শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৪

এবার বিদ্যুত্ করিডোর পাচ্ছে ভারত : আটঘাট বেঁধেই নামছে সরকার

বাংলাদেশকে ভারতের দরকার অনেকভাবেই। সময় একটু বেশি লাগলেও সেটা এখন মিটতে চলেছে। স্থল ও নৌপথের পর এবার বিদ্যুত্ করিডোর পাচ্ছে ভারত। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে বিপুল পরিমাণ জলবিদ্যুত্ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বা বিহার হয়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে সরবরাহ করা হবে। এমন ব্যবস্থা প্রায় পাকা হয়ে গেলেও এর বিনিময়ে বাংলাদেশের কী লাভ হবে সেটা এখনও ঠিক করা হয়নি বলে জানা গেছে। আর জলবিদ্যুত্ উত্পাদনের কারণে বাংলাদেশের অভিন্ন নদ-নদীগুলোর দশা কী হবে সেটাও তলিয়ে দেখা হয়েছে, এমন কোনো আলামত পাওয়া যাচ্ছে না।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উত্পাদিত জলবিদ্যুত্ উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে নিতে ব্যবহার করা হবে বাংলাদেশের বিদ্যুত্ করিডোর। প্রাথমিকভাবে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সঞ্চালিত হবে। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে এক লাখ ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ অরুণাচল-আসাম-বাংলাদেশ হয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য রাজ্যে যাবে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ভারতের আসামের রাঙ্গুনিয়া অথবা রাওতা থেকে বাংলাদেশের জামালপুর অথবা দিনাজপুর (বড় পুকুরিয়া) হয়ে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও গিয়ে যুক্ত হবে ভারতের জাতীয় গ্রিডে। এজন্য বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুত্ উপকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি আরও একটি সম্ভাব্য করিডোর হতে পারে আসামের শিলচর থেকে বাংলাদেশের মেঘনাঘাট বা ভুলতা হয়ে ভেড়ামারা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও পর্যন্ত। এই পথে যে বিপুল পরিমাণ জলবিদ্যুত্ সঞ্চালিত হবে উত্পাদনের জন্য হিমালয় থেকে নেমে আসা বিভিন্ন নদ-নদীর ওপর ৪২৯টি বাঁধ দেয়া হবে। এর মধ্যেই কিছু বাঁধ নির্মিত হয়েছে। আরও কিছু নির্মাণাধীন বলেও জানা গেছে।
হিমালয় অঞ্চল থেকে ভারত হয়ে নেমে আসা নদ-নদীগুলোর অধিকাংশই বাংলাদেশ হয়ে সমুদ্রে পড়েছে। এই অভিন্ন নদ-নদীর ওপর ভারত যদি একের পর এক বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুত্ উত্পাদন করতে থাকে তবে বাংলাদেশকে এক কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে। এমনিতেই পদ্মা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমা-কুশিয়ারাসহ বেশকিছু নদ-নদী শুকিয়ে যেতে শুরু করে উজানে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহারের ফলে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় অসংখ্য শাখা নদী ও খাল-বিল পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে আন্দোলন, সংগ্রাম শুরু হয়েছে। তিস্তায় পানির দাবিতে সেখানকার কৃষক-জনতা ফুঁসে উঠেছে। এমন অবস্থায় ভারতের কাছ থেকে অভিন্ন নদ-নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে তত্পর না হয়ে ভারতের জলবিদ্যুত্ নিয়ে যে তত্পরতা শুরু হয়েছে তার পরিণতি ভেবে দেখার বিষয়।
সেই সঙ্গে বর্তমান সরকার সংসদে প্রথম বিল হিসেবে দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ যেভাবে বাড়িয়েছে সেটাও দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারে না। ২০০২ সালে দুই বছরের মেয়াদে আইনটি যখন পাস হয় তখন তত্কালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এটিকে রাজনৈতিক নির্যাতনের হাতিয়ার, কালো আইন আখ্যা দিয়ে নিন্দা করেছিল, প্রতিবাদে হরতালও করেছিল। গত আমলে এর মেয়াদ দুই বছর বাড়ালেও এবারে এক লাফে ৫ বছর বাড়ানো হয়েছে। এর পেছনে কি নিজেদের পরিকল্পনার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ায় ফুঁসে ওঠা জনরোষ মোকাবিলার কথাটা কাজ করেছে? তবে যতই আটঘাট বেঁধে নামা হোক না কেন দেশ-জাতি ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী কোনো কাজই যে স্থায়ী হবে না সেটা বলাই বাহুল্য। জনগণ জেগে উঠলে সব কিছু বালুর বাঁধের মতো ভেসে যায়, এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন