বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১১

ইরাকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার আর ভিন্ন খবর।


ইরাকে মার্কিন সেনা গুটিয়ে ফেলেছে, এমন খবরে প্রতিক্রিয়ায় অনেক মত প্রকাশ পেয়েছে, দুনিয়া জুড়ে অনেক  কথাই আলোচিত হয়েছে তারমধ্যে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো। সত্যই কি ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার হয়েছে ? সবাই নানান সংবাদ সংস্থা আর মার্কিনী আদর্শপুষ্ট সংস্থা সমূহ আমাদের এমনই খবর দিয়েছে কিন্তু ভেতরের খবর হচ্ছে অন্যরকম।
ইরাক থেকে (আংশিক) সেনা প্রত্যাহারকে ব্যবহার করে হোয়াইট হাউজ জোরদার করছে বারাক ওবামা পূর্ণনির্বাচনী প্রচারণা হিসেবে। এরই তালে তালে প্রেসিডেন্টের পরার্মশকেরা তাঁকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একাকার করার উম্মত্ত প্রচারণাও শুরু করে দিয়েছে। তারা বলতে চাইছে, সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যেমে ২০০৮- এর নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি সার্থক হলো। সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, চারজনের  মধ্যে তিনজন আমেরিকানই ইরাক থেকে সব সেনা ফিরিয়ে আনার পক্ষে ।
বাস্তব রূপ হচ্ছে  বাগদাদে ১০৪ একর জায়গায় দুর্গের মত করে বানানো  হয়েছে ( ভ্যাটিকান সিটিরি চাইতেও বড়) মার্কিন দূতাবাস। এই দূর্গে থাকবে ১৭ হাজার মার্কিন সেনা। যার মধ্যে রয়েছে ৫ হাজার সশস্ব্র ঠিকাদার। ইরাকেই তৈরী হয়েছে সিআই এর সবচেয়ে বড় ঘাটি। পেন্টাগনের জয়েন্ট স্পেশাল  অপারেশনের কমান্ড গোপনে সাদা পোশাকে তাদের অবস্থান চালিয়ে যাবে। এই পরিকল্পনায়র কথা শুনে ওবামার ঘনিষ্ট মিত্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক  কমিটি প্রধান জন কেরি জানতে চেয়েছেন ‘এটা কি সেনা বাহিনীর জায়গায় ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে’।
ইরাক ছেড়ে আসার সাথে জন্ম নিয়েছে অনেক হিসাব,  প্রায় নয় বছরের এই যুদ্ধে মোটামুটি সাড়ে চারহাজার মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। আহত ও  পঙ্গু হয়ে ফিরেছে হাজার হাজার সেনা আর মানসিক বিপর্যয়ের স্বীকার আরো হাজার সেনা। কম করে হলেও এই যুদ্ধে আমেরিকার খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি ডলার। সেই সাথে ১০ লাখ ইরাকি জনগন মারা গেছে। বাগদাদে ভয়াবহ বোমাবর্ষণ, নৃশংস পথে ফালুজা শহর দখল আর আবু গারেব এ গণহত্যা চালায়।
মার্কিনীদের  ইরাক ছাড়ায় প্রশ্ন জেগেছে ইরাকে কি মার্কিনীরা জয়ী হয়েছে ? অনেক প্রশ্নে সরল হিসেবে মিলে কিছু তথ্য যেমন মার্কিনীরা যুদ্ধে জয়ী হয়েছে সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে কিন্তু ইরাকী জনগনের কাছে পরাজিত। ভূরাজনৈতিক অবস্থানে মার্কিনীদের অবস্থান শক্ত হয়েছে কিন্তু বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক বেড়েছে অনেকগুন। এই সব জেনেও ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহারের মত অবস্থা না থাকা  সত্ত্বেও ওবামার নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি ছাড়াও  , ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরী আল মালেকীকে সেখানে ২০হাজার সেনা  রাখার রাজি করানের ব্যর্থতাতে  সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় সেই সাথে ইরাকি আদালতে মার্কিন সেনাদের  সম্পূর্ণ দায়মুক্তি আদায় করতে না পারায় সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

এখন  যে  ১৭ হাজার সেনা ইরাকে রয়েছে তারা ইরাকে উর্দি পরা সেনার জায়গায়  সাদা পোশাকে জায়গা নিচ্ছে নতুন এক বাহিনী। এরা মার্কিনীদের  নিয়মিত সেনা নয় তারা ভাড়াটিয়া সেনা, যাদের কোন ধরণের দায়বদ্ধতা নেই মার্কিন প্রশাসনে। কিন্তু ঠিকাদারের মত তারা কাজ করতে, তা থেকে মুনাফা নেবে, এরা কোন সেনা চরিত্রের দায়িত্বে থাকবেনা। ইরাকী জনগনের কাছে এরা মৃত্যু নিয়ে আসবে আর ভবিষ্যৎ সরকারের মাথা ব্যাথার কারণ হবে।
শেষ দল যে, ২০ হাজার মার্কিন সেনা প্রত্যাহার হলো তার স্থলে কিন্তু আরব ছাড়ছেনা মার্কিন সেনার তারা এখন ঘাঁটি গাড়ছে কুয়েতে।   কুয়েতে ২৫ হাজার মার্কিন সেনা সহ বাহারাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সৌদিআরাব মার্কিন সেনা রয়েছে। এসব রাষ্ট্র নিয়েই গঠিত হয়েছে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল ( জিসিডি) এই কাউন্সিলের কাজ হবে নিজের গদি বাঁচানোর জন্য মার্কিন সেনার সহয়তা নেয়া, বহি আক্রমন ( মূলত দেশের জনরোষ) ঠেকানো।
মার্কিনীদের দরকার যুদ্ধ, এখন তারা যুদ্ধ ফেরী করে বেড়াচ্ছে, তাদের নতুন কৌশল হিসেবে আফ্রিকার জিবুতিতে ৩ হাজার সেনা আছে,  সেখান থেকে ইয়েমেন ও সোমালিয়ায় ড্রোন হামলা চালানো হয়। আফ্রিকার বড় তেল মুজুদ আমেরিকার হয়েছে। ইরাকের তেল মজুত বলতে মার্কিনী কোম্পানীগুলোর তেল। মালিকানা এখন শুধু তাঁেদর। এটা তাঁেদর কৌশল এখানে তারা স্বার্থক।
 আফ্রিকার প্রতি মনোযোগী হওয়ার কারণ চীনের প্রভাব মোকাবিলা করা সেই সাথে কাবুলে বড় ধরনের আক্রমনের ইচ্ছা তাঁদের রয়েছে। সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। 
উপসংহার ঃ মার্কিনীদের কুটকৌশলে আরবরা ধরা দেয় সেই সাথে ইরাকের মার্কিন মদদপূষ্ট এজেন্ট ইরাকে লুটপাট করার ব্যবস্থা করে দেয়,  লাখো ইরাকি আজ যুদ্ধে ক্ষত বহন করছে সেই সাথে নিজ্স্বে কৃষ্টি ঐতিহ্যের স্বারকগুলো মার্কিনী বিভিন্ন শহরের সংগ্রহশালায় শোভা পাচ্ছে। অনেকের ড্রইংরুমে বেবলিন সভ্যাতার মহামূল্যবান সামগ্রী  শোভা বাড়াচ্ছে। সব কিছুই যেন তাঁেদর বিজয়ের উপঢোকন অথচ তারা ইরাক থেকে নির্লজ্জভাবে লুট করে নিয়ে গেছে। মার্কিনীদের এই যুদ্ধে খরচের যে হিসাব তারা দিচ্ছে তার চাইতে অনেক অনেক বেশী সম্পদ যে নিয়ে গেছে তার হিসাব কিন্তু পাওয়া যাবেনা। হয়ত একদিন ইরাকের জনগন বলবে যে আজ যে আমেরিকা দেখছো সেটা আমাদের সম্পদে তৈরী।  
আলমগীর আলম
মুক্তিআন্দোলন

1 টি মন্তব্য: