মঙ্গলবার, ২০ মার্চ, ২০১২

দুর্নীতি ও জয়কে নিয়ে সংসদ উত্তপ্ত


বিরোধী দলের যোগদানের দ্বিতীয় দিনেও জাতীয় সংসদে উত্তাপ, উত্তেজনা, হৈচৈ ও হট্টগোল হয়েছে। সরকারের দুর্নীতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় সম্পর্কে বিরোধীদলীয় সদস্যদের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সরকারদলীয় সদস্যরা তুমুল হৈচৈ ও হট্টগোল করেন। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিএনপিদলীয় সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়ের দুর্নীতি এবং দেশে-বিদেশে মাতলামি করে বারবার পুলিশের হাতে আটক ও সাজাভোগের তথ্য তুলে ধরলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সরকারদলীয় সদস্যরা। এতে কিছু সময়ের জন্য অধিবেশনে বিশৃঙ্খলা ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামলাতে স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ হাতুড়ি পিটিয়ে বার বার নিবৃত্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। স্পিকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা যে ভাষায় বক্তব্য রাখছেন এবং তা যেভাবে পত্রপত্রিকায় আসছে, তা আমাদের সবার জন্য লজ্জাকর।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনাকালে সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের পরস্পরের প্রতি আক্রমণাত্মক বক্তব্য গতকালও অব্যাহত ছিল। রোববারের জের ধরে গতকালও সংসদে কয়েক দফায় চরম হৈ-হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। দু’দলের চিত্কার চেঁচামেচিতে সংসদে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে স্পিকার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরস্পরের মারমুখো পরিস্থিতিতে স্পিকার পাপিয়ার মাইক কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেন। তিনি সুন্দর ভাষায় কথা বলার অনুরোধ করেন। দফায় দফায় স্পিকার রুলিং দেন এবং বক্তব্যের অংশবিশেষ এক্সপাঞ্জ করার আদেশ দেন। সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এরশাদের সঙ্গে লং ড্রাইভে গিয়ে তার কোলে বসে তার ক্ষমতাকে জায়েজ করা ও গোলাম আযমের কোলে উঠে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আদায় করার কথা বললে উত্তেজনা চরমে ওঠে। পাপিয়া অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীই বিএনপি চেয়ারপার্সন সম্পর্কে কোলে তোলার মতো আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। একপর্যায়ে বিরোধী দলের চিফ হুইপের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে স্পিকার বলে ওঠেন, সংসদের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার জন্য আলোচনায় অংশ নিতে আপনাকে সিনিয়র সদস্যদের নাম দিতে বসেছিলাম। কিন্তু আপনি সে কথা রাখলেন না।
এদিকে আলোচনাকালে বাংলাদেশের জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ শেয়ারবাজার, বিদ্যুত্ খাত, বিমানসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বিমানমন্ত্রী ফারুক খানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপকে বিদ্যুত্ খাতের দুর্নীতির ম্যারাডোনা এবং ওরিয়ন গ্রুপকে মেসি বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, এই দুই পরিবারের কাছে গোটা বিদ্যুত্ খাত জিম্মি হয়ে গেছে।
বিকালে স্পিকার আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক হলে একটি বিল উত্থাপনের পরই রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা শুরু হয়। ৭৭ কার্যদিবস বর্জনের পর রোববার বিরোধী দল সংসদে যোগ দিলে দ্বিতীয় দিনের মতো সংসদ উত্তপ্ত হয়। গতকালও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার পরিবারকে জড়িয়ে দুর্নীতির অভিযোগসহ নানা আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেয়া অব্যাহত থাকে। আর এসব নিয়েই দফায় দফায় চরম উত্তেজনা ও অচলাবস্থা দেখা দেয়। আর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের সঙ্গে দু’পক্ষ থেকেই আসে অশালীন-অশোভন বক্তব্য।
আওয়ামী লীগের নাজমা আক্তার জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মোহন, বিমানমন্ত্রী ফারুক খান ও বিএনপির আসিফা আশরাফি পাপিয়া ও রাশেদা বেগম হীরার বক্তব্যের সময় দফায় দফায় সংসদে হইচই হয়। এছাড়া বিএনপির এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এবং সরকারি দলের শাহরিয়ার আলমসহ কয়েকজন সদস্য বক্তব্য রাখেন।
এম কে আনোয়ার তার বক্তব্যে সরকারের ব্যর্থতা ও দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, সরকার এসব দাগি আসামির বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন করার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। তারা এখন একের পর এক খুন করে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, এই সরকারের আমলে সীমান্তে ৯০০ বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে। এরপরও সরকার বলছে, ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়নি। পাল্টা বক্তব্যে মন্ত্রী ফারুক খান বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে পরিণত হয়েছিল। তাদের সময় দেশে একসঙ্গে ৫০০টি জায়গায় বোমা হামলা হয়েছে। তারা দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল।
মাতলামির জন্য জয় বার বার সাজা খেটেছে : বিএনপির সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণ বাস্তবতা বিবর্জিত। মন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় নরসিংদীতে মেয়র হত্যা হয়, সাংবাদিক দম্পত্তি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয় না, শেয়ারবাজারে সর্বস্ব হারিয়ে মানুষ আত্মহত্যা করে। বাংলাদেশে ‘র’ (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা)-এর দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। অথচ সরকার নীরব বসে রয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দিয়ে ইচ্ছামতো টাকা ছাপিয়ে মুদ্রাস্ফীতি ডাবল ডিজিটে নিয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণে এসব নেই। আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ মেরুদণ্ডহীন রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ দিতে পারলাম না বলে দুঃখিত। এ সময় স্পিকার বলেন, মেরুদণ্ডহীন আজ্ঞাবহ এক্সপাঞ্জ করা হলো।
পাপিয়া বলেন, তারা আমাদের রাজনৈতিক শিষ্টাচার শেখায়। রাজনৈতিক শিষ্টাচার থাকলে তারা বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে দানব পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে এভাবে রক্তাক্ত করতে পারত না। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কুখ্যাত এবং পুলিশকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে খালেদা জিয়া আন্দোলন করছেন বলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়েছেন। কোলে করে ক্ষমতায় নেয়ার কথা বলেছেন। গতকাল নাকি সংসদে নিষিদ্ধ পল্লীর ভাষায় কথা বলা হয়েছে। আমাদের অনুপস্থিতিতে খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলেকে নিয়ে কীভাবে গালাগালি হয়েছে, অসুখ-বিসুখ নিয়ে কথা বলা হয়েছে। দাদা-দাদি নানা-নানির ঠিকানা জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নিষিদ্ধ পল্লী নারায়ণগঞ্জ থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। তারা সচিবালয়ে এসেছে। যারা নিষিদ্ধ পল্লীর সদস্য, তারাই জানে নিষিদ্ধ পল্লীর ভাষা কী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে পাপিয়া বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কোলে তোলার কটাক্ষ করে বক্তব্য দেন। আপনার কি আবার কোলে ওঠার সাধ জেগেছে? নিজের প্রয়োজনে কোলে ওঠা আর লং ড্রাইভে যাওয়ার বদঅভ্যাস আপনার আছে, বেগম জিয়ার নয়। ১৯৮৫ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের সঙ্গে লং ড্রাইভে গিয়ে স্বৈরশাসকের কোলে চড়ে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে অবৈধ শাসনকে বৈধতা দেন। যৌবনকালে আর কার কার কোলে চড়েছেন রেন্টুর বই পড়লে সব জানা যাবে। বেয়াইয়ের কোলে চড়ে দোল খাওয়ার সময় বেয়াইন দেখে ফেলে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। ১৯৯৬ সালে গোলাম আযমের কোলে চড়ে তত্ত্বাবধায়কের আন্দোলন করেছেন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে আপনার কর্তার সঙ্গে এমনই দুর্ব্যবহার করেন যে, রাগ করে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের বাসায় থাকতে বাধ্য হন। এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা তুমুল হইচই শুরু করলে সংসদে চরম হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এ পর্যায়ে স্পিকার পাপিয়ার মাইক বন্ধ করে দিয়ে বলেন, মাইক বন্ধ আছে। আমার কথা শোনেন। এসব অশ্লীল কথা, কারও কোলে ওঠার কথা বলে আপনারা বক্তব্য রাখবেন না। এসব কুিসত বক্তব্য রাখবেন না। এসব কুখ্যাত, অখ্যাত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলতে পারেন না। আপনি সুন্দর ভাষায় কথা বলেন। এরই মধ্যে সরকারি দলের সদস্য ও বিরোধী দলের সদস্যদের চরম মারমুখো অবস্থানের কারণে সংসদে কিছুই শোনা যাচ্ছিল না। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্পিকার কয়েকবার হাতুড়ি পিটান। এরই মধ্যে পাপিয়াকে আবার মাইক দিলে তিনি বক্তব্য দিতে থাকেন। তখন শোরগোলের কারণে বক্তব্য পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ’৭৪ সালে বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছেন। জেলহত্যার বিচার চাইলে খালেদ মোশাররফের মরণোত্তর বিচার করুন।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে পাপিয়া আরও বলেন, কথায় বলে চোরের মা’র বড় গলা। নিজের ছেলের সদরঘাট আর অন্যের ছেলে নিয়ে আবার কটূক্তি করেন। আপনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যখন বাংলাদেশে ছিল, তখন মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে গুলশান থানা পুলিশ বেশ কয়েকবার তাকে গ্রেফতার করে। মায়ের অবস্থানের কথা চিন্তা করে পুলিশ পরে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। একজন মদ্যপ বিপথগামী ছেলেকে দিয়ে আর যা-ই হোক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কল্পনা করা দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়।
পাপিয়া বলেন, আমি এই মহান সংসদে কিছু সত্য তথ্য উপস্থাপন করতে চাই—১৪ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি শহরে মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং অবৈধ অস্ত্র বহনের অপরাধে জয়কে চার মাসের কারাদণ্ড, ৫শ’ মার্কিন ডলার জরিমানা এবং দুই বছরের নজরদারি শাস্তি দেয়া হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০০০ সালে বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও বেআইনি ডিটেক্টর বহন করার দায়ে ভার্জিনিয়ার একটি কাউন্টিতে জরিমানাসহ একদিনের কারাবন্দি করা হয়। একই বছরের ১৯ মার্চ ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টিতে বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও আইন ভঙ্গের অপরাধে এক বছরের নজরদারিসহ ৪শ’ ডলার জরিমানা করা হয়।
ডিজিটাল দুর্নীতির বিবরণ আন্দালিবের : বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আমি আজ সরকারের কিছু ডিজিটাল দুর্নীতির কথা বলব। দুর্নীতি নিয়ে কথা বললে শেয়ারবাজার সম্পর্কে প্রথমে বলতে হয়। এক বছর আগে শেয়ারবাজারের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে দরবেশ সম্পর্কে বলেছিলাম। কিন্তু সেই দরবেশের বিচার হয়নি। আরও মুরিদ আছে। মুরিদদেরও বিচার হয়নি। তখন জেড ক্যাটাগরির শেয়ার যাদের, তাদের এক একটি কোম্পানি ১ হাজার ৮শ’ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা করে উঠিয়ে নিয়েছে। অনেক কিছু দেখছি। সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ওই সিসি ক্যামেরা ওইখানে না বসিয়ে কালপ্রিটগুলোর বাসার সামনে লাগানো হলে দেখা যেত টাকাগুলো কোথায় গেছে।
আন্দালিব বলেন, পত্রিকায় দেখেছি, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে ইন্দিরা গান্ধী পদক দেয়া হচ্ছে। ইন্দিরা পুরস্কার নয়— শেয়ারবাজার ধ্বংস করার জন্য তাকে ডেস্ট্রয় পদক দেয়া উচিত ছিল। তিনি গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফকে খুশি করার জন্য তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। হঠাত্ করে ব্যবসায়ী শকুনেরা, তাদের অনুগত ব্যবসায়ীরা আমাদের শেয়ারবাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নেয়, তছনছ হয়ে গেল শেয়ারবাজার। ধ্বংস হয়ে গেলেন মধ্যবিত্তরা। প্রধানমন্ত্রী এক দরবেশকে নিয়ে বসালেন। শেয়ারবাজারে প্রাইভেট ব্যাংক টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিল। কিন্তু কোনো ব্যাংক এক টাকাও দেয়নি। যারা এমন করেছে তাদের আইন করে বিচার করা উচিত। এমন আইন করা উচিত, তারা যেন এমন কাজ আর করতে না পারে। সর্বস্ব হারিয়েছে এক কোটি মানুষ। অনেকে রাস্তায় এসেছে। আরও আর্মি অফিসার, পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন যারা লজ্জায় রাস্তায়ও বের হতে পারছেন না।
পার্থ বলেন, সরকার প্রতিশ্রুতি দিল বিদ্যুত্ দেবে। এটা নিয়ে এক বছর নড়াচড়া হলো, কিছুই হলো না। তাদের পছন্দমত দিতে অনেক ভালো প্রতিষ্ঠান এলেও তাদের দেয়নি। ইনডেমনিটি বিল পাস করা হলো। কুইক রেন্টাল দিয়ে দেশকে কুইক ডেস্ট্রয় (ধ্বংস) করে দেয়া হলো। ফার্নিচার, চানাচুর মার্কা কোম্পানিকে কুইক রেন্টাল দেয়া হলো। চায়নায় ভাঙাচোরা মেশিন আর নেই। সব বাংলাদেশে চলে এসেছে। ২০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে।
তিনি বিমানমন্ত্রী ফারুক খানের ভাই আজিজ খানের নাম উল্লেখ করে বলেন, সামিট গ্রুপ বিদ্যুতের ম্যারাডোনা। এই সামিট গ্রুপকে ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর বিদ্যুতের মেসি ওরিয়ন গ্রুপকে দেয়া হয়েছে ১২শ’ মেগাওয়াট। দেশের স্বপ্ন দুই পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ২৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ দুটি পরিবারের কাছে জিম্মি।
তিনি বলেন, ড. ইউনূসকে নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে তার কারণে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ তাদের দরজা আটকে দিয়েছে। বিদ্যুত্ ও বিমানের সাথে সুন্দর মিল রয়েছে। বিদ্যুত্ নিজস্ব প্লান্ট বন্ধ রেখে রেন্টাল বিদ্যুত্ চালায়। আর বিমান আমাদের নিজস্ব বিমান বসিয়ে রেখে লিজের বিমান চালায়।
আন্দালিব বলেন, শুনতাম আওয়ামী লীগ গরিবের সরকার। এখন দেখি তারা ব্যাংকারদের সরকার। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক দেয়া হলো। ব্যাংক করতে হলে ৪শ’ কোটি টাকা জামানত দিতে হয়। ফার্মার্স ব্যাংকের মালিকানা যার, গত নির্বাচনের সময় হলফনামায় তার সম্পদের হিসাব সর্বসাকল্যে ৩৯ লাখ টাকা। আরেক ব্যাংকের মালিকের সম্পদ ২৭ লাখ টাকা। দুর্নীতি অনেকে করে লুকিয়ে। কিন্তু এখানে দেখছি খুল্লাম খোলা দুর্নীতি।
সীমান্তে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে পার্থ বলেন, আওয়ামী লীগ মহাসচিব বলেন, বর্ডারকে নিয়ে আমি চিন্তিত না। তার এই বক্তব্যকে ধিক্কার জানাই। আমরা সমুদ্র জয় করি। ভারত জয় করি না কেন? সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনার ব্যাপারে তিনি বলেন, এখনও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হয়নি। এ ব্যাপারে কিছু করতে না পারলে সৌদি আরব ৩০ লাখ লোককে দেশে পাঠিয়ে দেবে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি সৌদি আরবের ভিসা পান না। আমি দাবি করব, সৌদি গিয়ে সমাধান করে আসা হোক। তিনি বলেন, মমতা বলল, তিস্তা হবে না। তখন বলা হলো, ট্রানজিটও হবে না। অথচ দুটোই পৃথক। কিন্তু এখন দেখছি ট্রানজিট দেয়া হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ১২ মার্চ গণমাধ্যমের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো না। দুই নেত্রী যখন জেলে তখন এই গণমাধ্যমই আন্দোলনের চেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে। সাগর-রুনি হত্যার ব্যাপারে মিডিয়া নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আক্রমণাত্মক কমেন্ট করা হলে মিডিয়া প্রতিপক্ষ হয়ে যাবে, গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যায়। কেউ মিডিয়াকে স্পর্শকাতর বানাবেন। এটা করলে মিডিয়ার ওপর অ্যাটাক করবে অন্যরা। এটা গণতন্ত্রের জন্য কল্যাণের হবে না।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১২ মার্চ ইটিভি, বাংলাভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একটি দলের মহাসমাবেশের ব্যাপারে যদি সরকারি দলের এমন মাইন্ডসেট হয়, তাহলে কীভাবে এই দলের সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে পারি?
তিনি বলেন, কৌশলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। জনগণ চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে। বড় দুই দলের একে অপরের প্রতি সম্মানবোধ আগেও ছিল না, এখনও নেই। তাই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। এর বাইরে হলে গ্রহণযোগ্য হবে না। সরকার কেন ইভিএম নিয়ে কথা বলছে? এটা হলে দেখা যাবে ভোলায় ধানের শীষে ভোট দিল, তা গোপালগঞ্জে গিয়ে নৌকায় পড়েছে। আমরা এই ইভিএমের জন্য রেডি নই। আমরা ফ্রি ফেয়ার নির্বাচন চাই। অনেকে বলে কেয়ারটেকার রাখা হলে আবার আর্মি এসে যাবে। এটা সিস্টেমের দোষ নয়, সিস্টেমে যারা থাকে তাদের দোষ। অনেক এমপি-মন্ত্রী দুর্নীতি করে। তাই বলে এমপি-মন্ত্রী হবে না? দলীয় সরকারে অধীনে নির্বাচন কোনো দিন হবে না। দেশ আরও খারাপের দিকে যাবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের বক্তব্য উল্লেখ করে আন্দালিব বলেন, আওয়ামী লীগ নাকি সরকারের পরিপূরক। সরকার সরকারই। দল সরকারের পরিপূরক হতে পারে না। সরকারদলীয় নেতা যেভাবে কথা বলেছেন, তাতে সরকারকে ধন্যবাদ জানাই যে, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব ছাত্রলীগকে দেয়া হয়নি।
রাশেদা বেগম হীরা : বিএনপিদলীয় সদস্য রাশেদা বেগম হীরা বলেন, মানুষ অবাক বিস্ময়ে দেখছে রাষ্ট্রপতি খুনি-সন্ত্রাসীদের রক্ষা করছে। তাহেরপুত্র বিপ্লবসহ কয়েকজনের রাষ্ট্রপতির ক্ষমার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নিজের মান-সম্মানের তোয়াক্কা না করে সাজা মওকুফ করে সাংবিধানিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, এখন নদীতে মাছ পাওয়া যায় না; লাশ পাওয়া যায়। গলাকাটা, বস্তাবন্দি লাশ অলিতে-গলিতে-ড্রেনে বেডরুমে পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অন্যদের নিরাপত্তাহীন করে দিয়েছে। এটা জনগণের সঙ্গে হঠকারিতা, মুনাফেকি।
তিনি বেগম জিয়ার আইএসআই থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী অসত্য তথ্য দিয়ে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ দিয়েছেন। পাকিস্তানের কর্মকর্তারা আদালতে এফিডেভিট দিয়েছেন—যেখানে বাংলাদেশের কোনো কথা নেই। ভারতের সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর প্রিয়জন দীপংকর অসত্য তথ্য প্রচার করেছে। ইকোনমিক টাইমসে শেখ হাসিনার বস্তায় বস্তায় টাকা নিয়ে নির্বাচন করার ব্যাপারে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তার কাউন্টার দেয়ার চেষ্টায় এটা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে এই অসত্য কথার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। দলটি যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে; যখন প্রতিশ্রুতি দেয়, তা ভঙ্গ করে। যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে মিথ্যা বলে তারা মুনাফেক। এখন দেশ এমন একটি সরকারের অধীনে আছে।
তিনি বলেন, হিটলার গণতন্ত্র ধ্বংস করেছিল, কিন্তু সংবিধান ধ্বংস করেনি। এই সরকার গণতন্ত্র ও সংবিধান দুটোই ধবংস করেছে। জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া কীভাবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলুপ্ত হলো—এটা কী এক নায়কতন্ত্র নয়? প্রশাসনে হিন্দুদের বসিয়ে এরশাদকে গৃহপালিত বিরোধী দল বানিয়ে গণতন্ত্র নস্যাতের ষড়যন্ত্র করছে এই সরকার। সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম মুছে দিয়ে নামকাওয়াস্তে বিসমিল্লাহ রেখে ধর্মভীরু মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। এই সরকার বাঙালি জাতীয়তাবাদেও বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ নামটিই উর্দু ও ইংরেজির মিশ্রণ। নামটি পরিবর্তন করুন। তিনি বলেন, বন্দর দিয়ে আবার ফি নিতে গেলে আমরা নাকি অসভ্য হয়ে যাব। ভারত আমাদের দেশকে পরিপূর্ণ মরুভূমি বানাতে টিপাইমুখ বাঁধ দিচ্ছে। আমি বলি আপনাদের প্রতীক ‘নৌকা’ পরিবর্তন করুন, না হয় মানুষ এই নৌকা গঙ্গায় বিসর্জন দেবে।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে জন্য জামায়াতকে নিয়ে ৯৬টি হরতাল করেছে আওয়ামী লীগ। গুলি চালিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে। এখন এই তত্ত্বাবধায়ক কেন বাতিল করছেন। সংসদে আপনাদের সংখ্যা আছে। তত্ত্বাবধায়ক বিল আনুন। আমরা দিল্লি-পিন্ডির গোলামির জন্য লড়াই করিনি। ১০ জুনের আগে ক্ষমতা নয়, জনতার মতকে প্রাধান্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বিল আনুন। তিনি প্রধানমন্ত্রী পরিবারের দুর্নীতির রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতের আসামের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের অংশবিশেষ পড়ে শোনান। তিনি বলেন, তারা দুর্নীতি করে না। ওই খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে শেখ রেহানার রাশি রাশি সম্পদ। সেই দুর্নীতির দুর্গন্ধ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব দুর্নীতির কথা আমরা আস্তে আস্তে মানুষের কাছে উপস্থাপন করব।
নাজমা আক্তার : সরকারি দলের নাজমা আক্তার বলেন, স্বাধীনতার মাসে মিথ্যা ঘোষক শুনতে শুনতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। ইউক্লিপিডিয়া, সংবিধান পড়ুন। আপনারা তো পড়ালেখা করেন না। এসব পড়লে, ওয়েবসাইট ঘাঁটলে জানতে পারবেন—কে ঘোষক। উনারা ইতিহাসের কাঙ্গাল। এভাবে ঘোষক ঘোষক না বলে রাস্তায় নামুন ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে। দু’হাত তুলে বলুন, কিছু ইতিহাস ভিক্ষা দিন। জনগণ ভিক্ষা দেয় কি না, দেখুন। উনারা আবোল-তাবোল বকছেন। খালেদা জিয়া আইএসআইয়ের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তারা বলছেন, পত্রিকার কথা সঠিক নয়। আইএসআইর সাবেক প্রধান আসাদ দুররানী স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী নির্বাচনে এবং জঙ্গি সৃষ্টি করে আইএসআইয়ের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সেই অর্থ কাজে লাগিয়েছেন। পাকিস্তানের দল ও জনগণ আইএসআইকে ঘৃণা করে। মুক্তিযুদ্ধে যাদের আমরা পরাজিত করেছি, যারা ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করেছে, ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে, সেই হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে টাকা খেতে লজ্জা করে না!
তিনি জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের একটি বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, একজন মাতাল নেতা, ৭ মার্ডারের আসামি দুই সন্তানের জননী বেগম জিয়াকে কীভাবে চিরকুমারী বলেন। তার দুই সন্তান দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। মানিলন্ডারিং করেছেন। বিদেশে তাদের বিচার হচ্ছে। যদি প্রমাণ করতে হয় বিদেশি আদালতকে চ্যালেঞ্জ করবেন। আমাদের ভারতের দালাল বলা হয়। অথচ ভারত স্বাধীনতার সময় এককোটি লোককে আশ্রয় দিয়েছে। সেনা দিয়ে সাহায্য দিয়েছিল। ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ভারতের সাথে যেসব বিরোধ ছিল, শেখ হাসিনা সেগুলো মীমাংসা করেছেন। আপনারা কী করেছেন ।
তিনি সংসদে আগের দিনের বক্তব্য প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, কোনো ভদ্রলোকের সন্তান হলে এভাবে বক্তব্য রাখতে পারতেন না। আমার বাসার কাজের মেয়ে বলেছে, বস্তির ভাষাও নাকি এর চেয়ে ভালো। তিনি ব্যারিস্টার আন্দালিবকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি এখন বিদ্যুত্ নিয়ে কথা বলছেন। আপনাদের সময় কী হয়েছিল, তারেক জিয়ার টাকা লুটপাট নিষেধ করতে পারেননি। আপনারা কে কেমন সবাই জানে।
জমিরউদ্দিন সরকার : বিএনপির সিনিয়র নেতা ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, দেশে এখন কোনো আইনের শাসন নেই। প্রতিটি খুন হত্যা আর গুমের সঙ্গে সরকারি দলের লোকজন জড়িত থাকায় কোনো থানায় মামলাও নেয়া হয় না। সরকার জনগণের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এখন পুলিশের বাড়িতেও ডাকাতি হচ্ছে। এতেই অনুমান করা যাচ্ছে দেশের মানুষ কতটা অনিরাপদ রয়েছে। তিনি একটি পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এ সরকারের আমলে সীমান্তে ৯০০ বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে। এরপরও সরকার বলছে ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়নি। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ মিটিং করতেও বিরোধী দলকে বাধা দেয়া হচ্ছে। পুলিশ দিয়ে সমাবেশ পণ্ড করে দেয়া হচ্ছে। ১২ মার্চের মহাসমাবেশ বন্ধ করতে ছাত্রলীগ যুবলীগ দিয়ে লোকজনকে হয়রানি করা হয়েছে। প্রশাসন দিয়ে লঞ্চ, বাস ও দোকানপাট, এমনকি খাবার হোটেলও বন্ধ করে দিয়েছেন। এভাবে গণতন্ত্র চলতে পারে না। এভাবে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। তিনি বলেন, ফারাক্কা চুক্তি মোতাবেক আমরা পানি পাচ্ছি কিনা তাও দেশবাসীকে জানাতে হবে। তিনি টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ করতে প্রতিনিধি পাঠিয়ে ব্যবস্থা করারও দাবি জানান। সীমান্তে হত্যা বন্ধে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান।
ফারুক খান : লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, বিরোধীদলীয় সদস্যদের অশালীন বক্তব্য যাতে না শুনতে হয়, সেজন্য এদেশের মানুষ টিভি ও রেডিও বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ পরিবারের সদস্যদের সামনে তারা এ ধরনের ভাষা শুনতে চান না। সংসদে অযথা কোনো বক্তব্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে, জাতীয় নেতৃবৃন্দকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবেন না। মেজর জিয়া মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। ইতিহাস তাকে মূল্য দেবে।
বেসরকারি বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানের বক্তব্য চলাকালে ‘চোর’ ‘চোর’ ‘ধর’ ‘ধর’ বলে হইচই জুড়ে দেন বিএনপির কয়েকজন এমপি।
বিএনপির এমপিরা ফারুক খান চোর, সামিট গ্রুপ চোর, ধর ধর বাটপাড় ধর বলে চিত্কার শুরু করলেও বিমানমন্ত্রী স্বাভাবিকভাবেই তার বক্তব্য চালিয়ে যেতে থাকেন।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে পরিণত হয়েছিল। তাদের সময় দেশে একসঙ্গে ৫০০টি জায়গায় বোমা হামলা হয়েছে। তারা দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট ভুয়া ভোটার তৈরি করে নিজেদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল বলেই সেদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেশবাসী মিলে ২২ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করেছিল। বিরোধী দলের কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হয়েছিল। তাদের কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবরণে অনির্বাচিত সরকার দুই বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। প্রথমবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সামরিক ক্যু হতে যাচ্ছিল। দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বেসামরিক ক্যু হয়েছিল। আর তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা আমাদের সবার জানা। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট হয়েছে। অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। তিনটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারই দুর্বল ছিল। এ ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আবার প্রবর্তনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিরোধিতা করে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নির্বাচন করা নয়। তাদের দায়িত্ব নির্বাচন করা। বিএনপির সময়ে নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন করতে পারেনি বলে তারা এ বিষয়টি জানেই না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। সরকারি দল, বিরোধী দলসহ সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি এ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত বিদ্যুত্ ব্যবস্থাকে কোন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল তা ভুলে গেলে চলবে না। টঙ্গীতে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুেকন্দ্র উদ্বোধনের ১৫ মিনিটের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর বিদ্যুতের উন্নয়নের নামে ২০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছিল। বিদ্যুত্ ব্যবস্থাপনা কিভাবে করতে হয় তা ’৯৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে আমাদের সরকার দেখিয়েছে। এবারও ক্ষমতায় এসে দেখাচ্ছে। গত তিন বছরে যত কম দামে আমরা বিদ্যুত্ কেনার ব্যবস্থা করেছি, পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও এ ধরনের সুযোগ নেই। তিস্তা নদীর পানি চুক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিরোধী দলকে স্পষ্ট বুঝতে হবে যে, তিস্তা নদীর পানিচুক্তি আমরা সুন্দরভাবে দেশের স্বার্থে করতে চেয়েছিলাম এবং বাংলাদেশের জন্য বেশি পানি আনতে চেয়েছিলাম বলেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার দিল্লির সিদ্ধান্তের বাইরে গেছে।
এম কে আনোয়ার : বিএনপির এম কে আনোয়ার বলেন, এই সরকার তিন বছর পার করলেও এখন পর্যন্ত একটি ওয়াদাও পূরণ করতে পারেনি। তারা ব্যর্থতা ঢাকতে প্রতিনিয়ত অসত্য তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে তারা বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল আর ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, বিনামূল্যে সার দেবে। অথচ এখন তারা সবই অস্বীকার করছেন। একথা বলতেই উত্তর পাশের তৃতীয় সারিতে বসা সরকারদলীয় দু’জন এমপি বলে ওঠেন, চালের দাম ১৬ থেকে ১৮ টাকায় খাওয়ানোর কথা বলেছিলাম। কিন্তু এম কে আনোয়ার বলেন, সত্য অস্বীকার করে লাভ নেই। কারণ সবকিছুর প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। তিনি বলেন, এ সরকার মুখে মুখে আইনের শাসনের কথা বলেন। তাদের আইনের শাসন হচ্ছে তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করবে আর বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দেবে। এই সরকার এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ১৩১টি মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর মধ্যে খুনের মামলার আসামি, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার এসব দাগি আসামিকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন করার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। তারা এখন একের পর এক খুন করে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, যারা শেয়ারবাজারর থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে তারা প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর কাছের লোক। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, দুর্নীতি করতেই জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি ছাত্রলীগের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেই সমস্যার সমাধান হবে না। তাদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল এগুলো বন্ধ না করতে পারলে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তিনি বলেন, আপনি ১২ মার্চের সমাবেশ নিয়ে বলেছেন, খবর আছে। হ্যাঁ, খবর তো দেখেছেন। জনগণ আপনাদের খবর করে দিয়েছেন। এখনও সময় আছে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য জনগণের যে আন্দোলন তা মেনে নিন। তা না হলে গণরোষ ঠেকাতে পারবেন না।
এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম গত কয়েক মাসে বিভিন্ন পত্রিকায় সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট ও গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম পড়ে শোনান। ২০ মিনিট বক্তৃতার ১১ মিনিট জুড়ে তিনি এসব তথ্য উপস্থাপন করেন। এসব সংবাদ পত্রিকায় পড়েছি এমন কথা বলে স্পিকার তাকে বক্তৃতা দেয়ার আহ্বান জানালে তিনি বলেন, এর মাধ্যমেই দেশের পরিস্থিতি তুুলে ধরার চেষ্টা করছি। এসব অনিয়ম ও লুটপাটের সার্বিক চিত্র জনগণ জানেন না। তাছাড়া দুর্নীতির রেকর্ড জাতীয় সংসদে রাখা হোক। এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা হৈ-হট্টগোল করেন। চিত্কার করতে থাকেন তারা। তাদের উদ্দেশ করে কর্নেল অলি আহমেদ বলেন, আসল কথা বললেই আওয়ামী লীগের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবি করলেও তাদের আমলেই মুক্তিযোদ্ধারা বেশি নাজেহাল হন, অপমানিত হন। বিএনপি আমলে কোনো মুক্তিযোদ্ধা হত্যা হয়নি, আওয়ামী লীগের সময় হচ্ছে। তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ঘরসংসার করেছে এই আওয়ামী লীগ। আর এখন অন্য কেউ জামায়াতের সঙ্গে গেলেই তারা যেন নাপাক হয়ে যায়। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরাও চাই। তবে তা হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। জামায়াতকে শায়েস্তা করার জন্য বিচার হলে তা দেশের জনগণ মানবে না। এতে প্রতিহিংসা আরও বাড়বে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন