বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সন্তানদের খাওয়াতে না পেরে মায়ের আত্মহত্যা

মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের খরাকবলিত মারাঠওয়াদার ওসমানাবাদ জেলায়। ৪০ বছর বয়সী পাঁচ সন্তানের মা গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কারণ, খাবার নেই, কাজ নেই; পাঁচ সন্তানকে খাওয়ানোর কিছু নেই। ওই নারীর নাম মনিষা গাটকাল, ওসমানাবাদ জেলার এক কিষানি। 

গত শনিবার রাতে নিজ বাড়িতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। একই দিন ভারতজুড়ে রাখিবন্ধন উৎসব চলছিল। এনডিটিভি জানিয়েছে, আম্বি গ্রামে গাটকালের ওই বাড়িতে কেরোসিনের বোঁটকা গন্ধ এখনো বাতাসে ভাসছে। বাড়িতে থাকা খাবার বলতে মেঝেতে একটি অ্যালুমিনিয়াম প্লেটে দুটো শুকনো রুটি। খাদ্যশস্যের পাত্রগুলো খালি; চাল নেই, আটা নেই, তেল নেই; খাওয়ার মতো কিছুই নেই। সবচেয়ে নির্মম হলো, পরিবারটির জীবিকা নির্বাহের কোনো উৎস ছিল না। গাটকালের স্বামী লক্ষ্মণ বলেন, ‘আমরা খুব গরিব। কোনো খাবার ছিল না, আমার কাজ ছিল না। আমি কাজ পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। সে দরজা লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।’ 

পরিবারটি এতই দরিদ্র যে, মারাঠওয়াদার অন্য কৃষকদের মতো ঋণ নেওয়ার কারণে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি। গাটকালের আত্মীয় সামভাজি বলেন, ‘রেশন খুব কম—১৮ কেজি গম ও ১২ কেজি চাল। সাতজন লোকের জন্য এটা যথেষ্ট নয়। এগুলো নিয়ে ১২ দিন চলা যায়।’ দুই জেলা ওসমানাবাদ ও সোলাপুরের সীমান্ত অঞ্চলের নো ম্যানস ল্যান্ডের অধিবাসীরা জানান, পরিস্থিতি খুব খারাপ। সরকারের কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা পরিকল্পনার অধীনেও কোনো কাজ নেই। লক্ষ্মণের ভাই বালাসাহাব বলেন, ‘ভাই যদি এনআরইজিএর অধীনে কাজ পেতেন, তাহলে তাদের অর্থ থাকত। 

তিনি (ভাবী) আত্মহত্যা করতেন না।’ এনআরইজিএ হলো মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন। পরপর তিন বছর খরা আক্রান্ত হলো মারাঠওয়াদা। চলতি বর্ষা মৌসুমে সারা ভারতের তুলনায় সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এখানে। ২০১৪ সালে এ অঞ্চলে ৫৭৪ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ২০১৫ সালে এরই মধ্যে ৬২৮ জন একই পথ বেছে নিয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন