রবিবার, ১৩ মে, ২০১২

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক


বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নের প্রধান প্রতিবন্ধকতা মূলত মানসিক। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় মাইন্ড সেট। লৌহবেষ্টনীর আবরণের মাঝে আবর্তিত ভারতীয় আমলাতন্ত্র কোনোকালেই বাংলাদেশকে আমলে আনেনি। ইদানীং বর্ডারে বিএসএফ প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশের কোনো না কোনো নাগরিককে হত্যা করছে। নাক উঁচু ও ুব্ধ ভারতীয় আমলারা মনে করেন যে ২০০২ সালে রৌমারীতে বিডিআরের জওয়ানরা আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘনকারী অগ্রসরমান অস্ত্রধারী বিএসএফের জওয়ানদের হত্যা করে এবং নিহত বিএসএফের জওয়ানদের লাশগুলো যেভাবে বহন করে নিয়ে গিয়েছিল তার তুলনায় বর্ডারের কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা গুলিবিদ্ধ ফালানীর লাশ তেমন কোনো লোমহর্ষক ঘটনা নয়; বরং বিএসএফ উদারতা দেখিয়ে ২০০৯ সালের ২৫-২৮ ফেব্র“য়ারি পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চলাকালে বিএসএফের একটি লাইন বিডিআরের নিহত ডিজি জেনারেল শাকিলের নামে নামকরণ করেছিল বলে তাৎণিকভাবে ভারতীয় মিডিয়ার মাধ্যমে ফলাও করে খবর এসেছিল। তবে পরে এ বিষয় নিয়ে আর কোনো খবর পরিবেশন করা হয়নি। রূঢ় বাস্তবতার নিরিখে আগ বাড়িয়ে এই উদারতা দেখিয়ে বিএসএফ কী প্রমাণ করতে চেয়েছিল তা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল।
বস্তুত ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারত তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ করা থেকে বিরত থেকে বাঙালিদের হƒদয় জয় করে নিয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধী স্বর্গমর্ত একাকার করে বঙ্গবন্ধুকে পাক কারাগার থেকে মুক্ত করতে পরাশক্তিকে সম্মত করতে সম হন। সেই সাথে বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ভারতে আশ্রিত এক কোটি বাংলাদেশী শরণার্থীকে ভারত শুধু খাইয়ে-পরিয়ে সেবাশুশ্রƒষা করে ান্ত হয়নি; মুক্তিবাহিনীকে প্রশিণ দিয়ে, অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সুসজ্জিত করে যুদ্ধের ময়দানে প্রেরণ করে। শেষে মুক্তিবাহিনীর সাথে নিজ সশস্ত্র বাহিনীকে প্রেরণ করে বাংলাদেশকে শত্র“মুক্ত করা ত্বরান্বিত করে। হƒদয়বান ভারতের সেই অভূতপূর্ব সাহায্য-সহযোগিতার কথা বাংলাদেশ যুগ যুগ ধরে কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এত উচ্ছ্বাস ও বদান্যতায় ভরা ৯ মাসের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের সোনালি দিনগুলোর অব্যাহতি পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের তেমন কোনো উন্নীত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না। সব কিছুই কেমন জানি মেকি। প্রত্যেক বিষয়ে কেন যেন কোথা থেকে একটা কিন্তু এসে যায়। তার কারণ খুঁজে বের করাও অত্যন্ত দুরূহ ও জটিল বৈকি। রীতিমতো গবেষণার বিষয়বস্তু। যদিও এক লহমায় বলা যায়, অন্য বহু কারণ ছাড়াও দুই দেশের নীতিনির্ধারকদের জটিল মাইন্ড সেটই মূলত দায়ী।
ভারতের নীতিনির্ধারকেরা প্রধানত পাঞ্জাব, উত্তর ভারত, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও তামিলনাড়–র বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও আমলা দ্বারা পরিবেষ্টিত বা প্রভাবিত। তারা কাশ্মির ইস্যুসহ পরাশক্তি ও সামগ্রিকভাবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও চীনকে নিয়ে মহাব্যস্ত থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের মতিগতি পর্যবেণ করতে গিয়ে তাদের প্রায়ই হিমশিম খেতে হয়। তাই হরহামেশা ইসরাইলের দ্বারস্থ হচ্ছেন সারা পৃথিবীর গোয়েন্দা খবরাখবর জানার জন্য। একই সাথে পরাশক্তি ও শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মাঝে সূক্ষ্ম চাল চালিয়ে ও অঙ্ক কষে নিজের অবস্থানকে বিশ্ব অঙ্গনে মজবুত করার স্বপ্নে কিংবা জাতিসঙ্ঘে স্থায়ী আসন লাভের আশায় ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা বিভোর থাকেন, সেখানে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশকে নিয়ে চিন্তা করার অবসর তাদের কোথায়? তারা তো কাশ্মির, অরুণাচল, তিব্বত, লাদাখ, ভারত মহাসাগর রক্ষা বা প্রতিরক্ষাব্যূহ রচনাকে অগ্রাধিকার দিতে অভ্যস্ত। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গোপসাগর ও অরুণাচল প্রতিরক্ষাব্যূহ রচনা ক্ষেত্রে বা চীনকে ভারত মহাসাগর থেকে দূরে রাখতে গিয়ে মার্জিনে বাংলাদেশের কথা তাদের মনে সাময়িকভাবে হলেও উদয় হয়। তাই মিয়ানমারকে তারা হাতে রাখতে চান।
অবশ্য সময় সময় বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকেরা অবিবেচকের মতো ভারতের প্রসারিত বন্ধুত্বের হাতকে সময়মতো গ্রহণ করতে ইতস্তত করে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের মনে অহেতুক ােভের সঞ্চার করেছেন। তবে প্রথম থেকেই ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা নদী ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রেও ধরেই নিয়েছেন যে বাংলাদেশের ব্যাপারে তারা যা করছেন তা যথেষ্ট ও ন্যায়সঙ্গত। ফলে উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সেভেন সিস্টারস রাজ্যগুলোতে তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর জন্য তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে করিডোর পেতে তারা অত্যন্ত আগ্রহী। অন্য সব পয়েন্ট তাদের কাছে বাতুলতার শামিল। সময়ের অপচয় মনে করেন। অথচ বাঁধ দেয়ায় গঙ্গার পানি বা কোনো নদীর পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হওয়ার কালে যদি শুকিয়ে যেতে থাকে তাহলে পরবর্তীকালে উজানেও তা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাবেÑ বিজ্ঞানসম্মত এই যুক্তিকে ভারতের নীতিনির্ধারকেরা আমলে আনছেন না কেন? কেন তারা সারফেস ওয়াটার থেকে ড্যাম বানিয়ে পানি সংগ্রহে আগ্রহী নন? কারণ স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক বহুজাতিক কোম্পানি বড় প্রজেক্ট করে বড় পয়সা বানাতে চায়। তাতে যদি নদী শুকিয়ে যায় যাকগে তাদের কী! একই সাথে ব্যবসায়-বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করার ফন্দিফিকির বের করা ভারতের নীতিনির্ধারকদের বিশেষ উদ্দেশ্য হওয়াই অতি স্বাভাবিক। বাণিজ্যিক লেনদেনে নিজের দেশের স্বার্থ সংরণ করার দায়িত্ব বাংলাদেশেরÑ ভারতের নয়। ভারত বরং মুখরোচক কথা বলে বা লোকদেখানো এমওইউ করে গদগদভাবে হাসিমুখে হ্যান্ডশেক করাকে বড় কূটনৈতিক বিজয় মনে করবে কারণ ভারতের নীতিনির্ধারকেরা ধরেই নিয়েছেন যে ভারতের তরফ থেকে সমঝোতা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সমাধার কোনো সময়সীমানা নেই এবং বাংলাদেশী নীতিনির্ধারকদের এ বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করার হিম্মৎ কম, বরং করিডোর দিয়ে যাতায়াত শুরু করতে হবে অবিলম্বে; তারপর ভেবেচিন্তে দেখা যাবে আশ্বাসের বাণী কতটুকু বাস্তবে বাস্তবায়িত করা যায়।
ভারত বলতে গেলে সৌভাগ্যবান। দ জনশক্তি, দেশের আয়তন ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ১৯৫০ দশকের শুরু থেকেই সঙ্গত কারণেই পশ্চিমা শক্তি ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে একটি শক্ত গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। যদিও প্রাথমিকভাবে মূলত পাকিস্তানকে ভর করে তারা তলে তলে ভারতকে বাগে আনতে প্রয়াসী হয়। সে হিসেবে বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর পশ্চিমা পরাশক্তি ভারতকে সাথে নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষিত করে স্ট্র্যাটেজি তৈরিতে প্রচণ্ডভাবে আগ্রহী। ভারত সুযোগ বুঝে তার নিজের দেশের ফায়দা লুফে নিয়ে বেশি করে লাভবান হবে এটাই স্বাভাবিক। সেই আঙ্গিকের আলোকে বলতে হয়, বাংলাদেশ ভারতের সাথে গভীর বন্ধনে আবদ্ধ না থাকলে বেকায়দায় পড়ার সম্ভাবনাই ষোলো আনা। কারণ লোকমুখে একটি কথা চালু আছে, আমেরিকা যার বন্ধু তার শত্র“র প্রয়োজন হয় না। ইউনিপোলারের যুগে আমেরিকা তোয়াক্কা না করলেও আমেরিকাকে বন্ধু মনে করতে হবে বাংলাদেশকে। অন্তত বাংলাদেশ সরকার আগ বাড়িয়ে আমেরিকার বিরোধিতা না করা। সেই বন্ধুত্বের দাবিতে বাংলাদেশ কতটুকু আগ বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করবে তা নির্ভর করবে নীতিনির্ধারকদের প্রজ্ঞার ওপর। তা না হলে আগ বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে শেষ পর্যন্ত খাল কেটে কুমির আনার শামিল হবে। অন্য দিকে আশি দশকের থেকেই বঙ্গোপসাগর ও সাগরতলে সম্ভাব্য খনিজসম্পদ তেল, গ্যাস, মিঠা পানি (এমনকি গুজব আছে যে ইউরিনিয়ামও পাওয়া যেতে পারে) এবং বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে কয়লা, গ্যাস, তেল ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ আহরণে পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর প্রখর দৃষ্টি রাখে। সেখানে ভারত মাত্রাতিরিক্ত সুবিধা আদায়ের প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকলে পশ্চিমা শক্তির সাথে ভারতের একটি স্নায়ুযুদ্ধ চলাটাই স্বাভাবিক। আবার রাশিয়া ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর প্রভাব খাটাতে চাইবে। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমা শক্তিকে ভারতের সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে অতি সন্তর্পণে এগোতে হবে। তাতে করে সাময়িকভাবে হলেও বাংলাদেশ প্রশ্ন পেছনের কাতারে চলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
আরব বিশ্ব পশ্চিমা শক্তির ইশারায় নাচে। তাদের অরক্ষিত ঐশ্বর্যই তাদের কাল। এ ঐশ্বর্যের সব চাবিকাঠি মারধর করে হলেও পশ্চিমা শক্তি তাদের কব্জায় রাখবে। সেই পরিপ্রেেিত এ মুহূর্তে পরাশক্তির রাষ্ট্রপ্রধানেরা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে অষ্টাদশ শতকের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দুই লুটেরা ডাইরেক্টর লর্ড কাইভ ও ওয়ারেন হেস্টিংসের ফারাক তেমন কিছু নয়। রয়েছে যুগের বা কালের ফারাক মাত্র। উভয়েই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামান্য কেরানি হিসেবে চাকরিতে প্রবেশ করেন। নিজ বুদ্ধিবলে ছলেবলে লুটপাট করে তারা সম্পদের পাহাড় সৃষ্টি করে বিলাত থেকে লর্ড উপাধি পেয়ে অভিজাত হলেন। বর্তমানে বিশ্বায়নের নামে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পরসম্পদ লুণ্ঠনকারী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ডাইরেক্টরদের মতোই ব্যবহার করছেন। আরব ও আফ্রিকাসহ বিশ্বের অনুন্নত অথচ ঐশ্বর্যশালী দেশগুলোর সাংগঠনিক দুর্বলতার পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে পরাশক্তি বিশ্বব্যাপী তাদের দেশের সম্পদের পাহাড় সৃষ্টি করেছে। অথচ আরব দেশগুলোর মাঝে বিরাজমান অনৈক্য দূর করে আরব বিশ্ব, ইরান, ইরাক, মিসর, উত্তর আফ্রিকা, আফগানিস্তান থেকে শুরু করে সিআইএস দেশগুলো একত্র হলে গ্যাস, তেল ও খনিজসম্পদসমৃদ্ধ একটি জোটের আবির্ভাব ঘটত। উদীয়মান পরাশক্তি মধ্য ও দণি আফ্রিকার অফুরন্ত খনিজ ও অন্যান্য সম্পদ এবং অন্যান্য দেশগুলোর উদ্বৃত্ত সম্পদ আফ্রিকাসহ অনুন্নত দেশগুলোর উন্নয়নের কাজে লাগাতে পারত। সেই জোটের সাথে রাশিয়া ও চীন যোগ দিলে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক শক্তির উদয় হতো, যা কিনা কালক্রমে পরাশক্তিতে পরিণত হতে পারত। সেই পরাশক্তির সদস্য হিসেবে পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভিয়েতনামসহ দণি-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলো জাপান এমনকি আসিয়ান দেশগুলো যোগ দিলে পরাশক্তির কেন্দ্রবিন্দু এশিয়া মহাদেশে স্থানান্তরিত হতো। কায়েমি-স্বার্থান্বেষী মহল এ দেশগুলোকে একত্র হতে দেবে না। একত্র হতে হলে চাই উল্লেখিত প্রত্যেক দেশে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী মহলসহ প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদদের মহাসমারোহ।
তবে এ মুহূর্তে বিশ্বায়নের যুগে গা ভাসিয়ে বাংলাদেশকে তার দ্বার চতুর্দিকে খুলে না দিয়ে সর্বপ্রথম ন্যায়সঙ্গত এবং আন্তর্জাতিক আইনসম্মত সমতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে ভারতের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে বেশি করে মনোযোগী হতে হবে, যাতে করে শক্ত একটি ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের দিকে আলোকপাত করতে পারে। তা না হলে সামনের দিকে এগোতে গিয়ে পেছন থেকে হেঁচকা টানে হোঁচট খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। সে জন্য নিজস্ব দুর্বলতাগুলো চিহ্নিতকরণ করে দূরীভূত করা ও নীতিনির্ধারণী পর্ষদ থেকে অযোগ্যদের সরিয়ে নিজেদের তথা নিজ ঘর থেকে আগাছা পরিষ্কার করে পরিচ্ছন্ন হতে হবে বাংলাদেশকে। নিজের দেশের নীতিনির্ধারক যখন ভারত থেকে ট্রানজিট ফি চাওয়ার প্রশ্নে বলে ওঠেন, এটা অসভ্যতামি বা ওই ধরনের কটূক্তি তখন ভারতের সাথে সমতার ভিত্তিতে কোনো এমওইউ করার মতো হিম্মৎ বাংলাদেশ সরকারের আছে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের চিন্তা ও চেতনায় ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। দলমত নির্বিশেষে ব্যক্তিগত স্বার্থ, দলীয় স্বার্থ, মতাসীন সরকারের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ঐকমত্যের নীতিনির্ধারণে অটল থাকতে হবে।
ভারত বড় দেশ। সে হিসেবে ভারতকে বড় ভাইয়ের আসনে বসাতে বাংলাদেশের কার্পণ্য করা ঠিক হবে না। তবে তা দেশের স্বার্থ বিশেষ করে সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো বিকাশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে নয়। সে জন্য বাংলাদেশকে আপাতত প্রত্যভাবে মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা এবং পরোভাবে চীনকে তার পাশে রেখে একে অপরের প্রতি আস্থাভাজন হয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে ভারতের প্রতি গাঢ়ভাবে বন্ধুত্বের হাত সম্প্রসারিত করা উচিত। পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরাসহ সেভেন সিস্টারসের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রতি বন্ধুত্বের হাত সম্প্রসারিত করা কালে বাংলাদেশকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যাতে করে অর্বাচীন কোনো বাংলাদেশী নাগরিক বা গোষ্ঠী সেই দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মতো য়রোগ বাংলাদেশে ইমপোর্ট করে না নিয়ে আসে। রূপগঞ্জ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কৃষি, ওষুধসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ব্যাপারে রাশিয়ার সাথে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পাদন করে বন্ধুত্বের হাত সম্প্রসারিত করা যায়। সার্বিকভাবে পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ভারতকে মধ্যমণি রেখে বিশেষ বিশেষ বিষয়াবলির জন্য বিশেষ বিশেষ দেশের সহযোগিতা গ্রহণ করা, যাতে দণি এশিয়ায় শান্তি বজায় থাকে।
বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ প্রচণ্ডভাবে ধর্মভীরু। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানেরা ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতো আদর্শবান মুসলমান আবার বাঙালিত্বের প্রশ্নে অনড়। সেখানে সে গর্বিত বাঙালি। রাজনৈতিক দর্শন চর্চায় সে শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের মতো ভাবালুতায় ভোগে। পেন্ডুলামের মতো এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে এনার্জি ও সময় নষ্ট করে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বিশাল মাপের রাজনীতিবিদ তথা জনমানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো অবিচল, সাহসী ও বেপরোয়া নেতার মতো দৃঢ় মনমানসিকতা সাধারণ বাঙালি বিশেষ করে বর্তমান রাজনীতিবিদদের মধ্যে নেই বললেই চলে। ফলে ভারতের সাথে সমতার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে গিয়ে বাংলাদেশ বারবার হোঁচট খাচ্ছে। দুর্বল আমলাতন্ত্র, তার চেয়েও দুর্বল ড্রাফট তৈরিকারী কলম পেষক, এলোমেলো রাজনৈতিক চিন্তাধারা, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি, মূল্যবোধের চরম ধস, তাঁবেদার ও নীতিভ্রষ্ট নেতাকর্মী দ্বারা পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকেরা ভারতের দেশপ্রেমিক, প্রজ্ঞাবান, ঝানু নীতিনির্ধারণদের মোকাবেলা করতে গিয়ে বলতে গেলে শুকনো মাঠে আছাড় খাচ্ছে। জ্ঞানের অভাব ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক চিন্তাধারার অভাবেই এ দুরবস্থা। ইংরেজি আমাদের মাতৃভাষা নয়। নীতিনির্ধারকেরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলায় ভাষণ বা নীতিনির্ধারকমূলক বক্তৃতা বা নির্দেশিকা প্রদান করলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না; বরং তাতে করে আমাদের অশুদ্ধ ইংরেজি দূষণ থেকে ইংরেজি ভাষা মুক্তি পাবে এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন যেমন হবে, তেমনি ভাবের আদান-প্রদান ও অভিব্যক্তি দৃঢ়ভাবে প্রকাশ পাবে।
বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের উপলব্ধি করতে হবে যে, দক্ষিণ এশিয়ার একটি নাজুক জিও-পলিটিক্যাল অবস্থানে বাংলাদেশ অবস্থিত। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে ভারত তার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত রাজ্যগুলোয় সহজে যাতায়াত ও দ্রুত শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা বা প্রতিরক্ষাব্যূহ রচনা করতে অপারগ। বিশেষ করে অরুণাচল প্রদেশে। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের টিপের মাঝ দিয়ে অতি সহজে আসাম-মেঘালয়ের সাথে যোগাযোগ রা করতে পারে। সিলেটের ভেতর দিয়ে শিলং হয়ে অরুণাচল প্রদেশের কিংবা কুলাউড়া হয়ে মনিপুরী, নাগাল্যান্ড, চিন হিলে অথবা আখাউড়া হয়ে আগরতলা ও মিজোরামে যাতায়াত অনেক সহজতর। এ স্পর্শকাতর বিষয়টিকে বাংলাদেশের সুবিবেচনায় যেমন রাখতে হবে তেমনি নদীর পানিবণ্টন, বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক সীমানা নির্ধারণসহ অন্য বিষয়াবলি মনে রেখে সমতার ভিত্তিতে ভারতকে বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বের হাত সম্প্রসারিত করতে হবে। সেখানে অতি চালাকি বা কোনো ভণিতার দরকার নেই। প্রয়োজন নেই পোশাকি কথাবার্তার। প্রয়োজন হƒদ্যতার সাথে সমস্যা সমাধান করা। জমির উর্বরতা, জৈব সারের ব্যাংক, দুর্যোগ মোকাবেলা, সেচব্যবস্থা, মিঠা পানি সংরণ, উন্নত মানের কৃষিবীজ সংরণ এবং গবেষণা, আবহাওয়া ও অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে কাজ করতে পারে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দুই নম্বরি মালামাল সরবরাহ করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে গিয়ে ভারতকে বেকাদায় ফেলে দেয়। সেই আবহমান কাল থেকে মারওয়ারি ও অন্যান্য ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে নিম্ন মানের মাল সরবরাহ করে অধিক মুনাফা অর্জন করে আসছে। তার থেকে ভারতকে নিস্তার পেতে হবে। দুই দেশের স্পর্শকাতর বিষয়াবলি উভয় দেশ সমান গুরুত্ব দিয়ে দরদের সাথে দ্রুত সমাধা করে এগিয়ে যাবে সমৃদ্ধির দিকে, উন্নতির দিকে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমানা চিহ্নিতকরণে আন্তর্জাতিক রায় পেয়ে বেশ সুন্দর অবস্থানে রয়েছে। এ রায় বাংলাদেশ অনেক আগেই পেত যদি রিপ ভান উইঙ্কেলের মতো ঘুমিয়ে না থাকত। ঘুম ভাঙানোর জন্য রিয়ার এডমিরাল খুরশিদ আহম্মদ সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। অবশ্য এ রায় অর্জনের সব প্রশংসার দাবিদার বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকার। সাথে সাথে বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে সদ্য নির্বাচনে জয়ী অং সাং সুচিকে (Aung Sung Suu Kyi) ঢাকায় একটি নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করা।
একইভাবে ভারতের সাথেও সমুদ্র চিহ্নিতকরণে আন্তরিকভাবে ও আইনসম্মতভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সমুদ্রসীমানা চিহ্নিতকরণের সাথে সাথে ভারত মহাসাগরে ভারতীয় নৌবাহিনী যেমন আধিপত্য বিস্তার করে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করবে, তেমনিভাবে বঙ্গোপসাগরে আন্দামান দ্বীপ পর্যন্ত আধিপত্য বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশকেও শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তুলতে হবে। শক্তিশালী রাডার সিস্টেম, কোস্টাল গার্ডসহ ফাস্ট মুভিং গান বোট বেশি বেশি করে নেভিতে সংযোজিত করতে হবে। তিনটি বহুমাত্রিক ফ্রিগেট, দু’টি ডেস্ট্রয়ার, চারটি মাইন স্যুইপার ও দু’টি সাবমেরিন (সেন্টমার্টিন ও তার দেিণ মোতায়েন করার জন্য) এবং চারটি মাদার ভেসেলসহ ফাস্ট মুভিং মিসাইল বা টর্পেডো বোট বেশি দরকার। বাংলাদেশের উপকূলে সাবমেরিন তেমনভাবে অপারেট করতে পারবে না কারণ ডেপথের অভাব রয়েছে। তাই ফ্রিগেট মাইন স্যুইপার, ডেস্ট্রয়ার ও গানবোটের সাথে ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সংবলিত ফাইটার এয়ারক্রাফট ও আর্মড হেলিকপ্টার, কোস্টাল আর্টিলারি ও মেরিন, ফ্রগম্যান ও রিভারাইন ফোর্সসহ গানবোট বা ফাস্ট মুভিং মিসাইল বোট ডোমিনেইটেড নেভি গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশের রাস্তাঘাট, রেল ও জলপথ বিশেষ করে গভীর সমুদ্রবন্দর পার্শ্ববর্তী ও আঞ্চলিক দেশগুলোর ব্যবহারের জন্য সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া ও দণি চীন অঞ্চল (পরে নিকটবর্তী আসিয়ান দেশ) সমন্বয়ে একটি ইকোনমিক জোন সৃষ্টি করা সম্ভব। যাতে প্রত্যেক দেশ ব্যবসায়-বাণিজ্য সম্প্রসারিত করে, নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করতে পারে। আমাদের অঙ্ক কষে দেখতে হবে ৪০ টন লরি ও তদূর্ধ্ব মালবাহী লরি কত দ্রুত বেনাপোল, পঞ্চগড়, সিলেট ও আগরতলা থেকে মালবাহী লরি, ইলেকট্রিক গুডস ট্রেনে ও ইঞ্জিন বোটের মাধ্যমে সমুদ্রবন্দরে (যার গভীরতা ২১ মি. হতে হবে) স্থল ও জলপথে কত সহজে পৌঁছতে পারে। সে অনুযায়ী উন্নতমানের রাস্তাঘাট নির্মাণ করা। মালামাল পৌঁছাতে যাতায়াতের জন্য ভিসা ও মুদ্রা (কমন মুদ্রা) ভাঙানোর ঝক্কি যাতে বেশি পোহাতে না হয়। থাকা-খাওয়া ও ই-মেইল, ই-কমার্স ও ব্যাংকিংসহ মাল স্টোরেজ করার সুবিধা থাকতে হবে। বেনাপোল থেকে সোজা লাকসাম হয়ে বা ভোলার ওপর দিয়ে মাইজদী হয়ে চট্টগ্রাম (সোজা চার লেইনের রাস্তাÑ দুই পাশে খাল ও রেল যোগাযোগ থাকবে) গভীর সমুদ্রবন্দরে আড়াই ঘণ্টায় যেন পৌঁছে এবং পঞ্চগড় থেকে ৪ ঘণ্টায়। অর্থাৎ চীনের দণিাঞ্চল থেকে ভারতের ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে ছয় ঘণ্টায় চট্টগ্রাম গভীর সমুদ্রবন্দরে মালামাল পৌঁছে। যাতে করে শুরুতেই চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে দৈনিক লেনদেন ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মতো হয়, যা অচিরেই উন্নীত হয়ে হবে দুই বিলিয়ন ডলার। একই সাথে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো একই মুদ্রা ব্যবহার করে নিজেদের মালের ও ব্যবসার স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন দেশের মালামাল ভারতসহ অন্যান্য দেশের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো যাতায়াত বাবদ রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে। বস্তুত ভারতকে প্রধান করে সংশ্লিষ্ট অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে সদস্য করে একটি রেগুলেটরি বডি এবং একইভাবে বাংলাদেশকে প্রধান করে একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা। তাতে অংশগ্রহণকারী এজেন্সি ও দেশগুলোর মাঝে করপোরেট কালচার ডেভেলপ করবে। কানেকটিভিটি বহুলাংশে বেড়ে যাবে। সম্ভাবনার এই অপার দ্বারের কথা ভারতকে ভালো করে বোঝাতে হবে। ভৌত অবকাঠামোসহ রেল, স্থল ও জলপথ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে গড়ে তুলে ২১ মি. ড্রাফটসম্পন্ন গভীর সমুদ্রবন্দর যথাশীঘ্র্র তৈরি করতে পারলেই এশিয়ান হাইওয়ের সক্রিয় পার্টনার হতে পারবে বাংলাদেশ এবং ভারতসহ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের সাথে সামগ্রিক উন্নয়নসহ ব্যবসায়-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার উদ্দেশ্যে বন্ধুত্বের হাত সম্প্রসারিত করবে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এ বিষয়াবলি হ্যান্ডল করার মতো কোনো ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি। তথ্যসমৃদ্ধ কোনো মাস্টারপ্ল্যান বা কোনো বৈজ্ঞানিক পেপার তৈরি করেনি। রাস্তাঘাট ৪০ টন ও তদূর্ধ্ব লরি, ভ্যান চলাচলের উপযুক্ত হতে হবে। রাস্তায় ব্যাংকিং, মেইনটেন্যান্স সুবিধাসহ হোটেল, স্টোর, গুদামঘর ইত্যাদি তৈরি করতে হবে। এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ রাস্তা অবিলম্বে নির্মাণ ও জলপথকে উন্নতমানের করতে হবে। রেলকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে হবে। মালামাল পৌঁছানোর গতি দ্রুত থেকে দ্রুততর করতে হবে। এখন পর্যন্ত গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের কোনো খোঁজ নেই।
নিউকিয়ার পাওয়ার প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ওষুধ এবং কৃষিকাজে উৎপাদন বাড়ার সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা এখনো হাতে নেয়া হয়নি। নিউকিয়ার পাওয়ার প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরিতে ওভারহেড খরচাদি অনেক বেশি কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু সুদূরপ্রসারী ফলাফল বাংলাদেশের অনুকূলে। সে জন্য এ প্রকল্প পদ্মা ব্রিজের চেয়েও অনেক বেশি অগ্রাধিকার পেতে হবে। থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সম্মতিক্রমে ও সিঙ্গাপুরের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে থাইল্যান্ডের বেথুন এলাকায় পানামা খালের মতো একটি সংযোগ খাল কাটা হলে চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর থেকে প্যাসিফিক বা প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে দূরত্ব অনেকখানি কমে আসবে। চিন্তা ও চেতনা উঁচুমানের করতে হবে। প্রকল্প আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। তবেই ভারতসহ অন্যান্য দেশ বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করবে। পুঁজি বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাড়বে বহু গুণ। ছোট চিন্তা করলে শাঁখারীপট্টি বানানো সম্ভব কিন্তু সংসদ ভবন নয়। একইভাবে বিশাল দেশ ভারতকে বন্ধু হিসেবে পেতে হলে তার ওজনকে সহ্য করার মতো মনমানসিকতা ও সাহস সঞ্চয় করতে হবে।
১৯৪০ দশকের দলাদলির রাজনীতি ও ২৪ বছর পাকিস্তানি শাসকদের অপশাসন এবং ১৯৭১ সালে তাদের পৈশাচিক নির্যাতন, লুট, হত্যা, শোষণ আমাদের মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। ব্রিটিশ ভারতের দিকে তাকালে আমাদের মনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দোসর ও লাঠিয়াল বাংলার জমিদারদের অত্যাচার ও নির্লজ্জ শোষণের কথা, ১১৭৬ সালের মন্বন্তর ও ১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভি এবং কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানে লোমহর্ষক দাঙ্গার কথা মনে পড়ে। বেপরোয়া হয়ে আমাদের বাপ-দাদারা পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ঝাঁপিয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত আমরা পাঞ্জাবি মুসলমানদের খপ্পরে পড়ে যাই। তাই আমাদেরকে প্রচণ্ডভাবে শিকল ভাঙার গান গাইতে হলো। পাকিস্তানের দুষ্টচক্র থেকে আমরা মুক্ত হলাম। পাকিস্তান থেকে বের হয়ে আমরা আবার আরেকটা দাঙ্গাবাজ দুষ্টুচক্রের দ্বারা নিগৃহীত হতে চাই না। ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। আমাদের অবস্থা এখন অনেকটা সে রকম। আমরা উচ্চশিতি নাজিমউদ্দিনের মতো অতি ভদ্রলোক অথচ কোমরভাঙা নীতিনির্ধারক চাইনি। আমরা ইসলামিয়া কলেজের বিএ পাস করা ঘাড়তেড়া শেখ মুজিবের মতো নীতিনির্ধারক চাই। সে জন্য চাই দেশপ্রেমে উদ্ভাসিত, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বলীয়ান মাথা উঁচু করা দণ্ডায়মান বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মাঝে বহমান হোক সুস্থ, আন্তরিক ও স্বচ্ছ জনকল্যাণমুখী চিন্তাধারা। সেই ধারায় সিক্ত হয়ে বাংলাদেশ ভারতের সাথে আত্মিক যোগাযোগ স্থাপন করুক। খোলামেলা আলোচনা করুক। দুই দেশের সাধারণ মানুষের গমনাগমনকে সহজতর করে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করুক। নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নির্মূল করা ও ব্যবসায়-বাণিজ্য সম্প্রসারিত করার মাঝে উভয় দেশের সাধারণ মানুষের মঙ্গল নিহিত আছে। সম্পর্কোন্নয়নের েেত্র কোনো ধরনের হীনম্মন্যতার আশ্রয় না নেয়া। কারণ বাংলাদেশ-ভারত প্রধানত ভৌগোলিক অবস্থার কারণে বন্ধু হওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর কিন্তু নেই। তবুও আমরা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিই। অথচ ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সম্মিলিতভাবে পরাশক্তির থাবা থেকে বঙ্গোপসাগরকে বাঁচিয়ে রাখার হিম্মত রাখে। সে জন্য দরকার ছলচাতুরী নয়, একে অপরকে বিশ্বাস করা। আইনসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত রাজনৈতিক সমাধান দরদের সাথে খুঁজে বের করা। তবেই দণি এশিয়া হয়ে উঠবে আদর্শ শক্তিশালী এক আবাসস্থল।
বিশ্বমানের শিক্ষক মনমোহন সিং ঢাকায় এসে সহজ-সরল ব্যবহার দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের হৃদয় জয় করে গেলেও দিল্লিতে বসে থাকা নীতিনির্ধারকেরা তার দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার ব্যাপারে ততটা আন্তরিক নন। কারণ তারা তাদের প্রজেক্ট সময়মতো শেষ করে ভারতকে পরাশক্তিতে রূপান্তরিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেটাই তাদের জন্য বেশি প্রণিধানযোগ্য। বাংলাদেশ হইচই করলে পরে দেখা যাবে। তাতে সম্পর্কের যে চিড় ধরতে পারে এবং তাদের প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফিকে হতে পারে সে বিষয়ে মনে হয় তারা মোটেও চিন্তিত নন। কারণ তারা বন্ধুত্বের চেয়েও খবরদারিতে বিশ্বাসী। এ ধরনের মনমানসিকতার জন্যই কিন্তু পাকিস্তান ভেঙে যায়। আর এ ধরনের খবরদারি মনমানসিকতার জন্য ভারতের সাথে বহু ভালো ভালো চুক্তি স¤পাদিত হলেও বাস্তবে দেখা যায় যে সেগুলো বছরের পর বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও বাস্তবায়ন হয় না। তাতে লোকে আশাহত হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে উন্নতি সাধনকল্পে ভারতকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মনে এমন আশঙ্কা কেমন করে উদিত হলো যে বাংলাদেশের লোক সাম্প্রদায়িক এবং বাংলাদেশে পটপরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তান আমলে পাঞ্জাবি ডমিনেটেড গোয়েন্দা সংস্থা যেমন মনগড়া রিপোর্ট দিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াত, এটাও সে ধরনের একটি কার্যকলাপ। মেধা, চিন্তা ও চেতনায় পূর্ব ও পশ্চিম পাঞ্জাবের অধিবাসীদের মধ্যে তেমন কোনো ফারাক নেই। এক দিকে আছে সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঞ্জাবি মুসলমান আরেক দিকে আছে সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঞ্জাবি হিন্দু ও শিখ। ফারাক শুধু এটুকু। ২৮ মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকার ভিনদেশী এক বাঙালি ডিপ্লোম্যাটের কলেজপড়–য়া মেয়ে কেঁদে কেঁদে বলেছিল যে দুই দিকের পাঞ্জাবি একত্রে মিলে বাঙালিকে একেবারে পিষে ফেলবে। ভারত পাকিস্তানের মতো শোষণ ও খবরদারির মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশের দিকে কপট বন্ধুত্বের হাত বাড়ালে বাংলাদেশ ঝামেলায় পড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সাথে সাথে এই কপট বন্ধুত্বের কারণে বাংলাদেশের মতো ভারতের কপালেও দুঃখ আছে।
বাঙালি মুসলমান মনেপ্রাণে মুসলমান, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইসলামকে সে অন্তরের অন্তস্তল থেকে ভালোবাসে। সে যখন নিজেকে নিজেই শাসন করার সুযোগ পায় তখন সে একেবারে অসাম্প্রদায়িক। কিন্তু খবরদারির ছলে কেউ তাকে যখন অসাম্প্রদায়িক হতে বলে তখন সে সত্যি সত্যি সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠে। এই স্পর্শকাতর বিষয়টি বাংলাদেশীদের ওপর ছেড়ে দেয়াই ভারতের জন্য সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বিনা কারণে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি না করা। রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর প্রধান ও প্রিয়তম কবি। কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীরা কোনো বিশেষ দেশের নাগরিক হলেও তারা কিন্তু বিশ্বনাগরিক। তার পরও বলতে হয় জন্ম, কর্ম ও নাগরিক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ভারতবাসী। তবু ১৯৬১ সালে সেই পাকিস্তানের আইয়ুবের শক্ত মার্শাল ল উপো করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশের মানুষ রবীন্দ্রশতবার্ষিকী নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে পুলিশি হুলিয়া মাথায় বহন করে সগৌরবে উদযাপিত করেছিল। কোনো দূতাবাসের বা সরকারের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা লাগেনি বলেই সেই অনুষ্ঠান হয়েছিল জনগণের প্রাণের অনুষ্ঠান। বিশ্বকবিকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়াই ছিল স্বতঃপ্রণোদিত সাধারণ মানুষের আন্তরিক প্রয়াস। ছিল না কোনো ভণিতা, ন্যাকামি বা ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের কোনো গন্ধ। ১৯৬০ দশকে খাজা সাহাব উদ্দীন চাচ্ছিলেন আমরা রবীন্দ্রনাথকে ভুলে যাই। ফল হলো উল্টো। বাংলাদেশের সর্বত্র রবীন্দ্রচর্চা বেড়ে যায় বহু গুণ। জন্ম নিলো ছায়ানটের মতো ছায়ানিবিড় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। অথচ রবীন্দ্রজন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান যখন সরকার বা দূতাবাসের সহায়তায় অনুষ্ঠিত হয় তখন তা হয়ে ওঠে নিছক তাঁবেদারদের অনুষ্ঠান। সেখানে প্রাণের কোনো ছোঁয়া থাকে না। তাদের খপ্পরে পড়ে ১৫০ বছরের বৃদ্ধ কবির কঙ্কাল দেহটি দম বন্ধ হয়ে আপনা আপনি মারা পড়বে। রবীন্দ্রনাথকে ভর করে আমাদেরকে অসাম্প্রদায়িক হতে হবে না।
বাংলাদেশের মানুষ আন্তরিকভাবে মুসলমান তবে বেশির ভাগই একেবারে অসাম্প্রদায়িক। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি। আমাদের সবার একান্ত আদরের ধনÑ গৌরবের ধন। কবিকে সেখানেই থাকতে দিন। রাজনীতির নোংরা গলিতে তাকে অনুগ্রহ করে নিয়ে আসবেন না। ভুলে গেলে চলবে না যে দশ চক্রে ভগবান ভূত হওয়ার মতো ঋষীকবি রবীন্দ্রনাথ ‘বর্গি এলো দেশে...’ গান বা কবিতা আবৃত্তি করে বাংলাদেশের মায়ের সন্তানকে ঘুম পাড়ানোর প্রয়াসকে উপো করে অহেতুক শিবাজিকে নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন। পরে অবশ্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। একইভাবে কলকাতার বাবুদের উন্নাসিকতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে রবীন্দ্রনাথ শেষ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। বস্তুত এ অঞ্চলে মৌলবাদী রাজনীতির আশ্রয় কেন্দ্র কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানে। প্রয়োজনের তাগিদে ও আধিপত্য বিস্তারের তাগিদে বিকল্প শক্তি হিসেবে তাদের রসদপত্র ও ট্রেনিংয়ের জোগান দিয়ে আসছে ভারত ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বেশির ভাগ েেত্রই বদ্ধমূল ধারণা থেকে কিংবা না বুঝে বরং ব্যক্তিগতভাবে টাকা বানানো তথা কমিশন পাওয়ার লোভে বা অস্ত্র বিক্রি করার ফিকির-ফন্দিতে তারা এসব কাজ প্রকল্প হিসেবে হাতে নেয়। পরে দেখা যায় ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের মতো এসব সন্ত্রাসী হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। বাংলাদেশকে এসব অপকর্ম থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে।
সঙ্গত কারণে মনে হয় ভারতের নীতিনির্ধারকের কাছে গ্রেটার বেঙ্গল কনসেপ্ট এখনো একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তবতা। সে জন্য তারা আনন্দিত হবে যদি বাংলাদেশে কট্টর ইসলামপন্থীরা শাসন জারি করে। তাতে করে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে একটি উপ-আঞ্চলিক শক্তির বিকাশ ঘটার সম্ভাবনা তিরোহিত হবে। তবে প্রচণ্ড ধরনের ঝুঁকি আছে যে কট্টরপন্থীদের শেষ পর্যন্ত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এসব সেকেলে চিন্তাধারা দূরে সরিয়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেরই মনমোহন সিংয়ের সফরকে মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করে সুসম্পর্কের জাল বুনতে শুরু করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ভারতের নীতিনির্ধারকদের উপলব্ধি করতে হবে যে বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান নয়, বরং আবহমান কালের অসাম্প্রদায়িক পূর্ববঙ্গ। দণি এশিয়ার স্থিতিশীলতায় স্বাধীন ও সার্বভৌম জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ একটি শক্ত স্তম্ভ। ভারতের নীতিনির্ধারকেরা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের দেখছে প্রতিনিয়ত, কিন্তু তাদের পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের সমন্ধে সম্যক কোনো ধারণা নেই। জ্যোতি বসুকে কায়দা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে দেয়া হয়নি, তাতে পশ্চিমবঙ্গে কোনো হরতাল বা অসহযোগ আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। অথচ পূর্ববঙ্গবাসী বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বানাতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে সর্বাত্মক হরতাল ও অভূতপূর্ব অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলে শেষ পর্যন্ত হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে নেমে যায়। ফারাকটা সূক্ষ্ম হলেও মোটা দাগের ফারাক। ভারতকে তা অনুধাবন করতে হবে। বাংলাদেশের ওপর খবরদারি না করে আপনজন হিসেবে ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ালে বাংলাদেশের সাথে সাথে ভারতও লাভবান হবে প্রচণ্ডভাবে। তা না হলে ভারতকে খবরদারি জারি রাখার জন্য সূক্ষ্ম স্নায়ুযুদ্ধ চালাতে হবে। তাতে সময় ও এনার্জির অপচয় হবে। তাতে করে বন্ধুত্বের চিড় ধরাই স্বাভাবিক।
১৯৪০ দশকের অসুস্থ রাজনীতি থেকে বের হয়ে ২৪ বছর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাথে প্রথমে স্নায়ুযুদ্ধ ও পরে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে রাজনৈতিক চিন্তা ও চেতনায় বাংলাদেশীদের যে উত্তরণ ঘটেছে তা থেকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে পিছু হটা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়; বরং নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অবিচল আস্থা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বলীয়ান বাংলাদেশীরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে অপ্রতিহত গতিতে। ১৫০ মিলিয়ন মানুষের অগ্রযাত্রাকে রোধ করার ক্ষমতা খোদ ভারতের নেই। হয়তো বা সাময়িক বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তবে লেবু বেশি করে কচলালে তেতো হয়ে যায়। বেশি দরকষাকষি করে এবং চালাকি করে কায়েমি স্বার্থ হাসিল করতে গেলে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সাথে সাথে উত্তর-পূর্ব ভারত অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের অলিগলিতে ভারত প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় চলে যাবে। সেই অস্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশ তিগ্রস্ত হবে প্রচণ্ডভাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি তিগ্রস্ত হবে ভারত। ভারতের একক জাতীয়তাবাদের ভিত একেবারে নড়বড়ে হয়ে যাবে। তাই উভয় দেশের মঙ্গলার্থে সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব একান্তভাবে কাম্য।
লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্ত।
sejdach@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন