স্বাস্থ্যখাতে প্রাথমিক পর্যায়ে অগ্রগতি আসলেও প্রযুক্তি এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী দেশে যাচ্ছেন বাংলাদেশীরা। এদের একটি বড় অংশই চিকিৎসা নিতে ভারতে যাচ্ছেন। বিনিয়োগ বোর্ডের হিসাবে প্রতিবছর শুধু চিকিৎসাবাবদ ভারতে চলে যাচ্ছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এভাবে ২০১৫ থেকে ৩০ সাল নাগাদ ১৫ বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার হবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।এই অবস্থার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ গড়ার প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবকে বড় কারণ বলে মনে করেন ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস’র বাংলাদেশী অধ্যাপক ডা: রাকিবুল আনোয়ার।
ঢাকার আরএ হসপিটাল এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের প্রধান ডা: রাকিবুল নিজে একজন কোলোরেক্টাল (কোলন ক্যান্সার) সার্জন ।‘মেডিকেলগেজ’ নামের একটি মেডিকেল ব্লগে দেশে স্বাস্থ্যখাতে বিশেষজ্ঞহীনতা এবং রোগীদের বিদেশগামীতা নিয়ে লিখেছেন ডা: রাকিবুল।
তার মতে: জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের অর্জন চোখে পড়ার মতো। তবে পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রতি হাজার রোগীর জন্য চিকিৎসক সংখ্যা শূন্য দশমিক ৪ জন। তুলনামূলকভাবে ভারতে প্রতি হাজার রোগীর জন্য চিকিৎসক আছেন শূন্য দশমিক ৭ জন।
‘দেশে চিকিৎসকের এই নগণ্য সংখ্যা সত্যিই আশঙ্কাজনক। তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাস্থ্যখাতে বিশেষজ্ঞ তৈরির সুযোগের অভাব। যার কারণে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে।’
ডা: রকিবুল বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমান বাস্তবতায় রোগের ধরণ পরিবর্তনের এই সময়ে একটি সমন্বিত সার্জিক্যাল সেবা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক অর্জনগুলোর পাশাপাশি নতুন চ্যালেঞ্জের দিকটি সামনে এনে ডা: রাকিবুল লিখেছেন: ২০১৫ সালে জাতিসংঘ প্রণীত ১৭টি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৩ নম্বরে আছে ‘সুস্বাস্থ্য ও ভালো থাকা’। সমন্বিত, সুব্যবস্থাপনা এবং পরিণত একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে সহজেই এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে।বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে চ্যালেঞ্জের দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০ শতকে বিশ্বে স্বাস্থ্যখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে কয়েকটি সাধারণ কারণে বাংলাদেশ এক্ষেত্রে এখনো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি।
বর্তমানে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক হৃদরোগ, ডায়াবেটিক, ক্যান্সার, আঘাতজনিত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, ধাত্রী বিদ্যা ও স্ত্রীরোগ এবং অ্যানেস্থেটিক বিশেষজ্ঞ দরকার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গড়তে বিনিয়োগ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং পাঠক্রম অনুযায়ী হাতে-কলমে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তা না করতে পারলে স্বল্প-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতায় নেতিবাচক প্রবাহ থামানো সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ পেয়েছে এই কোলন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের লেখায়।
নেতিবাচক পরিস্থিতির একটি ভবিষ্যৎ চিত্র তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, এখনই ব্যবস্থা না নেয়া হলে ২০১৫-২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের বিনিয়োগ বোর্ডের বর্তমান হিসাবে চিকিৎসাবাবদ প্রতিবছর ১৯ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা ভারতে খরচ করছেন বাংলাদেশীরা, যা কিনা ২০১১ সালে পদ্মাসেতুর প্রস্তাবিত ব্যয়ের সমান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন