সোমবার, ১৯ মার্চ, ২০১২

বিদ্যুতের নামে জনগণের পকেট কাটার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেটা এখন এত বেশি মাত্রায় উন্মোচিত হয়ে গেছে যে, সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরাও এখন আর এটি গ্রহণ করতে পারছেন না : আনু মুহাম্মদ

আনু মুহাম্মদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং তেল-গ্যাস-খানিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব। বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট, ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেলের জন্য বিপুল ভর্তুকি এবং সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন সাপ্তাহিক বুধবারের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বুধবারের নিজস্ব প্রতিবেদক মঈনুল হক


বুধবার : বাংলাদেশের জ্বালানী খাতের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সংকটগুলো কি কি বলে আপনার মনে হয়?
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ : জ্বালানী ও বিদ্যুৎখাতের সংকট অন্য অনেকগুলো সংকটের সঙ্গে, বিশেষ করে এর সঙ্গে গোটা অর্থনীতি, জনজীবন সমস্ত কিছু সম্পর্কিত। যদিও সরকার দাবি করেছিল যে তারা জরুরী ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের জন্য কিছু ব্যয়বহুল পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু এই পদক্ষেপে ব্যয় অনেক হলেও বিদ্যুৎ সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। তেলের আমদানি বিপুলভাবে বাড়ানোর ফলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের একটি বোঝা তৈরি হয়েছে। বিদেশ থেকে বিপুল কয়লা আমদানির প্রকল্প নিয়েও প্রশ্ন আছে। আর বিদেশী কোম্পানীর হাতে কয়লাখনি দিয়ে দেয়ার জন্য গত বহু বছরের যে চক্রান্ত তার অবসান এখনো পর্যন্ত হয়নি।
বুধবার : বর্তমানে বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং বিদ্যুৎ খাতের সংকটের জন্য আপনি কোন বিষয়গুলোকে দায়ী করবেন?
আনু মুহাম্মদ : লোডশেডিং দূর করতে সরকার কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এর জন্য বিদ্যুতের সামগ্রিক অবকাঠামোর পুনর্গঠন দরকার ছিলো। গত তিন বছরে এই বিষয়ে অনেক অগ্রগতি সম্ভব ছিল। নতুন বড় বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন এবং প্রাথমিক জ্বালানী সরবরাহের জন্য গ্যাস ক্ষেত্রের অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, বাপেক্স-এর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো আটকে আছে। সবমিলিয়ে বিদ্যুতের অবকাঠামো ঠিক না করা এবং প্রাথমিক জ্বালানী সরবরাহের ব্যবস্থা না করার ফলে বিদ্যুতের সামগ্রিক সরবরাহের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। সংকটকে ব্যবহার করে কিছু সংখ্যক দেশী-বিদেশী গোষ্ঠীকে ব্যবসা দিতে গিয়ে জটিলতা আরও বেড়েছে।
বুধবার : আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ৩নং অগ্রাধিকার হিসেবে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানী খাতকে চিহ্নিত করেছিল। নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫ হাজার মেগাওয়াট, ২০১৩ সালের মধ্যে ৭ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল। এই ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতি সরকার কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে এবং ভবিষ্যতে কতটা পারবে বলে আপনার মনে হয়?
আনু মুহাম্মদ : এক নম্বর দুই নম্বরেরই তো কোন অগ্রগতি আমরা দেখছি না। সরকার বেপরোয়া হয়ে একটা সময়ে ব্যাপক উৎপাদনের দিকে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু যেভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তা টেকসই হবে, জনগনের কাছে সুলভ হবে এবং যেভাবে উৎপাদন করলে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম হবে, সেদিকে না গিয়ে সরকার এমনভাবে তা করতে যাচ্ছে যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না। এতে অন্যান্য ক্ষতির বোঝা এত বেশি হবে যে, একটা পর্যায়ে গিয়ে জনগণই বলবে, আমাদের আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের দরকার নেই। বিভিন্ন গোষ্ঠির স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে একটি অপরিকল্পিত ব্যয়বহুল এবং ভারসাম্যহীন ব্যবস্থার দিকে সরকার অগ্রসর হচ্ছে।
বুধবার : বিদ্যুৎসংকট নিরসনের নামে দায়মুক্তি দিয়ে দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে এই কেন্দ্রের ভূমিকা এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব কি বলে আপনি মনে করেন?
আনু মুহাম্মদ : এই আইনটি যখন সংসদে পাস করা হয় তখনই আমরা বলেছিলাম, সরকার বড় ধরনের অপকর্ম করতে যাচ্ছে। কারণ সরকার যদি জনগনের জন্য কাজ করে তাহলে তার দায়মুক্তি বিল পাশ করার দরকার হয় না। পরে আমরা দেখলাম যে, সরকার রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট করা শুরু করলো। কোনোদিন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাথে ছিলনা এমন আনাড়ি, অনভিজ্ঞ কিছু গোষ্ঠীর সাথে চুক্তি করা হলো। এইগুলো প্রধানত তেল নির্ভর ও খুবই অনির্ভরযোগ্য। জরুরী ভিত্তিতে সাধারণত এগুলো করা হয়। দীর্ঘ মেয়াদে এটা বিদ্যুৎ সমস্যার কোন সমাধান করে না। এটি খুব ব্যয়বহুল এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সরকার একের পর এক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ারপ্লান্ট করায় আমাদের তেল আমদানি ৬০ ভাগ বেড়ে গেছে। তেল আমদানি বাবদ অতিরিক্ত প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গত বাজেটের ভেতরে যেহেতু এই ব্যয় বরাদ্দটা ছিল না সুতরাং সরকারকে বাড়তি ঋণ করতে হয়েছে। এতে পুরো অর্থনীতি এখন বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সরকার ঋণগ্রস্ত হওয়া মানে ঋণের বোঝা সরাসরি জনগনের মাথার উপর এসে পড়ছে। তেল গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ছে বারবার। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে একটি ঋণের দুষ্টচক্র তৈরি হচ্ছে।
বুধবার : আপনাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পিডিবির বিদ্যমান বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থাপনা মেরামত এবং উন্নয়ন করলেই সংকটের বড় ধরনের সমাধান সম্ভব। কিভাবে?
আনু মুহাম্মদ : পিডিবির একটি তালিকার কথা বলি। ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১১ সালে ১৪ টি বিদ্যুৎপ্লান্ট মেরামত না করার কারণে বন্ধ হয়েছে। এর প্রায় সবগুলোই হচ্ছে গ্যাস চালিত। রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্লান্টগুলো চালু থাকলে সেখান থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ২ টাকা ইউনিট। আর বেসরকারি বিদ্যুৎ প্লান্ট থেকে কিনতে হয় ৪টাকা, ৫ টাকা বা ৬ টাকা দিয়ে। আর রেন্টাল পওয়ারপ্লান্ট থেকে সেটা কিনতে পড়ে ১২ থেকে ১৬ টাকা। তাহলে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্লান্ট ঠিক ও সম্প্রসারণ করলে অনেকগুলো সুবিধা। প্রথমত, সুলভ বিদ্যুৎ; দ্বিতীয়ত, নিশ্চিত ও নির্ভরযোগ্য যোগান; তৃতীয়ত, জিম্মি হবার কোন ঝুঁকি নেই। সর্বোপরি, এর জন্য তেল আমদানি করার দরকার হচ্ছে না। গ্যাসের যোগান থেকেই কেন্দ্রগুলো চলতে পারে। বন্ধ থাকা রাষ্ট্রায়ত্ব সব পাওয়ার প্লান্ট চালু এবং আরো কিছু কেন্দ্র মেরামত করলে সবমিলিয়ে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াটের মত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বর্তমান অবকাঠামো থেকেই পাওয়া সম্ভব। সরকার বলছে রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি বা ২৭শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ১৭শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে রাষ্ট্রীয় প্লান্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। অথচ এদিকে না গিয়ে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্লান্ট মেরামত ও নবায়ন করলে এবং সেইসাথে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সংস্কার করলে এককালীন এক হাজার কোটি টাকাও খরচ হতো না কিন্তু আমরা বাড়তি ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতাম। তাতে ঋণের পাহাড় হতো না, বারবার তেল গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হতো না।
বুধবার : এই ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
আনু মুহাম্মদ : সরকারের যদি জনগণের প্রতি অঙ্গীকার থাকতো অথবা অর্থনীতির আশু এবং দীর্ঘ মেয়াদী সক্ষমতা বাড়ানো যদি অগ্রাধিকারের মধ্যে থাকতো তাহলে সরকার এই পথেই যেতো। কিন্তু যায়নি কারণ সরকার নির্দিষ্টভাবে বললে অর্থ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয় রাহুগ্রস্ত হয়ে আছে কিছু স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠীর কাছে। তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে দেশ ও জনগণের ঘাড়ে দীর্ঘমেয়াদী বোঝা চাপাচ্ছে সরকার।
বুধবার : প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের তিনবছর পূর্তি উপলক্ষসহ বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রীডে ৩ হাজার মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে। খোদ সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরাই ‘এই বিদ্যুৎ কোথায় গেল’ বলে জাতীয় সংসদে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
আনু মুহাম্মদ : এই প্রশ্নটাই আমরা অনেকদিন থেকে করছি। এখন সংসদ সদস্যরা বাধ্য হয়ে প্রশ্নটি করছেন। সংসদ সদস্যদের নিজেদের এলাকা আছে। সেখানে তাদের কিছু না কিছু জবাবদিহি করতে হয়। যে সংসদ সদস্যরা এলাকায় যান তারা তো এলাকাবাসীর ক্ষোভের মুখে পড়েন। তার প্রতিফলন সংসদে হয়েছে। জনগণের উপর ভর করে এবং তেলের একটি বিশাল বোঝা চাপিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে বিদ্যুতের নামে জনগণের পকেট কাটার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেটা এখন এত বেশি মাত্রায় উন্মোচিত হয়ে গেছে যে, সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরাও এখন আর এটি গ্রহণ করতে পারছেন না।
বুধবার : তেল এবং গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে সুযোগ সুবিধা না দিয়ে বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে সমুদ্র এবং স্থলভাগে সুবিধা দেয়া হচ্ছে। সরকারের এই নীতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
আনু মুহাম্মদ : আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি যে, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ঘাড়ের উপর কিছু লোক বসে আছেন যারা বহুজাতিক কোম্পানীসহ দেশি বিদেশি স্বার্থন্বেষীদের প্রতিনিধিত্ব করেন। বঙ্গোপসাগরের গ্যাসক্ষেত্র রফতানিমুখি চুক্তির মাধ্যমে কনকো-ফিলিপসকে দেয়া হয়েছে দক্ষতার অজুহাত তুলে। আমরা বলেছি, সারা দুনিয়াতে যত যায়গায় তারা অনুসন্ধান করে বা যত যায়গায় তাদের কর্তৃত্ব আছে তার প্রায় সব যায়গাতে দেখা গেছে কনকো-ফিলিপস সাব কন্ট্রাক্ট দিয়ে কাজ করায়। এখন ঠিকই দেখা যাচ্ছে, কনকো-ফিলিপস একটি চীনা কোম্পানীকে সাব কন্ট্রাক্ট দিয়েছে। আমাদের দাবি ছিলো কনকো ফিলিপস যে ম্যানেজারিয়েল কাজটি করছে সেই কাজটি তো পেট্রোবাংলাই করতে পারতো। তাদের হাতে এই গ্যাসব্লকগুলো তুলে দেয়ায় জ্বালানী নিরাপত্তার পাশাপাশি পুরো বঙ্গোপসাগরে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখিন এখন।
বুধবার : বাগেরহাট এবং চট্টগ্রামে দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভারতের সাথে কাজ চলছে। এসম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি?
আনু মুহাম্মদ : প্রথম কথা হচ্ছে ভারতের সাথে যৌথভাবে বিদ্যুৎপ্লান্ট করার কোন যৌক্তিকতা নেই। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যদিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের হয়েছে। এবং এই অভিজ্ঞতার উপর ভর করে বাংলাদেশ নিজেই পাওয়ারপ্লান্ট তৈরি করার জন্য চেষ্টা করতে পারতো। সে ক্ষেত্রে কোথাও কোন ঘাটতি থাকলে যে কোন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করায় কোন অসুবিধা ছিলো না। ভারতের যে কোম্পানীর সাথে বাংলাদেশ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে তাদের একটি প্রকল্প কৃষি জমিতে করার কারণে ভারত সরকারই বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ ভারতের রাষ্ট্রীয় এই বিদ্যুৎ কোম্পানী এখন বাংলাদেশের সাথে কৃষি জমিতে শুধু নয় পুরো সুন্দরবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে বাগেরহাটের রামপালে বিদ্যুৎ প্লান্ট করছে। ১৫ ভাগ বিনিয়োগ করলেও চুক্তি অনুযায়ী, তারা ৫০ ভাগের মালিক। তারা তাদের অংশের ৫০ ভাগ টাকায় নেবে না বিদ্যুৎ নেবে সেই বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। সবদিকেই লাভ তাদের। কিন্তু ক্ষতি, ঋণের দায় সবই আমাদের। সুন্দরবনের যে ক্ষতি হবে তা কোনভাবেই পূরণীয় নয়। আমরা কোনভাবেই এই প্রকল্প মানতে পারি না।
বুধবার : সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জ্বালানী এবং খনিজ সম্পদ খাতের ভবিষ্যৎকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
আনু মুহাম্মদ : খনিজ সম্পদে সার্বভৌমত্ব জাতীয় সার্বভৌমত্বের পূর্বশর্ত। জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত না করে উল্টো সরকার যেভাবে চীন, রাশিয়া, ভারত সর্বোপরি মার্কিনী দখলে খনিজ সম্পদ দিয়ে দেবার ব্যবস্থা করছে তাতে বিদ্যুৎ ও অর্থনৈতিক সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে। জাতীয় বিপন্নতাও বিস্তৃত হবে। আমরা তা মেনে নিতে পারি না। আমাদের কথা হলো প্রাথমিক জ্বালানী গ্যাস ও কয়লার ওপর শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে, এগুলোর রফতানিমুখি কোন চুক্তি চলবে না। এগুলোর অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সুনেত্র রশিদপুর তিতাসসহ বিভিন্ন নতুন সম্ভাবনা হিসাব করলে আগামী দুদশকে গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ প্লান্টই বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান করতে পারবে। উন্মুক্ত খনন দিয়ে দেশের সর্বনাশের প্রশ্নই নেই কিংবা বিপুল কয়লা আমদানিনির্ভর চিন্তারও কোন দরকার নেই। জাতীয় সক্ষমতার মধ্য দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে কয়লা সম্পদের পরিবেশসম্মত সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে, সৌর ও বায়ু বিদ্যুতেও বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে।
কিন্তু সবকিছুর পূর্বশর্ত হল দেশ ও দেশের সম্পদে জনগণের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা। সাম্রাজ্যবাদ, তাদের তল্পীবাহক বিভিন্ন সরকার দিয়ে, বাংলাদেশকে নাইজেরিয়া মডেলে ফেলতে চেয়েছিল। গত এক দশকে জনগণের আন্দোলন তাকে প্রতিহত করেছে, তারা গ্যাস রফতানি করতে পারেনি, পারলে বর্তমানে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট আরও ভয়াবহ আকার নিতো। বন্দর তারা দখল করতে পারেনি। টাটার প্রকল্প এবং এশিয়া এনার্জির সর্বনাশা প্রকল্পও জনগণ প্রতিরোধ করেছেন, নইলে কয়লা ও গ্যাস সম্পদ দেশে থাকতো না উপরন্তু তাদের স্বার্থে কয়লা তুলতে গিয়ে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ পানি সম্পদ আবাদী জমির সর্বনাশ হতো। যারা এসব সর্বনাশা প্রকল্প করতে চেয়েছিল তারা আওয়ামী লীগ ও ৪ দলীয় জোট সরকারের মধ্যেই ছিল, আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন ক্ষমতাধর রাষ্ট্র, বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং বহুজাতিক কোম্পানির সহযোগী হিসেবে এখনও এরা সক্রিয় আছে। সংকট সেখানেই। কাজেই এদের ক্ষমতার রদবদলে দেশের বর্তমান গতিমুখ পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। এদের বিপরীতে জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির অধিকতর ও কার্যকর রাজনৈতিক বিকাশই দেশের গতিমুখ ঠিক করতে পারবে।
বুধবার : আপনাকে ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন