মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বুকের রক্তে টিপাইমুখ বাঁধ ঠেকাবে মার আদিবাসী


ভারতের বহুল আলোচিত টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে ঠেকানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে মনিপুরের আদিবাসীদের একটি ছাত্র সংগঠন ‘এইচএসএ’।

মার স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (এইচএসএ) টিপাইমুখ ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিঙ্গা খাবরু প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ এলাকায় দাঁড়িয়ে বাংলানিউজের এই প্রতিনিধির কাছে এ মন্তব্য করেন।

মণিপুরসহ মিজোরম ও নাগাল্যান্ড এলাকায় বসবাসকারী অন্যতম প্রধান আদিবাসী মার (ইংরেজিতে এইচ-এম-এ-আর দিয়ে মার লেখা হয়)। এদের প্রধান সংগঠন মার পিপলস কনভেনশন (ডেমোক্রাটিক)। সেই সংগঠনের ছাত্র শাখা এইচএসএ।

টিপাইমুখ এলাকায় বাঁধ বিষয়ক যেকোনও ধরনের মন্তব্য ও কথাবার্তা বলার একমাত্র অধিকার এই ছাত্র সংগঠনটি নিয়ে রেখেছে। বাঁধ সম্পর্কিত ব্যাপারে জানতে বাইরের কেউ সেখানে গেলে এইচএসএ’র মাধ্যমেই কথা বলতে হয় বলেও স্থানীয়রা জানান।

টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে কথা বলতে গেলে এইচএসএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিঙ্গা খাবরুর আচরণে বাঁধ নিয়ে বেশ রক্ষণশীলতাই প্রকাশ পেল। 
মার উপজাতির মানুষ হলেও স্পষ্ট ও সাবলীল ইংরেজিতে কথা বলেন তিনি। মেঘালয়ের শিলংয়ের খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল ও কলেজে লেখাপড়া করা রিঙ্গা এখন নিজ এলাকায় ‘মানুষদের উন্নয়নে’ সংগঠন করছেন বলে জানান।

বাঁধ নিয়ে কথা বলার আগে ওই এলাকা ঘুরে দেখার প্রস্তাব দেন রিঙ্গা। এইচএসএ’র স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মীকে সঙ্গে প্রায় ঘণ্টা চারেক কয়েকটি পাহাড় ঘুরে দেখান তিনি। সবশেষে নৌকায় চড়ে বরাক নদীতে বাঁধের স্থানে নিয়ে যান। 

মণিপুরের চুরাচান্দপুর জেলার সেনবুম ও সিপিইকোন এলাকা সংলগ্ন টিপাইমুখ এলাকার প্রায় ৫ হাজারের মতো আদিবাসীর বাস। এরা সবাই মার উপজাতির। তবে পাশ্ববর্তী মিজোরামের কিছু এলাকায় মিজো উপজাতির কিছু মানুষও রয়েছেন।

এলাকাটি ঘুরে দেখার সময় রিঙ্গা খাবরু মন্তব্য করেন, ‘এখানে কিসের বাঁধ হবে! কে করবে?’

কিছুটা উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনও মূল্যেই টিপাইমুখ বাঁধ ঠেকানো হবে।’

রিঙ্গা বলেন, ‘টিপাইমুখ এলাকার আদিবাসী জনবসতি বাঁধ হলে কোথায় যাবে, তারা সব হারাবে।’

তিনি বলেন, ‘এই এলাকার পাহাড়কে ঘিরেই আমাদের বসবাস, খাদ্য সংগ্রহ, জীবিকা চলে।’

বাঁধ হলে প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে এবং পাহাড়গুলোর চূড়ার কাছাকাছি পর্যন্ত পানিতে ডুবে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুনর্বাসন করার তো প্রশ্নই উঠে না, আমরা এখানে বংশপরম্পরায় বাস করছি। এই এলাকা ছেড়ে কোথায় যাবো।’

রিঙ্গা বলেন, ‘আমরা উদ্বাস্তু হয়ে কোথাও যাবো না। কারণ যেখানেই যাবো, সেখানে আমরা ভূমিপুত্র (খিলোঞ্জিয়া) মর্যাদা হারাবো।’

টিপাইমুখ বাঁধ তৈরি করার পদক্ষেপ থেকে ফিরে যেতে মণিপুর রাজ্য সরকার ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি তাদের আগের জানানো আহ্বানের কথা বাংলানিউজের কাছে পুনর্ব্যক্ত করেন রিঙ্গা।

‘মণিপুরের মানুষ বিরোধিতা করছে, কিন্তু রাজ্য সরকার কেন তা শুনছে না’ এ প্রশ্নের জবাবে রিঙ্গা বলেন, ‘মণিপুর রাজ্য সরকার তো মণিপুর উপজাতির মানুষের সরকার। সেখানে আমাদের (মার) কথা কে বলবে?’

তিনি বলেন, ‘টিপাইমুখ বাঁধের একটি পাথরও আমরা ফেলতে দেবো না, প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে মার’রা এটা ঠেকাবে।’

‘কেউই এখানে বাঁধ নির্মাণ করতে আসতে পারবে না’ বলেও মন্তব্য করেন এইচএসএ’র এই নেতা।

রিঙ্গা খাবরু কথা প্রসঙ্গে আরও জানান, মনিপুর ও মিজোরামে বসবাসকারী মার উপজাতিদের জন্য আলাদা রাজ্য গঠনের দাবি করে আসছেন তারা। এইচপিসি-ডি তাদের সঙ্গে একমত। এই দাবিতে তারা দীর্ঘদিন সশস্ত্র সংগ্রাম করে আসছে।

তাদের প্রস্তাবিত রাজ্যটির নাম ‘মাররাম’। মিজোরামের মিজো উপজাতিদের মতো তারা এ নাম নিয়েছে।  

অবশ্য মনিপুরের মারদের প্রধান সংগঠন এইচপিসি-ডি সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য গত বছর থেকে অবশ্য অস্ত্র সম্বরণ করেছে।

রিঙ্গা খাবরু টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে বাংলানিউজের এ প্রতিবেদকের কাছে জানতে চেয়ে বলেন, ‘২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কারা যেন আসবে শুনেছিলাম। হেলিকপ্টার নিয়ে তারা আসে, কিন্তু এখানে নামতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কিছুই করতে হবে না, আমরাই এখানে বাঁধ ঠেকাবো।’

টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে যৌথ সমীক্ষার জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবে নয়াদিল্লির সম্মতির কথা জানালে রিঙ্গা বলেন, ‘সমীক্ষা করে কী হবে, আর কারা সমীক্ষা করতে আসে সেটা পরে দেখা যাবে!’

এ ব্যাপারে আরও কয়েকটি প্রশ্ন করলে তার উত্তর দেননি রিঙ্গা খাবরু



টিপাইমুখ ঘুরে গত শুক্রবার রাতে আমি আসামের গুয়াহাটিতে পৌঁছি। বেশ কিছুদিনের পরিকল্পনা শেষে গন্তব্যে রওনা হওয়ার পর টিপাইমুখ এলাকায় যাতায়াতে আমার ছয় রাত ও সাত দিন সময় লাগে। 

এই ক’দিনে নদী, পাহাড় পেরিয়ে ‘অনাকাঙ্খিত’ নানা ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। টিপাইমুখে পৌঁছার পর ছবি তোলার অভিজ্ঞতাও ‘সুখকর’ ছিল না। কিছু ছবি আমি মুছে ফেলতে বাধ্য হই। যদিও পরে তা আবার তোলার ‘অনুমোদন’ দেওয়া হয়।

যাত্রাপথের পুরোটা সময় কোনও ধরনের মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না। এমনকি মাঝে ৫ দিন জঙ্গলেই ঘুমোতে হয়েছে। খাবারের ব্যবস্থা করাও সেখানে অসাধ্য একটি ব্যাপার। সব মিলিয়ে ‘অবশেষে’ আমি সেখান থেকে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছি।

কোনও বিশেষ সংবাদের জন্য নয়, বরং টিপাইমুখ এলাকা ঘুরে দেখে আসাই ছিল বাংলানিউজ থেকে আমার বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট।

টিপাইমুখ এলাকা ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্য মনিপুর ও মিজোরামের সীমান্তে অবস্থিত। মনিপুরের চুরাচান্দপুর জেলার একটি এলাকা এটি। মনিপুরের বিধানসভায় টিপাইমুখ একটি একক আসন।

মনিপুরের বরাক নদী ও মিজোরামের তুইপাই নদী যেখানে মিশেছে সেখানেই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটির স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।

যাত্রাপথে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সেখানে যেতে হয়েছে। কয়েক হাজার ফুট উঁচু পাহাড় ডিঙিয়ে নৌকায় চড়তে হয়। যদিও সে পথে বিপদ কম নয়; এ বিপদ অবশ্যই জঙ্গলের জন্তু জানোয়ারের জন্য নয়!

আসামের কাছাড় জেলা ও মনিপুর রাজ্যের জিরিবাম জেলার সীমান্তরেখার পাহাড়ি নদী ‘জিরি’র মুখ থেকে রওনা হওয়ার পর প্রায় ১২৫ কিলোমিটার পথের শুরুর ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী, মনিপুরের পুলিশ, মনিপুরের বনবিভাগের চেকপোস্ট আছে। কিন্তু এরপর ‘অন্যরাও’ তাদের এলাকায় চেকপোস্ট পরিচালনা করেন!

টিপাইমুখ গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ‘মার’ উপজাতির মানুষ ডোঙ্গা তখাই দোভাষীর সাহায্যে বাংলানিউজকে জানান, এর আগে বিবিসির একজন ও আনন্দবাজারের একজন সাংবাদিক নৌকাযোগে একসঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন।

ডোঙ্গা তখাই বলেন, ‘এরপর আর কোনও সাংবাদিককে টিপাইমুখে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের কেউ এসেছে বলেও জানি না।’

টিপাইমুখ থেকে বিভিন্ন স্থানে চলাচলকারী একটি লঞ্চের মালিক ডোঙ্গা তখাই। তার বাবা ওই গ্রামের গাওগুরা (মাতবর)।

ডোঙ্গার মতো ওই গ্রামের বাসিন্দা উদয় দাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আর কেউ সেখানে কোনোদিন এসেছেন বলে শুনিনি।’

উদয় আসামের বাঙালি। তবে গত প্রায় এক যুগ আগে এখানে এসে টিপাইমুখ এলাকার উপজাতি মেয়েকে বিয়ে করেন। এখন টিপাইমুখ গ্রামে একটি দোকান চালান তিনি।

এর আগে টিপাইমুখ যাওয়া আনন্দবাজারের সাংবাদিক উত্তম কুমার সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, ‘বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকার কলকাতাস্থ একজন প্রতিনিধি এর আগে ২০১০ সালে টিপাইমুখ যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি সম্ভবত নারায়ণডহর বা জাকুরাডহর থেকে ফিরে গেছেন।’ (ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রওনা হয়ে পথে টঙ্গি থেকে আবার ঢাকা ফিরে যাওয়ার মতো ব্যাপার)।

আসামের শিলচরে আনন্দবাজারের প্রতিনিধি উত্তম কুমার সাহা আরও জানান, ২০০৯ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে তিনি ও বিবিসির কলকাতা সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী টিপাইমুখে গিয়েছিলেন।

মনিপুরের আদিবাসী ‘মার স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে’র টিপাইমুখ ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিরিঙ্গা ইংরেজিতে বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে কারা যেন আসবে বলে এর আগে শুনেছিলাম। হেলিকপ্টার নিয়ে তারা আসে, কিন্তু এখানে নামতে পারেনি।’

টিপাইমুখ এলাকার বাসিন্দারা মনিপুরের মার উপজাতির মানুষ। রক্ষণশীল এ উপজাতির মানুষেরা টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের কারণে আরও বেশি রক্ষণশীল আচরণ করে। বাইরের যে কাউকে এখন তারা সন্দেহের চোখে দেখে, তাকায় অবিশ্বাসী ভঙ্গিতে। এজন্য বাইরের মানুষকে তাদের ‘অযাচিত আচরণে’র মুখোমুখি হতে হয়।

টিপাইমুখ ঘুরে আসতে আমার সফরসঙ্গী ছিলেন আসামের বাংলা দৈনিক ‘সাময়িক প্রসঙ্গ’ পত্রিকার অসম সাহসী সাংবাদিক মনজুর আহমেদ বরভূঁইয়া। এছাড়া নানাভাবে সহায়তা করেছেন আসামের দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গের সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরী এবং কলকাতাস্থ প্রখ্যাত প্রয়াগ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বাংলা পত্রিকা দৈনিক প্রয়াগের সম্পাদক বাসুদেব বাগচী।

এর বাইরে আরও কয়েকজন সার্বিক সহযোগিতা করেছেন কিন্তু তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক! এদের সবার সমন্বিত সহযোগিতা না পেলে এ সফরের পরিণতি কি হতো তা ভাবতে হয়তো খুব কষ্ট করতে হবে না!


যেকোনো মূল্যে বরাক নদীতে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ প্রতিহত করার শপথ নিয়েছে ভারতের মনিপুর রাজ্যের ছাত্র সংগঠন হমার (Hmar) স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (এইচএসএ)।

বরাক ও দুইভাই নদীর মিলিত প্রবাহের ৫০০ মিটার ভাটিতে মনিপুর-মিজোরাম সীমান্তের কাছে ভারতের প্রস্তাবিত ১৫০০ মেগাওয়াটের টিপাইমুখ বহুমুখী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প যেকোনো মূল্যে ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা।

মনিপুরের চুরাচাঁদপুর জেলার টিপাইমুখ গ্রামে শিলচর ও ঢাকার একদল সাংবাদিকের কাছে সংগঠনের নেতারা বলেন, এই গ্রাম থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরে প্রস্তাবিত ১৬২.৮০ মিটার উচ্চতার ওই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা সরকার এবং এর সমর্থকদের ওপর ক্রুদ্ধ। তারা বুকের রক্ত দেবে তবু তাদের গ্রামে ওই বাঁধ হতে দেবে না।

তারা জানান, প্রস্তাবিত বাঁধের ক্ষতিকর দিকগুলো বুঝিয়ে দিয়ে এর আশপাশের ছয়/সাতটি গ্রামের লোকদের মধ্যে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। গ্রামবাসীরাও প্রকল্প এলাকায় কোনো কর্মকর্তাকে ঢুকতে না দিতে বদ্ধপরিকর।

সংগঠনের সদস্য রিংগা খাবরু বলেন, ‘যদিও এখন পর্যন্ত সেখানে প্রকল্পের কোনো চিহ্ন নেই, তথাপি আমরা এখান থেকে একটা পাথরও সরাতে দেব না।’

বাঁধের অপরকারীতা ব্যাখ্যা তারা বলছেন, এই বাঁধ নির্মিত হলে হাজার হাজার আদিবাসী তাদের বাসস্থান এবং জীবিকা হারাবে। তারা সবকিছু হারাবে- তাদের সাতপুরুষের ভিটেমাটি, সংস্কৃতি এবং জীবনের সঙ্গে অতপ্রোতভাবে জড়িত চারপাশের প্রকৃতি। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে –সরকারের এই প্রতিশ্রুতি আমরা বিশ্বাস করি না। আমাদের বিশ্বাস, রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকার উভয়ে আমাদের অনুভূতিটা বুঝতে ‍পারবে এবং এই প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে সরে যাবে।

উল্লেখ্য, বরাক নদীতে প্রস্তাবিত টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি যৌথ উদ্যোগে সমান অংশীদারিত্ব ভিত্তিতে নির্মাণ করবে এনএইচপিসি এবং সাতলুজ জলবিদ্যুৎ নিগম লি. (এসজেভিএনএল)।

রাজ্যের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর টিপাইমুখ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এর জন্য বন পরিষ্কারের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ২১১ কোটি রুপি।

উল্লেখ্য, বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবটি ভারতের দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হতে সাত বছর তিন মাস লেগে যেতে পারে।

টিপাইমুখে কাটা পড়বে ৭৮ লাখ গাছ

ইমফল (ভারত) থেকে: টিপাইমুখ এলাকায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বিভিন্ন প্রজাতির ৭৮ লাখ ১৬ হাজার ৯৩১টি ছোট-বড় গাছ কাটা পড়বে। ভারতের বন মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

ভারতের মনিপুর রাজ্যের বেসরকারি সংগঠন ‘কনসার্ন ফর ড্যামস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট’র উপদেষ্টা আরকে রঞ্জন সিং শুক্রবার ইমফলে বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।

টিপাইমুখ প্রকল্পটি এখনও ভারতের বনবিভাগের ছাড়পত্র পায়নি। তবে ২০০৮ সালেই পরিবেশ ছাড়পত্র পেয়েছে।   

আরকে রঞ্জন বলেন, ‘জানুয়ারির ১০ ও ১১ তারিখে নয়াদিল্লিতে টিপাইমুখ সংক্রান্ত বন মন্ত্রণালয়ে একটি উপকমিটি তাদের প্রতিবেদনে গাছ কাটা সম্পর্কিত তথ্য সরকারকে জানিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

টিপাইমুখ এলাকায় গাছের সঙ্গে ২৭ হাজারের বেশি বাঁশ কাটতে হবে।

তিনি বলেন, ‘শুধু গাছ ও বাঁশ কাটাই নয়, বরং ওই এলাকাগুলোও পানিতে ডুবে যাবে।’

এছাড়া ওই এলাকার জীববৈচিত্রও হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মনিপুর ও মিজোরাম রাজ্যের সীমান্তে চুরাচান্দপুর জেলার টিপাইমুখ নামক স্থানে ১৫০০ মেগাওয়াটের একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে ভারত।

মনিপুর রাজ্য সরকারের বন দপ্তর থেকে জানানো হয়, টিপাইমুখের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে মনিপুর রাজ্যের ২৪ হাজার ৩২৯ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হবে। এর মধ্যে মনিপুর রাজ্যের অন্তর্গত ২২ হাজার ৭৭৭ হেক্টর এবং মিজোরাম রাজ্যের বনভূমি রয়েছে ১ হাজার ৫৫১ হেক্টর।  

যদিও ১৯৮০ সালের বনভূমি আইন অনুযায়ী, ‘জাতীয় স্বার্থে’ মনিপুর সরকার এরইমধ্যে এর ছাড়পত্র দিয়েছে।

বরাক নদীতে টিপাইমুখ এলাকায় ওই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প করতে এরইমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ডিসেম্বরের ৩ তারিখে তিনি ইমফল সফরে এসে বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থে’ টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

টিপাইমুখের এ প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেশী আসামের বরাক উপত্যকার কাছাড় ও করিমগঞ্জের মানুষ অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

এছাড়া ওই এলাকার একটি জঙ্গি সংগঠন ‘মার পিপলস কনভেনশন’ এর বিরোধিতা করছে।

টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গত ২২ অক্টোবর প্রমোটারস এগ্রিমেন্ট সই করে ভারত।

কাজ শুরুর পর ৮৭ মাসের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।

টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে ভারতের কাছে যৌথ সমীক্ষার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কবে নাগাদ এ সমীক্ষা হবে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন