বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১১

জনসমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মওলানা ভাসানী

মুক্তিআন্দোলন আয়োজিত আজকের এ জনগুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসভার শ্রদ্ধেয় সভাপতি, মান্যবর প্রধানঅতিথি, বিশেষঅতিথি এবং উপস্থিত সুধীবৃন্দ,

মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী আজকের এ নিরাশা ও আশার মহাসংকটকালে খুবই প্রাসঙ্গিক এবং জরুরী। আমরা তাঁর জীবনেতিহাস পাঠ করছি, তাঁকে স্মরণ করছি এবং তাঁর মাঝে আমাদের মুক্তিরপথ খুজঁছি। কারণ, তিনি মানুষের পথপ্রদর্শক এবং মানবতার মুক্তিদূত। পৃথিবীতে যতদিন অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নিপীড়ন, শোষণ-বঞ্চনার লেশমাত্র অবশিষ্ট থাকবে, ততদিন তাঁর প্রয়োজন ফুরাবে না। সবধরণের অনাচারের বিরুদ্ধে তাঁর মতো নির্লোভ, নিরংহকারী সিংহপুরুষের গর্জন আমাদের সাহস যোগাবে।

আমরা হতাশ, নিরাশ, উদ্বিগ্ন এবং উৎকন্ঠিত। কারণ, একে একে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পূঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে চলতি শতকের আপোষহীন লড়াকু সব আইকন। আমরা মানবতাবিধংসী পূঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বুকে কাঁপন ধরানো অসীম সাহসী এসব বীর হারিয়ে এতিম ও অসহায়। সবশেষে লিবীয় নেতা মুয়াম্মার আল্ গাদ্দাফি ইতিহাসের জঘন্যতম নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক হত্যাকান্ডের শিকার হলেন। বিচারবহির্ভূত মানবতাবিরোধী এ হত্যাকান্ডে  বিশ্ববিবেক নিশ্চুপ। আমরা এর কঠোর নিন্দা করি এবং ধিক্কার জানাই। আসলকথা, পুঁজিবাদের আগ্রাসন রুখেদাঁড়ানো সাহসী কন্ঠস্বর এভাবেই ক্রসফায়ারের নামে অথবা বন্ধুকযুদ্ধের অজুহাতে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে।

তবে আশার দিক হলো- বিশ্বের দেশে দেশে পূঁজিবাদবিরোধী ক্ষোভ-বিক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সচেতন মানুষের যৌথ নেতৃত্ব ও সম্মিলিত গণআন্দোলনের প্রবল ধাক্কায় পূঁজিবাদের সূতিকাগার ইউরোপ, আমেরিকায় সুনামীর লক্ষণ এখন সুস্পষ্ট। সাম্রাজ্যবাদের অহংকার পূঁিজবাদী রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙ্গে খান খান হওয়ার উপক্রম। পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে একের পর এক সরকার পতন তারই প্রাথমিক ধাপ। একক নেতৃত্বের বিপরীতে যৌথ নেতৃত্ব  ও সম্মিলিত সফল গণআন্দোলনের ফলে পূঁজিবাদের পতন অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু তাপরর কী?

মুক্তিআন্দোলন সামাজিক মালিকানায় বিশ্বাসী। আমরা নর-নারী বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক এবং অর্থনৈতিক সাম্যের সমাজ প্রত্যাশী। আমরা চাই মানুষের সমাজ। যেখানে মানুষ রবের খলিফা, আশরাফুল মাখলুকাত এবং তারা পারস্পারিক সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়। তাই প্রকৃতির সব জীব-অণুজীবের পালনকর্তা, রক্ষাকর্তা। এজন্য চাই নিরস্ত্র মানুষের উত্তাল গণবিস্ফোরণ।

আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি, বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা কর্পোরেট ব্যবস্থার বাণিজ্যিক যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে বিলীন হওয়ার পথে। ধোঁকাবাজ কর্পোরেট ব্যবস্থার অস্তিত্বও পূঁজিবাদবিরোধী আন্দোলনের তোড়ে সংকটাপন্ন। এর সবকিছু তছনছ হয়ে স্রোতে নিঃশ্বেষ হতে চলছে। কিন্তু মানুষের সমাজ স্থায়ী ও টেকসই। তাই মানুষের সমাজই মানুষের শেষঠিকানা।

    আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন, আমরা বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতনভাবেই ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’, ‘সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ , ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ বা ‘হুকুমাতে রব্বানী’ প্রভৃতি পরিভাষা এড়িয়ে গেছি। মুক্তিআন্দোলন বাংলাদেশ ‘জনসমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মওলানা ভাসানী’ শীর্ষক আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। যা বিশাল তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা সবধরনের বিতর্কমুক্ত থেকে গণমানুষের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট থাকতে চাই। বিভেদ নয়, ঐক্য চাই। যেকোন ন্যূনতম ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা আমাদের উদ্দেশ্য।

    তাছাড়া মওলানা ভাসানীর প্রতিভা বহুমুখী। বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে তাঁকে মূল্যয়ন করে। কিন্তু তিনি সর্বোতভাবেই আপাদমস্তক একজন রাজনীতিক। তার রাজনীতি বাঁচার লড়াই। মানুষ প্রকৃতির সব জীব-অণুজীবসহ বাঁচার যে নিরন্তর সংগ্রাম করছে মওলানা ভাসানীর রাজনীতি তা ধারণ করে একে আরো বেগবান করা। এজন্য তিনি সবার প্রিয়, আত্মার আত্মীয়। দল-মত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার হ্নদয়ের মণিকোঠায় তাঁর অবস্থান।

মওলানা ভাসানী সমগ্র বাংলার সকলের মরণফাঁদ ফারাক্কা বাঁধ গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। এজন্য তিনি জনমত গঠন করে ফারাক্কামার্চসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামেই ছিলেন আমৃত অবিচল।

মওলানা ভাসানী জীবিত নেই। তাঁর লড়াকু শিক্ষা আমাদের মাঝে চির জাগরুক। এ শিক্ষাই আমাদেরকে আরেকটি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হুইসেল বাজাচ্ছে। তাহলো টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী একাট্টা গণজাগরণ। বাংলাদেশসহ মণিপুর, মিজোরাম, আসাম অঞ্চলের মানুষ এবং প্রাণীকুলের বাচাঁ-মরার এ সংগ্রাম এগিয়ে নিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কর্পোরেট বাণিজ্য ও বহুজাতিক কোম্পানীর পুঁজির স্বার্থ রক্ষায় দিল্লী যে মরণখেলায় মেতেছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এবং বিরোধী দল বিএনপিও তার অংশ। বৃহত্তম রাজনৈতিক দল দুটো যৌথ সমীক্ষার অভিন্ন দাবী তুলে কার্যতঃ ড্যাম নির্মাণের পক্ষেই তাদের অবস্থান পরিস্কার করেছে। অন্যান্য পূঁজিবাদী ও সাম্প্রদায়িক দলেরও নিজস্ব এজেন্ডা আছে। অতএব আমাদের প্রাণ, পানি ও পরিবেশ রক্ষায় আমাদেরকেই সোচ্চার হতে হবে। এ ক্ষেত্রে কারও মুখের দিক তাকিয়ে নিশ্চুপ থাকা আত্মহত্যারই সামিল। সবাই বেঁচে থাকার সংগ্রামে সামিল হোন।

ধন্যবাদ সবাইকে-
রু“হুল আমিন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন