রবিবার, ২ আগস্ট, ২০১৫

আটশ' চিকিৎসকের 'খোঁজ' মিলছে না!

সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আটশ' চিকিৎসকের খোঁজ মিলছে না। প্রায় পাঁচ বছর আগে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব চিকিৎসকের কর্মস্থল সম্পর্কে সরকারও অন্ধকারে রয়েছে। কয়েক দফা নোটিশ জারি করেও তাদের কর্মস্থল সম্পর্কে তথ্য জানতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের ওয়েবসাইটে তিন দফায় বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও এসব চিকিৎসক তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানাননি। তারা নিয়মিত বেতন-ভাতাও তুলছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অধিদপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নোটিশ পাঠালে সব চিকিৎসকের বর্তমান অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব। প্রায় এক বছর ধরে শুধু ওয়েবসাইটে নোটিশ জারি করেই দায়িত্ব সারছে অধিদপ্তর। এদিকে চাকরি নিয়মিতকরণ না হওয়ায় অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত অন্য চিকিৎসকদের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, অ্যাডহক চিকিৎসকদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কয়েকবার নোটিশ করা হয়েছে। অনেকে ওয়েবসাইটে বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানিয়ে তথ্য দিলেও আটশ' চিকিৎসক কোনো তথ্য দেননি। তারা চাকরিতে আছেন কি-না, তাও অস্পষ্ট। 'নিখোঁজ' আটশ' চিকিৎসকের অনেকেই চাকরিতে নেই বলে ধারণা করছেন পরিচালক।
তবে অ্যাডহক হিসেবে কর্মরত আছেন, এমন চিকিৎসকদের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, খোঁজ না পাওয়া আটশ' চিকিৎসকের মধ্যে অনেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ মফস্বল অঞ্চলে কর্মরত থাকার কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নোটিশ সম্পর্কে অবগত নন। এ কারণে তাদের কর্মস্থল সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। অ্যাডহক থেকে নিয়মিতকরণ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া হওয়ার কারণে অনেকে নিরুৎসাহিত হয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন না। কেউ কেউ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অ্যাডহক চাকরি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অধিদপ্তরে অবহিত করেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা উপজেলা অ্যাকাউন্টস অফিস থেকে দেওয়া হয়। গ্রেড অনুযায়ী বেতন হওয়ার কারণে পৃথকভাবে চিকিৎসকদের শনাক্ত করাও বেশ কঠিন। এ সুযোগ নিয়ে উপজেলা অ্যাকাউন্টস অফিস ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে কমিশনের বিনিময়ে চাকরিতে না থেকেও অনেক চিকিৎসক বছরের পর বছর বেতন-ভাতা তুলছেন। এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া চিকিৎসকদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পদায়ন করা হয়েছে। উপজেলা অ্যাকাউন্টস অফিস থেকে তারা বেতন-ভাতা তুলে থাকেন। এ কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের কর্মস্থল সম্পর্কে জানতে পারছে না।

বিষয়টিকে সরকারি চরম অব্যবস্থাপনা বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিকেল মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব। তিনি সমকালকে বলেন, এরশাদের আমল থেকে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ শুরু হয়েছিল। তখন থেকেই এ ঝামেলা তৈরি হয়েছে। উপজেলা অ্যাকাউন্টস অফিস থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলনের সুযোগ নিয়ে অনেক চিকিৎসক চাকরি না করেও সুবিধা নিচ্ছেন।
রশিদ-ই মাহবুব আরও বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার পুনর্গঠন অথবা বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। তাহলে চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নজরদারির আওতায় আনা সম্ভব হবে। অবৈধ পন্থায় সুবিধা নেওয়ার পথও বন্ধ হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক সমকালকে বলেন, অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের খোঁজ না পাওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে কে কোন কর্মস্থলে রয়েছেন বা আদৌ চাকরি করছেন কি-না, তা অবিলম্বে খুঁজে বের করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুই দফায় চার হাজার ১৩৩ চিকিৎসককে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অ্যাডহক চিকিৎসক ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ মেহেদী হাসান সমকালকে বলেন, পাঁচ বছর পরও চাকরি নিয়মিত না হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসক নেতা ও সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা করলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। তিনি আরও বলেন, অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ৫৭২ চিকিৎসককে স্থায়ীকরণের কথা বলা হলেও এ বিষয়ে কোনো গেজেট জারি করা হয়নি। তাই স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, অ্যাডহক চিকিৎসকদের নিয়মিতকরণের বিষয়টি একটি জটিল প্রক্রিয়া। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাইলেই তাদের নিয়মিতকরণ করা সম্ভব নয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) চাকরি নিয়মিতকরণের ফাইল পাঠাতে হয়। সেখানে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া শেষেই কাউকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন