রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১২

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক : দেয়ানেয়ায় অনেক তফাৎ


বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন মাত্রা তৈরির নতুন  উদ্যম অনেককেই আপ্লুত করেছিল। ভারত সফর শেষে বাংলাদেশে ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি জয়ী’। সেই জয়ের রেশ বাস্তবের চেহারা পায়নি।
দুই দেশের অভিন্ন সমস্যাগুলো সমাধানের বাস্তব উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। ভারত প্রশ্নে মহাজোট সরকারের উদারনীতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হয়নি, সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশি নাগরিক খুনের হার কমেনি, দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি কমেনি, ভারতীয় ঋণের টাকায় প্রকল্প ছাড়ের অনুমোদন গতি পায়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভারতের জন্য ট্রানশিপমেন্ট ব্যবস্থা উজাড় করেছে। ট্রানজিট প্রশ্নে ভারতকে একতরফা নানাবিধ সুবিধা দিয়েছে। সন্ত্রাস দমন প্রশ্নে ভারতের জন্য সমস্ত সহযোগিতা উন্মুক্ত করে বাংলাদেশের মাটিকে ভারতের জন্য নিñিদ্রভাবে বিপদমুক্ত করেছে। দেশের ভেতরে মহাজোট সরকার ‘ভারতপ্রীত’, ‘ভারত-বান্ধব’ সরকার হিসেবে দায় নিয়ে রাজনৈতিক ঝুঁকিও নিয়েছে। কিন্তু সেই বিবেচনায় ভারতের কাছ থেকে প্রকৃত সহায়তা পায়নি। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও ভারতে কংগ্রেস দুই শাসক দলের মধ্যেকার প্রীতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈরিতায় সুফল আনেনি। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতির উদ্ভব হলো? কেনো ড. মনমোহন সিং সরকারের আন্তরিকতা সত্ত্বেও, শেখ হাসিনার আকাশ সমান উদারতা সত্ত্বেও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ঘোলা মেঘে সূর্য উঁকি দিল না। সেই রাজনৈতিক কারণ খুঁজে দেখেছেন শুভ কিবরিয়া
নিরাপত্তা বিবেচনা : নয়া দৃষ্টিভঙ্গি
অর্থনীতি ও সমর শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ভারত ক্রমশ পৃথিবীর বড় রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠছে। এশিয়াতে ভারত ও চীনের তীব্র প্রতিযোগিতা বহাল রইলেও আমেরিকা’র নতুন মিত্র হিসেবে, ইসলামি জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আমেরিকান যুদ্ধের সতীর্থ হিসেবে- ভারত আমেরিকার মিত্রতা এখন সুদৃঢ়। গত এক দশকে ভারতের অর্থনীতিতে ঘটেছে আশাজাগানিয়া প্রবৃদ্ধি। বিশ্ব রাজনীতিতেও তার সাফল্য আকাশছোঁয়া। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে বন্ধু হিসেবে যে ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তার চাইতে অনেক বেশি ভিন্ন চেহারা নিয়ে আজকের ভারত দাঁড়িয়েছে। ১৯৭১ সালের আয়না দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের বর্তমান  সম্পর্ককে বিবেচনা করা যাবে না।
আঞ্চলিক ও বিশ্বরাজনীতির নব আঙ্গিকে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে দেশে দেশে সম্প্রসারণবাদী ভারতীয় অর্থনীতির বিকাশ ঘটানো। সারা পৃথিবীতে ভারতীয় বাজারকে সম্প্রসারিত করা। অন্যদিকে এই অর্থনৈতিক সম্পর্ককে টেকসই করার পাশাপাশি নিরাপত্তা বিবেচনাকে প্রাধান্য দেয়া। ভারতের সাম্প্রতিক বিদেশনীতির বড় ভিত্তি হচ্ছে নিরাপত্তা আঙ্গিক (ঝবপঁৎরঃু ধংঢ়বপঃ)। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিবেচনায় ভারতের বিদেশনীতির চোখও তাই দাঁড়িয়ে আছে আবেগবর্জিত, বাস্তবভিত্তিক নিরাপত্তা বিবেচনার ওপর। প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্কের মূলনীতি কি হবে, এই বিষয়ে আলোচনা করতে যেয়ে ভারতীয় এক নিরাপত্তা গবেষকের বক্তব্য হচ্ছে, ‘প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনায় নিরাপত্তা ভাবনাটিই ভারতের মূল নিয়ামক হিসেবে দেখা দিয়েছে’  (ঝবপঁৎরঃু যধং নববহ ধ সধলড়ৎ ফৎরারহম ভড়ৎপব ড়ভ ওহফরধ’ং হবরযনড়ঁৎযড়ড়ফ ঢ়ড়ষরপু.’)।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত হচ্ছে চার হাজার কিলোমিটারের উপরে (৪০৯৪ কিলোমিটার)। ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদী ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। প্রথম পর্যায়ে এই বিস্তৃত স্থল সীমান্তের এক হাজার তিন শত সাতান্ন (১৩৫৭) কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৪২৯ কিলোমিটারজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণাধীন। আরও ৩০০ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত শুধু কাঁটাতারের বেড়া নয় তা বিদ্যুতায়িত করে সীমান্তে সুরক্ষা দেবে ভারত।
ভারতের দাবি হচ্ছে অবৈধ সীমান্ত বাণিজ্যসহ সীমান্ত দিয়ে ভারতে মানুষ পাচার রোধ করতেই তাদের এই উদ্যোগ। তাদের বিবেচনায় সীমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসীরা বিশেষত ইসলামি জঙ্গিরা ভারতে প্রবেশ করতে পারে। সুতরাং সীমান্তকে যতটা সুরক্ষা দেয়া যায়, যতটা প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় সেটাই ভারতের লক্ষ্য। এটা ভারতের নিরাপত্তা বিবেচনার একটা বড় অংশ। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তজুড়ে বিএসএফের সাম্প্রতিক যে নির্যাতন বা খুন চলছে, তাও ঐ দৃষ্টিভঙ্গিরই বাস্তব প্রতিফলন। এটা সীমান্ত সুরক্ষা বিবেচনার তাত্ত্বিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
বিচ্ছিন্নতাবাদ ও ভারতীয় সুরক্ষা
পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশি সামরিক বাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশের মাটিতে বসে আসাম, নাগাল্যান্ড, মিজোরামের কথিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালায় বলে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষের স্থির বিশ্বাস। এটাও তাদের নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গিতে একটা বড় মাথা ব্যথার কারণ।
বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতীয় এই বিবেচনাকে অখণ্ড পাকিস্তান সরকার এবং স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু থেকে সর্বশেষ বেগম জিয়ার সরকার পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে মেনে নেয় নাই । শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার ভারতের এই দাবিকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে। বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতবিরোধী কোনো কার্যকলাপ সহ্য করা হবে না এই প্রতিশ্রুতি ভারতকে দিয়েছেন শেখ হাসিনা ।  শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে বাংলাদেশ যে আগ্রহী তা প্রমাণ করতে ভারতের ভাষায় কথিত বিচ্ছিন্নতাবাদী নানান গোষ্ঠীর নেতাদের ধরে বাংলাদেশ থেকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। ভারত আপাতত নিশ্চিত হতে পেরেছে, যে বাংলাদেশের মাটিতে ভারতবিরোধী সশস্ত্র স্বাধীনতাকামীরা আর জায়গা পাচ্ছে না। সুতরাং নিরাপত্তা বিবেচনার যে বড় দুর্ভাবনাটি এতকাল ভারত বয়ে এসেছে, শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার সেই দুর্ভাবনা থেকে ভারতকে মুক্তি দিয়েছে।
অন্যদিকে  বাংলাদেশের ওপর সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা ও সামরিক নজরদারি রাখার আয়োজন সাফল্যের সঙ্গে করেছে ভারত । ভারতের এই সক্ষমতা এক সঙ্গে তাদের কূটনীতি এবং সমর-রাজনীতির একটা বড় সাফল্য। বিপরীতে তারা শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভারতীয় মিডিয়া ভারতের এই সাফল্য ফলাও করে প্রচার করেছে।
বাণিজ্য বিবেচনা
বাণিজ্য বিবেচনায়, বাংলাদেশ ভারতের ওপর দারুণভাবে নির্ভরশীল। বাংলাদেশের উজানে ভারত বড় অর্থনীতির দেশ। স্বাভাবিক গতি প্রবাহেই ভারত বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বিস্তার করতে সক্ষম। বাংলাদেশের অর্থনীতি আমদানি নির্ভর। বহু পণ্যের জন্য বাংলাদেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল। এই বাণিজ্য সুবিধা চাপিয়ে একতরফাভাবে অনেক সুযোগ নিজের পক্ষে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে ভারত। সীমান্তে ভারতের শক্তিমান উপস্থিতি তাতে বড় সুবিধা দেয়।
ভারত-বাংলাদেশ বৈধ বাণিজ্যের চাইতে অবৈধ বাণিজ্যের অঙ্কের পরিমাণ অনেক বড়। যেহেতু সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ভারতের বেশি, সেহেতু অবৈধ সীমান্ত-বাণিজ্যে ভারত তার ইচ্ছানুযায়ী যে পণ্য নেবার দরকার তা নেয়, যা বাংলাদেশে পাঠানোর দরকার তা অবাধে পাঠায়। বাংলাদেশের নতুন বিজিবি বাহিনীর পক্ষে ভারতীয় এই চাপ প্রতিহত করা একেবারে অসম্ভব। সুতরাং সীমান্তে অবৈধ বাণিজ্যের সুফল একতরফাভাবে ভারতের পক্ষেই যাচ্ছে।
অন্যদিকে, বৈধ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে গুটিকতক পণ্য ভারতের বাজারে ঢুকতে সক্ষম, সেক্ষেত্রে ভারতীয় আমলাতন্ত্রের বহুবিধ প্যাঁচ, বিশেষত শুল্ক ও অশুল্ক বাধার জোয়ার তা প্রতিহত করছে।
এটা একটা দিক। অন্যদিকে ভারতের সামগ্রিক বাণিজ্যের বিবেচনায় বাংলাদেশ খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ শেয়ার করে। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে ২০১১-১২ সালে ভারতের মোট বাণিজ্যের ০.৬৫ শতাংশ শেয়ার করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে ভারতের মোট রপ্তানির মাত্র ১.৪৩ শতাংশ এবং মোট আমদানির ০.১২ শতাংশ হয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে। অন্যদিকে এই একই সময়ে ভারত চীনের সঙ্গে করেছে তার মোট বাণিজ্যের ১০.১৬ শতাংশ, ইরানের সঙ্গে ২.২ শতাংশ।
অন্যান্য দেশের বিশেষত দূর ও কাছের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সামগ্রিক বাণিজ্য বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান খুবই নগণ্য। ভারতীয় আগ্রাসী বাণিজ্যনীতির এই জোর ভারতীয় বিদেশনীতির বিবেচনায়  অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে।
পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ : সম্পর্কের বিপন্নতা
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা বিবেচনা করলে দেখা যাবে, যখনই দুই দেশের সম্পর্কে কোনো উন্নতি ঘটেছে, তার পেছনে কলকাঠি নেড়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘকালীন বাম শাসনামলে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসুর সঙ্গে বাংলাদেশের বাম-ডান-মধ্যপন্থি সকল শ্রেণীর রাজনৈতিক দলের নেতাদের এক ধরনের আত্মিক ও বাস্তবিক যোগাযোগ ছিল। অতীতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যে কোনো দেনদরবারে বাংলাদেশের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিতেন জ্যোতিবসু এবং তৎকালীন বাম সরকার। জ্যোতিবসুর পরে  পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থি নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক নেতাদের যোগসূত্র ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকে উভয় পক্ষের নিষ্ক্রিয়তায়।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিবিদরাও ক্রমশ সর্বভারতীয় স্বার্থের অনুকূল হয়ে উঠতে থাকেন। বাঙালি হবার চাইতে সর্বভারতীয় নাগরিক হয়ে উঠাটা সব অর্থেই প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দেয় পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে। ব্যবধান বাড়তে থাকে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের রাজনীতিকদের মধ্যে। পারস্পরিক আদান-প্রদান, ভাব বিনিময় কমতে থাকে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন প্রজন্মের রাজনীতিকরা অচেনা হয়ে উঠেন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যেসব পুরনো নেতাকর্মীদের চিনতেন, জানতেন, যাদের সঙ্গে তাদের হৃদ্যতা-সুসম্পর্ক সচল ছিল, তারা নিজ দলের ও সরকারের মধ্যে ক্রমশ অস্তিত্বহীন ও ব্রাত্যজন হয়ে পড়েন। ফলে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকারের ও দলের পূর্ব সম্পর্কে যথেষ্ট ভাটা পড়ে।
পশ্চিমবঙ্গের বিগত নির্বাচনে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও কথিত ভূমিকাও ক্ষুব্ধ করে সেখানকার বাম মহলকে। মনে রাখতে হবে, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় তৃণমূল থাকলেও সেখানকার আমলাতন্ত্রে দীর্ঘকালীন বাম শাসনের প্রভাব বিদ্যমান আছে। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান আমলাতন্ত্রের কাছে বাংলাদেশ কোনো নিকটজন নন। বরং মুসলিম অধ্যুষিত প্রতিবেশী দেশ মাত্র। প্রীতির চাইতে কূটনীতি এখানে প্রভাবশালী।
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী , তার তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গেও বাংলাদেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের যোগাযোগও খুব উজ্জ্বল নয়। বরং বাংলাদেশের সরকার অনেক বেশি আপনজন ভাবে ভারতীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জীকে। পশ্চিমবঙ্গের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাবিত করার ক্ষমতা প্রণব মুখার্জীর খুব একটা নেই। কাজেই প্রণব মুখার্জির সঙ্গেই শেখ হাসিনা সরকারের দৃশ্যমান সখ্যতাও  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে  কতটা খুশি করেছে তাও বিবেচ্য বিষয়।
কূটনীতির বাংলাদেশ স্ট্রাটেজি
ড. মনমোহন সিং-শেখ হাসিনার যৌথ বোঝাপড়া শেখ হাসিনা সরকারকে এতটাই আত্মবিশ্বাসী করেছে যে, শেখ হাসিনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক প্রকার উপেক্ষা করে দুই দেশের স্বার্থ সুরক্ষা করতে চেয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পর্দার অন্তরালে কিচেন কূটনীতির বদলে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের জোর খাটিয়ে তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে দাবি আদায়ের নীতি নিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। এমনকি পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনাকালে কঠোর অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের দাবি মানবার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের ‘কেন্দ্রকে তোয়াজ, রাজ্যকে চাপ’- এই নীতির ফলে কিছুটা বেঁকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
 কৌশল হিসেবে তিনি আওয়াজ তোলেন, তিনি রাজ্যের স্বার্থের দিকটা দেখছেন। এই দাবি তুলে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে জোর বাধা দেন। ফারাক্কার স্লুইজ গেট ভেঙে বাংলাদেশ বেশি পানি পাচ্ছে বলে দাবি তোলেন। ছিটমহল হস্তান্তর করলে কলকাতার স্বার্থ ক্ষুণœ হবে বলে তা ঠেকিয়ে রাখেন। শুধু তাই নয়, ২০০৫ সাল থেকে চলে আসা বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের বেনাপোল-পেট্রোবাংলা ‘নো ম্যানস ল্যান্ডের’ ওপর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের যৌথ অনুষ্ঠান বাতিল করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রুষ্ট কেন ভারত
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নতির চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার কৌশলগত কারণে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালায়। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আগের তুলনায় উন্নততর অবস্থায় নিয়ে যেতে থাকে। পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সহায়তা একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে সমরাস্ত্র সরবরাহের জন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রস বোরন এক্সপোর্ট -এর (জড়ং ইড়ৎড়হ ঊীঢ়ড়ৎঃ ) সঙ্গে ৮৫০ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার অর্থের অস্ত্র ক্রয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে। জ্বালানি খাতে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি গ্যাজপ্রম গ্যাসকূপ খননসহ নানান কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। অন্যদিকে চীনের সঙ্গেও বর্তমান সরকার বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কথাবার্তা চালিয়ে গেছে। ভারত সরকারের সঙ্গে নিবিড়তম সুসম্পর্কের ছায়ায় বসে, শেখ হাসিনা সরকারের এই চীন ও রাশিয়া প্রীতিকে ভালো চোখে নেয়নি ভারত সরকার। ভারতে পররাষ্ট্রনীতির চালকরা বাংলাদেশের এই আচরণকে এক ধরনের ঔদ্ধত্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যে কারণে শেখ হাসিনার শাসনামলের তিন বছর শেষে এসে, ভারত সরকার তার আচরণে পরিবর্তন এনেছে।
কৌশলগত কূটনৈতিক ভারসাম্যের যে প্রথাগত কায়দা আছে, বাংলাদেশের সমন্বয়হীন, নানা ব্যক্তির প্রাধান্যযুক্ত পররাষ্ট্রনীতি তাতে আরো বাগড়া দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের কেউ ভারতমুখীন নীতির ব্যাপারে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কেউ কেউ আমেরিকার ব্যাপারে আপসহীন, পররাষ্ট্র সচিব রাশিয়ার ব্যাপারে আগ্রহী, মন্ত্রীদের মধ্যে কেউ চীনকে ব্যবসা-বাণিজ্য দিতে উৎসাহী-  পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই চতুর্মুখী টানে প্রায় দিশেহারা।
মহাজোট সরকারের এই বহুমুখী, সমন্বয়হীন, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থপুষ্ট পররাষ্ট্র কৌশল শেষ বিবেচনায় মার্কিন লবিকে এবং মার্কিন-ভারত অক্ষশক্তিকে দারুণভাবে অখুশি করেছে। বিডিআর বিদ্রোহের পর সকল আকাক্সিক্ষত বিপদ থেকে উদ্ধার করতে যে ভারতীয় শক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়েছে, সেই ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের বাইরে গিয়ে ভারতের অপছন্দীয় পক্ষসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের নানা সামরিক-বেসামরিক চুক্তি কিংবা সম্পর্ক নির্মাণের চেষ্টাকে, ভারতের প্রতি অবজ্ঞা এবং উপেক্ষার চেষ্টা হিসেবেই তারা দেখছে।
বদলাচ্ছে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিভারতের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক চেহারা বদলে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন ইউপিএ জোটের বদলে বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের ক্ষমতাবান হয়ে ওঠবার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। ভারতীয় পত্রিকার জরিপে আগামীতে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদীর নাম উঠে আসছে। বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদীসহ অন্যান্য ক্ষমতাবান নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের কোনো যোগাযোগ নেই। নরেন্দ্র মোদী গংদের কাছে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতই ভারতবিদ্বেষী মুসলমান প্রধান প্রতিবেশী দেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারাও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইসলামি জঙ্গি ঠেকানোকে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবেন।
ভারতের রাজনৈতিক আঙ্গিনায় এবং সামরিক-বেসামারিক আমলাতান্ত্রিক জগতে বাংলাদেশ সম্পর্কে এই বিদ্বেষপ্রসূত চিন্তা বদলের কোনো কূটনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক উদ্যোগ বাংলাদেশ নিতে পারে নাই। সে কারণে ড. মনমোহন সিং আর সোনিয়া গান্ধীর সদিচ্ছা সত্ত্বেও দুই দেশের সম্পর্কে বাস্তব উন্নতি ঘটানো সম্ভব হয় নাই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জনগণের পক্ষ থেকে তাই যতই ভালোবাসা আর সম্প্রীতির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তজুড়ে কাটাতারের বেড়া ততই সম্প্রসারিত হয়েছে। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক সীমান্তে নৃশংসভাবে মানুষ খুন ততই বেড়েছে।
আওয়ামী লীগের ভারতপ্রীতি ও জনভীতি
দুই দেশের অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে শেখ হাসিনার হাতে ট্রামকার্ড ছিল তিনটি।
 প্রথমত: বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধিতার প্রাবল্য কমানো।
 দ্বিতীয়ত : নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতকে উদার সহযোগিতা করা।
তৃতীয়ত : বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষিত করে ভারতকে ট্রানজিট দেয়া এবং এই ট্রানজিটকে বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার-চীন পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা।
জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধিতার প্রাবল্য কমাতে গেলে দৃশ্যমান সাফল্য দরকার ছিল। বাংলাদেশের মানুষ যদি দেখতো ভারত ৫৪টি নদীর প্রশ্নে, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রশ্ন, সীমান্তে খুনোখুনি বন্ধে একটা ভাতৃপ্রতিম আচরণ করছে, তাহলে ভারতের প্রতি সহানুভূতি বাড়ত। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটল না।
অন্যদিকে সরকার বা আওয়ামী লীগকে দেখা গেল উল্টো ভূমিকায়। বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে না দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার উপদেষ্টা, মন্ত্রীরা এমনভাবে কথা বলা শুরু করলেন, যেন মনে হলো তারা ভারতের পক্ষেই কাজ করার জন্য দায়িত্ব পেয়েছেন। সরকারের এই আচরণ জনগণকে ভীত করেছে। ভারত-প্রীতির বদলে জনগণের মধ্যে ভারতভীতি ও ভারত বিরোধিতার প্রবণতা বেড়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অংশ ও আওয়ামী লীগ পুষ্ট এনজিও -বুদ্ধিজীবী -বিশেষজ্ঞদের আচরণেও মানুষের মনে হয়েছে, বাংলাদেশের স্বার্থ না দেখে এরা সবাই মিলে ভারতকে অবাধ সুবিধে দিচেছ।
দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে এই জনঅবিশ্বাস শেষ বিচারে ভারতকেও রুষ্ট করেছে।
নিরাপত্তার প্রশ্নে শর্তহীনভাবে ভারতকে সহযোগিতা করেছে সরকার। প্রতিবেশি দেশের দীর্ঘদিনের এই চাওয়া পূরণ করাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবেই ধরে নেয়া হয়েছে। তবে যে প্রক্রিয়ায় এই ঘটনাগুলো ঘটেছে তাতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বভৌমত্ব কতটা সুরক্ষিত হয়েছে সেই প্রশ্নটিও উঠেছে।
ট্রানজিট প্রশ্নে সরকার আগাগোড়াই অগোছালো, সমন্বয়হীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন, আচরণ করেছে। বাংলাদেশের তিতাস নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে, নদী খুন করে যেভাবে ভারতীয় মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য আচরণ। ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশের যেসব অর্থনৈতিক লাভের কথা এতদিন শুনানো হয়েছে, তার কানাকড়ির দেখাও মেলেনি। ট্রানজিট   প্রশ্নে সরকারের কথা ও কাজের মধ্যে এত ফারাক ঘটেছে, তাতে দৃশ্যমান হয়েছে বাংলাদেশের ক্ষতি করে, স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েই ভারতকে ট্রানজিট বা করিডর সুবিধে দিতে চায় সরকার। সরকারের এই আচরণ দেশের মধ্যে ভারত বিরোধিতার নতুন মাত্রার উন্মোচন করেছে।
ভারতের মুখ ফেরানোআওয়ামী লীগ সরকার ভারত প্রশ্নে যে আগ্রাসী নীতি নিয়ে এগিয়েছে তাতে ভারতকে প্রধানতম বন্ধু হিসেবে পাবার কথা ছিল। কিন্তু লক্ষ্যহীন, সমন্বয়হীন, ব্যক্তি ইচ্ছা প্রসূত, অদূরদর্শী, দুর্বল পররাষ্ট্র কর্মকৌশল তাতে বাদ সেধেছে। নিরাপত্তা প্রশ্নে ভারতের পাওনাটুকু আদায় করে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তারা। কেননা, দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সম্পর্কের প্রশ্নে ভারতের চাই দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের আস্থা। আওয়ামী লীগ সরকার সেই ভারতপ্রীতিকে ভারতভীতিতে রূপান্তরিত করছে। তাই ভারত ধীরে ধীরে বর্তমান সরকারের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এর প্রমাণ মিলছে, সীমান্তে মানুষ খুন প্রশ্নে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের প্রধান মি. বানসালের  মিডিয়ায় দেয়া প্ররোচনামূলক বক্তব্যে।
 ভারত যে বর্তমান সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট নয়, তার প্রমাণ মিলছে বাংলাদেশকে ঋণ দেয়া ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে নানামুখী বাধা তৈরির চেষ্টা দেখে। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাংক আওয়ামী সরকারের সম্পর্কের যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে তার পেছনেও ভারতীয় লবির অদৃশ্য হাত থাকতে পারে বলে অনেকে  ধারণা করছে।
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক যে রকম ছিল বর্তমানে তার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সে সময় মুখে মুখে ইন্দিরা-মুজিব সরকারের মধ্যে সুসম্পর্ক থেকেছে, সিটিং-মিটিং প্রতিশ্রুতি চলেছে। কিন্তু তলে তলে ভারতীয় এজেন্সির পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছিল সরকার বিরোধী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরা। নতুন অর্থে,  নতুন অস্ত্রে, নতুন অবয়বে তৎকালীন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীদের এই বিস্ময়কর উত্থান শেষতক বঙ্গবন্ধুর স্বাভাবিক শাসন ব্যবস্থাকে হুমকির মধ্যেই শুধু ফেলেনি, এক দলীয় শাসনে যেতে বাধ্য করেছে।
গুলি আর কাঁটাতারের বেড়া
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেনতেন প্রকারে আমরা ভারতকে ট্রানজিট দিচ্ছি । কখনো সড়ক হত্যা করে, কখনো নদী হত্যা করে।
 ভারতের কথিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশ থেকে নির্মূলে গত ৪০ বছর ধরে ভারত যে সমস্যার সমাধান চাইছিল মাত্র ৪০ মাসের মধ্যেই আমরা তার সমাধান করে দিয়েছি।
বিনিময়ে আমরা কি পাচ্ছি?
বিনিময়ে সীমান্তে আমরা পাচ্ছি গুলি। উপহার পাচ্ছি নিরীহ বাংলাদেশিদের লাশ। আর সীমান্তে সুরক্ষিত কাঁটাতারের বেড়া।
আমরা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পাইনি, ফারাক্কার বাঁধের কারণে আমাদের নদীগুলোর ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তার সমাধান পাইনি। চুক্তি হবার পরও সিটমহল পাইনি...। না পাওয়ার লিস্ট ক্রমাগত লম্বা হচ্ছে।
বরং এসবের পরিবর্তে আমরা পাচ্ছি মৈত্রী-সম্প্রীতি সৌহার্দ্যরে ফাঁকা আশ্বাস।
আমরা উজাড় করে ভারতকে দিলাম সব, বিনিময়ে পেলাম গুলি, লাশ, কাঁটাতারের বেড়া আর ফাঁকা আশ্বাস।

ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশ
 বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে এক ক্যু’র চেষ্টা যে গড়ে উঠেছিল সে সম্পর্কে শেখ হাসিনাকে সতর্ক করে ভারতীয় মিলিটারি ইনটেলিজেন্স দপ্তর (এমআই)।
(It was the MI (Military Intelligence Directorate) that warned Sheikh Hasina about a coup brewing in the Bangladesh Army.)
  হাসিনার জন্য দিল্লীর সমর্থন সুনিশ্চিত। তার শাসনামলে ভারতীয় সন্ত্রাসীদের জন্য বাংলাদেশ আর স্বর্গ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
 (Delhi’s Support for Hasina is clear. Under her, Bangladesh is no longer a heaven for Indian Militants.)
  বাংলাদেশের ওপর চোখ রাখছে ভারতীয় মিলিটারি ইনটেলিজেন্স। কেননা উলফা, ইউএনএলএফ, কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনসহ আসাম, মণিপুরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভয়াশ্রম ছিল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই উলফা ও ইউএনএলএফ-এর পুরো নেতৃত্বকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
 (Bangladesh is another country that has figured high on the MI (Military Intelligence Directorate) Scanner, Particularly because of the safe sanctuaries provided to insurgent groups like the United Liberation Front of Assam (ULFA), the United Liberation Front of Manipur (UNLF) and the Kamtapur Liberation Organization of Assam. Within months of the Hasina government taking over in 2009, the entire leadership of the ULFA and UNLF has handed over to Indian authorities.)
(সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে ম্যাগাজিন, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১২)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন