শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

ভারত কি কাশ্মীর হারাচ্ছে?

১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ ভাগের পর থেকে প্রায় ছয় দশক ধরে সহিংসতা-সংঘাতে কাশ্মীর জর্জরিত হয়ে আসছে। তবে পাকিস্তান-সমর্থিত কাশ্মীরি বিদ্রোহ সবচেয়ে শক্তিশালী পর্যায়ে উন্নীত হলে বিশ শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকে এ সহিংসতা উত্তুঙ্গে পৌঁছে। অবশ্য শূন্য দশকের শুরুর দিক থেকে সহিংসতা অনেকটাই কমে এসেছে এবং তখন থেকেই আলোচ্য ইস্যুটির একটি শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির আশা সঞ্চার হয় মানুষের মনে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাধানের এ আশাবাদ এখন ক্রমেই ম্রিয়মাণ হচ্ছে। কাশ্মীরে পুনরায় সহিংসতা-সংঘাত দেখা দেয়ায় বিদ্রোহের প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়ছে। সাধারণ কাশ্মীরি জনগণের সমর্থন যা-ই হোক, মনে হচ্ছে— ভারত হারছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীর নীতিতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন না আনলে এ প্রবণতা যে অব্যাহত থাকবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
সাতচল্লিশের দেশ ভাগের পরে আগের স্বাধীন প্রিন্সলি স্টেট কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সহায়তায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে কাশ্মীরকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে একটি লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) টানা হয়। অবশ্য কিছু কাশ্মীরির মধ্যে রাজনৈতিক স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাও ছিল। আশির দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের সহায়তায় কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে এমন আকাঙ্ক্ষা সশস্ত্র বিদ্রোহের রূপ নেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় অর্ধমিলিয়নেরও বেশি সৈন্য নিয়োগ করে কাশ্মীরে ভারত সরকার সশস্ত্র বিদ্রোহীদের ওপর ব্যাপক হামলা চালায়। এতে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়।
নতুন শতাব্দীর প্রথম দিকে কাশ্মীর ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধানের সংলাপ প্রক্রিয়ার প্রতি হাজার হাজার মানুষের আস্থা অর্জন হওয়ায় আশির দশক ও নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে সহিংসতা অনেকটাই কমে আসে। ফলে পরের দশকে তাত্পর্যপূর্ণভাবে বিদ্রোহ-সংক্রান্ত হতাহতের সংখ্যা ২০০১ সালে ৪ হাজার ৫০৭ থেকে ২০০৯ সালে ৩৭৭ জনে হ্রাস পায়। এর পেছনে প্রধান অবদান রেখেছে তখনকার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী কর্তৃক একটি সংলাপ প্রক্রিয়ার অবতারণা। এ সংলাপ প্রক্রিয়ার সূত্র ধরে ভারত-পাকিস্তান ১৯৯৯ সালে ঐতিহাসিক লাহোর ঘোষণায় পৌঁছতে সক্ষম হয়, যেখানে কাশ্মীর ইস্যুর শান্তিপূর্ণ মীমাংসায় উভয় দেশই প্রতিশ্রুতি দেয়। বিচ্ছিন্নতাবাদী হুররিয়ত রাজনৈতিক দল এমনকি জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল মুজাহিদীনকে আলোচনার টেবিলে আনতে বাজপেয়ি সরকারের উপর্যুপরি প্রচেষ্টা একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রূপ নেয়। বাজপেয়ি সরকার কর্তৃক দেয়া সংবিধানের মধ্যে থেকে কাশ্মীরের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের অপশনটি ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ মীমাংসার আশাবাদকে আরো বেগবান করে। এই রাজনৈতিক রূপান্তর পরবর্তী বছরগুলোয় কাশ্মীরে আপেক্ষিকভাবে একটি শান্তির ও স্বস্তির আবহ তৈরি করে এবং সেখানে পর্যটন ও ব্যবসার বিকাশ ঘটে।
তবে ২০১০ সালে এক গণঅভ্যুত্থান এবং এর বিপরীতে ভারতের বর্বর প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন রূপান্তরের সংকেত দেয়। পরবর্তী বছরগুলোয় ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে কাশ্মীরি তরুণদের মধ্যে নতুন উত্থাল তরঙ্গ দেখা দেয় এবং তারা নিজেদের হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। বলা বাহুল্য, এসব তরুণের অধিকাংশই শিক্ষিত এবং তারা সবাই কাশ্মীরের সচ্ছল পরিবার থেকে আসা। এসব তরুণ, যাদের বেশির ভাগই হিজবুল মুজাহিদীনে যোগ দিচ্ছে, তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল সমর্থন পাচ্ছে এবং অধিক হারে তরুণদের আকর্ষণ করতে সমর্থ হচ্ছে। এই নতুন বিদ্রোহের মুখচ্ছবিতে পরিণত হয়েছেন বোরহান মুজাফফর ওয়ানি (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিদ্ধহস্ত এক তরুণ যোদ্ধা), যিনি প্রকাশ্যে অটোমেটিক অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেন এবং ওই ছবিতে সমর্থনমূলক বিপুল কমেন্ট পড়ে। উপরন্তু তিনি কাশ্মীরি তরুণদের বিদ্রোহে অংশ নিতে এবং ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অডিও-ভিডিও বার্তা দিয়ে আমন্ত্রণ জানায়। ২০১১ সালে দক্ষিণ কাশ্মীরে বন্দুকযুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যরা এক বিদ্রোহীকে কর্ডন করে রাখলে স্থানীয়রা তাকে কিছুটা সাহায্য করতে সৈন্যদের দিকে ইট-পাথর ছুড়ে মারে। এর পর থেকে এটা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে যেকোনো অজুহাতে ১৪৪ ধারা জারির সাধারণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয়দের এসব বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে দক্ষিণ কাশ্মীরের পামপোরে এক এনকাউন্টার সাইটের দিকে অগ্রসর হতে দেখা যায় এবং সেখানে আবারো জনতা নিরাপত্তাকর্মীদের দিকে পাথর ছুড়ে মারে।
২০১৫ সালের এপ্রিলে জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার এক ঊর্ধ্বতন কমান্ডার আবু কাশিম খুন হন, যাকে ২০১৩ সালের হাইডারপোরা অ্যাম্বুশসহ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর কয়েকটি হামলার জন্য দায়ী করা হয়। কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে, তার দাফনে বিদ্রোহীরা এসেছিল এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গুলিবর্ষণ করে। শুধু তা-ই নয়, নিজেদের গ্রামে তার মরদেহ সমাধিস্থ করতে খানদেপরা ও বোগাম গ্রামের লোকজন পরস্পরের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয়। পরে নভেম্বরে ভারতশাসিত কাশ্মীরের কোপওয়ারা অঞ্চলের মানিবাগ ফরেস্টে বিদ্রোহী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সশস্ত্র যুদ্ধ বাধে এবং তা ২৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তাতে দুজন ভারতীয় সেনা নিহত হয় এবং আরো ছয়জন হয় আহত। শ্রীনগরভিত্তিক ১৫টি সেনাব্যুহের দায়িত্বে নিয়োজিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর জিওসি বর্ণনা করেন, স্থানীয় এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে বিদ্রোহীরা রসদ পায়। অন্য এক ঘটনায় শারিক আহমদ ভাটের দাফনে প্রায় ২৫ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। তিনি ছিলেন হিজবুল মুজাহিদীনের একজন সদস্য এবং তাকে ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি পালওয়ামা জেলায় হত্যা করা হয়। তার দাফনেও বিদ্রোহীদের একে ৪৭ দিয়ে গুলি ছুড়ে স্যালুট জানাতে দেখা যায়। বিদ্রোহ-সংক্রান্ত ঘটনায় মানুষের ক্রমবর্ধিষ্ণু অংশগ্রহণ প্রমাণ দেয় যে, বিদ্রোহের প্রতি কাশ্মীরের জনগণের সমর্থন আছে এবং এটি ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর এস্টাবলিশমেন্টের জন্য অশনিসংকেত। নববর্ধিষ্ণু সমর্থন এতটাই যে, এমনকি কাশ্মীর হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিয়া আবদুল কাইয়ুম বিদ্রোহের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সম্প্রতি বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘শেষ জবাব হিসেবে আমরা বন্দুক ব্যবহার করতে পারি এবং জাতিসংঘ চার্টার অনুযায়ী তা কোনো অপরাধ নয়।’

২০১৪ সালের নভেম্বরে আমি কাশ্মীর সফরে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনায় প্রকাশ হয়েছে যে, আলোচ্য অঞ্চলে সহিংসতা অব্যাহত থাকার কারণ ভারত সরকারের নীতি। অনেকের মত হলো, ভারত কাশ্মীরের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে সত্ নয়। একজন কাশ্মীরি নাগরিক বলেন, ‘ভারত আমাদের অস্ত্র ছেড়ে আলোচনার টেবিলে আসতে বলেছে। আমরা তা-ই করেছি। বিনিময়ে কী পেয়েছি? কিছুই না।’ অন্য একজন বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীরের অবস্থা খারাপ হলে ভারত বারবার বলেছে, সমস্যা সমাধানে সংলাপ প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর সহিংসতা হবে না। এখন ভারত সেখানে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। তারা বলে, সেখানে আদৌ কোনো রাজনৈতিক সমস্যা নেই।’
প্রধান টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে লোকজন সাধারণত ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০ সালের গণঅভ্যুত্থানের কথা বলে। ওসব অভ্যুত্থানে হাজার হাজার তরুণকে হত্যার কারণে ভারতের প্রতি সাধারণ মানুষের বিতৃষ্ণা তীব্রতর হয়। ভারত নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের গুলিবর্ষণে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দিয়ে এবং সরকার-নিযুক্ত প্যানেলের সুপারিশ আমলে নিয়ে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারত। তা তো করলই না, বরং এর পরিবর্তে সরকার সুপারিশগুলো অবজ্ঞা করার পথ বেছে নিল এবং অব্যাহতভাবে বলতে লাগল, কাশ্মীর একটি অভ্যন্তরীণ ইস্যু। সাইদ আলি শাহ গিলানি, শাবির শাহ ও মিরওয়াজ ওমর ফারুকের মতো বিপুলভাবে জনপ্রিয় হুররিয়ত নেতাদের তাত্ক্ষণিক ও উপর্যুপরি আটকাবস্থায় রেখে কাশ্মীরিদের রাজনৈতিক পরিসর সংকুচিত করায় ভারতীয় নীতি স্থানীয় জনগণের কাছে রাষ্ট্রের সুনাম আরো অধিকতর ক্ষুণ্ন করেছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ওআইসির বার্ষিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে সংগঠনটি গিলানিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত চার সপ্তাহের জন্য তার পাসপোর্ট বাতিল করেছিল এই ভেবে যে, তিনি কাশ্মীর ইস্যু তুলতে পারেন।
মাসরাত আলমের মতো কাশ্মীরি রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে ভারত পৌনঃপুনিকভাবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কথিত ‘আইনহীন আইন’ জননিরাপত্তা আইন ব্যবহার করেছে। আলোচ্য আইনের অধীনে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তাকে ৩১ বারের মতো গ্রেফতার করা হয়। শেষ আটকাদেশ আসে একই আইনের অধীনে করা আগের মামলা থেকে তাকে মুক্তি দিতে হাইকোর্টের আদেশ আসার পর পরই। খোদ ২০১৫ সালেই কাশ্মীরে ভারতবিরোধী বিক্ষোভের কারণে ৬৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তার মধ্যে ২৩১ জন ছাত্র ও ১৭ জন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর। কাশ্মীর ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের অফিস গুঁড়িয়ে দেয়া, ছাত্ররাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, ইন্টারনেট ও মোবাইল এসএমএস সেবা অব্যাহত বন্ধ বিশেষভাবে কাশ্মীরি তরুণদের বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।
কাশ্মীরিদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালানোর ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার আরো বেশি সক্রিয়। বাজপেয়ি সরকার যেখানে সংলাপের যেকোনো সুযোগ স্বাগত জানাত, এমনকি বিচ্ছিন্নতাবাদী হুররিয়ত নেতাকেও পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার অনুমতি দিত, সেখানে বর্তমানে ক্ষমতাসীন মোদি সরকার ভিন্ন অ্যাপ্রোচ নিয়েছে। মোদি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে হুররিয়ত নেতাদের নিষিদ্ধ করেছেন এবং এ নিষেধাজ্ঞাকে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফলে পাকিস্তানের দিক থেকে এই পূর্বশর্ত প্রত্যাখ্যানের পর উভয় দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠক বাতিল হয়েছে। অনেক কাশ্মীরি মনে করেন, আলোচ্য পূর্বশর্তের ওপর ভারতের অনমীয়তা কাশ্মীর ইস্যুকেন্দ্রিক বিবাদে তাদের কণ্ঠরোধ বৈ আর কিছু নয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক কঠোরভাবে বিরোধিতার কারণে আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্টের (এএফএসপিএ) মতো কঠোর আইন (যা সশস্ত্র বাহিনীকে কাশ্মীরে যেকোনো হামলা চালানোর দায় থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি দেয়) বাতিলে বিভিন্ন নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার গ্রুপের অব্যাহত আহ্বান নিষ্প্রভ হয়ে গেছে।
কাশ্মীরে শান্তি আনতে এমনতরো নিন্দনীয় নীতিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য কাশ্মীরের জনগণকে বেদনাহত করেছে। তাদের মধ্যে বিতৃষ্ণার উদ্রেক করেছে। যদিও মনে হতে পারে আলোচ্য অঞ্চলে ভারতীয় কর্তৃত্ব জোরদার হচ্ছে, তথাপি আমি বলব নিরাপত্তা স্থিতাবস্থায় রেখে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নে নজর দেয়ার ভারতীয় নীতি কাশ্মীরে সমর্থন হারাচ্ছে। এর জাজ্বল্য দৃষ্টান্ত হলো, ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মোদির কাশ্মীর সফর এবং আলোচ্য রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১২ বিলিয়ন ডলার প্যাকেজ ঘোষণার পরদিনই সেখানে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের হাতে গওহর নাজির দর নামে ২২ বছর বয়সী এক তরুণ খুন হয়। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ চলে। এমনকি মোদি যেখানে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেখানেও বিপুলসংখ্যক আন্দোলনকারী শোভাযাত্রা করে বিক্ষোভ জানায়।
এমন এক সময় যাচ্ছে, যখন বিশ্বব্যাপী আইএসের বিস্তার ঘটছে। আইএস কাশ্মীরেও তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে, যদিও তাদের পক্ষে কোনো লোক পাওয়া যায়নি। তবে বিদ্রোহীদের জানাজা-দাফনে অংশগ্রহণকারী বিপুল ক্রোধান্বিত ও উত্তেজিত জনগণের এখনো ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে তাদের প্রচারণার শিকার হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কাশ্মীরিদের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতের দীর্ঘ যাত্রার পরিণতি টানতে ভারতকে অবশ্যই বর্তমান নীতি থেকে সরে আসতে হবে এবং কাশ্মীরিদের দিতে হবে যথেষ্ট রাজনৈতিক পরিসর। অধিকন্তু রহিত করতে হবে সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা আইন) ও জননিরাপত্তা আইনের মতো কঠোর বিধান। উপরন্তু, মানবাধিকার লঙ্ঘনে সেনাদের দিতে হবে উপযুক্ত শাস্তি। চূড়ান্তভাবে কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ভারতের কাশ্মীরিদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে একটি টেকসই সমাধানে পৌঁছতে পাকিস্তানেরও আন্তরিকভাবে কাজ করা উচিত। কিন্তু যতক্ষণ ভারত কী ক্ষতি করেছে, তা উপলব্ধি না করে ততক্ষণ কাশ্মীরের রাজপথ অনাগত শহীদের সমর্থনে সবসময় মিছিলে সরগরম থাকবে, যেমনটা আবু কাশিমের দাফন পর্বের সময় তারা করেছিল।

লেখক: কাশ্মীর বংশোদ্ভূত জার্মানিতে ক্রমেশন বায়োলজির পিএইচডি গবেষক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন