সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১১

গাদ্দাফির ৮ ছেলের ৪ জন নিহত, স্ত্রী আলজেরিয়ায়


লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির আট ছেলের মধ্যে চারজন নিহত হয়েছেন। একজন অন্তর্বর্তী জাতীয় পরিষদের (এনটিসি) হাতে আটক রয়েছেন। আলজেরিয়ায় গাদ্দাফির স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে অবস'ান করছেন। নাইজারে গাদ্দাফির তৃতীয় ছেলে সাদি গাদ্দাফি অবস'ান করছেন। গাদ্দাফির স্ত্রী-পুত্রদের লিবিয়ায় ফিরিয়ে দিতে দেশ দু’টির ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। খবর ডেইলি মেইল ও রয়টার্সের।
মুয়াম্মার গাদ্দাফির সবচেয়ে আলোচিত ছেলে সাইফ উল ইসলামের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সার্তে শহর রক্ষার মিশনে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। ৩৯ বছর বয়স্ক সাইফ গাদ্দাফির দ্বিতীয় স্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। গাদ্দাফিবিরোধী কার্যক্রম শুরুর আগে তাকেই পিতার উত্তরসূরি বিবেচনা করা হতো। ব্রিটেনের বিভিন্ন মর্যাদাসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেও তার সম্পর্ক ছিল। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার গত বছর সাইফকে ‘ব্যক্তিগত পারিবারিক বন্ধু’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন এবং ডাউনিং স্ট্রিট ত্যাগের পর অনেকবার লিবিয়া সফর করার কথা জানিয়েছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। কয়েক মাস আগে বিপ্লবীরা ত্রিপোলি দখলের সময় সাইফকে আটকের দাবি করে। তবে তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। বৃহস্পতিবার এনটিসি প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল সাইফ গাড়িবহরে করে সার্তে থেকে পালিয়ে গেছে। পরে জানানো হয়, বিপ্লবী রক্ষীরা তার পায়ে গুলি করেছে এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরো পরে জানানো হয়, ন্যাটোর বিমান হামলায় তিনি আহত হয়েছেন।
গাদ্দাফির আরেক ছেলে মুতাসিম সার্তেয় নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যু নিয়েও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছিল, তাকে জীবিত আটক করা হয়েছিল।
গাদ্দাফির প্রথম স্ত্রীর ঘরে জন্ম নেয়া একমাত্র ছেলে মোহাম্মদ (৪১) ত্রিপোলি পতনের পর আলজেরিয়ায় পালিয়ে যান। তিনি ছিলেন লিবিয়ার অলিম্পিক কমিটির প্রধান ও জেনারেল পোস্ট অ্যান্ড টেলিকম কোম্পানির চেয়ারম্যান।
সাদি (৩৮) গত সেপ্টেম্বরে নাইজারে পালিয়ে যান। তিনি ছিলেন দেশটির চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম ব্যক্তিত্ব।
গাদ্দাফির অপর ছেলে হানিবল (৩৬) গত আগস্টে আলজেরিয়ায় পালিয়ে যান। তিনি দেশটির তেল রফতানি নিয়ন্ত্রণ করতেন।
লিবিয়ার সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল পদবিধারী মুতাসিম (৩৪) সার্তেয় নিহত হয়েছেন বলে এনটিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গাদ্দাফির মেয়ে আয়েশা (৩৪) তার বাবার পক্ষে সবসময় সরব ছিলেন। গত আগস্টে তিনি তার মা সাফিয়া, দুই ভাই মোহাম্মদ ও হানিবেলের সাথে আলজেরিয়ায় পালিয়ে যান।
গাদ্দাফির অপর ছেলে সাইল আল আরব (২৯) গত এপ্রিলে ত্রিপোলিতে ন্যাটোর বিমান হামলায় নিহত হন।
খামিস (২৮) ত্রিপোলিতে নিহত হয়েছিলেন।
গাদ্দাফিকন্যা হানার (২০ ঊর্ধ্ব) কোথায় আছেন তা জানা যায়নি। ১৯৮৬ সালে মার্কিন বিমান হামলায় তিনি নিহত হয়েছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। কিন' গত আগস্টে অনেকে তাকে দেখার দাবি করেছেন।
গাদ্দাফির স্ত্রী সাফিয়া (৬০ ঊর্ধ্ব) এখন আলজেরিয়ায় রয়েছেন। ১৯৬৯ সালে গাদ্দাফির অ্যাপেনডিক্স অপারেশনের সময় তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। সাফিয়া ফারকাশ আল বারাসি ছিলেন নার্স। গাদ্দাফির মৃত্যু পর্যন্ত তাদের দাম্পত্য জীবন (৪০ বছর) টিকে ছিল। গাদ্দাফির আট সন্তানের সাতটির জননী সাফিয়া। বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে বলা হয়, ২০ টন স্বর্ণসহ তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ১৯ বিলিয়ন পাউন্ড।
গাদ্দাফির প্রথম স্ত্রী ফাতিহা আল নূরী কোথায় আছেন তা জানা যায়নি। তিনি ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষিকা। মাত্র এক বছর স'ায়ী বিয়েটি ১৯৭০ সালে ভেঙে যায়। তাদের একমাত্র ছেলে মোহাম্মদ।
মুতাসিমের মৃত্যুও রহস্যজনক
ডেইলি মেইল জানিয়েছে, নিহত লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছেলে মুতাসিমের মৃত্যুর রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। তাকে জীবিত অবস'ায় আটকের ঘোষণা করার পর বলা হয় তিনি মারা গেছেন।
ডেইলি মেইল জানায়, একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে আটকের পর সম্ভবত একটি হাসপাতালের সোফায় তিনি একটি দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে ধূমপান করছেন এবং একটি বোতল থেকে পানিও পান করছেন। লিবীয় সরকারের নতুন একটি টিভি চ্যানেলে প্রচার করা ছবি দেখেও মনে হচ্ছিল, মুতাসিমকে কোনো হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এর পর তিনি কিভাবে মারা গেলেন সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর পর আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, মুতাসিম মারা গেছেন এবং তাকে একটি স্ট্রেচারে শুইয়ে রাখা হয়েছে। মিসরাতার একটি সামরিক সূত্র জানায়, গলায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে মুতাসিম নিহত হয়েছেন।
আরেকটি সূত্র জানায়, মুতাসিমের লাশ সার্তের একটি সড়কের পাশে পাওয়া যায়। বিপ্লবী সরকারের তথ্যমন্ত্রী মাহমুদ শাম্মাম জানান, ‘মুতাসিম নিহত। আমি এটা নিশ্চিত করছি।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন