শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩

কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ? বাকশাল নাকি সেনা সমর্থিত জাতীয় সরকার

যিনি যে দলেরই হোন না কেন-একটা কথা নিশ্চই স্বীকার করবেন, যা হচ্ছে দেশে এভাবে কোন দেশ চলতে পারে না। এ পরিস্থিতি দেশের রাজনীতি কোথায় যাচ্ছে, কি হতে যাচ্ছে আগামিকাল বা আগামি পরশু-তরশু তা এই মূহুর্তে সব থেকে বেশি আগ্রহের বিষয়। যদি আওয়ামী লীগ যেসব হম্ভিতম্ভি ঘোষণা করছে তা বাস্তবেই বিশ্বাস থেকে করে এবং তা কার্যকর করে তাহলে বাকশাল কায়েম করে তা নিজেদেরকে রক্ষা করার শেষ চেষ্টা। আর যদি এইসব হম্ভিতম্ভি লোক দেখানো হয় তাহলে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা থেকে পালানোর যুতসই একটা পথ খুঁজছে। অর্থ্যাৎ সেইফ এক্সিট রুট বা নিরাপদে ক্ষমতা হস্তান্তর করার চেষ্টা করছে। এই নিরাপদে ক্ষমতা হস্তান্তর মানে কিন্তু বিএনপির হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া নয়। বরং এমন কোন পক্ষের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর যেখানে আওয়ামী লীগ নিরাপদে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক অচল অবস্থা নিরসন ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না-যতক্ষণ না ইন্ডিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা সমঝোতা হবে। অর্থ্যাৎ এই দুই শক্তি বাংলাদেশ বিষয়ে একটি আপোষরফায় পৌছতে পারলে দেশের রাজনীতির নাটকি পরিবর্তন আসতে সময় লাগবে না। সেটা আমলা সামরিক পদ্ধতিতে হোক আর নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমেই হোক। আর যদি ইন্ডিয়া-মার্কিন আপোষ মিমাংসা আরো প্রলম্বিত হয় তাহলে দেশের পরিস্থিতি আরো করুন হবে। আর যদি প্রথম অপশন আওয়ামী লীগ বাস্তবায়ন করতে চায় অথ্যাৎ বাকশাল কায়েম করতে চায় তাহলে একটি আসন্ন সেনা সমর্থিত সরকার কায়েম হওয়ার জোর সম্ভাবনা দেখছি। আর দ্বিতীয় অপসন বা সেইফ এক্সিট হয় তাহলেও আ.লীগের সেরা পছন্দই হবেন সেনা সমর্থিত কোন সরকার। একতরফা একটা নির্বাচনে আ.লীগ যদি শেষ পর্যন্ত করে সম্পন্নও করে তাহলে তার মেয়াদ খুবই সামান্যই হওয়া কথা। শেখ হাসিনাও তাই বলছেন। বিএনপিকে ১১তম জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানাচ্ছেন। তাহলে আওয়ামী লীগকে এমন কারোর অনুরোধের ঢেকি গিলছে-যার ভেতরেই তার বড় ধরনের ঝুকি রয়েছে। আবার অনুরোধ না রাখলেও বড় ঝুকি এড়াতে পারবে না আওয়ামী লীগ। আ.লীগ বাকশাল কায়েম করুক আর সেনা সমর্থিত জাতীয় সরকার আসুক সেখানে ইন্ডিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইরোপিয় ইউনিয়ন ও চীনের অংশিদারিত্ব কেমন হবে তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। এরপর বাংলাদেশ নিয়ে দ্বিতীয় সারির যেসব অংশিদারিত্ব আছে যেমন সৌদি আরব, পাকিস্তানের ভ‚মিকা আসবে। এসব স্বার্থ মূলত ভ‚-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায়, দেশের বিশাল বাজার দখল, পুজিঁ বিনিয়োগ ও খনিজ সম্পদ দখলের চেষ্টা হিসেবেই করা হচ্ছে, হবে। এসব বিবেচনায় রেখে পরাশক্তিগুলো তাদের অংশিদারিত্ব কায়েম করবে বাংলাদেশে। তবে তার আগে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক। নিহত মানুষ কেবলি সংখ্যা : ২৫ নভেম্বর ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করে নির্বাচন কমিশনার। এরপর বিরোধীপক্ষ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অবরোধ কর্মসূচী পালন করে আসছে। সরকার বিরোধী আন্দোলনে লাশ পড়েছে ১৫০ এর কাছাকাছি। এর মধ্যে সরকারি দলের কর্মী, বিরোধী জামায়াত ও বিএনপি কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ যেমন ছিলেন, তেমনি আইন-শৃঙ্খলা এক মাসে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের সময় যত মানুষ নিহত হয়েছে তা স্বৈরাচার জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নয় বছরেও হয়নি। তাহলে প্রশ্ন তোলাটা সঙ্গতই হয়-নব্বইয়ে রক্তের মাধ্যমে স্বৈরাচার উৎখাত করে একটি সংসদীয় স্বৈরাতন্ত্র কি আমরা প্রতিষ্ঠা করলাম? হাসিনার সাথে ইন্ডিয়া ছাড়া কেউ নেই : পাঠক একটু চোখ রাখুন সিরিয়ার দিকে। বাশার আল আসাদকে পশ্চিমা সব শক্তি মিলে-বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বিট্রেন, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, সৌদি আরব চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত বশে আনতে পারেনি। শেষ করতে পারেনি বাশার আল আসাদের শাসন। এর পেছনে অন্যতম কারণ ভূ-রাজীনিতিতে সিরিয়াতে রাশিয়া অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরাশক্তি। আর রাশিয়ার পাশে রয়েছে চীন। এই দুই শক্তি মিলে পশ্চিমাদের সব গুড়ে বালি ঢেলে দিয়েছে। ফলে পশ্চিমারা যতই হম্বিতম্ভি করুক না কেন বাসারকে তারা ফেলতে পারেনি। বাসারকে হটাতে এই পশ্চিমা জোট কি করেনি? সরাসরি বাসার বিরোধী বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়েছে। এমনকি সেই অস্ত্র কথিত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আল কায়েদার হাতেও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবুও বাসার পড়েনি। সিরিয়াতে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে দেশটি শেষ হয়ে গেছে। জনগণও বিভক্ত হয়েছে। সেখানে সরকার ও বিরোধীদের হাতে যত্রতত্র মানুষ মরছে। সিরিয়ার উদাহরণ আমাদের সামনে থাকতে দেশের ভবিষ্যাৎ কোথায় যাবে তা ভাবার আগে দেখা দরকার এখানে হাসিনার সাথে কে থাকবে? ইন্ডিয়া? সঙ্গত কারণেই এর উত্তর ‘না’। ইন্ডিয়া এমন কোন ঝুকি নিবে না যাতে সে পরাশক্তির সাথে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। কেউ কেউ বলতে পারেন তাহলে ১৯৭১ সালে কিভাবে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লো ইন্ডিয়া? এ প্রশ্নের উত্তর খুজতে হবে বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে ভারতের আর্থ-রাজনীতি ও পরাশক্তির সাথে সম্পর্কের বাস্তবাতা ও ধরনের উপর মিলিয়ে। কারণ, ১৯৭১ সালে ইন্ডিয়া নিশ্চিত হতে পেরেছিলো চীন থেকে আক্রমনের কোন সম্ভাবনা নেই। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি আর্মি ডেপলয় করে তাহলে সোভিয়েত ইউনিয়নকে পাশে পাওয়া যাবে। হয়েছিলোও তাই। আর আজকের সময় যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের দখলদারিত্ব বজায় রাখতে কৌশলগত মিত্র হিসেবে ইন্ডিয়াকে প্রথম বিবেচনায় রাখে। যদিও নির্দিষ্ট ইস্যুতে ভারতের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধও রয়েছে। সে আলাপ আমরা নিচে দেখবো। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্ডিয়ার মধ্যে যতই ঝগড়া বিবাদ থাকুক না কেন-একটা ফয়সালা তারা নিজেরা নিজে সারতেই যথেষ্ট। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশে যাই ঘটুক না কেন তা ইন্ডিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রের বাইরে ঘটবে না। এই মূহুর্তে তা ঘটার মত কোন বাস্তবতা নেই। এই মুহুর্তে শেখ হাসিনার সরকারের পাশে একমাত্র ইন্ডিয়া ছাড়া অন্য কোন পক্ষকে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে-ইন্ডিয়া কত সময় ব্লাইন্ড সাপোর্ট দিয়ে যাবে? যতক্ষণ না হাসিনার আরেকটি বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে। এটাই ভারতের নীতি। এই নীতি তারা মুজিব সরকারের আমলেও নিয়েছিলেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্স এন্ড এনালিসিস উইং (র) এর কর্তাব্যক্তি স্যাম মানেকেশ এর গ্রন্থ থেকে জানা যাচ্ছে, মুজিবের বেটার অল্টারনেটিভ এর অপেক্ষায় ছিলো ‘র’ মুজিবের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ফলাফল ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড। প্রধান স্বার্থ ভূ-রাজনীতি: বহুদিন ধরেই বলা হচ্ছে ৫০’এর দশকে চীনে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর থেকে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের প্রধান দেশ বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ তাবৎ পশ্চিমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি এই ঘটনার সাথে আরো দুটি বিষয়ে সংক্ষেপে হলেও আমরা আলাপ করবো। একটি হলো সন্ত্রাসবাদ যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, দ্বিতীয়টি হলো থাইল্যান্ড-মিয়ানমার-বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশদ পরিকল্পনা। তবে প্রথমেই আমাদের গভীর দৃষ্টি রাখতে হবে বঙ্গোপসাগরের দিকে। বঙ্গোপসাগরে ভারতের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে: ইন্ডিয়া সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরের কোলঘেষে অবস্থিত সুন্দরবনের উপর গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। এ জন্য সুন্দরবনের উপর নজরদারির জন্য রাডার স্থাপন করছে। একইসঙ্গে মনুষ্যবিহনী যুদ্ধ বিমান বা ড্রোনও পাহারা দিবে সুন্দরবনের উপর। ইন্ডিয়া এসব করছে সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করার অজুহাতে। মূল বিষয়টি হলো বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করা এবং এ অঞ্চলে তার আধিপাত্য ঘোষণা দেয়া। ইন্ডিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরমাণু চুক্তির করেছে। এরই সাথে সামরিক মহড়া বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মার্কিন সহায়তায়। ইন্ডিয়া মহাসাগরে নিয়ন্ত্রণ পেতে দেশটি শুধু এশিয়া মহাদেশ নয়, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ও ওশিনিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক সময় নানা ফোরামে আয়োজনের আড়ালে ইন্ডিয়া তার শক্তির মহড়া দিয়েছে। বঙ্গোপসাগর ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে জোর সামরিক চেষ্টা চালানোর অংশ হিসেবে ‘মিলান’ সম্মেলন করে থাকে দেশটি। গত সম্মেলনের প্রধান অ্যাজেন্ডা ছিল বঙ্গোপসাগর ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর একটি অভিন্ন স্বার্থে ঐকমত্যে পৌঁছানো। সম্মেলনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ‘কপোতাক্ষ’ জাহাজ নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত ৮টি সম্মেলন হয়েছে। আন্দামান ও নিকোবরসহ প্রায় ৫৭২টি দীপ অঞ্চল রয়েছে বঙ্গোপসাগরে ভারতের নিয়ন্ত্রণে। ওই দীপগুলোতে ইন্ডিয়া সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে। ইন্ডিয়া আন্দামান ও নিকোবর দীপপুঞ্জে আরো বিমানঘাঁটি করতে যাচ্ছে। আন্দামান ও নিকোবরের উত্তরে এই বিমানঘাঁটিগুলো তৈরি করা হবে। ভারতের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি ছোট ছোট বিমানঘাঁটিকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে ইন্ডিয়া। আন্দামান ও নিকোবরের শিবপুর হেলিপ্যাডের দৈর্ঘ্য মাত্র এক হাজার ফুট। এই হেলিপ্যাডটিকে শক্তিশালী ও কার্যকর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। পোর্ট ব্লেয়ার, ক্যাম্বেল বে ও কার নিকোবরে আন্দামান ও নিকোবরে ভারতের তিনটি বিমানঘাঁটি রয়েছে। ভারতের ঊর্ধ্বতন নৌ কর্মকর্তা ওই সম্মেলনে জানিয়েছেন, দ্রুতই এই অঞ্চলে আরো বেশ কিছু বিমানঘাঁটি তৈরি করতে যাচ্ছেন তাঁরা। যার মধ্যে কাটচল ও হাটবের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক স্থান রয়েছে। ভারতের নৌ বাহিনী সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাতে এখানে বিমান অবতরণ করতে পারে এমন সুযোগ নিয়ে তৈরি করা হবে বিমানঘাঁটিগুলো। শুধু আকাশপথেই নয়, নৌপথেও ইন্ডিয়া তার আধিপত্য বজায় রাখতে চায়। আর এ কারণে পেট্রল জাহাজের সংখ্যা বাড়াতে চায়। এই মুহূর্তে আন্দামান ও নিকোবরে একটি পোতাশ্রয় রয়েছে। তবে শিগগিরই তাঁরা একাধিক পেট্রল জাহাজ বের করবেন বঙ্গোপসাগরে তাঁদের নজরদারি বাড়াতে। চীনও একের পর নৌঘাঁটি তৈরি করছে: চীন শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারে বেশ কয়েকটি নৌ-বন্দরের মাধ্যমে দেশটির প্রভাব বিস্তার অক্ষুন্ন রেখেছে। ইন্ডিয়া মহাসাগর নিজেদের কব্জায় রাখার জন্য চীন শ্রীলঙ্কান সরকারের সঙ্গে হাত মেলায়, যার ফলে চার দশকব্যাপী স্বাধীনতার জন্য যে তামিল টাইগার লড়ছিল তার অবসান ঘটে। শ্রীলঙ্কার রক্তাত্ব গৃহযুদ্ধে তামিলদের বিপক্ষে সিংহলি সরকারকে অস্ত্র, অর্থ ও কৌশলগত সাহায্য করে চীন। শ্রীলঙ্কা সরকারের আনুক‚ল্য পাওয়ার জন্য মার্কিনিদের পিছু হটিয়ে সামনে চলে আসে চীন। নব্বই শতক থেকে চীনের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সামরিক সখ্য বেড়েছে; কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে বিষয়টি আরো বেশি মাত্রায় এগিয়েছে যখন শ্রীলঙ্কা চীনকে বন্দর করার অনুমতি দিয়েছে। মূলত চীন শ্রীলঙ্কার উত্তরে আর ইন্ডিয়ার দক্ষিণে হামবানতোতা বন্দর তৈরির মধ্য দিয়ে তাদের সামরিক উপস্থিতির জোর জানান দিলো। চীন শুধু শ্রীলঙ্কায় বন্দর তৈরির মধ্যে ইন্ডিয়া মহাসাগরে নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা দেয়নি, দেশটি ইন্ডিয়া নিয়ন্ত্রিত আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নিকটবর্তী মিয়ানমারের সমুদ্র অঞ্চল কোকো দ্বীপে বন্দর তৈরি করে বঙ্গোপসাগরেও ইন্ডিয়ার আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। কোকো দ্বীপের পাশাপাশি মিয়ানমারের কিয়াক ফিয়াওয়ে চীন বন্দর তৈরি করছে। চীনের যুক্তি, এই বন্দর দিয়ে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে চীনের কুওমিং ও ইউনানে জ্বালানি পৌছেঁ যাওয়া সহজ হবে। জ্বালানি পরিবহনের পাশাপাশি চীন ইন্ডিয়ার উপস্থিতিকেই বরং চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। এশিয়ায় কি করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র : বঙ্গোপসাগর মোটামুটি ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে চীন ও ইন্ডিয়া। এ কারণে বঙ্গোপসাগরে কোনভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটি হতে দিবে না চীন ও ইন্ডিয়া। বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে ২০১২ সালে ‘টাইমস নাউ’ এর প্রতিবেদনে। ভারতের এই মিডিয়াটি প্রথমে একটি খবর প্রকাশ করে। তাতে বলা হয় যে, বঙ্গোপসগারের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম যুদ্ধ জাহাজ সপ্তম নৌবহর আসছে। সেখানে মার্কিন এই যুদ্ধ জাহাজটির জন্য একটি স্থায়ী ঘাটি দেয়া হবে। এ ঘটনায় বাংলাদেশের যত উদ্বেগ তার থেকেও বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করে ইন্ডিয়া মিডিয়া। বিষয়টি সত্যিই পর্যবেক্ষণের। কারণ, যতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের মিত্রতার সম্পর্ক থাকুক না কেন নির্দিষ্ট ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ রয়েছে। বিশেষত বঙ্গোপসাগর ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের স্বার্থ এক নয়। কারণ ২০১৪ সাল থেকে আফগানস্তান হতে মার্কিন সৈন্য প্রত্যহার করা হবে। দেশটি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে আগামি দিনে তাদের প্রধান লক্ষ্য ইন্ডিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে। বঙ্গোপসগার থেকে মার্কিনীদের নিকটতম নৌ ঘাটি আছে দিয়াগো গর্সিয়া বহুদূরে। এ অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রবেশ করতে হলে বর্তমান পৃথিবীতে যে যুদ্ধের ডিসকোর্স বানিয়েছে তারা সেসব উপাদন থাকতে হবে এখানেও। কথিত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধের ডিসকোর্সের প্রধান উপাদানগুলো বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে হাজির রয়েছে। তাহলে আর সমস্যা কোথায়? পাঠক একটু লক্ষ্য করুন। থাইল্যান্ডের একটি অংশ, মিয়ানমারের আরাকান আর বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চল দিয়ে এই বিশেষ ইসলামি কথিত জঙ্গিবাদের উপস্থিতি রয়েছে। রয়েছে তাদের ট্রেনিং ক্যাম্পও। অর্থ্যাৎ সন্ত্রাসবাদ যুদ্ধের ক্ষেত্রের জন্য ইসলামি জঙ্গিবাদ অবশ্যই থাকতে হবে। আর এসব স্থানগুলোতে তা ভালভাবেই আছে। বাংলাদেশের পত্রপত্রিকাগুলো একটু ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, শুধু বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চলের বিভিন্ন জঙ্গলে কতগুলো জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব রয়েছে। এসবই গ্রেট গেমের অংশ। একটি বিষয় পরিস্কার, বাংলাদেশকে ঘিরে আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারতের প্রধান স্বার্থ তার পূর্ব দেশের সাত কন্যা রাজ্যগুলো টিকিয়ে রাখা। আর বাজারের উপর দখল রাখাতো রয়েছে। অন্যদিকে চীনের স্বার্থ বঙ্গোপসাগরে সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখে এ অঞ্চলের ক্ষমতাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা। এসবের সাথে বাজার সম্পর্কতো আছেই। অন্যদিকে মার্কিনীদের যদি এ অঞ্চলে সামরিক আধিপাত্য বাড়াতে হয় তাহলে এসব হেজিমনির মধ্যে তার নতুন হেজিমনি তৈরী এবং সাময়িকভাবে ইন্ডিয়া-চীনের সাথে আপোষ রফা করা ছাড়া এই মূহুর্তে বিশেষ কিছু করনীয় নেই। ফলে যদি হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে গ্রেট পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষিপ্ত হয় তাহলে ইন্ডিয়া তাকে ততখানিই ক্ষিপ্ত করবে যতখানি হলে ইন্ডিয়ার স্বার্থের প্রতিক‚লে যুক্তরাষ্ট্র যাবে না। আর একটি গণবিরোধী শক্তির সাথে ইন্ডিয়া বেশিদিন থাকতে চাইবে না। কারণ আখিরাতে তাতে ইন্ডিয়ার লাভ নেই। ফলে হাসিনার সাথে ইন্ডিয়া স্থায়ীভাবে আছে-এরকম ভাবা যুক্তিসঙ্গতই নয়ই বরং আত্মঘাতি বটে। চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি হাসিনার সাথে ইন্ডিয়ার থাকার কোন কারণ নেই। অর্থ্যাৎ শেখ হাসিনাকে ইন্ডিয়া শুধু গাছে নয়-চাদেঁ পাঠিয়ে রকেট ফিরিয়ে আনবে। হাসিনার আর ফেরার পথ থাকবে না। দুই কুকুরের লড়াই: এই তত্বটি বহুল আলোচিত। যদিও তত্বটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। বিশেষত, আওয়ামী ইতিহাসবিদরা। সে আলোচনা তুলে রাখলাম অন্য কোথাও বলার জন্য। তবে স্বাধীনতার ৪৩ বছর এই ‘দুই কুকুর’ ক্ষমতা নিয়ে চরম কামড়াকমাড়ি করছে নিজেদের মধ্যে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এই লড়াইকে দুই কুকুরের লড়াই বলেছে। এর মধ্যে বাস্তবেই জনগণ নেই। একপাশে আছে জামায়াত ইসলাম (এই লড়াই এখন পর্যন্ত বিএনপি দর্শকের ভ‚মিকা নিয়েছে) অন্যদিকে আওয়ামী লীগ। যেহেতু জামায়াত ও আওয়ামী লীগের এই কামড়াকামড়ির মধ্যে জনগণ নেই সে কারণে জনগণ উভয় ‘কুকুর’কে প্রত্যাখ্যান করার শুভক্ষণ খুজছে। এমনকি যদি সেই পরিবর্তন সেনাবাহিনীও ঘটায়-তবু জনগণ তাকে স্বাগত জানাবে। সম্ভবত সেরকম পরিণতির দিকেই এগুচ্ছে দেশ। আজ, না হয় কাল, পরশু-তরশু সেরকমটাই হবার সম্ভাবনা বেশি। তার জন্য দেশের মানুষ অপেক্ষা করছেন। অন্যান্য বিষয়গুলিকে পাশে রেখে নাগরিক টেনশানের কথা বললে সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতি জিয়াউর রহমানের আর্বিভাব ঘটেছিলো রাজনীতিতে ব্যাপক সমর্থন নিয়ে। সেনা সমর্থিত জাতীয় সরকার : দেশে সহসাই একটা পরিবর্তন আসছে আর তা না হলে বাকশাল কায়েম হচ্ছে। সভাবতই কোন দিকে যাবে দেশ। যদি অর্থনীতি হয় রাজনীতির ভিত্তি তাহলে অর্থনীতিকে রক্ষা করাই হলো রাজনীতির কাজ। যদি বর্তমান রাজনীতি উদিয়মান মধ্য আয়ের সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের অর্থনীতি রক্ষা না করতে পারে তাহলে ভবিষ্যাতের রাজনীতি তৈরী হবে এটাই নিয়ম। পুজিঁতন্ত্রকে এভাবেই রক্ষা করবে রাজনীতি। কিন্তু ভবিষ্যাতের রাজনীতিটা কি? এখন পর্যন্ত যা কিছু দৃশ্যমান তাতে এটা বলা যেতে পারে যে-উপরের আঞ্চলিক ও বিশ্ব পরাশক্তির হাতের নাগালের বাইরে না যায় এমন একটি নিয়ন্ত্রকমূলক শাসন ব্যবস্থা। অবশ্যই সেখানে এমনসব প্রতিনিধিদের রাখা যাতে পরাশক্তিগুলোর সবার ভাগেই কিছু না কিছু আসে। আর এসব করতে পারবে একমাত্র দেশের সেনাবাহিনী পেছন থেকে। সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার অবস্থা হবে সম্মানজনকভাবে দেশ থেকে বিদায়। তবে প্রশ্নটা হলো-তা কি কোনভাবেই বর্তমান শেখ হাসিনা ও খালেদার গণতন্ত্র থেকে উন্নতর কিছু হবে? রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে-তা হবার কোন সুযোগ নেই। কারণ-পুতুল ও দালালের মধ্যে পার্থক্য আছে। একটির জীবন নেই। আরেকটির জীবন থাকলেও তার জন্ম, নিজের জীবনের জন্য নয়। তবুওতো তা জীবন। জামায়াত দেখে ভয় পাবার কিছু নেই : এই লেখার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়-তবুও বন্ধুদের ক্রমাগত উশকানিতে জামায়াত সম্পর্কে কিছু কথা এখানেই বলে রাখি। তাহলো-এ দলটি এখন একদম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিড়ানকে পরিণত হয়েছে। দলটি মার্কিনীদের পরামর্শ শুনে একদম খাদের কিনারায় যেমন চলে গেছে। তেমনি গণবিরোধী একটি ভ‚মিকার পক্ষে থাকার জন্য দেশব্যাপী যে জনবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে তাতে মনে করার কারণে নেই যে দেশে তারা একটি সশস্ত্র বিপ্লব করে ক্ষমতায় যাবার পায়তারা করছে। তারা যা করছে তার সোজা বাংলা হলো ত্রাসের সৃষ্টি করছে। জনমনে ভিতি ছড়ানো। আর এমন একটি নৈরাজ্য তৈরী করা যেখানে সাধারণ মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই। আর সেই পরিস্থিতিতে একটি সিভিল মিলিটারি আমলা ক্যু সংঘটন করা যায়। আর এমনটিই যখন মার্কিনীদের চাওয়া তাহলে জামায়াতের সেই পথে হাটতে অসুবিধা নেই। ইতিমধ্যে তারা এ কাজে উলে¬খ্যযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। এতে জামায়াতের লাভের চেয়ে শেষ অংকে অপূরনীয় ক্ষতির স্বীকার হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা গেছে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে-সে মিশন ব্যার্থ। এরপর কয়েক শ’ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে। তবে আন্দোলন শুরুর আগে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাসিঁর রায়ের পর যে নৈরাজ্য জামায়াত-শিবির ঘটিয়েছে যার ফলে সংগঠনটি দুটির এক শ’র উপর কর্মী নিহত হয়েছে। কয়েক হাজার চীরতরে পঙ্গু হয়েছে। বাকিদের একটি বড় অংশ জেলে। সরকার বিরোধী আন্দোলনের আগে এই অতিরিক্ত শক্তি ক্ষয়ের কারণে দলটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। এখন যা করছে তা হলো গেরিলা পদ্ধতিতে অ্যাকশান। এ পদ্ধতির অ্যাকশানে বেশি লোকের দরকার নেই। কিন্তু দলটি যুক্তরাস্ট্রের পরামর্শে অতিরিক্ত শক্তি ক্ষয়ের পরও না পারলো যুদ্ধাপরাধীদের বাচাতে। না পারলো আওয়ামী লীগ সরকারকে ফেলে দিতে। এখন সর্বশেষ দলটি ভরসা করছে সেনাবাহিনীর উপর। তবে জামায়াত-শিবিরের মনে রাখা দরকার গত ৫ বছরে সেনাঅভ্যন্তরে এমন সব গুনগত পরিবর্তন হয়েছে-সেখানে সাবেকি মুসলিম লীগ পরিবেশটি আর আগের মত উজ্জ্বল নেই। ফলে যারাই ক্ষমতায় আসুক ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেবার সাহস করবে না বলেই মনে হয়। এমনকি বিএনপি এলেও। ফলে অযাথা শক্তিনাশ দলটির ভবিষ্যৎ বির্পযয় আরো ত্বরান্বিত করবে বলেই ধারণা করি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন