বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১২

পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে হোয়াইট হাউজের বিরাট অংকের অর্থ সাহায্যের গোপন তথ্য ফাঁস


 গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সংস্থা এপি’র খবরে নিউইয়র্কে অধ্যয়নরত হাজার হাজার মুসলিম শিক্ষার্থীর উপর নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের গোয়েন্দাগিরির খবর ফাঁস হয়ে গেলে চারিদিকে হৈচৈ ও নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। খবরটি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। খবরটির মাধ্যমে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের নাম করা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে এন ওয়াই পি ডি’র গোয়েন্দাগিরি’র বিস্তারিত বর্ণনা বেরিয়ে এসেছে। এই খবররের রেশ কাটতে না কাটতেই এপি সম্প্রতি আরেকটি তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে, আর সেটি হচ্ছে, মুসলমানদের উপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য হোয়াইট হাউজ নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে ‘এইচআইডিটিএ’ নামক প্রোগ্রামের আওতায় বিরাট অংকের অর্থ সাহায্য দিয়েছে। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক সিটিতে সন্ত্রাসী হামলার পর হতে এ পর্যন্ত বুশ এবং ওবামা প্রশাসন হাই ইনটেনসিটি ড্রাগ ট্রাফিকিং এরিয়া প্রোগ্রাম (এইচআইডিটিএ) এর আওতায় নিউইয়র্ক এবং নিউজার্সীর বিভিন্ন জায়গায় মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ১৩৫ মিলিয়ন ডলার সাহায্য প্রদান করেছে। তবে প্রোগ্রামটির গোপনীয়তার কারণে এখনও পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি মুসলমানদের উপর গোয়েন্দাগিরির জন্য ঠিক কি পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়েছে। তবে সংবাদ সংস্থা এপি পুলিশের গোপন নথিপত্র এবং ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কয়েকজন কর্মকর্তার ইন্টারভিউ থেকে সংগৃহিত তথ্য থেকে হোয়াইট হাউজের এই অর্থ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও এপি এইচআইডিটিএ’র কম্পিউটারে সেভ করা কিছু ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্বলিত ইলেক্ট্রনিক ডকুমেন্টও সংগ্রহ করেছে। এইচআইডিটি অনুদান প্রোগ্রামটি হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল ড্রাগ কন্ট্রোল পলিসি’র তত্বাবধানে পরিচালিত একটি প্রোগ্রাম। যদিও ওবামা প্রশাসন নিউইয়র্ক এর বিতর্কিত কাউন্টার টেরোরিজ্ম প্রোগ্রাম এর দ্বন্দ্ব থেকে দুরে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু নিউইয়র্কে বসবাসরত মুসলমানরা কোন রেষ্টুরেন্টে খেতে যায়, কোথায় নামায পড়ে, বাজার করে কিংবা কাজ করে, এই সবের উপর নজরদারী করার জন্য নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে অর্থ সাহায্য প্রদান করার খবরটি ফাঁস হওয়াতে ব্যাপারটি আরোও জটিল করে তুলেছে। তবে অর্থ অনুদান সম্পর্কে হোয়াইট হাউজ কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি জেনেট নেপোলিটানো, যার অধীনে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে অর্থ সাহায্য প্রদান করা হয় এবং অন্যতম ফেডারেল এজেন্সী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম কমিউনিটির সাথে সম্পর্ক স্থাপনে পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে সহায়তা করছে, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করতে রাজি হননি। জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের অন্যতম সিভিল রাইটস আইনজীবি টম পেরেজ বরাবরই এনওয়াইপিডি সম্পর্কিত কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়া থেকে বিরত আছেন।
ইয়েল, কলম্বিয়া’র মতো যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মুসলিম ছাত্রদের উপর  এনওয়াইপিডি’র এহেন গোয়েন্দাগিরির কঠোর সমালোচনা করেছে। এছাড়া নিউজার্সীর মেয়রও নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের তাদের আইনগত অধিকার বহির্ভূত এই ব্যাপক গোয়েন্দাগিরিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এইচআইডিটি’র প্রোগ্রামে অর্থ প্রদানের ব্যাপারটি যদিও কংগ্রেসের অনুমোদন সাপেক্ষে হয়, তথাপি এর কোন খাতে কত ব্যয় হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য কংগ্রেসকে প্রদান করা হয়নি। এছাড়াও ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসে পেশকৃত নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির বার্ষিক রিপোর্টে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কোন গোপন প্রোগ্রামের কথাও উল্লেখ করা হয়নি। বার্তা সংস্থা এপি হতে হোয়াইট হাউজের অর্থ প্রদান প্রসঙ্গে এবং গোয়েন্দা সংস্থা সম্পর্কিত প্রশ্ন করে দুটি ইমেইল পাঠানো হলেও এনওয়াইপিডি’র মুখপাত্র পল ব্রাউনের কাছ থেকে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। সিটি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য মতে, গত বছরের অক্টোবর থেকে যেসব মুসলমান তাদের নাম বদল করে নতুন নাম রেখেছে তাদের সবার লিস্ট সংগ্রহ করে এইচআইডিটিএ’র কম্পিউটারে নথিবদ্ধ করা আছে। নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ কমিশনার রেমন্ড কেলির জন্য প্রতিদিন মুসলমানদের উপর গোয়েন্দাগিরি উপর যেসব সংবাদ বিবরণী তৈরি করা হতো তার প্রতিটিই এইচআইডিটি’এর কম্পিউটারে সংগ্রহ করা আছে। ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেস মেম্বার জুডি চ্যু বলেছেন যে, তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না আমেরিকার মুসলমানদের উপর গোয়েন্দাগিরি করার মতো এনওয়াইপিডি’র  একটি ভ্রান্ত প্রচেষ্টাকে ফেডারেল প্রশাসন আর্থিক সাহায্য করেছে। নিউজার্সির গভর্ণর ক্রিস ক্রিস্টি বলেছেন, এনওয়াইপিডি’র এহেন গোয়েন্দা তৎপরতার ব্যাপারটি খুবই ‘ডিস্টার্বিং’ এবং তিনি এটর্নী জেনারেলকে এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
এদিকে এই গোয়েন্দা তৎপরতার খবরে বাংলাদেশি কমিউনিটিতেও গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। লেবার লিডার, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট এবং এ্যালাইয়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার (এ্যাসাল) এর প্রতিষ্ঠাতা মাফ মিজবাহ্ উদ্দিন এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, খবরটি শুনে তিনিও বিষ্মিত হয়েছেন। তারঁ মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত মুসলিম কমিউনিটিকে সন্দেহের কাতারে দাড় করানো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচিত হয়নি। তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং এদেশের মূলধারা রাজনীতিতে আরোও সম্পৃক্ত হতে হবে কারণ এদেশের রাজনীতিতে যতদিন পর্যন্ত না আমরা পরিচিতি লাভ করবো, ততদিন পর্যন্ত আমরা দুর্বল থেকে যাব এবং প্রশাসনের এ ধরনের অন্যায় আচরণের শিকার হতে থাকব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন