শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১১

আশুগঞ্জ বন্দর : অবকাঠামো নেই, কিন' চালু হয়ে গেছে ট্রানজিট

ভারতের ট্রানজিটে বাংলাদেশের ভর্তুকি

নেপালের প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই ভারত সফরে যাওয়ার আগে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে ভারতের সাথে যেন দীর্ঘমেয়াদি কোনো চুক্তি করা না হয়। বাবুরাম ভট্টরাই যে দলটি থেকে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি ভারতের পছন্দের কোনো রাজনৈতিক দল নয়। কিন' এই বৈঠকে ভারতপন'ী রাজনৈতিক দল নেপালি কংগ্রেসের প্রতিনিধিরাও উপসি'ত ছিলেন। তারাও বাবুরাম ভট্টরাইকে একই পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, নতুন করে কোনো চুক্তি না করে বরং আগের দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো সমাধানের দিকে অধিকতর গুরুত্ব দিতে। অর্থাৎ নেপালের রাজনৈতিক দলগুলো একটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে ভারতের সাথে তারা আর কোনো নতুন চুক্তি করবে না। কারণ দীর্ঘ দিন থেকে চলে আসা সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে না।
নেপালের সাথে ভারতের অনেকগুলো মৈত্রী চুক্তি রয়েছে। নেপালের অর্থনীতিও ভারতনির্ভর। দেশটিতে নেপালি মুদ্রার পাশাপাশি ভারতীয় মুদ্রা চালু রয়েছে। নেপালি মুদ্রার চেয়ে ভারতীয় মুদ্রার মূল্যমান বেশি হওয়ায় নেপালি মুদ্রার চেয়ে ভারতীয় মুদ্রা দেশটিতে কেনাকাটার ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার হয়। ভারতের ব্যবসায়ীরাই নেপালের ব্যবসায়-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ভারতের ব্যবসায়ীরা কাঠমাণ্ডু-পোখারা বা অন্য ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে দোকান খুলে ব্যবসায় করছেন। ফলে ভারতের বাণিজ্যিক আগ্রাসনের রূপটি নেপালের জনগণ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। ফলে নেপালের নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
নেপালের মতো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে একটি দুর্বল রাষ্ট্র ভারতের সাথে সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে স্বাধীন নীতি অনুসরণ করতে পারছে, সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নীতিনির্ধারণী বিষয়ে কে সিদ্ধান্ত নেন, তা একটি গুরুতর প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক ধরনের অধীনতামূলক মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের মন্ত্রীরা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সমপূর্ণ তার বিপরীত বক্তব্য রাখছেন এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য কার্যকর হচ্ছে। পরে আবার ভারতের বক্তব্যকে ন্যায্যতা দেয়ার জন্য মন্ত্রীরা সেই সুরে কথা বলছেন।
সমপ্রতি আশুগঞ্জ বন্দর থেকে আখাউড়া হয়ে ত্রিপুরা পর্যন্ত স'ায়ী ট্রানজিট চালু হয়েছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে ভারতের পণ্য পরিবহনের এই সুবিধা দেয়া হয়েছে বর্তমান সরকারের একক সিদ্ধান্তে এবং বিরোধী দলের প্রবল বিরোধিতার মধ্যে। এখন এই ট্রানজিট বা করিডোর সুবিধা নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। প্রকৃত সত্য আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এত দিন পর্যন্ত সরকারের মন্ত্রীরা বলে আসছিলেন ভারতকে ট্রানজিট দিলে বিপুল পরিমাণ আয় হবে; কিন' বাস্তবতা হচ্ছে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে বিনা মাশুলে এবং এ জন্য বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি গুনতে হবে বাংলাদেশকে। শুধু তা-ই নয়, ২৬ সেপ্টেম্বর আশুগঞ্জ বন্দর থেকে ভারতের প্রথম চালানটি ত্রিপুরায় যায়। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় পরীক্ষামূলকভাবে এই মালামাল যাচ্ছে। কিন' দুই সপ্তাহের মধ্যে ট্রানজিট ১৯ অক্টোবর স'ায়ী রূপ নেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়।
ভারতীয় হাইকমিশনারের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রজিত মিত্তির স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আশুগঞ্জ থেকে ট্রানজিট বা ট্রানশিপমেন্ট চালু হয়ে গেছে। অর্থাৎ এটি পরীক্ষামূলক কিছু নয়। তিনি আরো জানান, ’৭২ সালের
নৌ-প্রটোকল অনুযায়ী এই ট্রানজিট চালু হয়েছে। আর এই নৌ-প্রটোকল অনুযায়ী নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে বছরে মাত্র সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা পেয়ে থাকে। ’৭২-এর নৌ-প্রটোকল অনুযায়ী ট্রানজিট চালু হওয়ার অর্থ শুধু বিনা পয়সায় নয়, বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে বাংলাদেশ এখন ভারতের ট্রানজিট কার্যকর করেছে। ’৭২ সালের নৌ-প্রটোকল অনুযায়ী যদি আশুগঞ্জ থেকে আগরতলা পর্যন্ত ট্রানজিট চালু করা যায় তাহলে এত দিন তা চালু হয়নি কেন?
১৯৭২ নয় ২০১০
আমরা জানি, ত্রিপুরার পালাটানায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনের জন্য ভারত দীর্ঘ দিন ধরে আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহারের দাবি করে আসছিল। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও এই দাবি করা হয়েছিল। কিন' পালাটানায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনের অনুমতি দিলে তাকে উদাহরণ হিসেবে উত্থাপন করে স'ায়ী ট্রানজিটের দাবি জানাবে, আর এ কারণে সে সময় অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন' বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই সুবিধা দেয়া হয় এবং আশুগঞ্জকে নৌবন্দর ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই ট্রানজিট দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। সে সময় প্রকাশিত যৌথ ইশতেহারের ২২ নম্বর দফায় উল্লেখ করা হয় “বৈঠকে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ ও ভারতের শিলঘাটকে ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণার ব্যাপারে উভয় প্রধানমন্ত্রী একমত হন। নোট বিনিময়ের মাধ্যমে এ সম্পর্কিত আইডব্লিউটিটি প্রটোকল সংশোধন করা হবে। উভয়ে একমত হন যে, আশুগঞ্জ থেকে এককালীন বা দীর্ঘমেয়াদি ওডিসির (ওভার ডাইমেনশনাল কার্গো) পরিবহনব্যবস'া চালুর জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং এ ব্যাপারে সম্ভাব্য ব্যয় নিরূপণের জন্য একটি যৌথ টিম কাজ করবে। এ জন্য ভারত প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করবে। উভয় দেশের ঠিকাদাররা কাজ পেতে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।”
এরপর পালাটানায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রপাতি ত্রিপুরায় নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দুই দেশের বন্ধুত্বের উদাহরণ হিসেবে এসব যন্ত্রপাতি পরিবহনে কোনো ধরনের ফি আদায় করা হবে না। বাংলাদেশের এই উদার মনোভাবের প্রশংসা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। তার ঢাকা সফরে যে যৌথ ইশতেহার প্রকাশিত হয় এর ৩৫ নম্বর দফায় বলা হয়, ‘ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ওডিসি কার্গো যাতায়াতের অনুমতি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছেন।’ ৩৬ নম্বর দফায় বলা হয়, ‘দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় অভ্যন্তরীণ নৌ-ট্রানজিট ও বাণিজ্য প্রটোকলের আওতায় অতিরিক্ত ডক বন্দর হিসেবে আশুগঞ্জ ও শিলঘাটকে অন্তর্ভুক্ত করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। আশুগঞ্জ বন্দরে বহুমাত্রিক স'াপনা ব্যবহার করে ত্রিপুরার জন্য বাল্ক কার্গোর সফল পরীক্ষামূলক পরিচালনার জন্য তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। আশুগঞ্জে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত ও ব্যবহারোপযোগী হওয়ামাত্র বাল্ক কার্গোর জন্য ব্যবহারেরর ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে।’
ভারতের ট্রানজিটে বাংলাদেশের ভর্তুকি
এই ট্রানজিট কার্যকর করার জন্য বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে। কারণ ’৭২-এর নৌপ্রটোকল অনুযায়ী ভারত যে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে থাকে তার চেয়েও অনেক বেশি টাকা খরচ হয় নৌপথ ও নৌবন্দরের নাব্যতা রক্ষার জন্য। এখন ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে ভারতীয় জাহাজ আশুগঞ্জ বন্দরে ভিড়বে এবং এই নৌবন্দরের নাব্যতা রক্ষার জন্য বিপুল পরিমাণ খরচ হবে। এর বাইরে সড়ক ব্যবহারের জন্য ও বন্দর ব্যবস'াপনার জন্য ভারত কোনো ফি বা মাশুল দেবে না। এখন বাংলাদেশের জনগণের করের টাকায় যেসব রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো দিয়ে এখন ভারতীয় যানবাহন চলাচল করবে। আর এসব রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়ও বাংলাদেশ সরকারকে বহন করতে হবে। ইতোমধ্যে ভারতের কার্গো ও ভারী ট্রাক চলাচলের ফলে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রাস্তাঘাট বেহাল অবস'ায় পড়েছে। এমনকি নদীর প্রবাহ বন্ধ করে বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশকে কিভাবে ভর্তুকি দিতে হবে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, ভারতীয় কার্গোর জন্য ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট ফি তো দূরের কথা এ সেবায় বাংলাদেশের যে ব্যয় হচ্ছে তাও পুষিয়ে নিচ্ছে না সরকার। তিনি বলেন, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে গঠিত কমিটি যে ফি নেয়ার প্রস্তাব করেছিল, সরকার বিবেচনায় নিয়েছে বলে তা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কার্গোর ওপর ফি নির্ধারণ না করে সরকার একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স'াপন করেছে, যা ভবিষ্যতে ভারতের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ট্রানজিটের জন্য ফি নির্ধারণে আলোচনা হলে সেখানে বর্তমান অবস'াকে উদাহরণ হিসেবে উপস'াপন করা হতে পারে। দেবপ্রিয় বলেন, আসলে সরকার বারবার অবস'ান বদলে ইতোমধ্যে কিছু ক্ষতি করে ফেলেছে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ একসময় ট্রানজিট দেয়ার জন্য জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। এখন তিনি বলেছেন, ট্রানজিটে লাভ তো দূরে থাক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ সিপিডির মতো ভারতবান্ধব প্রতিষ্ঠানও বুঝতে পারছে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার নামে বাংলাদেশ শেষ দরকষাকষির সুযোগটি হারিয়েছে।
আগে তারা কী বলেছিলেন
ভারত ইতোমধ্যে আশুগঞ্জ বন্দর থেকে ট্রানজিট সুবিধা পেয়েছে। এত দিন ধরে সরকারের অর্থমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বারবার বলে আসছিলেন যে বিনা মাশুলে ট্রানজিট চালু হবে না। অর্থমন্ত্রী এ কথাও বলেছিলেন, ফি হোক বা মাশুল হোক একটা কিছু নেয়া হবে। এমনকি ট্রানজিটের ফি নির্ধারণের ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটির সুপারিশও মানা হচ্ছে না। গত মে মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমণি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ট্রানজিটের বিনিময়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাশ্রয়ের অংশ বাংলাদেশের পাওয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, শুধু অবকাঠামো ব্যয় তুলে আনা অর্থহীন হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে মাশুল বা ফি একটা কিছু আদায় করা হবে। অপর দিকে এপ্রিলে একটি বার্তা সংস'াকে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, ট্রানজিটের জন্য ফি চাওয়ার অধিকার বাংলাদেশের রয়েছে। তিনি আরো বলেন, তবে এর পরিমাণটা হতে হবে যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়িত অর্থের সমপরিমাণ। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান গত মার্চ মাসে বলেছিলেন, ট্রানজিট বা ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে ফি নেয়া উচিত হবে না। তিনি ট্রানজিট ফি চাওয়াকে অসভ্যতা বলেও উল্লেখ করেন। গত ১১ অক্টোবর তিনি বলেন, ট্রানজিট বা ট্রানশিপমেন্টে বাংলাদেশের লাভ হবে, না ক্ষতি হবে তা আমাদের জানা নেই। এ ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা না হওয়া পর্যন্ত ভারতের কাছ থেকে কোনো ফি নেয়া হবে না। ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার জন্য বাংলাদেশে যে কয়েকজন ব্যক্তি খুবই সোচ্চার ছিলেন, তাদের একজন এসকাপের সাবেক কর্মকর্তা রহমত উল্লাহ। তিনি ট্রানজিট সংক্রান্ত সরকার গঠিত কোর কমিটির সদস্য। তিনি বলছেন, নৌ-প্রটোকল সংশোধনের সময় মাশুল আরোপ না করা সরকারের একটি বড় ভুল। ফলে এখন বিনা পয়সায় ভারত ট্রানজিট নিচ্ছে- এতে আমাদের খারাপ লাগছে। বিনা মাশুলে ট্রানজিট দেয়ার বিষয়টি আটকানো যেত। সরকার বলতে পারত এখনো পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। তাই এই মুহূর্তে ট্রানজিট পণ্য আনা-নেয়া সম্ভব নয়। (প্রথম আলো ২০ অক্টোবর ২০১১) দেখা যাচ্ছে ট্রানজিট নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও ট্রানজিটের পক্ষে যারা জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন তাদের আগের অবস'ানের সাথে এখনকার কোনো মিল নেই।
ব্যক্তিগত ঋণ এবং জাতীয় স্বার্থ
ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে সরকার ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে একটি কোর কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটি রুট চিহ্নিত করা, মাশুল আরোপ, অবকাঠামো নির্মাণে এবং কী পরিমাণ বিনিয়োগ হবে তার পরিমাণ উল্লেখ করে একটি রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দিয়েছিল। এই রিপোর্টে পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় আগামী তিন বছরের আগে ট্রানজিট না দেয়ার সুপারিশ করেছিল। কিন' সরকার গঠিত এই কমিটির সুপারিশ সরকার না মেনে ট্রানজিট চালু করেছে। কিন' কেন? আমরা লক্ষ করছি, ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সমস্যার ক্ষেত্রে ভারতের আকাঙ্ক্ষার বাইরে সরকার কোনো স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অনেকে মনে করেন সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত বা দলীয় ঋণের কারণে ভারতের দাবিকে তারা উপেক্ষা করতে পারছেন না। ভারত বিনা মাশুলে ট্রানজিট চাইছে সরকার সেটাই বাস্তবায়ন করছে। ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের কাছে আজ জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়া হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন