বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১১

পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সমস্যা ইমরান খান


ইমরান খান এখন আর শুধু ক্রিকেটার থেকে রাজনৈতিক নেতা নন। তিনি হঠাৎ করে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান দশক ধরে যে যুদ্ধে লড়ছে, সেই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে নতুন করে কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া প্রেসিডেন্ট জারদারির জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে গত রোববার লাহোরে ইমরানের জনসভার পর। তিনি এখন শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য হুমকি নন, বরং সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ইসলামাবাদ সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তান যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বড় বাধা। তিনি শুধু প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও বিরোধীদলীয় নেতা নওয়াজ শরিফের সমালোচনা করেই ক্ষান্ত হননি, লাহোরে গত ২৫ বছরে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ওই সমাবেশ থেকে তিনি মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন কঠোর ভাষায়।
এর আগে এত বড় রাজনৈতিক সমাবেশ লাহোরবাসী দেখেছিল ১৯৮৬ সালের ১০ এপ্রিল। দীর্ঘদিন নির্বাসনের পর বেনজির ভুট্টো ওই দিন দেশে ফিরেছিলেন। ওই দিন লাহোরে জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজিরের সংবর্ধনা সভা হয়ে উঠেছিল তৎকালীন সামরিক শাসকের জন্য এক বিস্ফোরণ। ঐতিহাসিক লাহোর দুর্গের পাশে ইকবাল পার্কে সংবর্ধনা সভায় ভাষণ দেন বেনজির। জেনারেল জিয়াউল হকের স্বৈরশাসন পতনের আন্দোলন শুরু হয়েছিল ওই সভা থেকেই।
গত রোববার ইমরান খানের জনসভাও হয়েছে সেই ইকবাল পার্কে। আর এরই মধ্যে এই জনসভাকে দেখা হচ্ছে পাকিস্তানের মার্কিনপন্থী নীতির অবসানের সূচনা হিসেবে, যে নীতি সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ শুরু করেছিলেন ১০ বছর আগে। জনসভায় ইমরান খান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে অভিহিত করেছেন ‘চাচি ক্লিনটন’ হিসেবে এবং জোরের সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের আদিবাসী এলাকায় আর কোনো সামরিক অভিযান চালাতে দেওয়া হবে না। কাজেই ক্ষমতাসীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) বা তাদের জোট শরিকদের পক্ষে এখন উত্তর ওয়াজিরিস্তানে নতুন করে অভিযান চালানো বা দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান থেকে খাইবার অঞ্চল পর্যন্ত যে অভিযান চলছে, তা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। নির্বাচন আসন্ন, আর এ সময় কোনো দলই জনমতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ঝুঁকি নেবে না।
হিলারি ক্লিনটন এখন মরিয়া হয়ে এমন কাউকে খুঁজছেন, যিনি আফগান তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এ বিষয়ে ইমরান খান হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু করতে পারতেন, কিন্তু ইমরানের নজর এখন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির দিকে। তিনি পাকিস্তানি তালেবান ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে কিছু করার প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু তিনি এই নিশ্চয়তা চাইছেন যে আর কোনো সামরিক অভিযান চালানো হবে না। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে বৈঠকের এক দিন আগে তিনি এসব কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুলের মধ্যস্থতায় ওই বৈঠকের আয়োজন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পাকিস্তান, ভারত, ইরান, চীন, সৌদি আরব, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আফগানিস্তানের অংশগ্রহণে ১ নভেম্বর শুরু হওয়া ইস্তাম্বুল সম্মেলনে আফগান কর্মকর্তারা আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধ বিষয়ে আলোচনা তোলেন। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে এই সম্মেলন থেকেই পাকিস্তানের কাছ থেকে কিছু প্রতিশ্রুতি আদায় করতে। এ জন্য পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানিকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু গত রোববার ইমরান খানের ওই জনসভার পর যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের জন্যও বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। ওই জনসভা থেকে ইমরান খান পাকিস্তানের আদিবাসী এলাকায় সামরিক অভিযানের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তিনি জানান, কিছু আদিবাসী নেতা এ নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে মার্কিন ড্রোন হামলা এবং পাকিস্তান বাহিনীর সামরিক অভিযান বন্ধ করা হলে তাঁরা ওই অঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ করবেন। ইমরান খান এবং তাঁর সাবেক স্ত্রী জেমিমা খান ওই আদিবাসী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। ড্রোন হামলা নিয়ে জেমিমা একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করছেন। ইমরান ও জেমিমার মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলেও নিজেদের দুই সন্তানের সঙ্গে দেখা করা উপলক্ষে তাঁদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। মার্কিন আইনজীবী ক্লাইভ স্মিথ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেমিমাকে সহযোগিতা করছেন এবং তাঁরা ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে পশ্চিমা গণমাধ্যমে একটি বড় ধরনের প্রচারণার পরিকল্পনাও নিয়েছেন। ভ্যানিটি ফেয়ার সাময়িকীতে লেখালেখি করেন জেমিমা খান। তিনি শুধু ইমরান খানকে নয়, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকেও সহযোগিতা করছেন। তাঁর প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অ্যাসাঞ্জও বক্তব্য দিতে পারেন।
রোববারের জনসভায় ইমরান খান বারবার একটা কথা বলেছেন, ‘পাকিস্তান পাল্টে গেছে।’ তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের ঘাঁটি যারা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়েছে এবং শুধু ডলার পাওয়ার জন্য পাকিস্তানিদের বিক্রি করে দিয়েছে, আমি তাদের রেহাই দেব না।’ পারভেজ মোশাররফের নাম উল্লেখ না করে তাঁকে ইঙ্গিত করে ইমরান খান বলেছেন, ‘দেশে ফেরার চেষ্টা করবেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক রাখতে চাই। তাই বলে মার্কিন দাসত্ব মেনে নেব না।’
কাশ্মীরি জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ইমরান খান ভারতকে কাশ্মীর থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরামর্শ দেন। ভারত বিষয়ে জারদারি বা নওয়াজের অবস্থান দুর্বল বলে মনে করে পাঞ্জাবের জনগণ। তাদের সমর্থন আদায়ের জন্য ইমরান কঠোর ভাষায় ভারতকে আক্রমণ করেন। তাঁর এই কঠোর অবস্থান হয়তো সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়াবে। তবে একই সঙ্গে তিনি বেলুচিস্তানে সেনাবাহিনীর অভিযানের নিন্দা জানান। এ ছাড়া সম্প্রতি প্রকাশিত নিজের বই পাকিস্তান এ পারসোনাল হিস্ট্রিতে ইমরান খান সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন।
ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানে বিভিন্ন পশ্চিমা দূতাবাসের বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রদূত এ সপ্তাহে ইমরানের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি লাহোরে জনসভা শেষ করে রাতেই চীনের উদ্দেশে রওনা হন।
ইমরানের বিরোধীরা প্রায়ই তাঁকে ‘তালেবান খান’ বা ‘জামায়াত-ই-ইসলামির নতুন সংস্করণ’ হিসেবে অভিহিত করে থাকে। কিন্তু লাহোরের সমাবেশে যোগদানকারী কয়েক লাখ মানুষের জন্য ওই দিন সমাবেশে বহু জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী গান করেন। কিছু সমালোচক বলছেন, ওটা ছিল আসলে একটা বড় সংগীতানুষ্ঠান। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এমন প্রকাশ্য আয়োজনে বহুদিন পর গান-বাজনা উপভোগ করতে পারল লাহোরবাসী। পাকিস্তানে অনেক জনপ্রিয় পপশিল্পী আছেন। কিন্তু আত্মঘাতী বোমা হামলার ভয়ে ২০০৭ সালের পর থেকে তাঁরা প্রকাশ্যে অনুষ্ঠান করতে সাহস পান না। করাচিতে বোমা হামলা হয়েছিল সনু নিগমের সংগীতানুষ্ঠানে। তারপর অনেক পপশিল্পীকে হুমকি দেওয়া হয় প্রকাশ্যে অনুষ্ঠান না করার জন্য। সে কারণে আদনান সামি, আতিফ আসলাম ও আল জাফরের মতো অনেক জনপ্রিয় শিল্পী ভারতেই কাজ করেন। কিন্তু এখন তাঁরা দেশে ফিরতে পারেন।
ইমরান খান শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচিকেই রাজপথে ফিরিয়ে আনেননি, শেহজাদ রয়ের মতো অনেক পপশিল্পীকেও প্রকাশ্যে গান গাইতে উৎসাহিত করেছেন। রোববারের জনসভায় শেহজাদ গেয়েছেন তাঁর জনপ্রিয় গান, ‘উঠ বন্ধ্ কামার কিয়া ডরতা হে ফির দেখ খুদা কিয়া করতা হে’। হাজার হাজার তরুণ নাচতে থাকে গানের তালে তালে আর ইমরান তাদের সঙ্গে হাতে তালি দেন। ধর্মীয় কট্টর পন্থা বা সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদে বিশ্বাস করে না এমন পাকিস্তানিদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন ইমরান খান। অপশাসন ও দুর্নীতির কারণে গণতন্ত্রের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে, এমন তরুণ প্রজন্মের কাছে আশার আলো ইমরান। এই নতুন প্রজন্মই এখন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পাকিস্তানে পরিবর্তন আনতে পারে। তরুণেরাই ইমরানের মূল শক্তি এবং এদের বেশির ভাগ এসেছে নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। পাকিস্তানে এই শ্রেণীর মানুষের রাজনীতির প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না, কিন্তু এখন তারা সক্রিয় হয়ে উঠছে। এটা একটি ইতিবাচক দিক। অনেক রাজনীতিবিদ ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তাঁর দলে যোগ দেওয়ার জন্য। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশিসহ অনেক বড় বড় নেতা হয়তো শিগগিরই অবাক করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু ইমরানের নজর নতুন প্রজন্ম এবং শিক্ষিত সমাজের দিকে।
রোববারের জনসভায় ইমরান দাবি তুলেছেন, দেশে এবং দেশের বাইরে যার যত সম্পদ আছে, সে হিসাব দিতে হবে সব রাজনৈতিক নেতাকে। হিসাব না দিলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কয়েক মাসের মধ্যে অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলবেন এবং সব বড় বড় শহর অবরোধ করবেন বলে ঘোষণা দেন।
অনেক বিশ্লেষক বলছেন, জারদারির পিপিপি বা নওয়াজের পিএমএল-এনের বিপরীতে তৃতীয় শক্তি হিসেবে উত্থান ঘটতে যাচ্ছে ইমরান খানের। আবার অনেকে বলছেন, এতে করে পাঞ্জাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন নওয়াজ আর তাতে চূড়ান্ত হিসেবে লাভবান হবে পিপিপি। তবে এসব হিসাব-নিকাশের সঙ্গে একমত নন ইমরান নিজে। কেননা, তিনি সব সময় একই সঙ্গে পিপিপি ও পিএমএল-এনের সমালোচনা করে এসেছেন। পিপিপি কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় আছে আর পিএমএল-এন শাসন করছে পাঞ্জাব। সব মিলিয়ে দেশের ৬০ ভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণে। গত রোববারের সমাবেশ থেকে ইমরান প্রমাণ করেছেন, লাহোরে নওয়াজের চেয়ে তাঁর জনপ্রিয়তা বেশি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আগামী নির্বাচনে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছেন। শুধু পাঞ্জাবের মধ্যাঞ্চল নয়, দক্ষিণ পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখাওয়া, বেলুচিস্তান ও সিন্ধুতেও ইমরানকে এমন কিছু সহযোগী খুঁজে বের করতে হবে, যারা জিতে আসতে পারবে।
বড় কিছু দাবি করতে হলে ইমরানকে ফয়সালাবাদ, মুলতান, পেশোয়ার, করাচি এবং কোয়েটাতেও লাহোরের মতো সমাবেশ করে দেখাতে হবে। শুধু পিএমএল-এনের ভোটব্যাংকে ভাগ বসালেই হবে না, পিপিপিকেও বড় ধরনের হুমকির মুখে ফেলে দিতে হবে। লাহোর বিভাগে জাতীয় পরিষদের আসন আছে ২৫টি। এর মধ্যে পিএমএল-এনের ২০টি, পিপিপির তিনটি এবং পিএমএল-কিউয়ের একটি। লাহোরে ইমরানকে অন্তত পিএমএল-এনের অর্ধেক আসন এবং পিপিপি ও পিএমএল-কিউয়ের সব কটি আসন ছিনিয়ে নিতে হবে। গুজরানওয়ালা বিভাগের ২৩টি আসনের মধ্যে পিএমএল-এনের ১৩টি, পিপিপির আটটি এবং পিএমএল-কিউয়ের দুটি। এখানে পিএমএল-এনের চেয়ে ইমরানই পিপিপি ও পিএমএল-কিউয়ের বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেবেন।
ফয়সালাবাদ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের অনেক বর্তমান সদস্য ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তাঁর দলে যোগ দেওয়ার জন্য। খায়বার পাখতুনখাওয়া থেকেও পিপিপি, পিএমএল-কিউ এবং এএনপির কিছু সদস্য ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এর অর্থ ইমরানের দ্রুত জনপ্রিয়তা শুধু পাঞ্জাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। উত্তরে তাঁর সবচেয়ে বড় ঘাঁটি আদিবাসী এলাকা। সেখানে তিনি একচেটিয়া ভোট পাবেন এবং ১০টির বেশি আসন নিজের দখলে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন। এ জন্য ওই এলাকায় তিনি সরকারকে নতুন করে কোনো সামরিক অভিযান চালাতে দিতে চান না। আর তা যদি না হয়, অর্থাৎ কোনো সামরিক অভিযান যদি কর্তৃপক্ষ না চালায়, তাহলে পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে? জারদারি সরকার একটি সন্ধিক্ষণে আছে। একদিকে আছে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ, অন্যদিকে ইমরানের পিটিআই।
শুধু জারদারিকে লক্ষ্যবস্তু করে নিরাপদ খেলাই খেলার চেষ্টা করছেন নওয়াজ শরিফ। এবং যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইমরানই হঠাৎ করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হিসাব-নিকাশ বদলে দিয়েছেন। তিনি এখন একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিনপন্থী রাজনৈতিক এলিটদের জন্য এক নতুন ঝামেলা হয়ে উঠেছেন। অন্য জনপ্রিয় দলগুলোর ইমরানের মার্কিনবিরোধী নীতি অনুসরণ করা ছাড়া আসলে আর কোনো বিকল্প নেই। পাকিস্তানে পরিবর্তনের এই ঢেউ হিলারি ক্লিনটনকেও অনুধাবন করতে হবে এবং ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া তিনি তা বুঝতেও পারবেন না। গত ৩০ অক্টোবরের সমাবেশ শুধু শুরুর ইঙ্গিত। পাকিস্তানের রাজনৈতিক মানচিত্রে আরও বড় বদল দেখবে বিশ্ব এবং এতে বড় ভূমিকা থাকবে ইমরান খানের।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. ফারুক হোসেন
হামিদ মির: পাকিস্তানের জিয়ো টিভির নির্বাহী সম্পাদক।
hamid.mir@geo.tv

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন