বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৩

সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিধান নেই

নির্বাচনের সময়েও প্রধানমন্ত্রী একই ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারবেন ++ রাষ্ট্রপতিকেও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করতে হবে ++ নীতি নির্ধারণী সব ক্ষমতাই থাকবে ওই সরকারের


বর্তমান সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন বিধান নেই। বরং নির্বাচন হতে হবে 'মেয়াদকালীন সরকারের অধীনে'। কেননা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিনের মধ্যে। ফলে কোন 'অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের' দায়িত্ব এ সরকারকে পালন করতে হবে না। ম্যান্ডেটকালীন সময়ের দায়িত্ব পালনের কারণে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগের ইচ্ছা ব্যক্ত করারও কোন প্রয়োজন নেই। এছাড়া বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রয়োগ করছেন নির্বাচনকালীন সময়েও তিনি একই ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। সংবিধানে এ সংক্রান্ত সব ধরনের ক্ষমতাই তার রয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতিকেও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে সকল কাজ করতে হবে। সরকার চাইলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন প্রণয়ন করতে পারবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে মর্মে প্রায় প্রতিদিনই সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে। দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও বলেছেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান রয়েছে সেই বিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সরকারের বা জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষে দায়িত্ব পালনকারী সরকারকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলা হয়। ভারত এবং বৃটেনের মতো সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোন নীতিনির্ধারণী কাজ করে না। সরকার পরিচালনার অত্যাবশ্যকীয় দৈনন্দিন কাজগুলোই শুধু এই সরকারকে করতে হয়। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীর পর আমাদের সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলতে আর কিছুই নেই। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন বিধানও আর সংবিধানে নেই। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের আসন শূন্য ঘোষণা না করেই তিনশ' আসনের নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। আর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিনের মধ্যে। এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "সংসদ সদস্যের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে- মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে।" এই বিধানের কারণে সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন কমিশনকে আরেকটি সংসদ নির্বাচন করতে হবে।

মেয়াদ শেষে সংসদ বিলুপ্তির পর প্রধানমন্ত্রী সাধারণত রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রপতি তার উত্তরসূরি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করেন। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী এ ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন সময় আর সৃষ্টি হচ্ছে না। যেহেতু সরকার এবং সংসদের মেয়াদের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কোন সুযোগ নেই। বর্তমান সংবিধানে একটি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের নির্দেশনা রয়েছে। সংবিধানের ৫৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা থাকিবে এবং প্রধানমন্ত্রী ওই সময়ে তিনি যেরূপ স্থির করিবেন সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী লইয়া এই মন্ত্রিসভা গঠিত হইবে। ৫৬ অনুচ্ছেদের (২) উপ-অনুচ্ছেদের শর্তাংশে বলা হয়েছে, "তবে শর্ত থাকে যে তাহার সংখ্যার অনূন্য নয়-দশমাংশ সংসদ সদস্যগণের মধ্য হইতে নিযুক্ত হইবেন এবং অনধিক এক দশমাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্য হইতে মনোনীত হইতে পারিবেন।" একই অনুচ্ছেদের ২ উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বা তাহার কর্তৃত্বে এই সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হইবে।" নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর এই সর্বময় ক্ষমতা প্রয়োগে সংবিধানে কোন বিধি-নিষেধ নেই। এমনকি রাষ্ট্রপতির কর্ম সম্পর্কে সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদে যে নির্দেশনা রয়েছে নির্বাচনকালীন সময়েও একই ব্যবস্থা থাকবে। অর্থাত্ কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতিকে সকল কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুধুমাত্র দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব ছিল। নীতিনির্ধারণী কাজের ওপর সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু আমাদের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সময়ে যে সরকার থাকবে তার নীতি নির্ধারণীসহ অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন প্রণয়নের ক্ষমতাও থাকবে। ফলে বর্তমান সময়ে এবং নির্বাচনকালীন সময়ের মধ্যে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য সংবিধানে নির্দিষ্ট নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন