সর্বশেষ দাম বৃদ্ধির পর বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বিপাকে পড়েছে সাধারণ গ্রাহকরা। বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণে সস্ন্যাব প্রথা তুলে দেয়ার ফলে গ্রাহকদের প্রতিমাসে পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ মূল্য দিতে হচ্ছে। সর্বশেষ দাম অনুযায়ী ৪০০ ইউনিটের পর মাত্র ১ ইউনিট ব্যবহারের জন্য গ্রাহকদের দ্বিগুণ দামে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। এদিকে বিদ্যুতের বাড়তি বিল পরিশোধের এ ঝামেলা না মিটতেই আরেক দফা দাম বাড়নোর প্রক্রিয়া চলছে। সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম অনুযায়ী ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত প্রথম ধাপে ক্রমান্বয়ে ১ থেকে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৫ পয়সা এবং দ্বিতীয় ধাপে ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা ২৯ পয়সা হারে বিদ্যুৎ বিল দিতে হলেও তৃতীয় ধাপে ৪০০ ইউনিটের পর মাত্র ১ ইউনিট ব্যবহার করলেও পুরো বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৭ টাকা ৮৯ পয়সা হারে বিল গুনতে হচ্ছে গ্রাহককে। এ নিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এদিকে এ অবস্থায় আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।
সাধারণ গ্রাহকরা বলছে এত হিসেব করে কি করে মানুষ বিদ্যুৎ খরচ করবে। তাদের প্রশ্ন হচ্ছে ৪০০ পর বাড়তি ১ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য কেন পুরো ৪০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিল বর্ধিত হারে হিসেব করা হবে। সাধারণ গ্রাহকরা বলছে, ৪০০ ইউনিটের পর যে বাড়তি ইউনিট হবে শুধু সেটা বর্ধিত হারে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু ১, ২ ইউনিটের জন্য পুরো বিল বাড়তি টাকায় নেয়া গ্রাহকদের সঙ্গে কৌশলগতভাবে প্রতারণা করা। এদিকে হিসেব করে দেখা গেছে, যদি ৪০০ ইউনিটের পর মাত্র ১ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য বাড়তি দামে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় তবে গ্রাহকদের অতিরিক্ত প্রায় দেড় হাজার টাকা বিল দিতে হবে। যা সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টকর।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির 'সংবাদ'কে বলেন, এ বিষয়টি করা হয়েছে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ৪০০ ইউনিটের নিচে যারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে তারা তুলনামূলক কম পয়সায় বিদ্যুৎ বিল দিতে পারবে। কিন্তু যারা এর বেশি ব্যবহার করবে তারা বাড়তি দামে বিল দিবে। তিনি বলেন এ ব্যবস্থার ফলে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে। সাধারণ মানুষ সচেতন হবে যাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায়।
বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৫ দফা। চলতি মাসেই আরেক দফা বৃদ্ধির অপেক্ষায়। সর্বশেষ দাম বেড়েছে ইউনিট প্রতি গড়ে ৩০ পয়সা। মার্চের ১ তারিখ থেকে দেশের ৬টি বিতরণ কোম্পানি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (পবিবো), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য গড়ে ৩০ পয়সা বাড়ায়। বিদ্যুতের ব্যবহারের পরিমাণ বিবেচনা করে মূল্য বাড়িয়েছে বিইআরসি। খুচরা বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি গড়ে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়লেও তিন ধাপের নতুন নিয়মের কারণে কোন কোন গ্রাহককে আগের দামের ১০০ শতাংশের বেশি বিল দিতে হচ্ছে। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের আবাসিক গ্রাহকরাই বিল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
সর্বশেষ গত ১ মার্চ আবাসিক গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণ করে সরকার।
আবাসিক গ্রাহকদের তিন ধাপে বিদ্যুতের দাম বাড়ায়। তিনটি ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৫ পয়সা, দ্বিতীয় ধাপে ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা ২৯ পয়সা এবং তৃতীয় ধাপে ৪০০ ইউনিটের অতিরিক্ত বিদ্যুতের দাম ৭ টাকা ৮৯ পয়সায় নির্ধারণ করা হয়।
বিদ্যুতের বর্ধিত দাম অনুযায়ী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে গড়ে ৫ টাকা। সমপ্রতি সরকার তিনটি ধাপে বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণের পর তৃতীয় ধাপের নির্দিষ্টসীমা অর্থাৎ ৪০০ ইউনিটের পর এক ইউনিটের জন্য আবাসিক গ্রাহককে অতিরিক্ত প্রায় দেড় হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। তৃতীয় ধাপ অতিক্রম করলেই পূর্বের সব ধাপের মূল্য সর্বশেষ যার অর্থাৎ ৭ টাকা ৮৯ পয়সা হারে দিতে হবে এই কারণেই আবাসিক গ্রাহকদের এ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।
বিদ্যুৎ খাতের মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সূত্রে জানা যায়, যদি কোন গ্রাহক ৪০০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করেন তাহলে তাকে প্রথম ১০০ ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করতে হবে ৩ টাকা ৫ পয়সা হারে, ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা ২৯ পয়সা হারে। ৪০০ ইউনিটের বেশি খরচ করলে পুরো বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে ৭ টাকা ৮৯ পয়সা দরে পরিশোধ করতে হবে। যে গ্রাহক ৩০০ ইউনিটের মধ্যে ব্যবহার সীমিত রাখতে পারবেন তিনি প্রথম ১০০ ইউনিটের দাম ৩ টাকা ৫ পয়সা হারে এবং পরের ২০০ ইউনিটের দাম ৪ টাকা ২৯ পয়সা হারে দেয়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু ৩০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহার করলে পুরো বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ২৯ পয়সা হারে দিতে হবে। যে গ্রাহকের মিটার ৪০১ ইউনিট বা তৃতীয় ধাপে গিয়ে ঠেকবে তাকে পুরো বিদ্যুতের দাম ৭ টাকা ৮৯ পয়সা দরে পরিশোধ করতে হবে। আগে নিয়ম ছিল যখন কোন ধাপ অতিক্রম করবে, তখন ঠিক যতটুকু অতিক্রম করবে ততটুকুই ওই ধাপের হারে হিসাব করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ 'সংবাদ'কে বলেন, এভাবে মূল্যতালিকা করার একটি বিশেষ কারণ ছিল। তা হলো বিদ্যুতের ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা। বিশেষত যেন দারিদ্র্য ও মধ্যবিত্তরা ছাড়া ধনী শ্রেণীর মানুষ ভর্তুকির সুবিধা না পায়। অন্যদিকে যারা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তারা যেন উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনে। কমিশন মূল্য পুনর্নির্ধারণের কোন চিন্তা করছে কি না_ জানতে চাইলে ড. সেলিম বলেন, যদি স্টেকহোল্ডাররা (বিতরণ কোম্পানি ও গ্রাহক) আবার গণশুনানি করতে চায় তাহলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম বলেন, বারবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সস্ন্যাবের মধ্যে ফাঁকফোকর রাখা উদ্দেশ্যমূলক। তিনি বলেন, সরকারের উদ্দেশ্যই হচ্ছে যেকোনভাবে বেসরকারি বিনোগকারীদের মুনাফার টাকার ব্যবস্থা করা। এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধিকে তিনি জনস্বার্থের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মিজমিজি পাইনাদি এলাকার গ্রাহক রাজ মিস্ত্রি আবুল কালাম আজাদ জানায়, নভেম্বর, ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দিতেন। কিন্তু গত মাসে তাকে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বিল ৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার মিটারের রিডিং না দেখেই তাকে বিল দেয়া হয়েছে। পড়ে চিটাগাং রোডের স্থানীয় অফিসে কয়েক দফা ঘোরাঘুরি করে তিনি বিল কমিয়ে আনেন। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে এ অজুহাতে তাকে এ বিল দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
সিদ্ধিরগঞ্জের একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন জানান, কয়েকটি বাড়িতে মিটার না দেখেই বছরের পর বছর বিল দিয়ে আসছে মিটার রিডাররা। তিনি বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে তার একটি নতুন বাড়িতে মিটার পাস হলেও বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়নি। সেখানে ২৫০ ইউনিটের বিল করে দিয়েছে মিটার রিডার মোবারক। তিনি বলেন, এ বিষয়ে ম্যানেজারের কাছে অভিযোগ করলেও কোন কাজে আসেনি। তিনি বলেন, একদিকে বাড়তি বিল অন্যদিকে ভুতুড়ে বিল ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এদিকে ডিপিসির সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার স্থানীয় ব্যবস্থাপক মো. আলী 'সংবাদ'কে এ বিষয়ে বলেন, বাড়তি বিলের আভিযোগ নিয়ে অনেকেই আমার কাছে আসেন। আমি তাদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলে দেই। তিনি বলেন, নির্ধারিত সস্ন্যাবের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে বেশি দামে বিল দিতে হবে সে ক্ষেত্রে কিছু করার নেই।
দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি : বেড়েছে জনদুর্ভোগ
কুইক রেন্টালের খেসারত
কুইক রেন্টালের কারণে জনদুর্ভোগ বেড়ে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, কুইক রেন্টালের কারণে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। দায় চাপানো হয়েছে জনগণের ওপর। বেড়েছে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়। অথচ এ সময়ে বিদ্যুতের ঘাটতি কমেনি। কমেনি লোডশেডিংয়ের দুর্বিষহ যন্ত্রণা।পিডিবি সম্প্রতি বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর প্রস্তাবে বলেছে, দাম না বাড়ালে বছরে তাদের ১২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। আর দাম বাড়ালেও তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। গত ৬ জুন পিডিবি পাইকারি পর্যায়ে ৫০ শতাংশ দাম বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব করেছে। একই সাথে তারা খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
পিডিবির পরিসংখ্যান মতে, তরল জ্বালানিনির্ভর কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে গত ৯ মাসে পিডিবির উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। পরিসংখ্যান মতে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় যেখানে ছিল তিন টাকা ৯৯ পয়সা, ১৫ জুনে তা বেড়ে হয়েছে ছয় টাকা ৬৮ পয়সা। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গেল বছরে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
পরিসংখ্যান মতে, গ্রাহকপর্যায়ে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুতের মূল্য বেড়ে হয়েছে তিন টাকা ৫ পয়সা থেকে সাত টাকা ৮৯ পয়সা। পল্লী বিদ্যুতের ক্ষেত্রে এটি হয়েছে তিন টাকা ৮ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৩৮ পয়সা, বাণিজ্যিক ও শিল্প ক্ষেত্রে বিদ্যুতের মূল্য নানা ধাপে হয়েছে ৫ টাকা ১৬ পয়সা থেকে ১০ টাকা ২৬ পয়সা পর্যন্ত। এ সময়ে নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত সরবরাহের জন্য ‘কিউ’ শ্রেণী তৈরি করা হয়েছে। যারা মানসম্মত বিদ্যুৎ নেবেন তাদের প্রতি ইউনিটের জন্য ব্যয় করতে হবে ১৪ টাকা ৯৯ পয়সা। এর সাথে থাকবে আরো নানা ধরনের চার্জ।
পিডিবির এক বিদ্যুৎ বার্তায় বলা হয়েছে গত তিন বছরে ৫৫টি চুক্তির মাধ্যমে সাত হাজার ৩২৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। ২০০৯ এর ৬ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে তিন হাজার ৩৮০ মেগাওয়াট।
পাওয়ার সেলের সাবেক ডিজি বি ডি রহমতউল্লাহ সম্প্রতি এক সেমিনারে জানান, ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার ৮০৩ মেগাওয়াট। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে আট হাজার ৪০৩ মেগাওয়াট। ওই সময় নির্ভরশীল উৎপাদনক্ষমতা ছিল সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট, বর্তমানে তা হয়েছে চার হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। আর ওই সময় ঘাটতি ছিল আড়াই হাজার মেগাওয়াট, বর্তমানেও ঘাটতি একই রয়েছে। তিন বছরে উৎপাদনক্ষমতা বেড়েছে দুই হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, আর সরবরাহক্ষমতা বেড়েছে মাত্র এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। তিনি বলেছে, সরকার ঘোষিত নতুন উৎপাদনক্ষমতার তিন হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট চালু রয়েছে। কুইক রেন্টালের নামে পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র এনে এখানে বসানোর ফলে প্রকৃত উৎপাদন বাড়েনি, বরং জাতির ঘাড়ে দায় আরো বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানোর ফলে অতিরিক্ত জালানি তেল প্রয়োজন হচ্ছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তিন হাজার মেগাওয়াট কুইক রেন্টালের পেছনে শুধু পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১২ হাজার কোটি টাকা। আর জ্বালানি তেলের ভর্তুকি বাবদ তিন হাজার মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুতের জন্য ব্যয় হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, এক হাজার মেগাওয়াটের কুইক রেন্টালের জন্য মোট ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে তিন হাজার মেগাওয়াট চালু রাখা হলে ভর্তুকি গুনতে হবে ৮৪ হাজার কোটি টাকা।
পিডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনা ছাড়াও প্রতি মাসে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং চার্জের নামে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে প্রতি মেগাওয়াট উৎপাদনমতার ওপর ৯ হাজার থেকে ৩০ হাজার ডলার ভাড়া দিতে হচ্ছে। এর বাইরেও কেন্দ্রগুলোকে ভর্তুকিমূল্যে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। আবার তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে অধিক দাম দিয়ে। ভাড়াভিত্তিক এসব কেন্দ্রের তিন দিকের লাভ নিশ্চিত করতে গিয়ে ঘোর অমানিশায় নিমজ্জিত হয়েছে বিদ্যুৎ খাত। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১২টি রেন্টাল ও ১৫টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে শুধু ভাড়া বাবদ দিতে হয়েছে তিন কোটি ২১ লাখ ১২ হাজার ২৫১ ডলার। প্রতি ডলার ৭০ টাকা ধরে বাংলাদেশী মুদ্রায় পরিমাণ দাঁড়ায় দুই হাজার ৬৯৭ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ৮৪০ টাকা। গত অর্থবছরে এ পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১২১ কোটি ৩১ লাখ আট হাজার টাকা। এ পুরো দায়-ই শোধ করতে হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায়। বেশির ভাগ ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রে বিদেশী মালিকানা বা বিদেশী অংশীদারিত্ব থাকায় এ টাকা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। দেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বৈদেশিক মুদ্রায় দেনা পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে চাপ পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।
এসব কেন্দ্রের ব্যয়ের বোঝা জাতির কাঁধে চাপলেও এর সুফল মানুষ পাচ্ছে না। বেশির ভাগ ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রেরই উৎপাদন ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে। অথচ দেখানো হচ্ছে পিডিবির তেল সরবরাহের টাকা নেই বলে উৎপাদন কম হচ্ছে। গত মার্চ-এপ্রিলে তেল বাবদ যেখানে দৈনিক গড়ে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হতো, সেখানে সম্প্রতি ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েও দেখা গেছে বেশ কিছু ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র পূর্ণ উৎপাদনে যেতে পারছে না। অথচ স্থাপনের পর থেকে এসব কেন্দ্রকে পূর্ণমতার ধরে নিয়ে বিল পরিশোধ করে আসছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনমতার রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে দিনে গড়ে ৬২৯ মেগাওয়াট। কিন্তু ভাড়া দিতে হয়েছে পুরো দুই হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনমতা ধরে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব:) মাহবুবুর রহমান গতকাল এক সেমিনারে জানিয়েছেন, জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মুখে অবস্থান করছি। অন্যভাবে বলতে গেলে ৭ দশমিক ৫ রিকটার স্কেলের ভূমিকম্পের কেন্দ্রে অবস্থান করছি। কুইক রেন্টাল সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি থেকে যত তাড়াতাড়ি বের হওয়া যাওয়া যায় ততই মঙ্গল।
আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞদের অভিমত : সাড়ে তিন বছরে সরকারের বিদ্যুত্ খাত থেকে ২৮ হাজার কোটি টাকা লুট : আফিম ও ইয়াবাখোররাই কুইক রেন্টালের পক্ষে সাফাই গায়
দেশের অর্থনীতি ও বিদ্যুত্ খাত ধ্বংসকারী রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল
বিদ্যুেকন্দ্রের পক্ষে যারা সাফাই গায়, তারা আফিম ও ইয়াবাখোর বলে মন্তব্য
করেছেন বিদ্যুত্ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, ভাড়াভিত্তিক
বিদ্যুেকন্দ্রের রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মাধ্যমে সরকার এ সাড়ে তিন বছরে
২৮ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। জাতির জন্য আত্মঘাতী এই বিদ্যুত্
প্রকল্পগুলোর পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য সরকার এখন কিছু লোককে মাঠে নামিয়েছে।
কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্রের পক্ষে তারা এমনভাবে ওকালতি করেন, যাতে মনে
হয় এরা আফিম কিংবা ইয়াবা সেবনকারী। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার অত্যন্ত
পরিকল্পিত উপায়ে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে।
রাজধানীর একটি মিলনায়তনে সাপ্তাহিক কাগজ আয়োজিত ‘বিদ্যুত্ ও জ্বালানি : আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ বক্তারা আরও বলেন, সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির কারণেই বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। বিদ্যুত্ খাতের উন্নয়নের পরিবর্তে সরকার মূলত এ খাতটিকে দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থ লুটে নেয়ার কাজে ব্যবহার করছে। কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিক এ ভয়ানক লুটপাটে নীরব থাকতে পারে না। এর প্রতিবাদ করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, যারা কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র এবং বিরাজমান বিদ্যুত্ পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে, তারা হয়তো অজ্ঞ-মূর্খ, না হয় রাষ্ট্রদ্রোহী। তার এ বক্তব্যের পর অপর একটি অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আনিসুল হক বলেছিলেন, বিদ্যুত্ পরিস্থিতি সামাল দিতে কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন ছাড়া সরকারের সামনে বিকল্প কোনো পথ ছিল না। গতকালের এই সেমিনারে আনিসুল হক নিজেও উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে দেশের বিরাজমান বিদ্যুত্ পরিস্থিতি তুলে ধরে আলোচনা করেন বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান খিজির হায়াত খান, পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ, ঢাকা চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আসিফ ইবরাহিম, ইনডিপেনডেন্ট ইউনির্ভাসিটির অধ্যাপক এ আরাফাত, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান, এফসিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আনিসুল হক প্রমুখ।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ বলেছেন, গত সাড়ে তিন বছরে বিদ্যুত্ খাত থেকে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। বিদ্যুত্ উত্পাদনের গালগল্প শোনানো হচ্ছে জাতিকে। অথচ প্রকৃত অর্থেই জাতি অন্ধকারে রয়েছে। বিদ্যুত্ খাতের বিপর্যয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে অভিযুক্ত করে তিনি তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে বলেন, তৌফিক জাতিকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছেন। তিনি তার বিত্ত-বৈভব বাড়ানোর জন্য কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র বসিয়েছেন। এখন তিনিসহ কিছু লোক কুইক রেন্টালের সমালোচনাকারীদের অজ্ঞ, মূর্খ ও রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে যারাই কুইক রেন্টালের পক্ষে সাফাই গান, তারা আফিম ও ইয়াবা সেবনকারী। কেননা কোনো সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ জেনেশুনে ও বুঝে অর্থনীতি ধ্বংসকারী কুইক রেন্টালের পক্ষে কথা বলতে পারেন না।
কুইক রেন্টালের অতীত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিডি রহমতউল্লাহ আরও বলেন, এ কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র ১৯৬৯ সালে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা ভিয়েতনাম আগ্রাসনের সময় বিপদে পড়ে ব্যবহার করেছিল। সেটা এখন বাংলাদেশে ব্যবহারের কোনোই যৌক্তিকতা নেই।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দেশ এখন জ্বালানি সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সঙ্কট মোকাবিলায় কুইক রেন্টাল কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হতে পারে না। জ্বালানি খাতের চুক্তিগুলো নিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত। চুক্তিগুলো জনসম্মুখে প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই সঙ্কট থেকে বের হওয়ার জন্য সব পক্ষের লোকদের নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা উচিত।
মাহবুবুর রহমান বলেন, কুইক রেন্টালের চুক্তি করার সময় সরকার সংসদে ইনডেমনিটি আইন পাস করে। এই আইন করায় মানুষের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ইনডেমনিটি জারি করে কাউকে রক্ষা করা যায়নি। কুইক রেন্টাল সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি থেকে যত তাড়াতাড়ি বের হওয়া যায়, তত মঙ্গল।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মুনসুর বলেন, মধ্যমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এ কারণে রেন্টাল নির্ভরতা ৩ বছর থেকে বেড়ে ৫ বছর হয়েছে। রেন্টাল নির্ভরতা ৭ বছর, এমনকি ১১ বছর ছাড়িয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, কয়লা নীতি না হওয়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর রাজনৈতিক কারণে কয়লা নীতি হচ্ছে না। রাজনীতিবিদদের জাতীয় স্বার্থে কয়লা নীতি চূড়ান্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
রাজধানীর একটি মিলনায়তনে সাপ্তাহিক কাগজ আয়োজিত ‘বিদ্যুত্ ও জ্বালানি : আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ বক্তারা আরও বলেন, সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির কারণেই বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। বিদ্যুত্ খাতের উন্নয়নের পরিবর্তে সরকার মূলত এ খাতটিকে দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থ লুটে নেয়ার কাজে ব্যবহার করছে। কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিক এ ভয়ানক লুটপাটে নীরব থাকতে পারে না। এর প্রতিবাদ করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, যারা কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র এবং বিরাজমান বিদ্যুত্ পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে, তারা হয়তো অজ্ঞ-মূর্খ, না হয় রাষ্ট্রদ্রোহী। তার এ বক্তব্যের পর অপর একটি অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আনিসুল হক বলেছিলেন, বিদ্যুত্ পরিস্থিতি সামাল দিতে কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন ছাড়া সরকারের সামনে বিকল্প কোনো পথ ছিল না। গতকালের এই সেমিনারে আনিসুল হক নিজেও উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে দেশের বিরাজমান বিদ্যুত্ পরিস্থিতি তুলে ধরে আলোচনা করেন বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান খিজির হায়াত খান, পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ, ঢাকা চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আসিফ ইবরাহিম, ইনডিপেনডেন্ট ইউনির্ভাসিটির অধ্যাপক এ আরাফাত, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান, এফসিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আনিসুল হক প্রমুখ।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ বলেছেন, গত সাড়ে তিন বছরে বিদ্যুত্ খাত থেকে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। বিদ্যুত্ উত্পাদনের গালগল্প শোনানো হচ্ছে জাতিকে। অথচ প্রকৃত অর্থেই জাতি অন্ধকারে রয়েছে। বিদ্যুত্ খাতের বিপর্যয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে অভিযুক্ত করে তিনি তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে বলেন, তৌফিক জাতিকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছেন। তিনি তার বিত্ত-বৈভব বাড়ানোর জন্য কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র বসিয়েছেন। এখন তিনিসহ কিছু লোক কুইক রেন্টালের সমালোচনাকারীদের অজ্ঞ, মূর্খ ও রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে যারাই কুইক রেন্টালের পক্ষে সাফাই গান, তারা আফিম ও ইয়াবা সেবনকারী। কেননা কোনো সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ জেনেশুনে ও বুঝে অর্থনীতি ধ্বংসকারী কুইক রেন্টালের পক্ষে কথা বলতে পারেন না।
কুইক রেন্টালের অতীত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিডি রহমতউল্লাহ আরও বলেন, এ কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র ১৯৬৯ সালে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা ভিয়েতনাম আগ্রাসনের সময় বিপদে পড়ে ব্যবহার করেছিল। সেটা এখন বাংলাদেশে ব্যবহারের কোনোই যৌক্তিকতা নেই।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দেশ এখন জ্বালানি সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সঙ্কট মোকাবিলায় কুইক রেন্টাল কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হতে পারে না। জ্বালানি খাতের চুক্তিগুলো নিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত। চুক্তিগুলো জনসম্মুখে প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই সঙ্কট থেকে বের হওয়ার জন্য সব পক্ষের লোকদের নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা উচিত।
মাহবুবুর রহমান বলেন, কুইক রেন্টালের চুক্তি করার সময় সরকার সংসদে ইনডেমনিটি আইন পাস করে। এই আইন করায় মানুষের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ইনডেমনিটি জারি করে কাউকে রক্ষা করা যায়নি। কুইক রেন্টাল সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি থেকে যত তাড়াতাড়ি বের হওয়া যায়, তত মঙ্গল।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মুনসুর বলেন, মধ্যমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এ কারণে রেন্টাল নির্ভরতা ৩ বছর থেকে বেড়ে ৫ বছর হয়েছে। রেন্টাল নির্ভরতা ৭ বছর, এমনকি ১১ বছর ছাড়িয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, কয়লা নীতি না হওয়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর রাজনৈতিক কারণে কয়লা নীতি হচ্ছে না। রাজনীতিবিদদের জাতীয় স্বার্থে কয়লা নীতি চূড়ান্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন