বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০১৭

শোষণ মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন হুইলচেয়ারে বন্দি যে ‘দেশদ্রোহী’

মাওবাদী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক প্রতিবন্ধী অধ্যাপক ড. জি এন সাইবাবাসহ পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে ভারতের একটি আদালত। তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ ছিল। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও দেশ বিরোধী কাজে যুক্ত থেকে বরাবরই আলোচনায় ছিলেন এ অধ্যাপক। চাইতেন ভারতের ‘প্রকৃত স্বাধীনতা’। কাজ করতেন শোষণ মুক্ত সমাজ গড়তে।

১৯৬৭ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের আমলাপুরাম গ্রামে কৃষক পরিবারে জন্ম সাইবাবার। ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় ছিলেন তুখোড়। অভাবের সংসারে বেড়ে উঠলেও, বৃত্তির টাকা তার পড়াশোনা এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। শৈশব থেকেই বিভিন্ন বিপ্লবী বই পড়ে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আগ্রহ জন্মে। এর মাঝে হায়দরাবাদ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে কৃতিত্বের সঙ্গে মাস্টার্স শেষ করেন।
২০০৩ সালে দিল্লিতে চলে আসেন। যোগ দেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। শিক্ষার্থীদের সাহিত্য পড়াতেন জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী এ মেধাবী অধ্যাপক। প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠায় ভারতীয় গ্রামীণ জীবন ও বৈষম্য খুব কাছ থেকে দেখেছেন। এ দৃষ্টিভঙ্গিই তাকে বামপন্থায় উদ্বুদ্ধ করেছে। যুক্ত করেছে মাওবাদী কর্মকাণ্ডে।
সাইবাবা জাতীয় পর্যায়ে প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১৩ সালে। এসময় নিষিদ্ধ ঘোষিত মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হেম মিশ্র ও প্রাক্তন সাংবাদিক প্রশান্ত রাহি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে সাইবাবার নাম। ২০১৪ সালে তাকে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্র পুলিশ।
তার বিরুদ্ধে মাওবাদী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়। মামলা হয় মহারাষ্ট্রের আদালতে। নাগপুর সেন্ট্রাল জেলে ২ বছর কারাভোগের পরে, শারীরিক কারণে মুম্বাই হাইকোর্টের আদেশে জামিন পান তিনি। তবে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করে।
তার গ্রেফতারের পরে ভারতজুড়ে এর তীব্র প্রতিবাদ হয়। তার মুক্তির দাবিতে পথে নামে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। প্রতিবাদ হয় অনলাইনেও। প্রতিবাদে সোচ্চার হন বুকারজয়ী ভারতীয় লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট অরুন্ধতী রায়। এ কারণে রাষ্ট্রীয় রোষানলে পড়তে হয় তাকে।
মূলত গ্রামীণ পর্যায়ে মাওবাদী সংগঠন বিস্তারের কাজ করতেন সাইবাবা। সেসব সংগঠনের সঙ্গে শহরের কর্মীদের যোগাযোগ ঘটিয়ে দিতেন। হুইল চেয়ারে বন্দি জীবন কাটিয়েও এসব সংগঠনকে বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা দিতেন।
সাইবাবার মুক্তির দাবিতে হয়েছে সমাবেশসাইবাবার মুক্তির দাবিতে হয়েছে সমাবেশ
কাজ করেছেন কাশ্মীর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের মানুষের স্বাধীনতার জন্য। দলিত ও আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে এসব কাজে পাড়ি দিয়েছেন ২ লাখ কিলোমিটারের বেশি পথ। তার স্ত্রী বসন্তও নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত সতিনাথন আদালতের শুনানি চলাকালে জানান, দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ভাবে মাওবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাইবাবা। ২০১২ সালে উড়িষ্যা আর অন্ধ্রপ্রদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত মাওবাদী সংগঠনের সম্মেলনেও অংশ নিয়েছেন তিনি। তার মতে, সহযোগীদের নিয়ে সাইবাবা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) সাইবাবা, হেম, রাহিসহ মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন বিচারক সুরাকান্ত সিন্ধে। এ রায়ের বিরুদ্ধে মুম্বাই হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন সাইবাবার আইনজীবী।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্তান টাইমস 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন