বাংলাদেশ ও ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছে না বলে একটি নিবন্ধ ছেপেছে ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকা। ১৮ মে প্রকাশিত ‘লুজিং দ্য নেবারহুড’ শিরোনামের নিবন্ধটি লিখেছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিটিকসের সহযোগী অধ্যাপক হ্যাপিমন জ্যাকব। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি যেহেতু ঐতিহাসিক রেষারেষির কারণে নানা ধরনের জটিলতায় নিমজ্জিত, সেহেতু ওই প্রতিবেশীকে বাদ দিয়েই অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কের এক নির্মোহ পর্যালোচনায় তিনি দেখিয়েছেন যে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছে না। সে প্রসঙ্গ একটু পরে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কটা যে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভালো, সেটি পর্যবেক্ষক মাত্রই স্বীকার করেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কথায় গোটা দক্ষিণ এশিয়ার কাছেই ভারত-বাংলাদেশের সুসম্পর্কের ছবিটা একটা উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাভালরি মেমোরিয়াল লেকচারে তিনি এই মন্তব্য করেন। দিল্লিতে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার তারিক করিম গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরে হাফিংটন পোস্ট-এ লেখেন, ‘গত ছয় বছরে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে নাটকীয় রূপান্তর ঘটেছে। দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা দৃষ্টান্তমূলক এবং কখনোই তা এতটা ভালো ছিল না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে।’ স্পষ্টতই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে বাংলাদেশের সহযোগিতার বিষয়টি ছিল ভারতের অগ্রাধিকারের শীর্ষে। উভয় দেশের মধ্যকার অভিন্ন স্থল, নৌ ও সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়গুলোও নিঃসন্দেহে এই সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করায় ভূমিকা রেখেছে। ভারতকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সুবিধাও দিয়েছে বাংলাদেশ। ট্রানজিট-সুবিধার পাশাপাশি সব ধরনের যোগাযোগ বেড়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানির একাধিক চুক্তি হয়েছে। ভারতের বিনিয়োগকারীদের কিছু খাত উন্মুক্ত করার পাশাপাশি তাঁদের জন্য আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
অভিন্ন নদীগুলোর পানি ভাগাভাগি প্রশ্নে অবশ্য উভয় দেশের শীর্ষ পর্যায়ে কিছুটা হতাশা রয়েই গেছে। তিস্তা নদীর পানি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির অনেক চেষ্টাও পশ্চিমবঙ্গের ভোটের রাজনীতির কারণে ব্যর্থ হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী বৈতরণি ভালোভাবে পার হওয়ায় উভয় দেশের কূটনীতিকেরা আশাবাদী যে তিনি এখন কিছুটা নমনীয় হলেও হতে পারেন। তবে, তার বিপরীতে ভারতের আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পকে ঘিরে যে নতুন উদ্বেগের জন্ম হয়েছে, সে কথাও এখানে বিস্মৃত হওয়া চলে না।
দুই দেশের সম্পর্ক কতটা গভীর তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরা যায়। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, সে দেশে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন জাতীয়তার যত পর্যটক আসেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় এক যুগ ধরে দ্বিতীয় বা তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানটি হচ্ছে বাংলাদেশের। যেমন—২০১৩ সালে ভারতে প্রায় ১১ লাখ ভ্রমণকারী এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং তারপর ৮ লাখ যুক্তরাজ্য থেকে। আর বাংলাদেশ থেকে প্রায় সোয়া ৫ লাখ। সেবার বাংলাদেশিরা তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও পরের বছর ২০১৪ তে তারা দ্বিতীয় অবস্থানটি দখল করে নেয়। সেবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসেন ১১ লাখের বেশি পর্যটক আর বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ। আর চিকিৎসার প্রয়োজনে তো অহরহই আমরা ভারত যাচ্ছি এবং এ খাতে বাংলাদেশিরা কতটা খরচ করছেন, তার কোনো নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং আরব দেশগুলো থেকে ভারত বিপুল পরিমাণে প্রবাসী আয় পেয়ে থাকে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে ভারত বাংলাদেশ থেকেও বিপুল পরিমাণে প্রবাসী আয় পেয়ে থাকে (৪৪৬ কোটি ডলার)। এর বিপরীতে ভারত থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স (১১ কোটি ৪০ লাখ ডলার) আসার কোনো তুলনাই চলে না (সূত্র: Bilateral Remittance Data 2015, World Bank)। অথচ, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের রাজনীতিকদের সবচেয়ে প্রিয় এবং বড় অভিযোগ হচ্ছে, সে দেশে অর্থনৈতিক অভিবাসনের।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের নতুন মুখ্যমন্ত্রী, ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির নেতা সর্বানন্দ সানোয়াল ২৪ মে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বলেছেন যে তিনি তাঁর রাজ্যকে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’, দুর্নীতি ও দূষণমুক্ত করবেন (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২৪ মে, ২০১৬)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ এবং ভারতের যে ১৪টি রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায়, সেই ১৪ জন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বানন্দ সানোয়াল এসব কথা বলেন (এনডিটিভি, ২৪ মে, ২০১৬)। নির্বাচনের আগে প্রচারাভিযানেও আসাম রাজ্যকে কথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’মুক্ত করা ছিল তাঁর অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। ভারতের ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময়ও একই ধরনের প্রচারণা আমরা লক্ষ করেছিলাম। তখন বিজেপির হয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে থাকা নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশি সেটেলারদের জায়গা করে দিতে আসামে গন্ডার ধ্বংস করার চক্রান্ত হচ্ছে’ (সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, মার্চ ৩১, ২০১৪)।
বিজেপি অনেক দিন ধরেই বলে আসছে যে ভারতে দুই কোটি বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী আছে। ২০০৩ সালের কথা। লন্ডনের ইন্ডিয়া হাউসে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদভানির এক সংবাদ সম্মেলনে আমি তাঁকে প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়ে জানতে চেয়েছিলাম যে তাঁদের পরিসংখ্যানের উৎস কী? তিনি তখন স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে ওই সংখ্যাটি অনেক দিন ধরেই শোনা কথা হিসেবে চালু রয়েছে। ভারত সরকারের পরিসংখ্যান (সূত্র: সেন্সাস ইন্ডিয়া ডট গভ ডট ইন) বলছে, ২০০১ সালে সে দেশে মোট অভিবাসী ছিল ৫১ লাখ, যার মধ্যে বাংলাদেশি ৩০ লাখ, পাকিস্তানি ৯ লাখ ও নেপালি ৫ লাখ। ভারতীয় আদমশুমারির ওই প্রতিবেদন বলছে, এসব অভিবাসীর দুই-তৃতীয়াংশ কুড়ি বছরের বেশি আগে সম্ভবত বাংলাদেশের জন্মের সময় বা ভারত বিভাজনের সময়ে দেশান্তরিত হয়েছে।
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বক্তৃতা এক কথা আর সরকার পরিচালনার বাস্তবতা আরেক কথা। সুতরাং, ভারতের সাধারণ নির্বাচনে তাক লাগানো সাফল্যের পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সময়ে মোদি তাঁর সব প্রতিবেশী দেশের নেতাদের পাশে চাইলেন—বাদ গেল না চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানও। শপথ নিয়েই ঘোষণা করলেন তাঁর পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হবে নেবারস ফার্স্ট বা প্রতিবেশীর অগ্রাধিকার। বছর খানেক পর ঢাকায় এসে জনবক্তৃতায় বললেন, ‘আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। আমরা তোমাদের নিয়ে চলব।’
ফিরে আসি অধ্যাপক জ্যাকবের ভাষায় ‘প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের দূরত্ব বাড়ার’ মূল্যায়নে। তিনি লিখেছেন, ভারতের নেপাল কূটনীতি লক্ষণীয়ভাবে মার খেয়েছে। এ মাসের গোড়াতেই নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি হঠাৎ করেই তাঁর পূর্বনির্ধারিত দিল্লি সফর বাতিল করেন এবং ভারতে নিযুক্ত হাইকমিশনারকে প্রত্যাহার করে নেন। একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী মোদিও লুম্বিনিতে তাঁর সফর বাতিল করেন। নেপালের প্রতি অনুসৃত ভারতীয় কূটনীতিকে তিনি পেশিশক্তি দেখানোর (মাসকুলার ট্যাকটিস) কৌশল হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, নিরাপত্তার অজুহাত নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলানো সম্পর্ককে বিষিয়ে তুলেছে। এর অন্যতম একটি কারণ ভারতের বন্ধু নয়—এমন শক্তির সঙ্গে নেপালের ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার চেষ্টাকে কৌশলগত কারণে দিল্লির মেনে নিতে না পারা। নেপালে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান রচনাকে কেন্দ্র করে মধেশি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন নিয়ে ভারত যে ভূমিকা গ্রহণ করে, তা নেপালে ভারতবিরোধী ক্ষোভ উসকে দিয়েছে বলেই সাধারণভাবে মনে করা হয়। নেপালের সীমান্তে অঘোষিত অবরোধ আরোপ এবং জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টির কারণে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির পুনর্গঠনের জন্য বৈদেশিক ত্রাণ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিবও প্রকাশ্য বিবৃতি দেন।
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে অধ্যাপক জ্যাকব তামিল প্রশ্নে ঐতিহাসিক ঘটনাক্রম যে দূরত্ব তৈরি করেছিল, তার উল্লেখ করে গত নির্বাচনে ভারতের নাক গলানোকে একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন। ওই নির্বাচনে মাইথ্রিপালা সিরিসেনার জোট জয়লাভ করে। কিন্তু নির্বাচনের আগে তখনকার প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে কলম্বোয় অবস্থানরত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং) স্টেশন চিফকে প্রত্যাহার করে নিতে বলেন জানিয়ে অধ্যাপক জ্যাকব লিখেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি বিরোধী জোটকে জেতানোর জন্য কাজ করছেন। তবে, নির্বাচনের পর শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে ঘোষণা করেছেন যে তাঁর সরকার যেমন ভারতপন্থী নয়, তেমন চীনাপন্থীও নয়।
মালদ্বীপেও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের নাক গলানোর অভিযোগ ওঠে প্রেসিডেন্ট নাশিদের ক্ষমতাচ্যুতির সময় থেকে। মালদ্বীপের ক্ষেত্রেও ভারতের অন্যতম প্রধান উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর করার উদ্যোগ। তবে, অধ্যাপক জ্যাকব লিখেছেন, মালদ্বীপে আপাতত ভারতীয় কূটনীতিতে কিছুটা নীরবতা লক্ষণীয়।
হ্যাপিমন জ্যাকব লিখেছেন, প্রতিবেশীদের রাজনীতি ও কূটনীতিতে ভারতের কোনো স্বার্থ নেই, বিষয়টি এমন নয়। তবে, তার মানে এই নয় যে তাদের ভারতের পক্ষে আনার জন্য মাস্তানি (বুলি) করতে হবে। তাঁর মতে, এসব দেশে নিয়োজিত ভারতীয় কূটনীতিকদের নিজেদের ভাইসরয় ভাবা বন্ধ করতে হবে।
ভারতের ক্ষুদ্র প্রতিবেশীরা চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিকে কাজে লাগাতে চাইবে, এটি মেনে নিয়ে কূটনীতিতে সৃজনশীলতা এবং ধৈর্য দেখানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন যে চীনকে কোনো সুযোগ না দেওয়ার ক্ষমতা ভারতের নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রতিশ্রুতি উপেক্ষা করে প্রতিবেশীদের জন্য ভারতের ঋণ এবং সাহায্যের পরিমাণ কমানোর বিষয়টিকে আত্মঘাতী বলে অভিহিত করেন। তিনি এ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট উদ্ধৃত করেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মালদ্বীপ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের মতো নিকট প্রতিবেশী দেশগুলোতে সাহায্য এবং ঋণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো হয়েছে। কমিটি মনে করে, এ ক্ষেত্রে সাহায্যের পরিমাণ আমাদের নিকটতম এবং অন্যান্য প্রতিবেশীর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কেরই প্রতিফলন।’
ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে (বিশেষত প্রকল্প ঋণ) ভারতের নানা ধরনের শর্ত আরোপ এবং আর্থিক বিষয়ে উদারতার বদলে দর-কষাকষির কঠোরতার কথা আমরা সবাই জানি। ট্রানজিটের ট্যারিফ নির্ধারণ তার একটি উদাহরণ হতে পারে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে দোষ যতটা না প্রতিবেশীর, তার চেয়ে বেশি আমাদের। দর-কষাকষির যোগ্যতা ও সামর্থ্যের ঘাটতি, নিজেদের প্রতি আস্থাহীনতা এবং রাজনৈতিক বিবেচনা এ ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থানকে দুর্বলতায় আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এরই একটি দৃষ্টান্ত হলো দিল্লিতে বাংলাদেশের বর্তমান হাইকমিশনারের আগাম মন্তব্য যে তাঁর দেশ ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ’ সমস্যার সমাধানে কাজ করতে প্রস্তুত। অথচ, সহজেই আমরা অন্যান্য আঞ্চলিক জোটের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারি এবং সেখান থেকে অর্জিত জ্ঞান ও ধারণার পক্ষে আমাদের যুক্তিকে শাণিত করতে পারি। দক্ষিণ এশিয়ায় যে সহযোগিতা সংস্থা বা জোট গড়া হয়েছে, সেটা অকার্যকর হয়েছে ভারত-পাকিস্তানের টানাপোড়েনে। কিন্তু, তারপরও মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত যে ‘সবকা সাথ সমৃদ্ধি’র আওয়াজ তুলেছে, সেই সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন ইউরোপের মতো অবাধ চলাচলের অধিকার। এবং অবশ্যই অর্থনৈতিক অভিবাসনের অধিকার। কাঁটাতারের বেড়া এবং লেজার নিয়ন্ত্রিত দেয়াল তুলে মানুষের অবাধ চলাচল বাধাগ্রস্ত করে যৌথ সমৃদ্ধি হয় না।
কামাল আহমেদ: সাংবাদিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন