রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১১

পরিবারতন্ত্রই কি হজম করতে হবে?

২০১১ সালের ১১ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত জোটের ঢাকা-সিলেট রোডমার্চ কিংবা কার-শোর সমাপ্তি পর্বে সিলেটের জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া ঘোষণা দেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে তরুণ নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করবেন। তাঁর ওই ঘোষণা দেশে-বিদেশে টিভি টকশো এবং সংবাদপত্রে বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করে। তবে বিএনপি-জামায়াত জোটের পাঁড় নেতা-কর্মী-সমর্থক ছাড়া দেশের জনসাধারণ যে তাঁর ওই ঘোষণায় যে মহাবিপদের সংকেত পেয়েছেন, তাতে সন্দেহ নেই। ১৮ নভেম্বর তারেক রহমানের ৪৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ খোলসা করে দিলেন, তারেক রহমানই হতে যাচ্ছেন (বিএনপি-জামায়াত জোট আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে) বাংলাদেশের আগামী প্রধানমন্ত্রী। এটাকে জাতির জন্য ‘আসন্ন মহাবিপদ’ কেন আখ্যায়িত করেছি তার ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপনিবেশ হওয়ার পূর্বে ভারতে চালু থাকা সরকারব্যবস্থাকে কার্ল মার্ক্স অভিহিত করেছিলেন প্রাচ্যদেশীয় স্বৈরাচার বলে। তাঁর লেখায় আশাবাদ ব্যক্ত হয়েছিল যে, এশীয় উৎপাদনপদ্ধতির হাজার হাজার বছরের অচলায়তনকে যেমন উপনিবেশবাদী ব্রিটেনের পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক আগ্রাসন ও অনুপ্রবেশ ভেঙে ফেলতে সমর্থ হবে, তার পাশাপাশি একটি ঐক্যবদ্ধ ভারতের ভবিষ্যৎ স্বাধীনতা অর্জনের উপাদানও সরবরাহ করেছে ব্রিটেনের আধুনিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্র। চারটি উপাদানকে তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিলেন: ঐক্যবদ্ধ একক রাষ্ট্র, নেটিভ আর্মি, স্বাধীন সংবাদপত্র এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী।
কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘটনাপ্রবাহে ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে বিভাজিত দুটো আলাদা রাষ্ট্রের জন্মের মাধ্যমেই উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের যবনিকাপাত ঘটে। দ্বিতীয় উপাদান ‘নেটিভ আর্মি’ও ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়েছিল। সিভিল আমলাতন্ত্রেরও দ্বিভাজন ঘটেছিল। ওই ‘নেটিভ আর্মি’র প্রায় ৩০ শতাংশ পেয়েছিল পাকিস্তান। অন্যদিকে সিভিল আমলাতন্ত্রের ১০ ভাগেরও কম পড়েছিল দেশটির ভাগে। কারণ চতুর্থ উপাদান ‘শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী’র বিকাশের সুফল মুসলিম সম্প্রদায় তেমন একটা পায়নি ব্রিটিশ আমলে। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন হয়ে আরও ৪০ বছর পার হয়ে এসেও বাংলাদেশ আজও ‘পাক-ভারত সিনড্রম’ থেকে মুক্তি পেল না। ওখানেই রয়ে গেছে বাংলাদেশের রাজনীতির আওয়ামী লীগ-বিএনপির আজন্ম-বৈরিতার রহস্য। ২০১১ সালে এ দেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতিও নির্ধারণ করে চলেছে ওই পাক-ভারত সিনড্রম।

১৯৭২-৭৫ পর্বের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে পাকিস্তানি আদলের ‘নব্য-ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের’ খোলস থেকে বাইরে রাখার আপ্রাণ প্রয়াস চালালেও পাকিস্তান-ফেরত সেনাসদস্য ও আমলাদের সরকারি চাকরিতে পুনর্বহাল করার মারাত্মক ভ্রান্ত সিদ্ধান্তটি তাঁর ওই প্রয়াসের মূলে কুঠারাঘাত হানতেও বিলম্ব করেনি। ১৯৫৮-৭১ পর্বে রাষ্ট্রক্ষমতা সরাসরি দখলের সংস্কৃতি পাকিস্তানি সমরপ্রভুদের প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে পরিণত হয়। ওই পর্বেই চালু হয় বেচাকেনার মাধ্যমে সুবিধাবাদী রাজনীতিকদের দলে ভেড়ানোর জন্য রাষ্ট্রীয় সামরিক-বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অপব্যবহারের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। দুঃখজনক হলেও সত্য, ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর রণাঙ্গনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম হলেও রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ওই অপসংস্কৃতিকে সেনাঅফিসারদের মানসপট থেকে মুছে ফেলতে পারেনি নয় মাসের রক্তস্নাত ওই অধ্যায়। তাই খোন্দকার মোশতাক চক্রের পক্ষে ১৯৭৫ সালে সম্ভব হয়েছিল ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত করা। এত দিনে প্রমাণিত হয়েছে যে অভ্যুত্থান পরিচালনাকারী সেনা অফিসাররা আর্মির তদানীন্তন ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তাঁদের ষড়যন্ত্রে শামিল হতে বা নেতৃত্ব দিতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। জিয়া প্রস্তাবে সম্মতি না দিলেও ওই ষড়যন্ত্রের খবর ঊর্ধ্বতন মহলে বা বঙ্গবন্ধুকে না জানিয়ে তাঁর চাকরির শপথ ভঙ্গ করেছিলেন, যা আর্মি-রুল অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জেনারেল জিয়ার নাকি ক্ষোভ ছিল, তাঁর একই ব্যাচের সহকর্মী মেজর জেনারেল শফিউল্লাহকে চিফ অব স্টাফ নিয়োগ করাতে তাঁর সিনিয়রিটি লঙ্ঘিত হয়েছিল। বিএনপির অনেক নেতা এখনো বলে বেড়ান, জিয়াকে আর্মির চিফ অব স্টাফ বানালে নাকি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড আদৌ ঘটত না। ১৯৭৫-৮১ পর্বের জিয়ার শাসনকাল নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করলে এ ধরনের অতি-সরলীকরণের পেছনের ধান্দাবাজিটা বোঝা যায়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত্রি ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে বিপুলসংখ্যক ‘ঘটনাচক্রে মুক্তিযোদ্ধা’ সৃষ্টি করেছিল, তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান ছিলেন তাঁদের ক্লাসিক প্রতিভূ। অস্ত্রবাহী জাহাজ সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাস কার্যক্রম প্রতিরোধকারী জনতাকে মোকাবিলা করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যে মেজর জিয়া চট্টগ্রাম বন্দরের দ্বারপ্রান্তে অবস্থিত আগ্রাবাদ অতিক্রম করছিলেন, তাঁর কাছেই পৌঁছে গেল চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে আর্মি ক্র্যাকডাউনের খবর। ওই খবরটাই মেজর জিয়াকে বানিয়ে দিল ‘মুক্তিযোদ্ধা’, ২৫ মার্চ রাতে এবং পরদিন ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম শহরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল, কিন্তু মেজর জিয়া তাঁর নেতৃত্বাধীন সৈন্যদের সঙ্গে নিয়ে শহর থেকে প্রায় ১০-১২ মাইলের নিরাপদ দূরত্বেই রয়ে গেলেন দুটো দিন, যেখান থেকে তাঁকে ডেকে নিয়ে এসে কালুরঘাট রেডিও স্টেশন থেকে ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় একটি ঘোষণা পাঠ করানো হলো। সেই সুবাদে তিনি হয়ে গেলেন ‘স্বাধীনতার ঘোষক’! অথচ আমরা বিভিন্নজনের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর বরাত দিয়ে স্বাধীনতার যে ঘোষণাগুলো নিজের কানে শুনলাম, সবই যেন তাৎপর্যহীন! এই ঘোষণাটাকে পুঁজি করেই বিএনপির রাজনীতি আবর্তিত হয়ে চলেছে আজও। স্বীকার করতেই হবে, সেনাবাহিনীর একজন বাঙালি মেজরের ওই ঘোষণা মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিনগুলোতে উদ্দীপনামূলক ও তাৎপর্যবহ ছিল। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই চট্টগ্রামের পতন এবং স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র স্তব্ধ হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ১০ এপ্রিল ১৯৭১-এর বাংলাদেশের সরকার গঠন, সেই অনুযায়ী প্রদত্ত সরকারের ঘোষণাপত্র প্রচার এবং তার পরবর্তী ১৭ এপ্রিলের বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। ‘ঘোষক’ বিতর্কের কোনো অস্তিত্বই ছিল না ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে। মুজিবনগর সরকার গঠনের ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়টিকে ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেই বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়েছিল। ফলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে ওই বিষয়টি প্রশ্নাতীত সত্য হিসেবে ইতিহাসে এবং বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।

বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এবং ধর্মকে অপব্যবহারকারী রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। তাই মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী প্রভৃতি দলের নেতা ভাসানী-ন্যাপ ও নবগঠিত জাসদের সমর্থকের ভেক ধারণ করেছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সিপিবি ও মুজাফ্ফর-ন্যাপও ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করে চলেছিল। অন্যদিকে ১৯৭২-৭৫ পর্বে ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিল আওয়ামী লীগ। বিশেষত ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পর জনমানুষের দুর্দশা-দুর্ভোগ ক্রমেই হতাশায় পরিণত হচ্ছিল। কারণ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি ও লুটপাট দেশের ওই সময়ের বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বঞ্চনা ও ক্ষোভের আগুনকে উস্কে দিচ্ছিল প্রতিনিয়ত। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে বাকশাল কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সংকট থেকে উত্তরণে বিকল্প পথের সন্ধানে পদক্ষেপ নিলেও ওই কর্মসূচিতে একদলীয় শাসনের যে ব্যবস্থা করা হলো তা জনগণ সানন্দে গ্রহণ করেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খুনি মোশতাক জিয়াকে চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত করে পুরস্কৃত করেন। নভেম্বর ১৯৭৫ সালের ঘটনাপ্রবাহে রাষ্ট্রক্ষমতা করায়ত্ত হলো জিয়ার।
জিয়া যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হূদয়ে কখনো ধারণ করতেন না, তার নজির রয়েছে তাঁর পুরো শাসনামলে। পাকিস্তানের আইউব খানের স্টাইলে ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে ডিজিএফআই-এনএসআই স্পেশাল ব্রাঞ্চকে ব্যবহার করে জিয়া যখন বিএনপির জন্ম দিলেন, তখন মুসলিম লীগ ও ভাসানী-ন্যাপের বৃহদংশই তাঁর বেচাকেনার রাজনীতির প্রলোভনে ধরা দিয়েছিল। এমনকি ভাসানী-ন্যাপের নির্বাচনী প্রতীক ‘ধানের শীষ’ দখল করে নিল বিএনপি। বিএনপি যে এ দেশে পাকিস্তান-পছন্দ এবং সামরিক এস্টাবলিশমেন্টের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক দল, এটা বিএনপির জন্মসূত্রেই অর্জিত বৈশিষ্ট্য। আর আওয়ামী লীগ যত প্রয়াসই চালাক না কেন, তারা কোনো দিনই আর্মি-এস্টাবলিশমেন্টের বৃহদংশের মন জয় করতে পারবে না। ১৯৯১-৯৬ ও ২০০১-২০০৬ মেয়াদে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সামরিক বাহিনী থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ছাঁটাই করা হয়েছে। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ১৯৭৫-৯৬ পর্বে সামরিক কর্মকর্তা রিক্রুটমেন্টে পরিকল্পিতভাবে বিএনপি-জাতীয় পার্টির পছন্দসই প্রার্থীরাই প্রাধান্য পেয়েছে বোধগম্য কারণে।
ওপরে বর্ণিত চালচিত্র পর্যালোচনা করলে বুঝতে কষ্ট হবে না, কেন তারেক রহমানকে এ দেশের প্রধানমন্ত্রী বানানোর যে বাসনা বেগম জিয়া ঘোষণা করলেন তাকে ‘মহাবিপদ’ অভিহিত করেছি আমি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত কোনো সরকারপ্রধানই সুশাসন প্রতিষ্ঠার ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে পারেননি। দিন বদলের অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা শুরুটা ভালো করলেও সরকার পরিচালনায় তঁর যথেচ্ছাচারের নজির সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক। আড়িয়াল বিলে অপ্রয়োজনীয় এয়ারপোর্ট নির্মাণের জেদাজেদি থেকে শুরু করে সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও ঢাকা সিটি করপোরেশনকে অহেতুক দ্বিখণ্ডিত করা—এসবই প্রমাণ করছে, শেখ হাসিনা তাঁর দলের ও মন্ত্রিসভার অভিজ্ঞ সহকর্মীদের কথায় কর্ণপাত করছেন না। মাঝখানে সৈয়দ আবুল হোসেন এবং শাহজাহান খানকে মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় করার দাবিকে যেভাবে উড়িয়ে দিলেন সেটার দৃষ্টান্তও ক্ষমতান্ধতার পরিচায়ক বলা চলে। অথচ তাঁর মন্ত্রিসভায় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানসহ কয়েকজন নিঃসন্দেহে সততা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন। অসহনীয় লোডশেডিং কমে এসেছে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর জাতি একটা যুগোপযোগী শিক্ষানীতি পেয়েছে।
কিন্তু সময় থাকতেই শেখ হাসিনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এ দেশের রাজনীতিতে কোনো সরকারই সুষ্ঠু নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় পুনর্নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেনি। অধুনালুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যেহেতু অনেক ক্ষেত্রে সামরিক এস্টাবলিশমেন্ট ও সিভিল আমলাতন্ত্রের বিভিন্ন এজেন্ডারই প্রতিফলন ঘটানোর কাজে অতীতে ব্যবহূত হয়েছে তাই নির্বাচন-পূর্ববর্তী ক্ষমতাসীন সরকারের দুঃশাসন-নিপীড়ন ও অন্যায়ের বদলা নেওয়ার মওকা এই দুই ক্ষমতাকেন্দ্র ব্যবহার করলে অস্বাভাবিক বলা যাবে না।
এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ক্রমশ হ্রাস পাবে এবং বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচিগুলোতে জনজোয়ার বাড়তে থাকবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ‘যুবরাজ’ তারেক রহমানের ক্ষমতারোহণের সম্ভাবনাকে তাই গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতকে ঠেকাতে হলে আগামী দুই বছরে আত্মঘাতী পথ থেকে সরে এসে শেখ হাসিনাকে তাঁর বাকি শাসনকালকে সাফল্যের দুটো বছর হিসেবে রূপান্তরিত করতেই হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি শুনছেন?
ড. মইনুল ইসলাম: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন