শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১১

ভঙ্গুর দেশ ভঙ্গুর অর্থনীতি


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো এককভাবে বিশ্বের বৃহৎ শক্তি। কিন্তু এক দশক আগের সেই শক্তি তার আর নেই। তার এই শক্তির ক্ষীয়মানতার কারণ যা বলা হয় সেই ৯/১১ নয়। বরং এর কারণ ৯/১১-এর সেই বিয়োগাত্মক ঘটনার নাম ভাঙিয়ে গত এক দশক ধরে যা করা হচ্ছে তা। এক প্রামাণ্য নিবন্ধে আইজাজ আহমদ বিষয়টির যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। ফ্রন্টলাইনে প্রকাশিত নিবন্ধটির ভাষান্তর করেছেন নেয়ামুল হক •
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ধ্বংসযজ্ঞের বর্ষপূর্তি উদযাপন এখন মার্কিনিদের জন্য এক পরম আরাধ্য ধর্মীয় আচারানুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই ঘটনার সুবাদেই যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জীবন ও স্বপ্ন কল্পনার নিয়ন্ত্রণের অধিকার পেয়ে গেছে। মিডিয়ার কল্যাণে এই বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান এখন বিশ্বব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ এক বার্ষিক প্রদর্শনীর রূপ নিয়েছে। ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর পরই কিন্তু এর একটি আচারানুষ্ঠানিক রূপ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার দিন থেকেই একে অতি দ্রুত ‘৯/১১’ নামে ডাকতে শুরু করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন জরুরি কোনো ফোন করতে গেলেই ৯১১ ডায়াল করতে হয়। সাধারণভাবে জরুরি কোনো কিছুর সূত্রপাত বুঝাতে এখন প্রতীকী অর্থে ৯/১১ কথাটি ব্যবহার করতে হয়। যে জায়গাটিতে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের টুইন টাওয়ার দুটি দাঁড়িয়েছিল অতি দ্রুতই সেই স্থানটির ‘গ্রাউন্ড জিরো’ নামকরণ হয়ে যায়। এতদিন পর্যন্ত এই নামটি পারমাণবিক হামলার কোনো এক কল্পিত স্থানের জন্যই রেখে দেওয়া হয়েছিল।
টাওয়ার দুটি তখনো জ্বলছিল। খসে খসে পড়ছিল এদের বিভিন্ন অংশ। সিএনএন টেলিভিশনের ক্যামেরায় ধরা এসব দৃশ্যের পাশাপাশি তখন উচ্চারিত হচ্ছিল পার্ল হারবারের নাম। আর টেলিভিশনের পর্দায় প্রদর্শিত দৃশ্যাবলির গায়ে ‘আমেরিকার ওপর হামলা’ ‘আমেরিকা আক্রান্ত’ ‘আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ইত্যাদি বাক্যাবলির লিখিত রূপ একের পর এক ভেসে উঠছিল। তবে সেই বিয়োগান্তক ঘটনার পর থেকে শুরু করে খুব কম দিনই অতিবাহিত হয়েছে যেদিন যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াগুলো কিংবা সে দেশের সরকারি মিডিয়া শোকাবহ সেই দিনের স্মৃতিকে স্মরণ করেনি। আর এ ঘটনার নাম করে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে নানাধরনের নীতি-কৌশলকেও তারা বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অবিরত।
দেশপ্রেমের এই আচার-আনুষ্ঠানিকতাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিশেষ একটি উদ্দেশ্য সাধন করেছে। এগুলো মানুষের মনে উত্তেজনা ও ভীতির জন্ম দিয়েছে। আর এই ভীতির ব্যাপকতাকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র যেসব অন্যায় যুদ্ধে জড়িত সেসব যুদ্ধের পক্ষে মার্কিন জনগণের সমর্থন আদায় করে নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুকে চালানো এই একমাত্র সন্ত্রাসী হামলাটিকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়েই মার্কিন জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী অব্যাহত গোয়েন্দা নজরদারি চালাতে থাকা একটি সরকারকে এ কারণেই তাদের সমর্থন দিয়ে যাওয়া উচিত। একই সঙ্গে সম্ভাব্য সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করার খরচ হিসেবে তাদের উচিত হবে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বড় একটি অংশ স্বেচ্ছায় সরকারের হাতে তুলে দেওয়া। বেদনাদায়ক এ ঘটনার স্মৃতিচারণমূলক আনুষ্ঠানিকতার পুনরাবৃত্তি বিপুল বাজেট ঘাটতির মুখেও সিনেটর জোসেফ লিবারম্যানের মতো উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিককে দিয়ে বলিয়েছে যে, সামরিক খাতে ব্যয় বরাদ্দ সহজলভ্য করার স্বার্থে সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং বেকার ভাতার মতো সামাজিক ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে আনার বিষয়টি মার্কিন জনগনের মেনে নেওয়া উচিত।
সুতরাং রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে টেলিভিশনের মাধ্যমে এ জাতীয় ঘটনার প্রায় ধর্মীয় আচারানুষ্ঠানের মতো প্রচারণা কেন যে চালিয়ে যেতে হচ্ছে সেটা যে কারো পক্ষেই বোঝা খুব সহজ। তবে বাদ বাকি বিশ্বও যে কেন ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার এত বছর পর এ জাতীয় প্রচারণায় যোগ দিচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। বিশেষত এই ঘটনাটিকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে সারাবিশ্বে ইতোমধ্যেই যেখানে অন্তত অর্ধডজন যুদ্ধের সূচনা ঘটে গেছে এবং যুদ্ধগুলো এখনো চলমান। ড্রেসডেনে বোমাবর্ষণের স্মৃতিকে স্মরণ করে জার্মানরা কোনো বার্ষিকী পালন করে না। লন্ডনের ওপর বিমান হামলার ঘটনাকেও স্মরণ করে না ব্রিটেনবাসী। ইসরাইলি সৈন্যরা যে দফায় দফায় হামলা চালিয়ে বৈরুতে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে সেসব নিয়েও লেবাননের মানুষ স্মৃতিকাতর হয় না। আর এ দেশগুলো যদি তাদের উল্লেখিত ঘটনাবলির বার্ষিকী পালন করতও তবে বাদ বাকি বিশ্ব সেগুলোর প্রতি ফিরেও তাকাত না। তবে মার্কিন মুল্লুকে ঘটে যাওয়া একটি বিয়োগান্তক ঘটনা ব্যতিক্রমধর্মী বলেই প্রতিভাত হয়। কিন্তু কেন? নিউইয়র্কের সেদিনের সেই বিয়োগান্তক ঘটনাকে কি পরবর্তী রাতগুলোতে বাগদাদের বুকে ঘটতে থাকা ‘আঘাত ও বিভীষিকাময়তার’ সঙ্গে তুলনা করা যায়? ৯/১১ ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবেই মার্কিন জনগণকে বাগদাদের সেসব ভয়াবহ ঘটনা উপহার দেওয়া হয়েছিল। বস্ত্তত, নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার হামলার ১০ বছর পর এসে যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু দেখাতে পারেনি যেটাকে পার্ল হারবার ঘটনার দশম বর্ষ পূর্তির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।
বলা হয়ে থাকে, ৯/১১কে স্মরণ করতে হবে এই কারণে যে, এই ঘটনা বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। বরং তার পরের দিনগুলোতে অর্থাৎ ৯/১১ তারিখে এবং তখন থেকে শুরু করে এক দশকজুড়ে নিউইয়র্ক ট্র্যাজেডির নাম ভাঙিয়ে সারাবিশ্বে যেসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে সেগুলোই বিশ্বকে অনেক বেশি পাল্টে দিয়েছে। গেল দশকের যেসব ঘটনাবলীকে বিবেচনায় নিয়ে নোবেল বিজয়ী উদারনৈতিক অর্থনীতিবিদ ও খ্যাতিমান কলাম লেখক পল ক্রুগম্যান ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় নিম্নলিখিত কথাগুলো লিখেছেন : ‘৯/১১-এর পর কী ঘটেছিল, আমার ধারণা কেউ স্বীকার করুক বা না করুক সবাই তা জানে। যা ঘটেছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। বার্নি কেরিক, রুডি জিনিয়ানি এবং অবশ্যই জর্জ ডব্লিউ বুশের মতো ভুয়া নায়করা একটি বিভীষিকাময় ঘটনাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের প্রতিযোগিতায় নেমে গিয়েছিলেন সেদিন। এর পরই তারা অন্যায় একটি যুদ্ধ শুরু করে দেওয়ার অজুহাত হিসেবে এ ঘটনাটিকে ব্যবহার করতে লাগলেন। যুদ্ধটির পেছনে যেসব যুক্তি তারা উপস্থাপন করেছিলেন তার সবই ছিল অবান্তর।
আরো অনেকের আচরণই সন্তোষজনক ছিল না। আমাদের পেশাদার পন্ডিতরা, যাদের কী ঘটে চলেছিল সে সময় বোঝার কথা ছিল, তারা কী করলেন? না, সহজ রাস্তাটিই বেছে নিলেন অনেকে। দুর্নীতির ব্যাপারে চোখ দুটি বন্ধ রাখলেন, আর ছিনিয়ে নেওয়া নৃশংসতাকে সমর্থন দিয়ে গেলেন। ৯/১১-এর স্মৃতি একেবারেই বিষাক্ত হয়ে গেছে। এটি আর কখনো বিষমুক্ত হবে না। এটি এখন এক লজ্জাজনক উপলক্ষে পরিণত হয়েছে এবং ব্যাপারটা মার্কিন জাতির অন্তরেও ধরা পড়েছে। তারা ব্যাপারটা জানে বলে ক্রুগম্যান যে দাবি করেছেন সে দাবির পক্ষে অপ্রত্যক্ষ এবং অস্পষ্ট হলেও কিছু প্রমাণ আছে বলেই মনে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে পরিচালিত প্রতিটি জনমত জরিপেই দেখা গেছে, অধিকাংশ মার্কিনিই তাদের চাকরি-বাকরি এবং দেশের অর্থনীতি নিয়েই অধিক চিন্তিত। ৯/১১-এর প্রতীকী যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কথা এখন তাদের মাথায়ই নেই।
পিউ রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপ মতে, মোটামুটি অর্ধেক মার্কিন নাগরিকই মনে করে ৯/১১-এর হামলা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিরই ফলাফল। কানাডাভিত্তিক পশ্চিম এশিয়াবিষয়ক সম্ভবত সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন বিশ্লেষক এরিক মারগোলিসকে উদ্ধৃত করে নোয়াম চমস্কি ৯/১১ নিয়ে তার সাম্প্রতিক এক লেখায় বলেছেন, ‘৯/১১-এর হামলার জন্য ওসামা বিন লাদেনই যে দায়ী এ দাবির পক্ষে ওয়াশিংটন আজ পর্যন্ত কোনোরকম প্রমাণই জনসমক্ষে হাজির করেনি।’ সম্ভবত এটিও একটি কারণ যার জন্য ‘প্রতি তিনজন মার্কিনির মধ্যে একজন অন্তত মনে করেন যে, ৯/১১-এর ঘটনার পেছনে আসলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং ইসরাইল কিংবা এককভাবে ইসরাইল জড়িত রয়েছে’।
কোনো সন্দেহ নেই হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইসরাইলের জড়িত থাকার ধারণাটি উদ্ভট। তবে এটাও ঠিক, সেদিনের সেই হামলার ঘটনাকে এই দুটি দেশ কৌশলগত ফায়দা লোটার জন্য নিজেদের সুবিধামতো রংচং মেখে প্রচার করেছে। আর এটা করতে গিয়ে তারা মার্কিন নাগরিক জীবন এবং সম্পদের অপচয় ঘটিয়েছে। এ কারণেই সম্ভবত বহু মার্কিনির মনে ঘটনাটি ঘিরে এমন একটি কাল্পনিক ধারণা দানা বাঁধতে পেরেছে। অপরাধ বিস্তার অনুযায়ী প্রতিটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরই পুলিশের মনে স্বাভাবিকভাবে যে প্রশ্নটি জাগে তা হলো, ঘটে যাওয়া ঘটনাটি থেকে লাভবান হয়েছে কে? নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ৯/১১-এর ঘটনা থেকে মার্কিন জনগণ লাভবান হয়নি। তবে অনুরূপ নিশ্চয়তার সঙ্গেই বলা যায়, লাভবান হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্র ব্যবসা। সুতরাং এ কারণেই মার্কিন নাগরিকদের বড় একটি অংশ বিশ্বাস করে, ৯/১১-এর ঘটনার পেছনের সম্ভাব্য অপরাধী হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শিল্প।
৯/১১কে ঘিরে অস্পষ্টতা : ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সকালে টুইন টাওয়ারের ওপর ধৃষ্টতাপূর্ণ যে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছিল যাতে প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হন, তা যে কোনো বিবেচনায়ই মানবতার বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর এবং পরিকল্পিত এক অপরাধ। তাৎক্ষণিকভাবেই টেলিভিশনের পর্দায় ভাসতে থাকা এ ধ্বংসযজ্ঞের দৃশ্যাবলীর ঘটনায় ভয়াবহতাকে আরো বেশি তীব্রতা দান করে এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ভীতবিহবল হয়ে পড়ে, মানসিক বিপর্যস্ততার শিকার হয়। ইতিহাস বলছে, সন্ত্রাসী হামলার, তা সে যে কোনো মাত্রারই হোক, কবলে পড়ে বিশ্বের দায়িত্বশীল রাষ্ট্রগুলো সবসমযই ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে এবং সন্ত্রাসকে একটি অপরাধ গণ্য করে তাকে মোকাবিলায় পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আর সন্ত্রাসীরা বাইরের রাষ্ট্রের হলে তাদের মোকাবিলায় নিজ দেশের সবধরনের জাতীয় নিরাপত্তামূলক সংস্থাগুলোকে কাজে লাগানো হয়েছে। পাশাপাশ দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালাতে দেখা গেছে। ব্রিটেনের ভৌগোলিক সীমারেখার অভ্যন্তরে আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির হামলা চলাকালে ব্রিটেন তাই করেছিল। এ জাতীয় কৌশল অবলম্বনের ক্ষেত্রে ভারত একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। খালি স্থানে সন্ত্রাসী এবং পরবর্তী সময়ে ইসলামপন্থী হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে ভারত ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। এসব সন্ত্রাসীকে যে পাকিস্তান আশ্রয়-প্রশ্রয় দিত তা সবারই জানা এবং প্রমাণিত সত্য। সেদিন টেলিভিশন এবং সিনেমার তারকারা পর্যন্ত এসব সন্ত্রাসীর ব্যাপারে বিক্ষুব্ধ হয়ে ‘যথেষ্ট হয়েছে’, ‘আমাদের এখন ধৈর্যচ্যুতি ঘটার সময়’ ইত্যাদি বলে তারস্বরে চিৎকার করেছিল। তা সত্ত্বেও সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেওয়া সেসব সন্ত্রাসীর পেছনে ধাওয়া করা থেকে ভারত বিরত থেকেছে। এমনকি পাকিস্তানের কোন স্থানে সন্ত্রাসীরা লুকিয়ে আছে সে ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও। দেখা গেছে, সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য যখন কোনো বেপরোয়া তল্লাশি চালানো হয়েছে তখন ভারতের দায়িত্বশীল জনমত এ বলে অভিযোগ উত্থাপন করেছে যে, সন্ত্রাসীদের খুঁজতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে।
১১ সেপ্টেম্বরের সকালে সন্ত্রাসী হামলাটি ঘটে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সামনে বেছে নেওয়ার মতো একাধিক বিকল্প ছিল। প্রথমেই সে ধৈর্য ধারণ করে ঘটনার বীভৎসতা ও আকস্মিকতায় ভীতবিহবল হয়ে পড়া নাগরিকদের মানসিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য একটি মানবীয় প্রক্রিয়া চালু করতে পারত। অথবা সে জনগণের সেই মনস্তাত্মিক বিপর্যয়ের ব্যাপারটি নিয়ে উচ্চকিত হয়ে এবং তাকে দীর্ঘস্থায়ী করে বহির্বিশ্বে যুদ্ধযাত্রার পক্ষে জনমত আদায় করে নিতে পারত। কেবল পাশ্চাত্য কিংবা ইসরাইলই নয়, সারাবিশ্বই সেদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সীমাহীন সহানুভূতি প্রদর্শন করেছিল। হামলায় নিহত মার্কিন নাগরিকদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তেহরানের রাস্তায় রাস্তায় মিছিল সমাবেশ হয়েছে। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগাইনাইজেশনের চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত এক বার্তার মাধ্যমে শোক ও সংহতি জ্ঞাপন করেন। আফগানিস্তানের তালিবান সরকার হামলার নিন্দা জানায় এবং তার বিরুদ্ধে আনা হামলাকারীদের মদদদানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রমাণ হাজির করতে বলে। সে এও জানায়, হামলাকারীরা আফগান নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরবের নাগরিক। হামলার দায়ে সুনির্দিষ্টভাবে যখন ওসামা বিন লাদেনকে অভিযুক্ত করা হলো তখনো তালিবান বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র যদি হামলার সঙ্গে ওসামা বিন লাদেনের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারে তবে তারা তাকে আটক করে অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সের (ওআইসি, বর্তমানে অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) হাতে তুলে দেবে যাতে শরিয়া আইন অনুযায়ী তার বিচার করা যায়। তবে এ জাতীয় আইনি কোনো প্রমাণাদি কখনো হাজির করা হয়নি। বরং যুক্তরাষ্ট্র ওসামা বিন লাদেনের উপস্থিতিকে দোহাই হিসেবে কাজে লাগিয়ে আফগানিস্তান দখলের অভিযান চালিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন