বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৫

নিষিদ্ধ হলেও ভারত থেকে প্রতি বছর আসছে ৩০০ কোটি টাকার ওষুধ

আমদানি নিষিদ্ধ হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে প্রতি বছর আসছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি ওষুধ। চিকিৎসক ও ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এসব ওষুধের বেশির ভাগই নকল ও ভেজাল। ভালো কিছু কোম্পানির ওষুধ এলেও এগুলোর দাম আকাশছোঁয়া। নানাভাবে চোরাই পথে ওষুধগুলো আসে। অননুমোদিত বিদেশী ওষুধ জব্দ করার দায়িত্ব বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি বিদেশী অবৈধ ওষুধ আসা বন্ধ করতে পারেনি। 
বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রয়োজনের ৯৭ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন করে থাকে। অবশিষ্ট কিছূ ওষুধ বাংলাদেশ উৎপাদন করতে পারে না অথবা উৎপাদন করলেও প্রয়োজনের চেয়ে খুবই অল্প। সে কারণে সরকার বাংলাদেশে একেবারেই উৎপাদন হয় না এমন কিছু ওষুধ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। এগুলো সবই উচ্চপ্রযুক্তির ওষুধ যা বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশ উৎপাদন করতে পারে। 

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক ও মুখপাত্র মো: রুহুল আমিন জানিয়েছেন, কোন কোন দেশ থেকে ওষুধ আমদানি করা যাবে তার একটি তালিকা রয়েছে। এর বাইরে গুণেমানে যত উত্তমই হোক না কেন সবই অবৈধ। 

অবৈধ ওষুধ জব্দ করার দায়িত্ব তো ওষুধ প্রশাসনের কিন্তু তারা কাজটি যথাযথভাবে পালন করছে না- এ ব্যাপারে মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ওষুধ প্রশাসন দীর্ঘ দিন থেকেই জনবল সঙ্কটে আছে। আমাদের আন্তরিকতা থাকলেও আমরা বাংলাদেশের সর্বত্র যেতে পারি না। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা অবৈধ, মানহীন ওষুধ জব্দ করে থাকি। 

ওষুধ ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে চোরাচালান হয়ে ভালো ওষুধ কমই আসে। মারুফ আহমেদ খান নামে ঢাকার একজন ওষুধ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বিভিন্ন উপায়ে চোরাচালান হয়ে ওষুধ আসে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আসে সীমান্ত পার হয়ে রাতের বেলা। এ ছাড়া সমুদ্রবন্দর দিয়ে আসে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিমানবন্দর দিয়ে আসে কাস্টমসকে ম্যানেজ করে অথবা ফাঁকি দিয়ে। চোরাচালান হয়ে আসে বলে এসব ওষুধের গুণগত মান যাচাই করা যায় না। ওষুধগুলো আসল না নকল তা-ও বোঝা মুশকিল। মারুফ আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে বিদেশপ্রীতি প্রবল। এ কারণে ইন্ডিয়ার ওষুধ বললে আর ওষুধটির ব্যাপারে একটু প্রশংসা করলেই মানুষ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতারিতও হচ্ছে। বিদেশ থেকে আসে বলে, চড়া দামে বিক্রি করলেও ক্রেতারা ‘মাইন্ড’ করেন না। কী ধরনের ওষুধ বেশি আসে ভারত থেকে এ প্রশ্নের জবাবে মারুফ আহমেদ খান বলেন, সব ধরনের ওষুধই পাওয়া যায়। তবে নেশার ওষুধ, যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধ বেশি পাওয়া যায়। নেশা ও যৌনশক্তির ওষুধ নিতে ক্রেতারা রাতে বেশি আসেন। ফলে প্রশাসনের লোকেরা এসব ওষুধ ধরতে পারেন না। দিনের বেলা ফার্মেসি থেকে এসব ওষুধ সরিয়ে ফেলা হয়। নেশা ও যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধ বিক্রি করে লাভ বেশি হয় বলে ঝুঁকি নিয়েও দোকানদার রাখেন।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে কি পরিমাণ বিদেশী ওষুধ চোরাচালান হয়ে আসে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। পাশের দেশ বলে ইন্ডিয়া থেকেই সবচেয়ে বেশি আসে। এ কারণে ধারণা করা হয়, ‘কমপক্ষে ৩০০’ কোটি টাকার বেশি ওষুধ আসে চোরাচালান হয়ে। ইন্ডিয়া থেকে ওষুধ আমদানি নিষিদ্ধ। ফলে চোরাচালান হয়েই বেশি আসে।’ 

বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তালিকা অনুসারে, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে ওষুধ আমদানি বৈধ নয়। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি, জার্মানির ১৫টি কোম্পানি, সুইজারল্যান্ডের পাঁচটি এবং অস্ট্রিয়ার দুইটি কোম্পানি রয়েছে। ওষুধ অধিদফতরের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উল্লিখিত দেশের কোম্পানিগুলো সর্বশেষ আবিষ্কৃত ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিন দিয়ে হরমোন, ক্যান্সারসহ প্যাটেনটেড ওষুধ উৎপাদন করে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) বলে বাংলাদেশ অবশ্য প্যাটেনটেড ওষুধও উৎপাদন করতে পারে কিন্তু আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে এমন ওষুধ উৎপাদনের মেশিন বাংলাদেশে নেই। 

ভারত অথবা চীন থেকে কোনো ওষুধ আমদানি করা না গেলেও এসব দেশ থেকে ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি হয়। ইউরোপ ও আমেরিকা থেকেও কাঁচামাল আমদানি হয় কিন্তু চীন ও ভারত থেকেই ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল বেশি আমদানি হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন