বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

রাষ্ট্রভাষার জন্য লড়াই করেছিলাম, এখন সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে হবে।


আহমদ রফিক। ভাষাসৈনিক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক। বহু গ্রন্থ প্রণেতা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী চেতনা এবং বাংলা ভাষার বর্তমান পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সাপ্তাহিক বুধবার-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বুধবার-এর নিজস্ব প্রতিবেদক মঈনুল হক

বুধবার : এ বছর ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পূর্তি। যে উদ্দেশ্য নিয়ে ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল আজকের প্রেক্ষাপটে তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
আহমদ রফিক : ভাষা আন্দোলনের উদ্দেশ্য খুব বেশি বাস্তবায়ন হয়নি। যেটুকু হয়েছে তা খুবই সামান্য। পাকিস্তানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান দাবিটা ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলা। কারণ তারা চেয়েছিল উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করতে। সে সময় কিন্তু আমাদের আরো কয়েকটি স্লোগান ছিল – যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা। পাকিস্তান আমলে নামকাওয়াস্তে ১৯৫৬ সালে সংবিধান রচনা করা হয়েছিল। এখানে একটা অদ্ভুত শর্ত যোগ করা হয়েছিল, যাতে বলা হয়েছিল, আগামী বিশ বছর ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি চলবে। তারপর গণপরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে উর্দু বা বাংলা কোনটা চলবে। এর মানে বাংলাকে ঠেকিয়ে রাখা। এরপর আমাদের ২০ বছর অপেক্ষা করতে হয়নি। এর আগেই ১৯৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হলো। বাংলাদেশের সংবিধানে খুব সুস্পষ্টভাবে বলা হলো, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এখন প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা যদি বাংলা হয় তাহলে আমরা বলতে পারি, এই রাষ্ট্রের জাতীয় ভাষাও বাংলা। আমরা দেখছি, সচিবালয়ে দাফতরিক কাজে বাংলা ব্যবহার হচ্ছে, শিক্ষায় দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা আছে। কিন্তু উচ্চ আদালতে বাংলা ব্যবহার হচ্ছে না এবং উচ্চ শিক্ষায়ও বাংলা নেই। বরং যেটি দেখা যাচ্ছে, রাজধানীতে এবং বড় নগরগুলোতে শিশুপর্যায় থেকে ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। এ কারণে ভাষা আন্দোলনে আমাদের চাওয়া পূরণ হয়েছে খুবই সামান্য, না পাওয়ার দিকটাই বেশি। উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞান শিক্ষায় মাতৃভাষার ব্যবহার, উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নেই। আমরা রাষ্ট্রটি পেলাম, পতাকা, মানচিত্র পেলাম এবং অন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেলাম, কিন্তু ভাষা আন্দোলনের যে দাবিগুলো ছিল তার বাস্তবায়ন দেখলাম না।
বুধবার : ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদী চেতনা এবং স্বাধীকারের আকাঙ্ক্ষার উন্মেষ ঘটেছিল। যার পরিণতি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। বর্তমানে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ কোন স্তরে রয়েছে বলে আপনার ধারণা?
আহমদ রফিক : ভাষা আন্দোলনের পর বিশেষ করে ষাটের দশকে দেশে বাঙালিয়ানা বা জাতীয়তাবাদী চেতনার একটা জোয়ার বয়ে গিয়েছিল। বাড়ির নাম বাংলা, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলা, ছেলে-মেয়েদের নাম বাংলা, বহুতল ভবনগুলোর নাম বাংলা রাখা শুরু হলো। সেটার পরিপ্রেক্ষিতেই ’৬৯-এর গণআন্দোলন এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালিরা তো যুদ্ধের ডাক দেয়নি। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানীরা সংলাপের নামে সময় নিল এবং নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে ক্ষমতা দিল না। উল্টো যুদ্ধ চাপিয়ে দিল। কিন্তু আজকে আমাদের আত্মন্বেষণ দরকার যে, ওই বাঙালিয়ানা কতটা নিখাদ ছিল। ওটাকি বাইরের আবেগ বা জলোচ্ছ্বাসের মতো উচ্ছ্বাস, নাকি সত্যিই আমাদের ভেতরে বাঙালিয়ানার চিন্তা ছিল? যদি আমাদের ভেতরে এই চিন্তা থাকে তাহলে আজকে এই অবস্থা কেন হবে? আজকে বাঙালিয়ানার পরিবর্তে এই বাঙালি জাতীয়তাবাদী চিন্তা নিয়ে দুটি ভাগ হয়ে গেল। একটি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, আরেকটি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। শিক্ষার্থী সমাজ ভাগ হলো, সাংবাদিক, পেশাজীবী সবাই ভাগ হয়ে গেল। একেবারে পরস্পরবিরোধী দুটি সুস্পষ্ট ভাগ। এটা তো বাঙালিয়ানার চরিত্র হলো না। এই কথাটি কিন্তু কি আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবী, কি বিএনপির বুদ্ধিজীবী কেউই বলছেন না। আমাদের সেই সময়ের বাঙালিয়ানা কতটুকু নিখাদ ছিল এবং তারমধ্যে সারবত্তা কতটুকু ছিল না কি রাজনৈতিক প্রয়োজনটা বেশি ছিল- এই জিনিসগুলো কিন্তু আজকে বোঝা দরকার। একই সঙ্গে আমরা যে দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্তে আবদ্ধ হয়েছি এর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বুধবার : সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর দাবি আপনারা করেছিলেন। কিন্তু সর্বস্তরে বাংলা ভাষা এখনো চালু হয়নি। এর কি অন্তরায় বলে আপনি মনে করেন?
আহমদ রফিক : সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর ক্ষেত্রে অন্তরায় কি তা খুব সংক্ষেপে একটি-দুটি কথায় বলা যায়। এর অন্তরায় হলো, আমাদের সদিচ্ছার অভাব। আর একটি বিষয়, আমার মনে হয়, আমরা অন্দোলন করলাম এবং কিছু পেলামও। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা যারা মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণীর ছিলাম – তারা কিন্তু ওইটুকু পেয়েই খুশি হলাম। যদি সর্বস্তরের মানুষের কথা ভাবা হয়, তাহলে নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষ কিন্তু পুরো সুফল পায়নি। স্বাধীনতার কথা ধরুন, আমরা তখন বলতাম, পাকিস্তানের ২২ পরিবার পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন চিন্তা করে দেখুন, কত শত ২২ পরিবার হয়েছে – যারা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক, শত কোটি টাকার মালিক। এই বিত্তবান, ব্যবসায়ী এবং মুনাফাবাজ শ্রেণীর সঙ্গে রাজনীতিকদেরও সম্পর্ক রয়েছে। এটা তো আমাদের আকাঙ্ক্ষিত জিনিস ছিল না। আমাদের একজন কবি লিখলেন, ‘লাঙ্গল ফেলিয়া বাহে অস্ত্র হাতে নিছিলাম …।’ লাঙ্গল ফেলে অস্ত্র নিয়ে যারা যুদ্ধ করল তাদের অবস্থা কি? আমি কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করে দেখেছি, সাধারণ স্তর থেকে যাওয়া বহু মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাহলে, মুক্তিযুদ্ধের সুফল একটি বৃত্তে আটকে আছে।
বুধবার : ৬০ বছরে বাংলা ভাষার একদিকে যেমন উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, অন্যদিকে ভাষা বিকৃতিসহ নানাভাবে ভাষার দূষণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর কারণ কি বলে আপনার মনে হয়?
আহমদ রফিক : এর কারণ হলো, ভাষার প্রতি মমতার অভাব। ভাষা সম্পর্কে যে চিন্তা-ভাবনাগুলো আমাদের ছিল, তা পরবর্তী পর্যায়ে আর অগ্রসর হয়নি। যখন দেখলাম আমরা সবকিছু পেয়ে গেছি, তখন ভাষার প্রতি আমাদের মমতাটা আর থাকলো না। থাকল না এই জন্য যে, পৌনে ২শ’ বছর আমরা ইংরেজদের শাসনে ছিলাম। আমাদের যে শিক্ষিত সমাজ তা ছিল ইংরেজি শিক্ষিত। তারা দেখল, তারা যদি আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি দিয়েই চলেন তাহলে ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল। বাংলা নিয়ে সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ তৈরি করতে যাবে কেন? এই শিক্ষিত শ্রেণীই কিন্তু ভাষা দূষণ, বিকৃত উচ্চারণ, অশুদ্ধভাবে ভাষা বলা- এই কাজগুলো করছে।
বুধবার : বাংলা ভাষা বিকৃতির জন্য রেডিও, টেলিভিশনসহ সংবাদ মাধ্যম এবং চলচ্চিত্র সম্পৃক্ত একশ্রেণীর ব্যক্তি দায়ী। বিকৃতিকারী ব্যক্তিদের হাত থেকে বাংলাভাষাকে রক্ষার উপায় কি বলে আপনার মনে হয়?
আহমদ রফিক : বিকৃতিকারী ব্যক্তিদের হাত থেকে বাংলা ভাষাকে রক্ষার উপায় হলো, যারা শিক্ষিত সমাজ গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ তাদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাকে রক্ষা করার দায় শিক্ষিত মানুষের। বাংলায় কথা বলা এবং বাংলায় জীবন যাপন করা। যে ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করেন তাদের তো সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি নেই। সাংস্কৃতিক দিক থেকেও শক্তি নেই। কাজেই কিছু করতে হলে শিক্ষিত শ্রেণীকেই করতে হবে। বিকৃতির হাত থেকে ভাষাকে রক্ষার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায়টি আমার কাছে খুবই অভিনন্দনযোগ্য মনে হয়েছে। আমরা যেটা করতে পারছি না, বিচার বিভাগের পক্ষে তা করা সহজ। আমি বই লিখলাম, কলাম লিখলাম এতে সরকারের কিছু আসে যায় না। কিন্তু আদালত যদি একটি রুল জারি করে, তখন তাদের গায়ে ঠিকই লাগে। সেদিক থেকে ভাষার ব্যাপারে আদালত একটি আদর্শ কাজ করেছে। ভাষা আন্দোলন আমরা এককালে করেছি রাষ্ট্র ভাষার জন্য। এখন ভাষিক উন্নতির জন্য, শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলব, শুদ্ধ বানানে বাংলা লিখব- এটা এখনকার স্লোগান হওয়া উচিত। যেমন ধরুন, একটি বেসরকারি রেডিও তার খুশিমত ভাষা ব্যবহার করল। এখন আমরা বললে তো শুনবে না। সরকার যদি একটা আইন তৈরি করে এবং নিয়ম প্রবর্তন করে তাহলে এটা বন্ধ করা যাবে।
বুধবার : উর্দুর হাত থেকে বাঁচার জন্য আপনারা লড়াই করেছিলেন। এখন হিন্দির আগ্রাসন চলছে। এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইটি কি হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
আহমদ রফিক : আসলে আমাদের ভাষা সচেতনতা দরকার। দেশপ্রেম, মাতৃভাষার প্রতি মমতা এবং মাতৃভূমির প্রতি মমতার বাইরে আর কোনো রাস্তা নেই। দেশপ্রেম এবং ভাষাপ্রেম পরিবার থেকে শুরু হওয়া উচিত। হিন্দির আগ্রাসন পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেশি। আমাদের এখানেও শুরু হয়েছে। এটা একটা অদ্ভুত মানসিকতা। যে বাংলা এবং বাঙালিয়ানা নিয়ে আমাদের এত গর্ব, এত অহংকার সেখানে বাইরে আমরা একুশ নিয়ে বড় বড় উচ্চারণ শেষ করে ঘরে গিয়ে যদি হিন্দি গান শুনতে থাকি এবং এটা যদি আমাদের নিজেদের সংস্কৃতিকে ছাপিয়ে যায়, তাহলে তা আগ্রাসনই। এর জন্য মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। সমাজ পরিবর্তন না হলে কিন্তু মানসিকতার পরিবর্তন হয় না। সে ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষিত শ্রেণীর এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রচুর দায়িত্ব রয়েছে।
বুধবার : ভাষা বিকৃতি ও ভাষার ওপর আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাভাষার ভবিষ্যৎ কি বলে আপনার মনে হয়?
আহমদ রফিক : আমার মনে হয় যে, শেষ পর্যন্ত আমরা জয়ী হবো। আমরা পরাস্ত হইনি কিন্তু পর্যুদস্ত হচ্ছি। পর্যুদস্ত যাতে আর না হই, তার জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে। রাষ্ট্রভাষার জন্য লড়াই করেছিলাম, এখন সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে হবে। আমি মনে করি, এই লড়াই শিক্ষিত শ্রেণীরই প্রাথমিকভাবে কর্তব্য। তারমধ্যে তরুণ সমাজের দায়িত্বটা সবচেয়ে বেশি। তারুণ্যের একটা আলাদা শক্তি থাকে। বয়স্ক মানুষের মধ্যে জাগতিক চিন্তা, স্বার্থ চিন্তা বেশি বেশি থাকে। তাই আমি বরাবর বলি, তরুণরাই আমাদের পরিত্রাতা।
বুধবার : মাতৃভাষাকে উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম না করায় শিক্ষা ক্ষেত্রে কি ধরনের প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন?
আহমদ রফিক : শিক্ষা ক্ষেত্রে খুবই খারাপ প্রভাব পড়ছে। আমাদের শিক্ষার্থীসমাজ ত্রিধাবিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। একটা হলো ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা, একটা বাংলা মাধ্যমের শিক্ষা এবং আরেকটি হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা। বিভিন্ন মাধ্যমের কারণে উচ্চ শিক্ষায় গিয়ে বাংলা মাধ্যম থেকে আসা শিক্ষার্থীরা উচ্চবিত্ত জায়গা থেকে আসা ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। এই অবস্থা জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। সংহতি, ঐক্য এবং সার্বজনীন উন্নতি কিন্তু একটি জাতিকে বিশিষ্ট স্থানে নিয়ে যায়। আজকে যদি বিশ্বের দরবারে আমাদের সুস্থান নিতে হয়, তাহলে ঐক্যবদ্ধভাবে, সংহতভাবে জাতি গঠন মাতৃভাষার ভিত্তিতেই হওয়া উচিত। চীনারা যদি পারে, জাপানিরা যদি পারে তাহলে আমাদের না পারার কোনো কারণ নেই। উচ্চশিক্ষা মাতৃভাষার মাধ্যমেই হতে হবে। সরকারের শিক্ষা বিভাগের উচিত বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা।
বুধবার : একই পদ্ধতির সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকার কারণে ভাষা এখন শ্রেণী বৈষম্যের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
আহমদ রফিক : আমি বারবার মনে করি যে, আমাদের ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে যে অবস্থাটি সৃষ্টি হয়েছে তার কারণ শ্রেণী স্বার্থ। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণী এবং উচ্চবিত্তের স্বার্থ রাষ্ট্রযন্ত্র দেখছে। আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের কথা ধরি তাহলে দেখব, স্বাধীনতার যে অমৃত তার পুরোটাই আমাদের উচ্চবিত্ত শ্রেণী, রাজনীতিক শ্রেণী এবং পেশাজীবী শ্রেণী দখল করে নিয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য কোনো ভাগ রাখেনি। তাদের শ্রেণীস্বার্থ পুরোপুরি পূরণ হওয়ার কারণে তারা আর সার্বজনীন শিক্ষার ব্যবস্থা করছে না। তা না হলে, ৪০ বছরে একটি জাতিকে শিক্ষিত করা যাবে না কেন? শ্রেণীস্বার্থ একটি ভীষণ দায়, যার কারণে আমাদের সদিচ্ছার অভাব এখনো রয়েছে। এক্ষেত্রে নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য সাধারণ মানুষ যদি সংঘবদ্ধ না হয়, তাহলে বিত্তবান শ্রেণীর শাসন ও তার রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের কিছুই দেবে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন