মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০১৬

৪ বছরে ৫শ কোটি টাকা খরচ করেও পানি আসেনি গড়াই নদীতে

পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাকা পানিতেই যায়! এরকম অসংখ্য উদাহরণের সাথে এবার যুক্ত হয়েছে গড়াই নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প। নদী খননের নামে সাড়ে ৫’শ কোটি টাকা খরচ হলেও নদীতে কোন পানি প্রবাহ নেই। কারণ, গত চার বছরে কাজের চেয়ে দুর্নীতিই বেশি হয়েছে এই প্রকল্পে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিলো গড়াই নদী খননের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে মিঠা পানির প্রবাহ বাড়িয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লবনাক্ততা কমানো।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অনুযায়ী কথা ছিলো শুষ্ক মৌসুমে গড়াই নদীতে প্রবাহিত হবে অথৈ পানি। কিন্তু গড়াইয়ের যতদুর চোখ যায় ততদূর দেখা যায় তপ্ত বালুচর। কোথাও কোথাও নালায় বা ডোবায় জমে আছে সামান্য পানি। গড়াইয়ের বুক আগের মত শুষ্ক থাকলেও কপাল খুলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের।

গত ৪ বছরে পদ্মা থেকে কুষ্টিয়ার মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে বয়ে যাওয়া নদী খননে প্রায় সাড়ে ৫’শ কোটি টাকা খরচ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কাজ কতোটা হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও ঠিকঠাক অনিয়ম যে হয়েছে তা নিঃসন্দেহে!

গড়াই নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য শুরুতেই ২৪০ কোটি টাকায় কেনা হয় ২ সেট ড্রেজারসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি। চুক্তি অনুযায়ী মডেল ও মাপ ঠিক না হওয়ায় ঠিকাদারের কাছে থেকে ১ কোটি টাকা কেটে রাখার প্রস্তাব করে এমিকেবল সেটেলমেন্ট কমিটি। কিন্তু এই প্রস্তাব বাস্তবসম্মত না হওয়ায় গঠিত হয় উচ্চতর কমিটি। সেই কমিটির ৩ সদস্য সেটেলমেন্ট প্রস্তাব সমর্থন করলেও দ্বিমত পোষণ করেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নকশা সার্কেল-২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী তোফায়েল হোসেন। যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে তিনি ১০ কোটি টাকা কেটে রাখার সুপারিশ করেন। বিষয়টির মিমাংসা না হলেও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় নির্দেশে মাত্র ১ কোটি টাকা মূল্য সমন্বয় করা হয়।

বছর না ঘুরতেই ড্রেজারগুলোতে একের পর এক সমস্যা দেখা দেয়। খুলে যায় অনিয়মের সব জানালা। কয়েকগুন বেশি দামে খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হলেও এগুলোর অধিকাংশ ছিলো নি¤œমানের। ফলাফলে- নষ্ট থাকে ড্রেজার, গচ্চা যায় কোটি কোটি টাকা।

গত বছর ব্যাংক গ্যারান্টি না থাকলেও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঠিকাদারকে ২৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থ বছরে ২ টি ট্রেজার অধিকাংশ সময়েই ব্যবহার করা হয়নি। কখনো যান্ত্রিক ত্রুটি কখনো আবার তেল নেই, জনবল নেই। কখনো আবার খনন কাজ বন্ধ ছিল্ োবিনা কারণেই।

সময় পেরিয়ে গেলেও এ বছর গড়াই নদীর খনন কাজ হয়েছে মাত্র ২৮ ভাগ। এ পর্যন্ত যতটুকুই খনন করা হয়েছে তার সব বালুই রাখা হয়েছে নদীল পাড়েই। আগের ৩ বছরের মত বর্ষা আসেলে এই বালু ধুঁয়ে যাবে নদীতেই।

সরকার এই প্রকল্পে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। উদ্দেশ্য ছিলো খননের মাধ্যমে গভীরতা বাড়িয়ে শুষ্ক মৌসুমে গড়াই নদীতে মিঠা পানির প্রবাহ বাড়ানো, যাতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লবনাক্ততা কমে যায়। কিন্তু এই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। যথাযথ ভাবেই সফল হয়েছে ড্রেজার ক্রয়ের দুর্নীতি, রক্ষণাবেক্ষণে দুর্নীতি এবং ফাঁকিবাজি। তেল চুরি থেকে শুরু করে হেন কোন অনিয়ম নেই যা এই প্রকল্পে হয়নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন