সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১১

গাদ্দাফির লাশ চেয়েছে পরিবার


মুয়াম্মার গাদ্দাফির মৃতদেহ কবর দেয়ার সুযোগ চেয়েছে তার পরিবার ও নিজ গোত্রের সদস্যরা। নিজ জন্মস'ান সার্তে শহরে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে নিহত হন গাদ্দাফি। তার মৃতদেহ এখন মিসরাতা শহরের একটি শপিং সেন্টারে গোশত রাখার একটি ফ্রিজে রাখা হয়েছে। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।
গাদ্দাফির সমর্থক সিরিয়াভিত্তিক একটি টেলিভিশন স্টেশন থেকে লিবিয়ার বাইরে থাকা গাদ্দাফি পরিবারের সদস্যরা গাদ্দাফি ও অন্যদের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস-ান-রের দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার নিজ জন্মশহর সির্ত থেকে একটি গাড়িবহর নিয়ে পালানোর সময় ছেলে মোতাসিমসহ নিহত হন গাদ্দাফি। পরিবারের পক্ষ থেকে মোতাসিমের মৃতদেহও হস-ান-রের দাবি জানানো হয়।
এ বিষয়ে সিরিয়ান ওই টেলিভিশনে প্রচারিত বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার শহীদ হওয়া গাদ্দাফি, মোতাসিম ও অন্য শহীদদের মৃতদেহ সার্তের নিজ গোত্রের লোকদের কাছে তুলে দিতে অন-র্বর্তী জাতীয় পরিষদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আমরা জাতিসঙ্ঘ, ইসলামি সম্মেলন সংস'া ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
তারা বলেন, ইসলামি রীতি ও করণীয় মেনে তাদের কবর দেয়ার সুযোগ দিতে তাদের লাশ নিজ গোত্রের লোকদের কাছে হস-ান-র করা হোক।
তবে গাদ্দাফির মৃতদেহ নিয়ে কী করা হবে, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান- নেয়নি লিবিয়ার ক্ষমতাসীন অন-র্বর্তী পরিষদের (এনটিসি) নেতারা।
মিসরাতায় গাদ্দাফির মৃতদেহ যেখানে রাখা আছে সেখানে উপসি'ত স'ানীয় এক এনটিসি কমান্ডার জানান, একজন মুসলিম হিসেবে গাদ্দাফিকে তার প্রাপ্য অধিকার দেয়া হবে। তার মৃতদেহের গোসল করানোসহ সব ধরনের ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করেই তাকে দাফন করা হবে।
লাশের ময়নাতদন- করা হবে না : মুয়াম্মার গাদ্দাফির মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা নিয়ে সংশয় থাকলেও তার লাশের ময়নাতদন- করা হবে না। মিসরাতা সামরিক পরিষদের মুখপাত্র ফাতি আল-বাসহাগা বলেন, তার ময়নাতদন- করা হবে না। কেউ তার লাশ কাটাকাটি করতে যাচ্ছেন না। মিসরাতার আরো দুই সামরিক কমান্ডার এ কথা নিশ্চিত করেছেন। এ দিকে এনটিসি নেতা আব্দেল জলিল বলেন, গাদ্দাফি কিভাবে নিহত হয়েছেন তা তদন- করে দেখা হচ্ছে।
নাইজারের দিকে যাচ্ছেন সাঈফ : সার্তে থেকে দক্ষিণে লিবিয়ার নাইজার সীমানে-র দিকে পালিয়ে যাচ্ছেন মুয়াম্মার গাদ্দফির ছেলে সাঈফ আল ইসলাম। এনটিসি বাহিনী বৃহস্পতিবার সার্তের পতন ঘটিয়ে গাদ্দাফিকে হত্যা করার পর তাদের হাত থেকে বাঁচতে তিনটি সাঁজোয়া যানের এক বহরে করে ইসলাম পালিয়ে যাচ্ছেন বলেই ধারণা করছেন কর্মকর্তারা। লিবিয়ার অন-র্বর্তী সরকারের (ন্যাশনাল ট্রান্সিশনাল কাউন্সিল-এনটিসি) ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা আবদুল মজিদ ম্লেগতা শুক্রবার এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমরা তাকে খুঁজছি। ওই অঞ্চলের যোদ্ধাদের পুরোপুরি সতর্কাবস'ায় রাখা হয়েছে।
৩১ অক্টোবর লিবিয়া ছাড়ছে ন্যাটো : লিবিয়ায় পশ্চিমা সামরকি জোট ন্যাটোর সাত মাসের অভিযান আগামী ৩১ অক্টোবর সমাপ্ত ঘোষণা করা হবে। গত শুক্রবার ন্যাটোর সদরদফতর ব্রাসেলসে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে লিবিয়ার অন-র্বর্তী সরকার ও জাতিসঙ্ঘের সাথে আলোচনা করে আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার ব্রাসেলসে ২৮টি সদস্য দেশের রাষ্ট্রদূতদের সাথে দীর্ঘ আলোচনা শেষে ন্যাটো প্রধান অ্যানডারস ফগ রাসমুসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের লিবিয়া অভিযান শেষ পর্যায়ে এ ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। ঐক্যবদ্ধ নিরাপত্তা রক্ষক হিসেবে লিবিয়া অভিযান আগামী ৩১ অক্টোবর শেষ করার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান- নিয়েছি।
৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন-জিবরিল : লিবিয়ায় একটি জাতীয় পরিষদ গঠনের উদ্দেশ্যে আগামী আট মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল। শনিবার জর্ডানে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে লিবিয়ার এনটিসি’র এ নেতা বলেন, এ সপ্তাহে মুয়াম্মার গাদ্দাফির মৃত্যুর পর লিবিয়ায় ছড়িয়ে থাকা অস্ত্র প্রত্যাহার, সি'তিশীলতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, লিবিয়ায় জাতীয় কংগ্রেস, পার্লামেন্টের মতো একটা কিছু গঠন করার জন্য সর্বোচ্চ আট মাসের মধ্যে একটি নির্বাচন হওয়া উচিত। ওই জাতীয় কংগ্রেসের দু’টি দায়িত্ব থাকবে- একটি সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন, যার ওপর আমরা গণভোট করব এবং পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন- একটি অন-র্বর্তী সরকার গঠন করা।
২০০ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ : মুয়াম্মার গাদ্দাফি লিবিয়া থেকে গোপনে অর্থ পাচার করে তা বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন। এর পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এর আগে যে সন্দেহ করা হয়েছিল এর পরিমাণ তার দ্বিগুণ। শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস এ খবর দেয়। 
নাম প্রকাশ না করে লিবিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, গত শরতে যুক্তরাষ্ট্রে লিবিয়া সরকারের ৩৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের খোঁজ পান মার্কিন কর্মকর্তারা। তারা তা সাথে সাথে জব্দ করে। ফ্রান্স, ইতালি, ইংল্যান্ড ও জার্মানি সরকার আরো ৩০ বিলিয়ন ডলার জব্দ করেছে। আগে ধারণা করা হয়েছিল গাদ্দাফি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন