শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১১

 নৌ প্রটোকল সংশোধন করতে চায় বাংলাদেশ

আশুগঞ্জ নৌবন্দরের মাধ্যমে ভারতকে ট্রানজিট দিতে ’৭২-এ সই হওয়া নৌ প্রটোকল সংশোধন করতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের লক্ষ্য, আশুগঞ্জ হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় আনুষ্ঠানিকভাবে পণ্য পরিবহন শুরুর আগে মাশুল আদায়।
পররাষ্ট্র, নৌপরিবহন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, আশুগঞ্জ নৌবন্দরের মাধ্যমে ভারতকে কীভাবে ট্রানজিট দেওয়া হবে, তার বিধিমালা ঠিক করতে সম্প্র্রতি নৌপরিবহন ও আইন মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নৌ প্রটোকলের আওতায় পণ্য পরিবহনের প্রক্রিয়া, বিশেষ করে এনবিআরের কর্মপদ্ধতি এবং নতুন করে মাশুল আদায়ের বিষয়টি কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তার উল্লেখ থাকবে ওই দুই মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সুপারিশে। গত ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিধিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত অভ্যন্তরীণ নৌ ট্রানজিট ও বাণিজ্য প্রটোকল (পিআইডব্লিউটিটি) অনুযায়ী ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার বিনিময়ে কোনো মাশুল আদায়ের সুযোগ নেই। শুধু নৌপথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট হারে অর্থ পায় বাংলাদেশ। তাই মাশুল আদায় করতে হলে আগামী বছর চুক্তি নবায়নের সময় এতে সংশোধনী আনতে হবে।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মান্নান হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, নৌ প্রটোকলের আওতায় আশুগঞ্জের মাধ্যমে ভারতে পণ্য পরিবহনের বিষয়ে পরীক্ষামূলক ট্রানজিট শেষ হয়েছে। নিয়মিত ট্রানজিট শুরু হবে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে। আর নৌ প্রটোকলের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের মার্চে। কাজেই এ ক্ষেত্রে মাশুল আদায়ের বিষয়টি প্রটোকল নবায়নের বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে।
আবদুল মান্নান হাওলাদার আরও বলেন, আশুগঞ্জকে নতুন পোর্ট অব কল (যে বন্দরে ভারতের জাহাজ আসবে) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে গত বছরের মার্চে নৌ প্রটোকল সংশোধন করা হয়। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হলে আনুষ্ঠানিকভাবে আশুগঞ্জের মাধ্যমে ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহন শুরু হবে।
মাশুল নিয়ে সংশয়: মাশুল আদায়ের জন্য সরকারের উদ্যোগ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা। তাঁরা গত বছর বাগেরহাটে ভারতের পণ্যবাহী দুটি জাহাজের প্রসঙ্গটির উল্লেখ করেন। এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছর এনবিআরের জারি করা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাহাজ দুটিতে কর আরোপ করে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা এনবিআরের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নয়। কারণ নৌ প্রটোকলের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো করারোপের সিদ্ধান্ত তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া করার সুযোগ নেই। শেষ পর্যন্ত ভারতের কাছে হার মানে বাংলাদেশ। বিনা শুল্কেই ওই জাহাজ দুটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ’৭২-এর নৌ প্রটোকল অনুযায়ী, কোনো ধরনের মাশুল আদায়ের সুযোগ নেই। শুধু নৌপথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভারত প্রতিবছর পাঁচ কোটি ২৫ লাখ টাকা দেয় বাংলাদেশকে। এ ছাড়া প্রতিটি জাহাজের জন্য নদী ব্যবহার, জাহাজ থামানো, পণ্য ওঠানো-নামানো এবং ভাড়াসহ এ-সংক্রান্ত সব ধরনের চার্জ পরিশোধ করে থাকে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো।
এগোয়নি আশুগঞ্জ নৌবন্দর প্রকল্প: ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হলে আশুগঞ্জ নৌবন্দরের কর্মকাণ্ড বাড়বে। এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই ভারতের দেওয়া ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির আওতায় আশুগঞ্জ নৌবন্দরের আধুনিকায়নে ২৪২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এখনো এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহনসচিব আবদুল মান্নান হাওলাদার বলেন, ঋণচুক্তির আওতায় যে প্রকল্পটি নেওয়ার কথা, তা এখনো ভারতের চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। অনুমোদন পেলেই খুব শিগগির আশুগঞ্জ নৌবন্দরের উন্নয়নকাজ শুরু হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন