সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

পানি চুক্তির নামে একের পর এক প্রহসন চলছেই

তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশে এরকম অসংখ্য বাঁধ আর প্রকল্পে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে পানি প্রবাহ -ফাইল ফটো
তিস্তায় বহুসংখ্যক সেচ ও বিদ্যুৎ প্রকল্প পুরো নদী থেকেই পানি সরাচ্ছে ভারত
কৃষি ও পরিবেশ সংকটে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল
 তিস্তা নদীর পানি নিয়ে একদিকে চলছে চুক্তির নামে একের পর এক প্রহসন। অন্যদিকে  ভারতীয় অংশে সেচ ও বিদ্যুতের জন্য অসংখ্য বাঁধ আর প্রকল্পের মাধ্যমে স্তব্ধ করে ফেলা হচ্ছে পানির প্রবাহ। এভাবে ভারত কার্যত পুরো নদী থেকেই পানি প্রত্যাহার করে চলেছে বলে জানা গেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় কৃষি ও পরিবেশের ক্ষেত্রে চরম সংকটে পড়েছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল।
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী সিকিমে তিস্তা নদীর ওপর ৩টি বাঁধ ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে, আরো দশটি বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। এভাবে ৩৫টি প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। সেখানকার সংবাদমাধ্যম, বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য এবং ঢাকার একাধিক সূত্রে এই খবর জানা গেছে। এযাবত নির্মিত প্রকল্পের কারণে তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হতে শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে পানিবণ্টন নিয়ে ভাবা সম্ভব নয়। সেচমন্ত্রী আরো বলেন, তিস্তার ওপরে শুধুমাত্র কালিঝোড়ায় একটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুৎ দফতর তাদের অনুমতি নিয়েছিল। কিন্তু তারপরে সিকিমে আরো দু’টি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়েছে এবং একটির কাজ চলছে। ভবিষ্যতে আরো দশটি পানিবিদ্যুৎ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এতে ভবিষ্যতে তিস্তায় বাংলাদেশ ন্যায্য হিস্যা তো দূরে থাক, আদৌ পানি পাবে কিনা সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
অসংখ্য প্রকল্পের পরিণতি
ভারতের উত্তর সিকিমের সো লামো হ্রদ থেকে শুরু হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি নদীর অন্যতম এই তিস্তা। ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও খর¯্রােতা তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং-জলপাইগুড়ি হয়ে বাংলাদেশের লালমনিরহাট দিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রবেশ করে ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়েছে। বাংলাদেশে এর দৈর্ঘ্য ১২৪ কিলোমিটার। ফলে এটি শুধু স¦াধীন একটি নদীমাত্র নয়, তিস্তা বাংলাদেশেরও নদী এবং তা ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহেরও অন্যতম উৎস। তিস্তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া মানেই ভাটিতে বাংলাদেশের তিস্তার অপমৃত্যু এবং সেই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র তথা যমুনার প্রবাহ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। এই নদীর অস্তিত্বের সঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্ভরশীল। বর্তমানে তিস্তার অবস্থা দাঁড়িয়েছে একটি মরা খালের মতো।
তিস্তা নদীর ওপরে বর্তমান গাজলডোবার ব্যারাজ ছাড়াও ভারতের প্রস্তাবিত আরো প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, ভাসমি, বিমকং, চাকুং, চুজাচেন, ডিক চু, জোরথাং লোপ, লাচিন, লিংজা, পানান, রালাং, রামমাম-১, রামমাম-৪, রণজিৎ-২, রনজিৎ-৪, রাংইয়ং, রাতিচু-বাকচা চু, রিংপি, রংনি, রুকেল, সাদা মাংদের, সুনতালি তার, তালিম, তাশিডিং, তিস্তা-১, তিস্তা-২, তিস্তা-৩, তিস্তা-৪, তিস্তা-৬, থাংচি, টিং টিং প্রভৃতি। এছাড়াও বর্তমানে চলমান প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, লোয়ার লাগিয়াপ, রামমাম-২, রণজিৎ-৩, তিস্তা-৫ এবং রঙ্গিচু। এগুলো সবই পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এগুলোর জন্য অবশ্যই তিস্তার পানি প্রত্যাহার ও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে কিভাবে প্রার্থিত পরিমাণ পানি আসবে তার কোন হিসেব মেলাতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞরা আরো মনে করছেন, তিস্তার উজানে এসব প্রকল্পের পানির চাহিদা মেটাতে গিয়ে তিস্তার ভাটিতে এসে মোট পানির পরিমাণ ১০ ভাগও থাকবে কিনা সে সন্দেহও রয়েছে। আর এই প্রবাহের হিসাব হবে কিসের ভিত্তিতে তাও নির্দিষ্ট নয়। পানির প্রবাহ ভারত নিয়ন্ত্রণ করবে, তারাই পানি ছাড়বে এবং হিসাবও রাখবে তারাই। ফলে এনিয়ে যে প্রবল কূটচালের শিকার হবে বাংলাদেশ- এটা অভিজ্ঞতাই বলে দিচ্ছে। বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্প পুরোপুরি বৃষ্টির পানি নির্ভর হয়ে পড়ছে। জানা গেছে, ভারত তার অংশের তিস্তার পুরো অংশকে কাজে লাগিয়ে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় পানির বৃহৎ বৃহৎ রিজার্ভার গড়ে তোলা হবে এবং এগুলোর শক্তিশালী প্রবাহ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
উত্তরাখ-ের পরিণতি তিস্তায়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গঙ্গার মতো আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার উজানেও ভারতের অসংখ্য প্রকল্পের কারণে চরম বিপর্যয়ের শিকার হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর নমুনা মিলেছে ভারতের উত্তরাখ- রাজ্যে ইতিহাসের ভয়াবহতম সাম্প্রতিক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে। বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, গঙ্গা নদীর উজানে ভারত যে অসংখ্য বাঁধ ও প্রকল্প তৈরি করেছে তারই অনিবার্য পরিণতি উত্তরাখ-ের এই দুর্যোগ। তিস্তার কারণে একই পরিণতি শিকার বাংলাদেশও হতে পারে। গঙ্গায় ভারতের এসব কর্মকা-ের পরিণতিতে এখন পর্যন্ত উত্তরাখ-ে বিপর্যয়ের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। অদূর ভবিষ্যতে ভারতের অন্যান্য রাজ্য ছাড়িয়ে বাংলাদেশেও তা বিপর্যয়কর পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশের উত্তরাংশে তিস্তার উজানে যেভাবে সেচ সম্প্রসারণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অন্তত ৩৫টি বাঁধ তৈরি হচ্ছে তাতে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলেও এসব বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, অপরিকল্পিতভাবে তিস্তায় একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। নদীর ¯্রােতকে আরো তীব্র করে তুলতে নদীকে সংকীর্ণ করে ফেলা হচ্ছে। প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রবণতাকে বাধা সৃষ্টি করেই এসব করা হচ্ছে। একজন নদী বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, জাতীয় পানিবিদ্যুৎ নির্গমের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পগুলো গড়ে তোলার জন্য ৫০০-৭০০ মিটার চওড়া নদীর গতিপথকে ১৪০-১৭০ মিটারে বেঁধে ফেলা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, পরিবেশ নয়- সরকারের কাছে এখন সস্তা জনপ্রিয়তাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেটাই উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়ের কারণ হবে। আর সেই বিপর্যয়ের ধাক্কা গিয়ে বাংলাদেশেও লাগবে সেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা। তাদের আশঙ্কা, এই সব বাঁধের জন্য বৃষ্টির সময় প্রবল বন্যার পরিস্থিতিও তৈরি হবে। হিমালয়ান নেচার এ্যান্ড এ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনসহ বেশ কিছু পরিবেশ সংস্থা অভিযোগ করে, তিস্তায় পর পর পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার ফলে আগামীতে এই অঞ্চলে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। বিশ্বব্যাংকের একটি রিপোর্টেও এসব প্রকল্প হিমালয়ের ভাটিতে অবস্থিত দেশগুলোর জন্য ভূমিকম্পসহ মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করা হয়।
বাংলাদেশে তিস্তার অপমৃত্যু
ইতিহাসের তথ্য থেকে জানা যায়, ১৭৮৭ সালের আগ পর্যন্ত তিস্তাই ছিল উত্তরবঙ্গের প্রধান নদী। এই নদীর উচ্ছলতায় উত্তরবঙ্গের প্রকৃতি ছিল শীতল, শান্ত ও মায়াময়। আবহাওয়া ছিল সহনীয় মাত্রায়। কিন্তু ভারতের একগুঁয়েমি ও হঠকারিতার ফলে তিস্তা এখন মরুভূমির রূপ নিতে যাচ্ছে। অন্য দিকে বর্ষাকালে মূল গতিপথ বদলিয়ে তিস্তা প্রচ-ভাবে আঁছড়ে পড়ে দুই তীরে। ফলে ভাঙনে প্রতিবছর তিস্তা তীরের হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর, গাছপালা, আবাদি জমি হারিয়ে পথের ভিখারী হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নদীর প্রবাহ পথে বিশাল চর ও উভয় তীরে ভাঙনের তা-বে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে এর প্রস্থ কোনো কোনো স্থানে ৫ কিলোমিটারেরও বেশি। অন্য দিকে বর্ষাকালে এই নদীর গভীরতা হয় ৫ থেকে ৫০ মিটার। আর শুষ্ক মওসুমে তা গিয়ে দাঁড়ায় ১ মিটারে। সরেজমিন তিস্তা নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুষ্ক মওসুমে তিস্তায় কোনো পানি থাকে না। ফলে দুই পাড় ও পার্শ¦বর্তী এলাকার প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ রুক্ষ প্রকৃতির কবলে পড়ে দিশেহারা। পরিবেশবাদিরা বলেছে, তিস্তায় পানি না থাকার কারণে এই অঞ্চলের ধরলা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, আখিরা, দুধকুমর, বুড়ি তিস্তাসহ প্রায় ৩৩টি ছোট বড় নদ-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় রংপুর অঞ্চলে ভূগর্ভের পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। স¦াধীনতার পর থেকে এই অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নামতে নামতে তা এখন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। ফলে টিউবওয়েল, গভীর, অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না। অন্যদিকে এই অঞ্চলের চিরচেনা প্রায় অর্ধশতাধিক প্রজাতির মৎস্য সম্পদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ৫৫ প্রকার পাখপাখালিসহ গাছপালার প্রজাতি ধ্বংস হয়েছে। ভ্যাপসা গরমের সাথে তীব্র তাপদাহ আর মাত্রাতিরিক্ত ঠা-ার কারণে জীববৈচিত্র্য নষ্টের পাশাপাশি মানুষের জীবনযাপনে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া হয়ে গেছে ওলটপালট। ফলে তিস্তা নদী ও নদী অববাহিকা এলাকায় ধান, পাট, ভুট্টা, আখ, শাকসবজি চাষ করেও কৃষকেরা খরা ও বন্যার তা-বে বিপর্যস্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। অন্যদিকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা সেচপ্রকল্প স্থবির হয়ে পড়েছে। সূত্রে প্রকাশ, তিস্তা সেচপ্রকল্প এলাকায় সেচ দেয়া এবং নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে তিস্তায় পানির স¦াভাবিক প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ২০ হাজার কিউসেক। শুধু সেচপ্রকল্প চালাতেই প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ১৪ হাজার কিউসেক এবং নদীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য চার হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ডিসেম্বরের পর থেকে তিস্তায় পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যায়। এই সময়ে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানির প্রবাহের মাত্রা গত বছরগুলোতে ছিল গড়ে ৭০০ কিউসেকের কিছু ওপরে। ফলে সেচপ্রকল্প এলাকায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে প্রতিবছরই পানির তীব্র সঙ্কট বিরাজ করে। এ কারণে গত ৪০ বছরে এই অঞ্চলের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রহসন
তিস্তার বিষয়টি কখনোই খোলাসা করে বলেনি ভারত। এর আগে এক দফা প্রণীত খসড়া চুক্তি অনুযায়ী বলা হয়, শিলিগুড়ি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ভারতের গাজলডোবা পয়েন্টে তিস্তায় প্রবাহিত পানির পরিমাণ হিসাব করে দু’দেশের মধ্যে পানিবণ্টন হবে। ৪৬০ কিউসেক হারে পানির সঞ্চয় রেখে বাকি পানির ৫২ শতাংশ নেবে ভারত, ৪৮ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু পরদিনই ভারতের লোকসভার সদস্যের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তার পানির ৭৫ শতাংশ ভারত নেবে এবং ২৫ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে। ২০১১ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় এই চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তিতে শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। তিস্তা চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দাবি করে ওই চুক্তির বিরুদ্ধে অনড় অবস্থান নেন তিনি। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন, গাজলডোবা বাঁধের কাছে পানির মূল হিসাব ধরার কথা বলা হচ্ছে। অথচ উৎস থেকে গাজলডোবা পর্যন্ত দীর্ঘ পথে যে পরিমাণ পানি ভারত আগেই টেনে নিচ্ছে, অতঃপর কতটুকু পানি অবশিষ্ট থাকবে তার কোনো হিসাব করা হচ্ছে না। আবার, গাজলডোবা থেকে বাংলাদেশী অংশে যে পানি থাকবে তা প্রধানত বৃষ্টি থেকে প্রাপ্ত। এই পানিও যদি পশ্চিমবঙ্গের কাজে লাগানো হয় তাহলে আর কতটুকু পানিই বা বাংলাদেশের ভাগে পড়বে। আর বৃষ্টির পরিমাণ ও মাত্রাও এক অনিশ্চিত ব্যাপার। ফলে দেখা যাচ্ছে, তিস্তা চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের জন্য উপকারী হবে এমন কোন ফর্মুলার হদিস মেলেনি। এমন অবস্থায় কোনও ধরনের চুক্তি হলে তাতে এক গুরুতর ফাঁকির শিকার হবে বাংলাদেশ। এরমধ্যেই আবার নতুন বাধা এসেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে। গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশকে তিস্তার পানি বেশি পরিমাণে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জী বিবিসিকে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এক প্রশাসনিক বৈঠকে অভিযোগ করেছেন যে সেচ দফতরের কিছু কর্মী অনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে বেশি পরিমাণে জল ছেড়ে দিচ্ছেন। মমতা ব্যানার্জীর ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তদন্ত শুরু হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, শুকনো মওসুমে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত পানি দিয়ে দেয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে সূত্রগুলো আরো জানায়, তার রাজ্যের উত্তরবঙ্গের কৃষকরা যাতে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পায়, তার জন্যই তিস্তার জলবণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করছে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার। তিনি পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের ক্ষতি করে বাংলাদেশকে পানি দিতে পারবে না বলেও উল্লেখ করেন। অন্যদিকে তিস্তার একেবারে ভাটিতে বাংলাদেশের কাছেও ভারত ব্যারেজ নির্মাণ করে ও ডাইভারশন খাল কেটে মহানন্দা নদীতে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া উত্তরবঙ্গের কুচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহ জেলার ৯ দশমিক ২২ লাখ হেক্টর জমিতে তিস্তার পানি দিয়ে সেচ দেয়ার জন্য ভারতের বিশাল পরিকল্পনা আছে। এভাবে একদিকে তিস্তা নিয়ে মাঝে মধ্যেই চুক্তি চুক্তি রব তোলা হয়। কিছুদিন আবার তা চুপসে যায়। মাঝখানে তিস্তার ওপর ভারতের বিভিন্ন প্রকার নির্মাণ কাজও থেমে নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন