বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০১৩

ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে বাড়ছে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ

বিশ্ব হিন্দু-পরিষদের নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়া গত ২২ জানুয়ারি ভোকার শহরে উসকানিমূলক বক্তৃতা দিয়েছেন। এ জন্য পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা করার কথা। তবে তাকে গ্রেফতারের ধারেকাছেও নেই পুলিশ। মেইল টুডে পত্রিকার রিপোর্টে জানানো হয়েছে, পুলিশ তোগাড়িয়ার নামে এজাহার দিয়েছে। কিন্তু রাজ্যসরকার সবুজ সঙ্কেত না দেয়া পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা হবে না।
গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর আর পাতিল বলেছেন, ‘প্রবীণ তোগাড়িয়াকে গ্রেফতার করা-না-করা সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সরকারের পক্ষে এ ধরনের বিষয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করি না।’ পুলিশ অফিসারেরা বলেছেন, রাজ্যসরকার অনুমতি দিলেই আমরা তোগাড়িয়াকে গ্রেফতার করতে পারব। কারণ, এ ক্ষেত্রে ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ প্রয়োজন (পুলিশ তোগাড়িয়াকে গ্রেফতার করতে পারে না, মেইল টুডে, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)।
বিশ্ব হিন্দু-পরিষদ (ভিএইচপি)-এর মহাসচিব প্রবীণ তোগাড়িয়া বেশ নিশ্চিন্তেই রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে এফআইআর বা এজাহার দায়ের করার পর একটা সপ্তাহ চলে গেল, তবুও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অথচ ভোকায় শহরে বক্তৃতায় ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ তার নামে। নেতৃস্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় খবর উঠেছে। তা হলোÑ তোগাড়িয়া ইস্যু নিয়ে পুলিশ আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাঝে চলছে ‘পিং-পং খেলা’।
যেকোনো সাধারণ মানুষও এটা ভালোই বোঝেন যে, এটা দায়িত্বশীল লোকজনের টালবাহানা। মহারাষ্ট্র পুলিশ সম্পর্কে বলা যায়, সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর ব্যাপারে তাদের আচরণ গৌরবজনক নয়। ভিডিও কিপে দেখা গেছে, ধুলে এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রাজ্যপুলিশও সহিংসতা এবং অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে অংশ নিয়েছে। এমনকি এ জন্য ওদের গ্রেফতার পর্যন্ত করতে হয়েছে। এর থেকে টের পাওয়া যায় ‘পচনের ক্ষতটা কত গভীর’।
মন্ত্রীর হঠাৎ বোধোদয় ঘটেছে যে, কোনো কোনো ব্যাপারে পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাখে। মনে হয়, এ কথা বলে মানুষকে ভুলিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে সরকার বিরত থাকতে চায়। মিডিয়ার বেলায় যা ধারণা করা হয়েছিল, সেটাই ঘটেছে। ওয়াইসির বিদ্বেষ প্রচারমূলক বক্তৃতার বিরুদ্ধে যেসব মিডিয়া কঠোর ভূমিকা নিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছিল, তারাই তোগাড়িয়ার বিরুদ্ধে মুখ না খুলে সচেতনভাবে নীরব হয়ে আছে।
এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তোগাড়িয়া এত বছর বিশ্ব হিন্দু-পরিষদের কাজ করে সব ফন্দিফিকির শিখে গেছেন। পুলিশ তার বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করা মানে, তার চেহারার ‘জ্যোতি’ আরো বাড়িয়ে দেয়া, যা নির্বাচনী আসনে তার অবস্থান আরো মজবুত করবে। তিনি হিসাব কষেই বলেছেন, ‘ভোট লোভী রাজনৈতিক লোকজন’ তাকে আইনি ঝামেলায় ফেলার জন্য এসব মামলায় জড়াচ্ছে। তার মতে, এ ধরনের মামলাগুলো তার নিজের বিরুদ্ধে নয়; বরং সব হিন্দুর বিরুদ্ধে, যারা নিজেদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করে এবং যারা উন্নত শিক্ষা, চাকরি ও ব্যাংকঋণ চায়।’
প্রবীণ তোগাড়িয়ার গত কয়েক বছরের কার্যকলাপ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেনÑ এমন যে কেউ জানেন, তিনি এবারই প্রথম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করেননি কিংবা তার বিরুদ্ধে মামলা এবারই প্রথমবারের মতো দায়ের হয়নি। মাত্র গত মাসেই হায়দ্রাবাদে পুলিশ তার নামে মামলা ঠুকে দিয়েছে। অভিযোগ, ভাগ্যলক্ষ্মী মন্দির ইস্যুতে ডিসেম্বরে হায়দরাবাদ এসে তিনি বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। বলা হয়েছে, বক্তৃতায় তোগাড়িয়া উল্লেখ করেছেনÑ চার মিনারসংলগ্ন ভাগ্যলক্ষী মন্দিরে পূজা করতে না দিলে হায়দ্রাবাদকে অযোধ্যায় পরিণত করা হবে।’
গত বছর তোগাড়িয়া কাশ্মিরের রাজৌরিতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়েছেন বক্তৃতা দিয়ে। ফলে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। সাথে সাথেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল ১৫৩ ক ধারায়। তারিখ মার্চ ৬, ২০১২। কিন্তু সেখানেও রাজনৈতিক চাপে পুলিশ তাকে আটক করেনি। এ প্রসঙ্গে রাইজিং কাশ্মির নিউজ পত্রিকায় জানানো হয়েছে, তোগাড়িয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটেও রাজৌরিতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ণ বক্তৃতা দিয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং তোগাড়িয়াকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে।
কয়েক বছর আগে প্রবীণ তোগাড়িয়া গুণ অবজার্ভার পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের তুলনা করেছিলেন রাহু ও কেতুর সাথে। হিন্দু কিংবদন্তির দু’জন দৈত্যের নাম রাহু ও কেতু। ওই পত্রিকার ২০০০ সালের ৯-১৫  অক্টোবর সংখ্যায় সে সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল।
মহালসা মন্দিরে তোগাড়িয়া বলেছিলেন, মহালসা দেবতা রাহু ও কেতুকে ধ্বংস করেছিলেন। কিন্তু তারা দু’জন হিন্দুত্ব ধ্বংস করার জন্য মুসলিম ও খ্রিষ্টান হিসেবে পুনর্জন্ম লাভ করেছে।’ এ কথার অর্থ হলো, মুসলমান আর খ্রিষ্টানদের ধ্বংস করা ধর্মান্ধ, উন্মত্ত ও মৌলবাদী সব হিন্দুর দায়িত্ব।
অবশ্য, ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানোর ক্ষেত্রে তোগাড়িয়াই হিন্দুত্ব ব্রিগেডের একমাত্র ‘তারকা’ নন। একই মহলের আরো অনেকেই মাঝে মধ্যে সংখ্যালঘুদের প্রতি আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছে। এক দশক আগে নেতৃস্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল হিন্দু-পরিষদের এক নম্বর নেতা অশোক সিংহল সম্পর্কে। সে সময় আমরা দেখেছি স্বাধীনতা-পরবর্তীকালের জঘন্যতম সাম্প্রদায়িক গণহত্যা। ক্ষমতাসীন লোকজনের যোগসাজশেই এটা সংঘটিত হয়েছিল।
সে সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছিল, বিশ্ব হিন্দু-পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বদমেজাজি এক বুড়ো, যিনি জনতাকে উত্তেজিত ও উচ্ছৃঙ্খল করে তোলেন। তিনি গুজরাটের হত্যাযজ্ঞকে বলেছেন ‘হিন্দুদের জাগরণ’। এটা তার সহকর্মী প্রবীণ তোগাড়িয়ার বক্তব্যের সাথে সংযোজন। তোগাড়িয়া ঘোষণা করেছেন, মুসলমানদের নিয়ে যে ‘সমস্যা’, জাতির এর একটা ‘চূড়ান্ত সুরাহা’ করার প্রস্তুতি নেয়া উচিত। তোগাড়িয়ার উসকানিমূলক একটি ঘোষণা হলো, ভারতের মুসলমানদের উপযুক্ত ঠিকানা শরণার্থী শিবির। যখন কথাটা বলেছিলেন, তখন গুজরাটে এক লাখেরও বেশি মুসলমান মানবেতর জীবন কাটাচ্ছিলেন। এমনকি গোরস্থানেও তাদের থাকতে হয়েছে।
অশোক সিংহল আবার বিষ ছড়াচ্ছেন। নাৎসি স্টাইলে তিনি বক্তৃতা দিয়ে বললেন, গুজরাটের ঘটনাগুলো হচ্ছে ‘সফল পরীক্ষা’। হুমকিও দিয়েছেন তিনি, ‘এর পুনরাবৃত্তি ঘটানো হবে সারা ভারতে।’
তিনি এ কারণে খুশি যে, গ্রামের পর গ্রাম থেকে পুরোপুরিই ইসলামকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং মুসলমানেরা বাধ্য হয়েছে উদ্বাস্তুশিবিরে ঠাঁই নিতে। তিনি বলেন, ‘এটা হিন্দু সমাজের বিজয়।’ আসলে হিন্দুত্ব শান্তি, সহিষ্ণুতা ও বহুত্ববাদের পক্ষে। কেউ যদি হিন্দুত্বের অবমাননা করে থাকে, এ ক্ষেত্রে অশোক সিংহল আর তার সংগঠনগুলোর নামই সবার আগে আসবে।
অশোক সিংহল নিছক একটি ‘উপদ্রব’ নন। তিনি যেকোনো গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, আধুনিক সমাজের প্রতি হুমকি। তার বক্তৃতাগুলো অযৌক্তিক ঘৃণা ও ভীতি ছড়িয়ে দেয়। তার নৈতিক ভিত্তি বিকৃতি ব্যাধির কুফল ছাড়া কিছু নয়। শ্রীলঙ্কার লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম বা এলটিটিইকে সমর্থনের দায়ে জেলে যেতে হয়। স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়ার (সিমি) কর্মীদের নামে মামলা হয় উসকানিমূলক স্টিকার লাগানোর দায়ে। তাহলে এই লোকটার (অশোক সিংহল) বিরুদ্ধে কেন সরকার মামলা করছে না? তিনি তো প্রকাশ্যেই ভারতের নাগরিকদের একাংশের বিরুদ্ধে জনতাকে সহিংস হতে উসকিয়ে দিচ্ছেন।’ ২০০২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দি হিন্দুস্তান টাইমস-এর  Book this man শীর্ষক সম্পাদকীয়তে এই কথাগুলো বলা হয়েছিল।
২০০৪ সালের ১২ এপ্রিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল ‘বেস্ট বেকারি মামলা’র। এই রায়ে বলা হয়, The fanatics who spread violence in the name of religion are worst than terrorist and more dangerous than an alien enemy. যেসব ধর্মোন্মাদ ধর্মের নামে সহিংসতা ছড়িয়ে থাকে, তারা সন্ত্রাসবাদীর চেয়েও অধম এবং বিদেশী শত্রুর চেয়েও বিপজ্জনক।’
জনগণের এমন এক অংশের বিরুদ্ধে আপনি বিদ্বেষ-বিষ উদগিরণ করছেন যারা প্রজাতন্ত্রের সদস্য হিসেবে আপনার সমান; আপনি সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করছেন; বলছেন ‘চূড়ান্ত নিষ্পত্তি’র কথা। এত কিছুর পরও আপনি অবাধে মুক্তজীবন কাটাচ্ছেন।
এটা এমন এক দেশে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে দেশ প্রতিদিন ধর্মনিরপেক্ষতা অবলম্বনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে ভোলে না। বাস্তব অবস্থা এটা নয় যে, জনতাকে উসকানি দেয়ার এসব লোকজনকে আইনের সীমাবদ্ধতার দরুন কিছু করা যায় না। তদুপরি এই লোকগুলো আমাদের জীবনের ওপর কর্তৃত্ব করছে।
‘ধর্মীয় কারণে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মাঝে শত্রুতা সৃষ্টি করা’ ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি) অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৫৩ ধারায় এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে দাঙ্গা বাধানোর উসকানি দেয়ার কথা। ২৯৮ ধারায় বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে যে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার জন্য কিছু বলা দণ্ডনীয়। ১৫৩খ ধারা হলো, জাতির সংহতির পরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য দণ্ডনীয় অপরাধ। ৫০৫ (২) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, বিভিন্ন শ্রেণীর মাঝে শত্রুতা, ঘৃণা কিংবা অসদ্ভাব সৃষ্টি বা বৃদ্ধি করে, এমন বক্তব্য আইনত দণ্ডনীয়। ১০৮ ধারায় বলা হয়েছে, ১৫৩ ধারা লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
১৯৯৭ সালে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়ানোর দিকনির্দেশনা’ জারি করেছিল। এতে বলা হয়েছিল, সাম্প্রদায়িক প্রেক্ষাপটে উসকানিমূলক ও উত্তেজক বক্তব্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব।’ এই নির্দেশনাবলির ক্রমিক নম্বর ১৫-তে বলা হয়েছিল, এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন কার্যকর ইচ্ছাশক্তি প্রদর্শন করা প্রয়োজন, যাতে বীভৎস ঘটনা ঘটতে না পারে। সাম্প্রদায়িক শক্রতা সৃষ্টি করে যারা, তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডাবিধির ১৫৩ক, ১৫৩খ, ২৯৫-২৯৮ ও ৫০৫ ধারা এবং অন্য যেকোনো আইন অবাধে প্রয়োগ করা উচিত।’
নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বাধ্যতামূলক চুক্তিকে ভারত অনুমোদন করেছে ১৯৭৯ সালে। এর ২০ নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘বৈষম্য, বৈরিতা ও সহিংসতা উসকে দেয়Ñ এমন জাতিগত, বর্ণবাদী বা ধর্মীয় বিদ্বেষ আইন দিয়ে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
যা হোক, আমরা ফিরে আসি প্রবীণ তোগাড়িয়ার প্রসঙ্গে। তার ব্যাপারে সরকার সব সময় উদার ও সহনশীল মনে হয়েছে। তিস্তা সেতালভাদ বলেছেন, ‘নানদেদ ও মালেগাঁও, দুজায়গার ঘটনার তদন্তই প্রমাণ করে, বিশ্ব হিন্দু-পরিষদের উঁচুপর্যায়ের নেতারা উসকানি দিয়েছেন। প্রবীণ তোগাড়িয়া ও গিরিরাজ কিশোর তরুণদের উদ্বুদ্ধ করেছেন সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডে। ২০০৬ সালে বিস্ফোরণের ঘটনার প্রাক্কালে উভয়েই নানদেদ গিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবুও আসামি বা সাক্ষী হিসেবে তাদের নাম চার্জশিটে যাতে না আসে, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সতর্ক।’ এই কথাগুলো ২০০৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পিপলস ডেমোক্র্যাসি পত্রিকায় বর্ণনা করা হয়েছে। সে লেখাটির শিরোনাম Full Investigate Hindutva Terrorists Role (হিন্দুত্ব সন্ত্রাসবাদীদের ভূমিকার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই)।
হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসের বহু ঘটনায় একজন বড় আসামি লে. কর্নেল পুরোহিত। তিনি মুম্বাইর হোটেলে তোগাড়িয়ার সাথে দেখা করার কথা স্বীকার করেছেন। মালেগাঁও ঘটনার তদন্তের সময় পত্রপত্রিকায় জানানো হয়েছিল, তোগাড়িয়া সাম্প্রদায়িক ‘অভিনব ভারত’ সংগঠনকে অর্থ জুগিয়েছেন।
সিএনএন-আইবিএন পরিবেশিত রিপোর্ট : নয়া দিল্লি-মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলার বিষয়ে একটি চাঞ্চল্যকর খবর হলো, লে. কর্নেল শ্রীকান্ত প্রসাদ পুরোহিত দাবি করেছেন, প্রবীণ তোড়াগিয়া ‘অভিনব ভারত’কে অর্থ জোগানোর কাজে জড়িত ছিলেন। ২০০৮-এর ২৯ সেপ্টেম্বর মালেগাঁওতে বোমা বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত হন। এর সূত্র ধরে ‘অভিনব ভারত’ নিয়ে তদন্ত হয়েছে। লে. কর্নেল পুরোহিতকে গ্রেফতার করা হয়েছে এই বিস্ফোরণের হোতা হিসেবে। এ দিকে তোগাড়িয়া তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ দমন কর্তৃপক্ষের প্রধান হেমন্ত কারকারে ‘২৬/১১’ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন। তিনি একাই উদঘাটন করেছিলেন হিন্দুত্ব সন্ত্রাসীদের ভারতব্যাপী নেটওয়ার্ক। তার মৃত্যুর পর এ বিষয়ে তদন্ত কাজ বন্ধ করে দেয়া হয় মাঝপথেই। ফলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার পর্যায়ে পৌঁছা যায়নি। হেমন্তের পরে যিনি তার পদে নিযুক্ত হন, এই মামলার কাজ এগিয়ে নিতে তার আগ্রহ দেখা যায়নি। এরপর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের টানবাহানা ও সময়ক্ষেপণ চলে। দাবার ঘুঁটিগুলো ধরা পড়েছে। তবে হিন্দুত্ব রাজনীতির সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকেরা এখনো গ্রেফতার হয়নি। মনে হচ্ছে, এটা যেন সন্ত্রাসের নাটের গুরুদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ।
তোগাড়িয়াদের ঘৃণাবিদ্বেষমূলক প্রচারণার ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা ক্ষীণ। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড অবলম্বনের দায়ে অভিযুক্ত হওয়া নিয়ে ক্ষমতাসীন ইউপিএ সরকারের মাথাব্যথা নেই। এমন এক বিরূপ পরিস্থিতিতে সান্ত্বনা পাওয়া যায় এক দশক আগের একটি ঘটনা স্মরণ করে। তখন কয়েকটি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে জনগণের প্রতিবাদের চাপে সরকার বিশ্ব হিন্দু-পরিষদের ‘ত্রিশূল দীক্ষা’ কর্মসূচিকে অস্ত্র আইনের আওতায় এনেছিল। তদুপরি, ত্রিশূল বিতরণকালে তোগাড়িয়াসহ যেসব নেতা সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়াচ্ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল সরকার।
সরকারের এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হিন্দু-পরিষদ ঘোষণা দিয়েছিল, তারা এ ধরনের আদেশ-নির্দেশ মানে না এবং ত্রিশূল দীক্ষা কর্মসূচির আয়োজন করা হবে তোগাড়িয়ার নেতৃত্বে। তখন সরকার হিন্দু-পরিষদের অফিস ঘেরাও করে সাড়ে ৬০০ ত্রিশূল বাজেয়াপ্ত করেছিল। নির্ধারিত কর্মসূচিতে তোগাড়িয়া অস্ত্র আইন লঙ্ঘন করে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
(কাউন্টার কারেন্টস ডট অর্গ-এর সৌজন্যে)
লেখক : নয়াদিল্লির হিন্দি সাময়িকী ‘সন্ধান’ সম্পাদক ও সমাজকর্মী। তার লেখা সর্বশেষ বই ‘Godse’s Children : Hindutva Terror inIndia.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন