শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৬

যেসব কারণে সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে


এ লেখায় এমন কয়েকটি সমস্যার কথা আলোচনা করব, যার কারণে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নশ্রেণীর এক বিরাট অংশ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।


এর মধ্যে একটি সমস্যার ফল আমি কিছু দিন আগে লিখেছি। সেটি হচ্ছে, কিছু রোগের চিকিৎসাব্যয়। এ দেশে কিছু রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার, হার্টের বাইপাস অপারেশন, কিডনির নিয়মিত ডায়ালাইসিস। এগুলোর ব্যয় অবশ্যই সরকারকে বহন করতে হবে। তাতে বছরে এক হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। তা না হলে প্রতি বছর কয়েক লাখ করে নিঃস্ব মানুষ বাড়তে থাকবে। এভাবেই হয়ে আসছে।
দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, নদীভাঙন। এতে প্রতি বছর এক লাখ লোক গৃহ ও জমি হারায় বাংলাদেশে। এটা চলতে থাকবে। বাঁধ দিয়ে এ সমস্যার সার্বিক সমাধান হবে না। হলে ভালো কথা। যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন নদীভাঙনের শিকার লোকের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আগেও এ সম্পর্কে লিখেছি। এ জন্য রিলিফ বিভাগের বিশেষ ব্যবস্থা, লোকবল ও অর্থ থাকতে হবে। এটা হতে হবে একটি স্থায়ীভাবে চালু প্রজেক্ট। নদীভাঙনের শিকার লোকদের প্রথমত, রিলিফকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। নদীভাঙনে দেশের ১৫-২০টি এলাকা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব এলাকায় রিলিফ বা ত্রাণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাদের যদি নিকটবর্তী এলাকার খাস জমিতে পুনর্বাসন সম্ভব হয়, তাহলে সেটা করতে হবে। যাদের এভাবে করা যাবে না, তাদের জন্য সরকার কোথাও না কোথাও ঘর করে দেবে, তাদের চাকরির ব্যবস্থা করবে, অন্তত হকারি করার উপযোগী আর্থিক সাহায্য দেবে। প্লানিং মন্ত্রণালয় ও রিলিফ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে বিস্তারিত ও বাস্তব পরিকল্পনা করবে।
বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখলে হবে না। বর্তমানে এসব লোকের একটা বড় অংশই শহরে চলে আসে ছিন্নমূল মানুষ হিসেবে। এরা রাস্তাঘাট ও বস্তিতে থাকে। ফলে পথশিশুদের সংখ্যা বাড়ে। বস্তির অপরাধীরা এদের ব্যবহার করে। তাদের নারীদের নিরাপত্তা থাকে না। প্রতি বছর এদের জন্য বেশি হলে ১০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।
এরপর যে সমস্যা মানুষকে নিঃস্ব করছে, তা হচ্ছে মামলার খরচ। আজকাল রাজনৈতিক মামলা হচ্ছে লাখ লাখ। কোনো কোনো মামলায় হাজার হাজার আসামি; আবার কারো কারো বিরুদ্ধে শ’খানেক মামলা। পত্রিকায় দেখলাম, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৭৫টি মামলা। এসব থেকে তাকে জামিন নিতে হয়েছে।
আজকাল জামিন সহজে পাওয়া যায় না। আইনজীবীর খরচ অনেক। জামিনের পর কয়েক বছর ধরে আদালতে হাজিরা। হাজিরায়ও খরচ হয়। অসংখ্য লোক মামলায় সর্বস্বান্ত হচ্ছে। এ থেকে বের হওয়ার পথ হলো- এত মামলা পুলিশের দায়ের না করা, কেবল যুক্তিযুক্ত ক্ষেত্রে মামলা করা, বেনামি শত শত লোককে আসামি না করা। সরকার বা কোর্ট কর্তৃক সবাইকে লিগ্যাল এইড (আইনি সহায়তা) দেয়া, আইনের বিধিবিধান সহজ করা এবং পুলিশের নির্যাতনের সুযোগ কমিয়ে দেয়া। 
সুপ্রিম কোর্টের এ বিষয়টি দেখা দরকার এবং নানা ধরনের গাইডলাইন জারি করা প্রয়োজন। তা না হলে নিঃস্ব লোক আরো বাড়বে।
শেষে মাদক ও সিগারেট পানের কথা বলব। মাদক সেবন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব লোক শেষ পর্যন্ত অপরাধী ও নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে, সিগারেট ধূমপানও ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে দিকে তাকাই, দেখি লোকেরা সিগারেট খাচ্ছে- ছেলে, বুড়ো, দাড়িওয়ালা ধার্মিক লোক, শ্রমিক ও রিকশাওয়ালারা। অনেকের শরীর দুর্বল, তারা আরো দুর্বল হয়ে যাবে। রিকশাওয়ালাদের সামান্য রোজগারও নষ্ট হয়ে যায়। ধার্মিক লোকেরা কেন সিগারেট খায়, বুঝতে পারি না। আলেমরা এটাকে সব সময় মাকরুহ বলে এসেছেন; খারাপ কাজ বলে এসেছেন। ড. ইউসুফ আল কারজাবি বলেছেন, ‘এখনো কি সন্দেহ আছে সিগারেট খাওয়া হারাম।’ অর্থাৎ আগের লোকেরা জানত না যে, সিগারেট এত ক্ষতিকর; কিন্তু এখন সবাই জানে। সুতরাং সিগারেট পান হারাম, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটাই তার মত।
মাদক সেবন ও সিগারেট খাওয়া বন্ধের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ দরকার। সিগারেট, বিড়ি ও মাদক উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা দরকার। এ ব্যাপারে সর্বাত্মক তদারকির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের একটি সেল (Cell) থাকতে পারে। 
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন