর তখনই সে রব্বের খলিফা “রাব্বানী”। এ স্তরে উপনীত মানুষই ভাল-মন্দ বোঝার ক্ষমতা লাভ করে “ফোরকানপ্রাপ্ত” হয়। যারা জীবের পথ-প্রদর্শক বা দিশারী।


রোজা নিয়ম ভাঙার মহড়া
এ ধরনের সমাজ সংস্কারক বা পথ প্রদর্শকদের ধারবাহিক কর্ম প্রচেষ্টায় সামাজিক নিয়ম-কানুন তথা প্রথা গড়ে ওঠে। মানুষ অভ্যাসের দাস বিধায় তা হুবহু অনুসরণ করে। কিন্তু রমজান মাসের নির্দিষ্ট মওসুমে প্রচলিত চিরাচরিত নিয়ম বা প্রথা ভেঙে দেয়া হয়, উল্টে দেয়া হয়। এ সময় নিয়ম ভাঙার মহড়া চলে। কারণ মানুষ বিধাতার বিধান মেনে চলতে চলতে অর্থাৎ তাতে অটল ও অবিচল থেকে রোজার অনুশীলন দ্বারা বিধাতা হয়ে যায়। এ ধরনের আল্লাহময় মানুষ সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে যুগোপযোগী নব নব বিধান রচনা করতে সক্ষমতা লাভ করে। তবে সবকিছুরই ‘ঊর্ধ্বতন’ আছে। জ্ঞান ও জ্ঞানীর বেলায়ও তা প্রযোজ্য। মহাত্মা লালনের ভাষায় -‘প্রভু কে বোঝে তোমার অপার লীলে, তুমি আপনি আল্লাহ ডাকো আল্লাহ বলে’।
মানুষ সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম থাকার জন্য খাদ্য গ্রহণ করে। তার মানে দৈহিক সুস্থতা খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। খাদ্যপ্রাণ ও লবনসহ সুষম খাদ্যই পারে দেহকে সুস্থ রাখতে। কিন্তু আহার গ্রহণের সেরা সময় হলো সকালে ঘুম থেকে ওঠার এক ঘন্টা পর থেকে সূর্যাস্তের সময় অবধি, যখন দেহের অভ্যন্তরীণ উত্তাপ বৃদ্ধি পায় ও খাদ্য সহজে  হজম হয়। এতে আরও বেশী শক্তি লাভ করা যায়। ভারতীয় মুনী-ঋষিরা কী খেতে হবে, কখন খেতে হবে, কিভাবে খেতে হবে তার সহজ-সরল সমাধান দিয়েছেন। আমেরিকার পুষ্টিবিজ্ঞানীরাও গবেষণা করে তার কার্যকারীতা প্রমাণ করেছেন। তাঁদের মতে, দেরিতে খাওয়া ও সূর্যাস্তের পরে গুরুপাক ভোজনের ফলে হজমের প্রক্রিয়া মন্থর হয়ে পড়ে। যা বেশি মেদ ও পেটের গোলমাল সৃষ্টি করে।
খাদ্য এমন চিবিয়ে খেতে হবে যে, মুখ হতে দৈনিক অন্তত: দুই লিটার লালা নির্গত হয়ে খাদ্যের সংগে মিশে যায়। যেমন তরল খাদ্য চিবাবে এবং শক্ত খাবার পান করবে -Eat the liquids and drink the solids. খাবারের সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  সকালে রাজপুতের মতো, দুপুরে রাজার মতো এবং রাতে ভিখারীর মতো খাবার  খেতে হবে। রাশিয়ানরা বলে, সকালে খাও নিজের জন্য, দুপুরের খাবার বন্ধুদের সাথে ভাগাভাগি করো এবং রাতের খাবার শত্র“দের মাঝে বিলিয়ে দাও। বৃটিশ প্রবাদ বাক্য-Suppers kill more than doctors cure- ডাক্তারেরা যত লোক আরোগ্য করে তা অপেক্ষা রাতের খাবারে লোক মরে অনেক বেশি।
দৈহিকভাবে আমরা তা-ই, যা আমরা খাই। দেহকে বলা হয় রূপান্তরিত খাদ্য। সক্রেটিস বহু বছর আগে বলে গেছেন- Diet is health, diet is medicine- পথ্যই স্বাস্থ্য, পথ্যই ওষুধ। এ পথ্য প্রকৃতিরই ফসল, যা মানুষ প্রকৃতি থেকে আহরণ করে। প্রকৃতিই খোলা কেতাব। মানুষ প্রকৃতি পাঠ করে শিখে এবং যা বলে এবং করে তা কিন্তু নিজেকেই তুলে ধরে বা প্রকাশ করে নিজেই প্রকৃতির অংশ হয়। এজন্য প্রকৃতির স্বাভাবিক জীবন-যাপন প্রণালীই সুস্থতার অপরিহার্য শর্ত। এক্ষেত্রে নেপোলিয়ান বোনাপাটের একটি প্রসিদ্ধ উক্তি স্মরণযোগ্য-Medicine is  a collection of  uncertain prescriptions, the result of which taken collectively are more fatal than useful to mankind. Water, air and cleanliness are the chief articles in my pharmacopoeia. অর্থাৎ ওষুধ হচ্ছে সন্দেহজনক ব্যবস্থাপত্রের একটি স্তুপ, যার সবগুলো পরিণাম একত্র করলে যা দাঁড়ায় তা মানবজাতির কল্যাণের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর।  আমার ্ওষুধ তৈরির গ্রন্থ তথা ফার্মাকোপিয়ার প্রধান উপকরণ হচ্ছে-পানি, বাতাস এবং পরিচ্ছন্নতা। মহাত্মা গান্ধীর উপদেশ-“ দেহকে ঈশ্বরের সম্পত্তি ভেবে তার ন্যাসরক্ষক রূপে দেহের সার্বিক প্রযতœ কর। দেহটিকে অতিরিক্ত আরাম বিলাসী কোরনা বা তাকে নষ্ট করোনা, তাকে মালিন্যে ভরে দিওনা বা অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিওনা”। বরেণ্য মনিষীবর্গের অভিজ্ঞতা, অনুভুতি, উপলব্ধি এবং মূল্যবান পরামর্শ অনুযায়ী অভ্যাস গঠন দৈহিক সুস্থতায় ফলপ্রসূ কার্যকর। সাধারণ মানুষের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে যা অপরিহার্য এবং বিকল্পহীন প্রাকৃতিক দাওয়াই। কিন্তু রোজা দেহ-মন-আত্মা সবল করে সাধারণকে অসাধারণে পরিণত করে। যে কোনো পরিবেশে এবং যে কোনো অবস্থায় নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারার প্রশিক্ষণ রোজা। এ জন্য রোজা শুধু দৈহিকই নয়, বরং তা আত্মিক ও মানসিক  সু-স্বাস্থ্যেরও পরম দাওয়াই। রোজার মাসে/মওসুমে বিশ্ব মানবের পথ প্রদর্শক এবং সুপথের উজ্জ্বল নিদর্শন (হক ও বাতিলের) প্রভেদকারী কুরআন নাযিল (উদয়) হয়।
মানুষ সচরাচর ভোরের নাস্তা, দুপুরের খাবার এবং রাতের  খাবারসহ যে কোনো সময় খাবার গ্রহণ করে কিন্তু রাতে ঘুমের কারণে উপোষ থাকে। তবে  রোজার মওসুমে সেহ্রি, ইফতার ও রাতের খাবার গ্রহণ করা হয়। ফলে পরিমাণ ও গুনগত খাবার বেশি ছাড়া কম হয় না। সময়টা উল্টে যায় মাত্র। এই উল্টানো নিয়মটা শুধু খাদ্যের বেলায় না হয়ে দৈনন্দিন সব কাজ-কর্মের বেলায়ও প্রযোজ্য হলেই রোজা বেশি ফলদায়ক হবে। সফল রোজার সুফল পেতে দিনে ঘুমিয়ে এবং রাত জেগে কাজ-কর্মে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। এভাবে কোন মানুষ সারাজীবন পরিচালিত করলে তার ৯০-৯৯%  দৈহিক রোগ- শোক এমনিতেই সেরে যায়  এবং সে অকল্পনীয় দীর্ঘজীবন ভোগ করতে সক্ষম হয়। সাধকরা তাই বলেন, “ যতদিন পারি রাখিবো এ জীবন ধড়ে”। কোনো কোনো সাধক ধারণা পোষণ করেন, যে লোক রাতে খাদ্য গ্রহণ না করে আজীবন সূর্য অস্তের পূর্বেই পানাহার সেরে সূর্য অস্তের সংগে সংগে ঘুমায় এবং সূর্য উদয়ের পরে পানাহার শুরু করে আর বছরে রোজার নির্দিষ্ট মওসুমে রোজা পালন করে, সে আমৃত্যু রোগ- শোক মুক্ত থেকে দীর্ঘ জীবন লাভ করতে সক্ষম হয়।


কুরআন মতে রোজা পালনের নিয়ম
“ তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালরেখা থেকে উষার শুভ্ররেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অত:পর অন্ধকার না হওয়া  পর্যন্ত উপবাস পূরণ কর”(সূরা বাকারা-১৮৭)। সিয়াম সাধনার এ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একনিষ্ঠ গুনমুগ্ধ অধ্যক্ষ ডাক্তার জি সি গুপ্ত, ডক্টর আর ক্যাম্বারড, ডক্টর এমারসন প্রমুখ স্বনামধন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ দেহের রোগ-জীবাণু দমন এবং অপ্রয়োজনীয় মেদ সরাতে সিয়াম সাধনার  প্রেসক্রিপশন করতেন। সিয়ামে বাত রোগের মহা উপকার হয়। মার্কিন মুল্লুকের এক খ্যাতনামা চিকিৎসক বলেছেন, মুসলমানদের একমাসের উপবাস মানবদেহে এন্টিবায়োটিক এক বিরাট শক্তির সৃষ্টি করে, যার সাহায্যে মানবদেহের ষাট হাজার রোগ-জীবাণু  ধ্বংস করতে সমর্থ হয়। বিভিন্ন গবেষক, ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা  গবেষণা করে দেখেছেন যে, রমজানের সিয়াম সাধনায় দেহের অর্ধেক রোগের প্রতিষেধক তৈরী হয়। এজন্য অনেকেই সিয়ামকে কাঠামোগত ইসলাম ধর্মের অনুষ্ঠান মানতে নারাজ। বর্তমান যুগের গবেষকরা তো ইসলামকে ধর্ম মানতেই অনিচ্ছুক। সম্প্রতি এক মার্কিন গবেষক বলেছেন ইসলাম একটি সামাজিক ন্যায়বিচার আন্দোলন। তিনি স্বয়ং যীশুখৃষ্টকেও ইসলাম অনুসারী মুসলিম অভিহিত করেছেন। ইসলামে নর-নারী নির্বিশেষে সিয়াম সাধনায় রাতে সবাই ঘুম ছাড়া নির্বিঘেœ পানাহার করে এবং দিনে পানাহার ও  যৌনসঙ্গম বন্ধ রাখে। মাসিক হওয়ার নাপাকের উছিলায় রান্না-বান্নাসহ যাবতীয় সাংসারিক কাজ-কর্ম বন্ধ না থাকলে শুধুমাত্র নামাজ রোজা তথা ধর্মীয় বিধিনিষেধ নিষিদ্ধ হওয়া অযৌক্তিক।


রোজা সুনির্দিষ্ট মওসুমের কয়েকটি দিন মাত্র
কুরআন অনুযায়ী “সুর্য ও চন্দ্র হিসাবের জন্য”। অর্থাৎ  সুর্য দিন, রাত, সময় ও আবহাওয়া-জলবায়ুসহ সব কিছুর নিয়ন্ত্রক ও নির্দেশক এবং চন্দ্র প্রধানত: পৃথিবীপৃষ্ঠের পানি এবং জীব তথা মানবদেহের রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। সূর্যকে কেন্দ্র করেই সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস এবং বছর। সে মতে ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টায় ১ বছর। বছর আবার ১২ মাসে বিভক্ত। কোনো কোনো অঞ্চলে ঋতুবৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। আমাদের  অঞ্চলে ৬ ঋতু, কোথাও ২ ঋতু আবার কোথাও ৪ ঋতুও আছে। মাস বা ঋতুগুলো সাধারণত: আবহাওয়া, জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ক ধারণা বা মওসুম। ঋতুবৈশিষ্ট্য বা মওসুম অনুসারে পৃথিবীর একেক অঞ্চলের জীব-অণুজীব, প্রাণী-উদ্ভিদ একেক কালে রোজা পূরণ বা উদযাপন করে।  সব অঞ্চলের সব প্রাণী  একই সময়ে রোজা পালন করে না। গোলাকার পৃথিবীতে সর্বত্র একই সময়ে একই মওসুম পরিলক্ষিত হওয়া অসম্ভব ব্যাপার। তাই  প্রকৃতিতে যখন যে অঞ্চলে রোজার মওসুম বা ‘রমজান’ উপস্থিত হবে, তখন সে অঞ্চলের মানুষ   রোজা পালন করবে, এটাই কুরআনের ঘোষণা। বলা হয়েছে, “ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাসটি পাবে/উপস্থিত থাকবে/প্রত্যক্ষ করবে/ সাক্ষী থাকবে তারা যেন এ মাসেই রোজা রাখে এবং যারা অসুস্থ ও প্রবাসী/বিদেশী/সফরে তারা অন্য সময় গণনা করে তা পূরণ করবে” (সূরা বাকারা-১৮৫)।
বাংলাদেশের পৌষ-মাঘ মাস, পদ্মার ঢেউ সৌদি আরবে রপ্তানী করার ভ্রান্ত চিন্তা যেমন অযৌক্তিক, তেমনি আবার আরব অঞ্চলের রমজান মাস, মরুঝড় বাংলাদেশে আমদানী করার অসার  ও কাল্পনিক ধারণাও অকার্যকর।  অথচ বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায় তাদের সাম্প্রদায়িক পরিচয়  উর্ধ্বে রাখতে সে রকম আজগুবি ধ্যান-ধারণায় দৈনিক রোজাটি রাখে সুর্য দেখে, মাসটি পূরণ করে চন্দ্র দেখে এবং বছরটি অতিবাহিত করে চন্দ্র ও সূর্য  ঊভয় দেখে ফলে তারা সবাই একত্রে একই সময়ে রমজান মাসের রোজা অনুষ্ঠান উদযাপন করতে গিয়ে প্রকৃতিগত স্বদেশি বা স্বজাতীয় রোজার মওসুমকে হাতছাড়া করে এর অফুরন্ত ফায়দা হতেও বঞ্চিত হয়।  সাধারণ মানুষের নিষ্পাপ ধর্মীয় আবেগ ও সরলানুভূতির  প্রচলিত রোজার মহড়া সাম্প্রদায়িক পরিচিতি এবং উন্মাদনা উচ্চকিত করে বণিকদের বাণিজ্যিক স্বার্থ মহিমান্বিত করতে সক্ষম হলেও, প্রাকৃতিক প্রয়োজনীয়তা ও উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়, যা  পরিবেশগত ভারসাম্য নস্ট করে মানুষের মধ্যে অনৈক্য এবং অসাম্য সৃষ্টির সহায়ক।  পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে এর ভয়াবহ নির্লজ্জ বিস্তৃতি জনদুর্ভোগেরও কারণ। রমজান মাসে বাংলাদেশ নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে অবস্থান করে। দ্রব্যমূল্যের  ঊর্ধ্বগতি, আইন-শৃংখলার অবনতিসহ সামাজিক বিশৃংখলার যাবতীয় অনাচার-অবিচারের বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টিতে রমজান এখানে নিকৃষ্টতম উদাহরণ।


নির্দিষ্ট মওসুমের রোজাই ফলপ্রসূ কার্যকর
‘সময়ের কাজ সময়ে করো’। One stitch in time saves nine অর্থাৎ সময়ের একফোঁড় অসময়ের দশফোঁড় । ইমাম জাফর সাদেক বলেছেন “ সম্যক কর্ম সম্যক সময়ে সুসম্পন্ন করার নামই এবাদত”। প্রবাদ বাক্য আছে Time and tide   wait for none- সময় ও স্রোত কারও অপেক্ষায় থাকে না।
মহাত্মা লালন জাগরণের গান গেয়ে মানুষকে সচেতন করেছেন- “ সময় গেলে সাধন হবে না”।
মাটিতে জোঁ আসলেই লাঙ্গল চড়াতে হয়। প্রকৃতির সব জীব-জন্তু তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য যৌনসঙ্গম করতে নির্দিষ্ট মওসুমটির অপেক্ষায় থাকে; পাওয়া মাত্রই তারা তা কার্যকর করে- বিন্দুমাত্র সময় অপচয় করে না। মানুষ তাদের স্বাধীন চিন্তায় দিন-রাত অহরহ যৌনমিলন করলেও সন্তান পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট মওসুমকেই কাজে লাগায়। টেষ্টটিউব বেবীর জন্যও নিষিক্ত ডিম্বানুর সাথে সবল শুক্রানুর মিলন ঘটানো জরুরী। আর নিষিক্ত ডিম্বানু পেতে মাসিক পিরিয়ড পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া  গত্যন্তর নেই। মাছের পোনা ব্যবসায়ীরা মা মাছের ডিম ছাড়ার অপেক্ষায় থাকে।  মা মাছ  হালদায় ডিম ছাড়লেই তা সংগ্রহে  ধূম পড়ে যায়। কিন্তু মওসুম ছাড়া মা মাছ ডিম ছাড়ে না। সবকিছুরই মওসুম আছে। প্রকৃতিতে প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজনন মওসুমের মতো রোজা রাখার মওসুমটিও সুনির্দিষ্ট, যে সময় রোজা রাখা কল্যাণকর-এর বাইরে বৃথা চেষ্টা করা  ক্ষুৎপিপাসায় কষ্টভোগই সার। অনেকে ছোয়াবের আশায় রোজা রেখে বরং সমূহ আপদ-বিপদ ডেকে আনে। এ সমস্ত বাস্তব উপলব্ধিতে সজাগ হয়ে মিশর ২০১০ সনে ঘড়ির কাঁটা আগ/পিছ করে ১ ঘন্টা আগেই ইফতারের সময় নির্ধারণ করে। একই কারণে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যহানি বা অসমর্থতা এবং উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার  আশঙ্কায় আমিরাতের শ্রমিকরা এক রাষ্ট্রীয় ফতোয়ায় রোজা রাখার কঠিন আদেশ হতে রেহাই পায় (খবর: সি এন এন)।
রোজার মওসুমটি রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের ‘রমজান’
কুরআনে ঘোষণা হচ্ছে, “ আল্লাহ তোমাদের সহজ ও আরামের মধ্যেই রোজা চান তোমাদের কষ্ট-ক্লেশ হোক তা মোটেই চান না” (সূরা-বাকারা-১৮৫)।
প্রত্যেক জনপদ, জাতি বা দেশভেদে ১২ মাসের মধ্যে নিশ্চয়ই একটি আরামদায়ক ও কল্যাণকর মাস আছে, যা রোজা পূরণ করার মওসুম। যেমন, তা  বাংলায় পৌষ মাস এবং ইউরোপ-আমেরিকায় (ফেব্র“য়ারী)। অনুরূপভাবে এ মওসুমটি অন্যান্য অঞ্চলেও খুঁজলে পাওয়া যাবে। এ মাসের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:-
(১)    দিনগুলো সবচেয়ে ছোট, মাত্র ৮/৯ ঘন্টার।
(২)    মাসটিও সবচেয়ে ছোট, মাত্র ২৮/২৯/৩০ দিনের।
(৩)    আবহাওয়া, পরিবেশ ও জলবায়ু আরামদায়ক এবং স্বাস্থ্যপ্রদ।
(৪)    রোগ, শোক, বালা-মুসিবত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুক্ত।
(৫)    নিত্য -নতুন এবং হরেক রকম খাদ্যশস্যে ভরপুর থেকে অভাব-অনটন মুক্ত।
(৬)    প্রচুর কাজ করার পরিবেশ ও আবহাওয়া বিদ্যমান।
(৭)    প্রকৃতি ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, ভ্রমণ, অতিথি আদর-আপ্যায়ন, প্রকাশ্যে সমাবেশ, মহা-সমাবেশ, মেলা ইত্যাদি করার অনুকুল।
(৮)    দিন ও মাস ছোট এবং খর-তাপ মুক্ত হওয়ায় আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা আনন্দ, উৎফুল্ল এবং স্বত:স্ফুর্তভাক্ষে রোজা রাখায় উৎসাহী হয়।
(৯)    প্রাকৃতিক শুষ্ক পরিবেশে রোজা দেহকে রক্ষা করে।
(১০)    মানুষের হৃদয়-মন মুক্তাকাশ ও পরিবেশের মতোই ফুরফুরে, নির্মল, সজীব ও উদার থাকে, যা ঝামেলামুক্তভাবে ধ্যান-সাধনায় মগ্ন থাকার উপযুক্ত।
আরবী ‘রমজ’ ধাতু থেকে রমজান শব্দের উৎপত্তি। রমজ অর্থ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে গলিত করা। প্রকৃতিতে শীতকালে মানবদেহ বা  প্রাণীদেহ শীতমুক্ত থাকতে বা শীত নিবারণ করতে নিজেই অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন করে দেহকে উত্তপ্ত রাখে। এ কারণে শীতকালে জীবদেহ গরম  থেকে প্রকৃতির ঠান্ডা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। এরপরও পানাহার ও যৌনসঙ্গম করতে হলে আরও অতিরিক্ত তাপ উৎপাদনের  প্রয়োজন হয়, যা দেহের জন্য ক্ষতিকর। এমন সাধ্যাতীত ক্ষতিকর কাজ হতে বিরত থাকার জন্যই রমজানের রোজা মানবদেহের জন্য রহমত, বরকত এবং মাগফেরাত স্বরূপ। প্রকৃতিতে ভাল্লুক, ব্যাঙ, সাপ প্রভৃতি জন্তু-জানোয়ারও শীতকালটা বিচেতন (Hibernate) অবস্থায় কাটায় অর্থাৎ রোজা থাকে। এজন্য শীতকালটাই প্রকৃতিগত ‘রমজান’, যা ইসলামেরও ‘রমজান’।

ইসলামের ‘রমজান’ বনাম আরব কুরাইশদের ‘রমজান’
ইসলামই প্রকৃতি, প্রকৃতিই ইসলাম। আরও পরিষ্কার করে বললে দর্শন, বিজ্ঞান,  প্রকৃতি ও  ইসলাম সবই একাকার এবং অবিচ্ছিন্ন । এগুলোর মধ্যে কোনো  বৈপরীত্য, সংঘাত বা সংঘর্ষ দেখা দিলে তা একান্তই নিজস্ব ব্যক্তিগত   চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারনা বা দৃষ্টিভঙ্গির গলদ। এতে  প্রকৃতির কিছু যায়-আসে না। প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম চিরন্তন, যা দর্শন ও বিজ্ঞান দিয়ে অনুধাবন করলেই কেবল ইসলাম প্রতিভাত হয়। ইসলামের ‘রমজান’ও  প্রকৃতির মাঝেই বিদ্যমান। কিন্তু  প্রচলিত ‘রমজান’ মাস বর্ণবাদী আরব  কুরাইশদের  সৃষ্ট। এর সাখে বিজ্ঞান, দর্শন ও প্রকৃতির দূরতম সম্পর্ক খোঁজাও পন্ডশ্রম মাত্র।
সাম্য ও শান্তির প্রতীক মুহাম্মদ (দ:) এর ইন্তেকালের সাথে সাথে তাঁকে দাফন না করেই মক্কার কুরাইশ নেতারা “নেতা নির্বাচন হবে কুরাইশদের মধ্যে হতে” ঘোষণা দিয়ে তাঁর প্রদর্শিত সর্বজনীন ইসলাম শেকড়সহ উপড়ে সেখানে আরব জাতীয়তাবাদী কাঠামোগত প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামের গোড়াপত্তন করে। অথচ  রসুলুল্লাহর বিদায় হজ্বের ভাষণে ধনী-গরীব, সাদা-কালো, আরব-অনারব ভেদাভেদ ভুলে ‘উম্মাহ’ গঠনের নির্দেশ ছিলো। কিন্তু সব কিছু উপেক্ষা করে কুরাইশদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর চালু করেন হিজরী সন। তিনি এর মাধ্যমে ইসলামের মোড়কে মক্কার পৌত্তলিক বর্ণবাদী কুরাইশদের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের বিজয় কেতন ওড়ানোর পাকা বন্দোবস্ত করেন। তাঁর খেলাফতকালে রাসুলুল্লাহ (স:) এর  জন্ম-ওফাত দিবস, বদর দিবস, মক্কা বিজয়, এলানে নবুওত এবং হিজরত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর অবশেষে হিজরতকে হিজরী সনের পরিচায়ক নির্ধারণ পূর্বক পূর্্েরর সৌর গণনার আরবী সনকে চান্দ্র গণনার হিজরী সনে রূপান্তরিত করেন। মাসগুলোর নামকরণ যথারীতি অবিকল পূর্বের মতোই থাকে। এর ফলে বর্ণবাদী কুরাইশদের আঞ্চলিক জাতীয়তা আন্তজার্তিক ইসলামে পর্যবসিত হওয়ার অনন্য মওকা পায়।  মুসলিম উম্মাহ এখন হিজরী সনকেই ইসলামী সন ধ্যান-জ্ঞান করে এর মর্যাদা রক্ষায় জান-মাল কোরবানী করে জেহাদে লিপ্ত। বর্ণবাদী আরব  পৌত্তলিক কুরাইশদের বিজয় স্মারক  হিজরী সন প্রবর্তনের চাতুরী সম্পর্কে লিবিয়ার মহান নেতা মুয়াম্মার আল গাদ্দাফী মুসলমানদের সতর্ক করে এক ভাষণে বলেছিলেন, “ ইহা ইসলামের ঐতিহ্য বহন করে না, মূুর্তিপুজা ও কুফরির ঐতিহ্য বহন করে” (সুত্র: দৈনিক সংবাদ, ১৬/১২/১৯৮৭)। মিশরের সাবেক প্রধান বিচারপতি ডক্টর আলী আবদুর রাজ্জাক তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল-ইসলাম ওয়া অসুলুল হাকাম’ গ্রন্থে আরো বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন-ÒVery very important achievements of Rasul were Neglected, baffled at cold assassination, the idol worshipers of Mecca took the flight of the prophet to Medina as a mark of their victory and burst out into joyous festivities in the form of wine, women and worship of idols in Kaba. At a latter period, when the idol worshipers for the sake of their life and property embraced Islam, and came to power during the second ‘Caliphate’ they merily adopted Hizra calendar as a mark of their victory and flight of the helpless Prophet from Mecca.” উল্লেখ্য  যে, যীশুখৃষ্ট খৃষ্টীয় সন এবং হযরত মুহাম্মদ (স:) চান্দ্র বর্ষের হিজরী সন প্রবর্তন করেননি। হযরত আবুবকরের খেলাফতকাল শেষ হওয়া অবধি রোজা, ঈদসহ মুসলিম উম্মাহর কোনো ধর্মীয় পর্ব বা অনুষ্ঠানাদি আজকের মতো পা-পা করে পিছু হাঁটতো না। রোজার মওসুম রমজান মাসেই নির্দিষ্ট থাকতো। (সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ; ২য় খন্ড ২য় সংস্করণ; পৃ: ৫০৭, ৫০৮ ই,ফা, ইসলামের ইতিহাস, ছেহা ছেত্তা ইত্যাদি)।
তবে বর্ণবাদী আরব কুরাইশদের উগ্র জাতীয়তায় চান্দ্র বর্ষের অস্তিত্ব থাকা বিচিত্র নয়। এখনও যেমন ইরান, চীনসহ বিভিন্ন জাতি- সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক সনের জাঁকজমকপূর্ণ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদযাপন করে। রাসূলুল্লাহ (স:) এর জমানায় সম্ভবত: আরব পৌত্তলিকরা চান্দ্র গণনার ভ্রান্ত নীতিতে মাসগুলোর স্থানান্তর ঘটাতো। এ ব্যাপারে কুরআনের সূরা তওবায় ইঙ্গিত রয়েছে.“এ মাসগুলোর স্থানান্তর কুফরের মধ্যে আরও বৃদ্ধি মাত্র, যা দ্বারা কাফেরদের পথভ্রষ্ট করা হয় এরূপে যে, তারা সেই হারাম মাসকে কোনো বছর হালাল করে নেয় এবং কোনো বছর হারাম মনে করে”।
অতএব, মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃতিগত ইসলামের ‘রমজান’ মাসে উপবাসব্রত বা সিয়াম সাধনার মহিমা, কল্যাণ ও সুফল নছিব করুন।


রুহুল আমিন

লেখক পরিচিতিঃ অ্যাকিউপ্রেসার বিশেষজ্ঞ।

সভাপতি, সুচিকিৎসা জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন এবং সদস্যসচিব, মুক্তিআন্দোলন বাংলাদেশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন