সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১১

করিডোরের ভূ-রাজনীতি ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

ম. ইনামুল হক ভারত ও পাকিস্তান নামের যে দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হয় তাতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিরাট অংশ পূর্ব পাকিস্তানের পেছনে স্থলবেষ্টিত হয়ে পড়ে। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য সড়ক, রেল ও নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকে। কিন্তু ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তা বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফরের শেষে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে মালামাল পরিবহনের জন্য নৌ, সড়ক ও রেলপথে পুনরায় চুক্তি হয়।

ওই একই বছরের ২৮ মার্চ স্বাক্ষরিত হয় এক বছর মেয়াদি বাণিজ্য চুক্তি এবং ১৯৭৩ সালের ৫ জুলাই স্বাক্ষরিত হয় পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি। ১৯৭৬ সালে স্বাক্ষরিত হয় বাণিজ্য প্রটোকল। এসব চুক্তিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে মালামাল পরিবহনের কথা ছিল।

১৯৭২ সালের ১ নভেম্বর নৌপথে চলাচলের একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এই প্রটোকলের মাধ্যমে কলকাতা-রাইমঙ্গল-খুলনা-বরিশাল-চাঁদপুর-গোয়ালন্দ-সিরাজগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারী-ধুবড়ী এবং কলকাতা-রাইমঙ্গল-খুলনা-বরিশাল-চাঁদপুর-ভৈরব-শেরপুর-করিমগঞ্জ নৌপথে ভারতীয় মালামাল যাতায়াত চালু হয়। ওই প্রটোকলের বিশেষত্ব ছিল এই যে, যানবাহনের জন্য একই ধরনের দলিল ও কাগজপত্র, স্থায়ীকরণের জন্য ব্যবস্থাপনা, ছাড়করণ ও প্রাপ্য অর্থ যানবাহনের জন্য একই ধরনের টোল নেয়ার ব্যবস্থা ওই প্রটোকলে ছিল।

বাংলাদেশের পশ্চিম, উত্তর ও পূর্বদিকে ভারতের সীমারেখার মোট দৈর্ঘ ৪ হাজার ৯৭ কিলোমিটার। বর্তমানে এর স্থলভাগের অংশে ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে পাহারা দিচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ যেমন ভারতের দ্বারা ঘেরাও হয়ে আছে, বাংলাদেশের পেছনে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭টি রাজ্যও প্রান্তিক অবস্থানে পড়ে অস্থিরতায় ভুগছে। ১৯৮০ সালের ৪ অক্টোবর বিএনপি সরকার আমলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয় যা আসলে পুরনো বাণিজ্য চুক্তিগুলোর ধারাবাহিকতা মাত্র।

ওই চুক্তির দফা ৮ অনুসারে ৮ নভেম্বর ১৯৮৩ সালে এরশাদ আমলে একটি অভ্যন্তরীণ নৌ ট্রানজিট ও বাণিজ্য প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়, যাতে নতুন দুটি নৌপথ সংযোজন করা হয়। এই নৌপথ দুটি হচ্ছে রাজশাহী-গোদাগাড়ী-ধুলিয়ান এবং ভৈরব-ইটনা-সুনামগঞ্জ-ছাতক। ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে ট্রানজিট প্রটোকলটি উন্নীত করে চারটি পোর্ট অব কল অন্তর্ভুক্ত করা হয়; যথা, ভারতে হলদিয়া ও পাঙ্কোপাড়া এবং বাংলাদেশে খুলনা ও মংলা। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের ১৯৯৮ সালের বাণিজ্য চুক্তিতে দর্শনা-গেদে এবং রোহনপুর-সিংহবাদ পথে বাংলাদেশ-ভারত রেলপথ পুনরায় সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৯৯ সালে কলকাতা-ঢাকা এবং ২০০১ সালে ঢাকা-আগরতলা পথে বাস যাতায়াতের ব্যবস্থা সড়ক যোগাযোগের একটি ধরন। ২০০৮ সালে কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস নামে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০-১২ জানুয়ারি, ২০১০ দিল্লি সফরের সময় যে ৫১ দফা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় তার ২২ ও ২৩ দফা মালামাল পরিবহনের ব্যাপারে নতুন ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ওই দফাগুলোতে যা বলা আছে তা হচ্ছে,

দফা ২২ এ বলা হয়, বাংলাদেশের আশুগঞ্জ এবং ভারতের শিলঘাটকে ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণা করা হবে। পত্রবিনিময়ের মাধ্যমে আইডব্লিউটিটি প্রটোকল বা অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ট্রানজিট প্রটোকলে প্রয়োজনীয় সংযোজন করা হবে। একটি যৌথ টিম আশুগঞ্জ থেকে ওভার ডাইমেনশনাল কার্গো বা ওডিসির এককালীন বা দীর্ঘমেয়াদি পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন ও তার খরচ যাচাই করবে। উভয় সরকারই এর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে সম্মত  হয়েছে। উভয় দেশের ঠিকাদারই এই কাজের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে।

দফা ২৩ এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তার সড়ক ও রেলপথে পণ্য আনা-নেওয়ার মাধ্যমে ভারতকে মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার অনুমোদন দিতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটানকেও মংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে।

ওই সমঝোতার আলোকে ২০১০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নৌ প্রটোকলের আওতা সম্প্রসারিত করে রেলপথে করিডোর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। করিডোর, ভারতীয় মালামাল বাংলাদেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে পরিবহনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জুন ২০১০ কর ধার্য করে। কিন্তু ভারতীয় প্রচন্ড কূটনৈতিক চাপের মুখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১১ নভেম্বর ২০১০ নৌপথের কর তুলে নেয়। এর আগে ২ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ ভারতের কাছে ট্রানজিটের জন্য কর নয়, ফি আদায় করবে। বিগত ১৮ জুলাই, ২০১১ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, বাংলাদেশ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতকে ‘ট্রানজিট’ দিতে সম্মত হয়েছে। করিডোর দেওয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদ্যমান নৌ প্রটোকল অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার বছরে গড়ে সাড়ে ৫ কোটি টাকা আয় করে যেখানে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট বাবদ কর ধার্য করলে বছরে ২০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা ছিল।

বাংলাদেশ সরকার ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোঃ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে করিডোর ফি নির্ধারণের জন্য একটি কোর কমিটি গঠন করে। এই কোর কমিটি সড়ক, রেল ও নদীপথে ট্রানজিট ফি আদায়ের সুপারিশ করে, যাতে সড়ক পথে প্রতিকিলোমিটার টনপ্রতি ৫.২৫ টাকা, রেলপথে ২.২৫ টাকা এবং নৌপথে ১.৮৮ টাকা হারে চার্জ বা ফি আদায়ের সুপারিশ করা হয়েছে। পরিবেশ, অবকাঠামো, কাস্টমস, বন্দর ব্যবস্থাপনা, রাস্তাঘাট রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খরচ বিবেচনা করে কমিটি বলেছে, এর চেয়ে কম ফি হলে তা হবে দেশের জন্যে ক্ষতিকারক। কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী যেনতেন প্রকারে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার উদ্যোগ নেন।

৬-৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দু’দিনের সফরে বাংলাদেশ এলে তিস্তা পানি চুক্তি হয়নি বলে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ‘ট্রানজিট’ চুক্তি করেনি এই খবর বের হয়। কিন্তু মনমোহন সিংয়ের সফর শেষে ১টি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট, স্থলসীমা সংক্রান্ত ১৯৭৪ সালের চুক্তি বিষয়ে ১টি প্রটোকল ও ৬৫ দফার যৌথ বিবৃতি স্বাক্ষরিত হয়, যার ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৯, ৪০ দফাগুলিতে করিডোরের নামে  ‘ট্রানজিট’ দেওয়ার বিষয় আছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ফিরে গেলে অতি দ্রুত নাটকীয় পরিবর্তন হতে থাকে। বাংলাদেশ আগেই ভারতকে আশুগঞ্জ বন্দরের মাধ্যমে ত্রিপুরায় নির্মীয়মান পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মালামাল বহনের করিডোর দিয়ে দিয়েছে বলে খবর বেরোয়। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভারতীয় জাহাজ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মালামাল বহনের একটি নীতিমালাও জারি করে।


বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ৪ অক্টোবর বলেন, ২০১১-এর ১৩ ফেব্রুয়ারি এক চুক্তির মাধ্যমে ভারতকে আশুগঞ্জ আগরতলা রুটে ‘ট্রায়াল ট্রানজিট’ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতীয় জাহাজগুলো প্রয়োজনীয় ফি দিয়েই আসছে। কিন্তু ১১ অক্টোবর ২০১১ প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, ভারতকে ’ট্রায়াল ট্রানজিট’ দেওয়া হয়েছে, এই ট্রায়াল শেষ হলে ‘নিয়মিত ট্রানজিট’ হবে, তখন ফি আদায় করা হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের ট্রানজিট বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই, যতদিন প্রয়োজন অভিজ্ঞতা অর্জন করেই ‘ট্রানজিট’ ফি আদায় করা হবে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা ৩১ মার্চ ২০১১ বলেছিলেন, ‘আমরা অসভ্য হলে ট্রানজিট ফি দাবি করতাম।’ ট্রানজিট নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের এসব বিবৃতি সচেতন জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।

ত্রিপুরায় নির্মীয়মান পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মালামাল নিয়ে আশুগঞ্জ বন্দরে ভারতীয় ২৭টি জাহাজে এসে ভিড়েছে এবং মালামাল খালাস করা হয়েছে। আগরতলা পর্যন্ত পরিবহনের জন্য স্থানীয় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে আশুগঞ্জ আখাউড়া সড়কে ২৫ কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে। ‘ট্রায়াল ট্রানজিট’ শেষ না হতেই এ বছরের ১৮ অক্টোবর থেকে ভারতকে ‘নিয়মিত ট্রানজিট’ দেওয়া শুরু হয়। উল্লেখ্য, ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণের পর ১৯৭৫ সালের ১৮ এপ্রিল ভারত এভাবেই ‘ট্রায়াল রিলিজ’-এর নামে গঙ্গার ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার কিউসেক পানি প্রত্যাহারের চুক্তি করে, কিন্তু বাস্তবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি সরিয়ে নিতে থাকে।

উপরে বর্ণিত ঘটনাপ্রবাহের বিবেচনায় করিডোরের নামে ট্রানজিট নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থান অত্যন্ত দুর্বল এবং সন্দেহজনক। ভারতকে করিডোর দেওয়া নিয়ে বিএনপি ভারতবিরোধী অবস্থান নিলেও ক্ষমতায় থাকাকালে বাণিজ্যিক স্বার্থে মালামাল পরিবহন চুক্তি ব্যবস্থা বাতিল করেনি। ভারতকে করিডোর দেওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী দেশীয় বাধ্যবাধকতা পালন করে কাস্টম ছাড় ও শুল্ক প্রদান সাপেক্ষে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে তাদের যান ও মালামাল গমনাগমন করতে পারে এমনটাই নিয়ম। এতে নিরাপত্তা ও দুর্যোগের ঝুঁকি কোনো আন্তর্জাতিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নিতে হবে। বাংলাদেশকে কোনো ক্ষেত্রেই মালামালের নিরাপত্তার জন্যে দায়ী করা যাবে না এবং এই ট্রানজিটের সঙ্গে ভারতের সামরিক বাহিনীর গমনাগমন বা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের কোনো ভূ-রণ কŠশলগত কর্মকান্ড এই ব্যবস্থার আওতায় আসবে না।

ভারতকে করিডোর দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশের একজাতীয় বিশেষজ্ঞ নানা সময়ে নানা কথা বলেছেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, ঢাকা তাদের নভেম্বর ২০১০-এর সমীক্ষায় বলেছিল, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট দিয়ে বাংলাদেশ ৩০ বছরে ২৩০ কোটি ডলার আয় করতে পারে। এভাবে বাংলাদেশের জনগণ একদিকে প্রচুর আশাবাদী হয়েছে এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখেছে, অন্যদিকে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকারগুলো জনগণকে প্রকৃত অবস্থা না জানিয়ে ভারতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে গেছে। এর ফলে সারাদেশের মানুষ ট্রানজিটের নামে করিডোর দেওয়া নিয়ে বিভ্রান্তির ঘোলাজলে ডুবে আছে।

ভারতকে সুবিধা ও ছাড় দিয়ে যখন সব পথে করিডোর দেওয়া হয়ে গেছে তখন বিদেশী অর্থে লালিত দেশের কিছুসংখ্যক বিশেষজ্ঞ তাদের গা-বাঁচানো কথা বলে পান্ডিত্য ফলিয়েই যাচ্ছেন। তাদের প্রচারিত বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, এশিয়ান হাইওয়ের কানেকটিভিটি, বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুরের মতো উন্নতির শিখরে নেওয়ার গালভরা গল্পের পেছনে বাংলাদেশের জনগণকে ঠকিয়ে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ম্লান করে ভারতীয় প্রভুত্ব ও ভারতীয় করপোরেট পুঁজির আগ্রাসনকে সুযোগ করে দেওয়াই লক্ষ্য ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। ভারতকে নৌ, রেল ও সড়কপথে করিডোর দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা ভারতের কব্জায় চলে যাচ্ছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে চলতি বাণিজ্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ভারতীয় করপোরেট বাণিজ্যের প্রবাহে বন্ধ হতে চলেছে।

আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে করিডোরের নামে ট্রানজিট দেওয়া নিয়ে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের ব্যাখ্যা, ওই সব পদক্ষেপে বাংলাদেশের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ ইত্যাদির ব্যাখ্যা দাবি করছি এবং যতদিন এই ব্যাখ্যা না দেওয়া হয় ট্রানজিট ব্যবস্থা স্থগিত করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের পরস্পরের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে এনে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য কাঁটাতারের বেড়া তুলে দেওয়া, বর্ডার ভিসা চালু করা এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে প্রতিরক্ষা আর পররাষ্ট্র বিষয় রেখে অন্য সব বিষয়ে তাদের রাজ্যগুলোকে সরাসরি বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করার অধিকার দিতে বলছি।

বাংলাদেশের বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে করিডোর নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি সরকারের কূটনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির সহায়ক হওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো সরকারই জনগণের রায় তথা স্বার্থের প্রতি গ্রাহ্য না করে দলীয় স্বার্থের বিবেচনায় বৈদেশিক নীতি পরিচালনা করেছে, যার ফলে বাংলাদেশের ক্ষতির পর ক্ষতি হয়ে গেছে। তাই এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের স্বার্থে সরকারের ওপর সম্পূর্ণ না ছেড়ে দিয়ে জনগণের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক শক্তি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, স্বাতন্ত্র্য ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ট্রানজিটের নামে করিডোর দেওয়াসহ ভারতসহ যে কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের জল, ভূমি ও রেলপথে অন্যায় অনুপ্রবেশ প্রতিহত করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, সাবেক মহাপরিচালক, পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা

minamul@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন