সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫

মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে সালমান রুশদি

হালকা পাতলা গোছের একজন ভারতীয় মানুষ। মাথায় চুল নেই তেমন। বসে আছেন একা, খালি মেঝের ওপর। পরনে মোটে একখানা নেংটি। আর চোখে কমদামের চশমা। হাতে ধরা নিজের লেখা কিছু নোট, কাগজপত্র। খুঁটিয়ে দেখছেন। সংবাদপত্রের পাতায় সারা পৃষ্ঠা জুড়ে নেয়া শাদা-কালো ফটোগ্রাফ। পৃষ্ঠার একদম ওপরের ডান দিকে সম্পূর্ণ রঙ্গিন রামধনুর ডোরাকাটা একটা আপেল। তার নিচে আমেরিকান আদেশমূলক অপবাদমাখা গালি। ‘থিংক ডিফারেন্ট’। হ্যাঁ, এরকমই আজকের দিনের আন্তর্জাতিক করপোরেট ব্যবসার ক্ষমতা। এমনকি মক্কামার্কা ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ সেও চুপিসারে প্রচারণা চালিয়ে নিজের ইমেজ দাঁড় করিয়ে ফেলে। অর্ধশতাব্দী আগের কথা। এই হাসি-খুশি লোকটি স্বাধীনতার জন্য একটি জাতির সংগ্রামকে তৈরি করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, আরে, ওটা তো ইতিহাস! এখন গান্ধী আপেলের মডেলিং করেন। তাঁর চিন্তাকে নতুন প্রজন্ম সত্য গণ্য করে না। যা আমলে আনা হয় তা হলো : মহাত্মা হলেন একজন নৈতিক অবতার। ওই আপেলের দর্শনের সঙ্গে যাকে মিলিয়ে দেখা যায় বড় জোর।

বিজ্ঞাপনটা যথেষ্ট বাজে। একটু বেশি ঘাটাঘাটি করেছে। নিশ্চয় এটা মূল্যবান উদ্দেশ্যহীন কমেডি। ফটোগ্রাফ যা কিনা যা বলতে চাচ্ছে এম কে গান্ধী ছিলেন আধুনিকতা ও টেকনোলজির আবেগদীপ্ত বিরোধী। টাইপরাইটারের চেয়ে পেনসিল দিয়ে লিখতে বেশি পছন্দ করতেন। ব্যবসায়ী মার্কা জামাকাপড় থেকে নেংটিই ভালোবাসতেন বেশি। গজিয়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানের চষা জমি ছিলো তাঁর কাছে অধিক আদরের বস্তু। যদি তাঁর জীবৎকালে কম্পিউটার (ওয়ার্ড প্রসেসর) উদ্ভাবিত হতো তিনি হয়তো ওটাকে জঘন্য জিনিস মনে করতেন। ‘ওয়ার্ড প্রসেসর’ এই শব্দগুচ্ছের সঙ্গে লেগে থাকা যান্ত্রিক গন্ধ হয়তো তাকে মোটেও আকর্ষণ করতো না।

‘থিংক ডিফারেন্ট’। যৌবনে গান্ধী যখন অভিজাত পশ্চিমা মননের আইনজীবী ছিলেন, তখন সাধারণ মানুষের সান্নিধ্য থেকে তাঁর চিন্তায় সত্যিকার আমূল পরিবর্তন এসেছিল। একবার ধনকূবের দাস বিড়লা (গান্ধীকে যিনি আর্থিকভাবে সাহায্য করতেন) বলেছিলেন, ‘ও হচ্ছে আমার থেকেও আধুনিক। কিন্তু ও সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ও মধ্যযুগে ফিরে যাবে’।

আজ গান্ধী মহামূল্যবান কিছুতে রূপান্তরিত হয়েছেন। তিনি বহুত ওপরের কিছু। আকড়ে ধরার মতো এমন কিছু। তিনি ইতিহাসের ঊর্ধ্বে। অ্যাবস্ট্রাক্ট, উত্তরাধুনিক। তিনি মোটেও তাঁর সময়ের কেউ নন, তবে বয়ে বেড়ানোর মতো কোনো ধারণা এমন কিছু। তিনি স্তুপীকৃত সুলভ্য সংস্কৃতির প্রতীক, এক উপমা যাকে ধার করা যায়। ব্যবহার করা যায়। ভেঙ্গে এদিক ওদিক করা যায়। নতুন করে আবিষ্কার করে অনেক কিছুর সঙ্গে জুড়ে দেয়া চলে শয়তানকে যেমন সত্যের সঙ্গে।

রিচার্ড এটেনবার্গের অনেকগুলো অস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘গান্ধী’। অনৈতিহাসিকভাবে পাশ্চাত্য ঢঙের সাধু বানিয়ে দেয়া ছবির একটি এটি। এটা যখন প্রথম মুক্তি পেয়েছিল আমাকে বেশ নাড়া দিয়েছিল। এখানে গান্ধীকে গুরু হিসেবে দেখানো হয়েছে। যিনি প্রাচ্যের জ্ঞানী, ফ্যাশনকারী দ্রব্য সরবরাহ করেন। গান্ধী মারা যাচ্ছেন যিশুর মতো (মৃত্যুর পূর্বে চট করে অনশনে যাচ্ছেন), যাতে করে অন্যেরা বেঁচে থাকে তাঁর জীবনের পরিবর্তে। তাঁর অহিংস আন্দোলনের দর্শনকে দেখানো হয়েছে এমন যে, ইংরেজদেরকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। ফলে তারা বিদায় নিচ্ছে। এখানে স্বাধীনতা জয়ী হতে পারতো। ছবিটি বোঝাতে চেয়েছে যে, তোমরা অত্যাচারী শাসকের থেকে তুমি বেশি নীতিবাদী ভূমিকায় যাও, তাহলে অত্যাচারীর নৈতিকবোধ ভেঙ্গে পড়বে। ফলে তারা নিজেকে সরিয়ে নেবে। তো, তাবৎ সাধারণীকরণ বা হলিউডিকরণ থাকা সত্ত্বেও ‘গান্ধী’ ধরনের প্রতীকী ছবির ফলপ্রসূতা তখনকার চলমান অনেক স্বাধীনতা আন্দোলনের ওপর শক্তিশালী ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পেরেছিলো। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী প্রচারকরা ও গণতন্ত্রকামী সারা দক্ষিণ আমেরিকাবাসী এই ছবির প্রলেপী প্রভাবে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। আমার তাই মনে হয়। আপাতভাবে ‘ইন্টারন্যাশনাল গান্ধী’র মরণোত্তর উচ্চ প্রশংসা প্রকৃত প্রেরণাশক্তিকে টোটেমে পরিণত করেছে।

আদর্শবাদী গান্ধীর সমস্যা হচ্ছে যে, তিনি জীবনের হিতোপদেশমূলক বক্তৃতা বা রাজনৈতিক সামাজিক সংস্কারের পরিকল্পনা সরবরাহকারী। আর মাঝেমধ্যে একঝলক কড়া-মিষ্টি কৌতুক উপহারদানকারী। সত্যিকার মানুষটি ছিলেন অনেক বেশি মজার। এই শতাব্দীর সবচেয়ে জটিল ও স্ববিরোধী ব্যক্তিত্ব। তাঁর পুরো নাম: মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। স্মরণযোগ্য সাহিত্যিক ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন উপন্যাসিক জি ভি ভেসানি এরকম ‘একশন স্লেভ ফেসিনেশন মুন গ্রোসার’। আর ওই নাম বলে যে, তিনি যেমন ছিলেন ধনী তেমন কপট চরিত্রের।

ব্রিটিশদেরকে মোটেও তিনি ভয় পেতেন না। কিন্তু তিনি রাত্রির অন্ধকারকে ভয় পেতেন। ঘুমানোর সময় পাশে একটা আলো জ্বেলে ঘুমাতেন। তিনি আবেগভরে সর্বভারতীয় ঐক্যে বিশ্বাস করতেন। যদিও তাঁরই ব্যর্থতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ঐক্য থেকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দিয়েছিল। কেননা তাঁর সকল দম্ভমাখা নৈর্ব্যক্তিকতা ও বিনয়ের জন্য তিনি প্রতিবাদ করেননি যখন কংগ্রেসের এক সেশনে তাকে ‘মহাত্মা’ সম্বোধন না করে মি. গান্ধী বলায় জিন্নাহ আক্রমণের মুখোমুখি হন। ‘বের হ বের হ’ ধ্বনি তোলে গান্ধীর অনুসারীরা। পরে জওহরলাল নেহেরু ও বল্লভভাই প্যাটেলের চাপের মুখে তাঁকে (জিন্নাহ) প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দেয়ায় শেষবারের মতো কংগ্রেস মৃদু ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পায়।
কৃচ্ছ্বতার সাধনায় জীবনপাত করবেন এই বিষয়ে স্থির ছিলেন তিনি। কিন্তু যেমন কবি সরোজনী নাইডু কৌতুক করে বলেছিলেন যে, জাতির ভাগ্যকে গান্ধীর গরিবানা জীবনযাপনের জন্য দায়ভার বহন করতে হবে। তাঁর পুরা জীবনদর্শনই ছিল গ্রাম্য কায়দায় শহুরে জীবনের ওপর প্রভাব বিস্তার করা। যদিও তিনি সর্বদাই অর্থনৈতিকভাবে বিড়লার মতো কোটিপতির ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন।

তাঁর অনশন ধর্মঘট দাঙ্গা ও গণহত্যা বন্ধ করতে পেরেছিল। তাঁর এক শিল্পপতির সমর্থনকারী কর্মচারীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে গিয়ে তিনি আরও একবার অনশন চালিয়েছিলেন। তাদের ধর্মঘট ছিল নিয়োগে অনিয়মের বিরুদ্ধে।

তিনি অস্পৃশ্যদের অবস্থার উন্নতি করতে চেয়েছিলেন। যদিও আজকের ইন্ডিয়াতে তারা নিজেদের ‘দলিত’ (হরিজন) বলে পরিচয় দেয়। এরা বর্তমানে সুগঠিত কার্যকর রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। একত্রিত হয়েছে তাদের সত্যিকার নিজেদের নেতা ভিমরাও রামজি আম্বেদকরের (গান্ধীর পুরাতন প্রতিদ্বন্দ্বী) স্মৃতির উদ্দেশ্যে। আম্বেদকরের দীপ্তি যেহেতু অনেকগুণে বেড়েছে, গান্ধীর মর্যাদা সেখানে ক্ষুণ্ন হয়েছে।

পরোক্ষ প্রতিরোধ (প্যাসিভ রেজিস্ট্যান্স) ও গঠনমূলক অহিংস রাজনৈতিক দর্শনের প্রবক্তা হতে গিয়ে তাঁকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকে অনেক দূরে থাকতে হয়েছে। নিরামিষভোজী, দেহের নাড়িভুড়ি ও মানববিষ্ঠার উপকারী ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ক খেয়ালি পরিশীলিত তত্ত্ব দাঁড় করাতে গিয়ে জীবনের অনেক সময় ব্যয় হয়েছে।

তাঁর বাবার মৃত্যুর সময় তিনি ষোলো বছরের যুবক। ভালোবাসেন স্ত্রী কাস্তর্বকে। পরবর্তী সময়ে গান্ধী যৌন সংসর্গ পরিত্যাগ করেছিলেন। সর্বদা জ্ঞানচালিত হয়ে বৃদ্ধ বয়সাবধি তিনি এই সাধনা চালিয়ে যান। যাকে তিনি বলতেন তাঁর ‘ব্রহ্মচর্য পরীক্ষা’। ওই ব্রহ্মচর্যকালীন কোনো নগ্ন যুবতীকে যদি সারারাত তাঁর সঙ্গে কাটাতে বলা হতো, তাহলে তিনি নিজের শারীরিক বাসনার ওপর প্রভূত্ব দেখাতে পারতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, তাঁর শক্তি উদ্রেককারী রসের (ভাইটাল ফ্লুইড্স) ওপর সমগ্র নিয়ন্ত্রণশক্তিই তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তিকে এগিয়ে নেবে।

সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সমাজের প্রত্যেক স্তরের মানুষের জাতীয় পর্যায়ে স্বাধীনতার জন্য যে দাবি, তার রূপান্তরের জন্য গান্ধীই দায়ী। এবং শুধু একা তিনিই দায়ী। আজ যে স্বাধীন ভারত, তা কিন্তু গান্ধীর স্বপ্নের ভারত নয়। কেননা আজকের ভারত বিভক্ত। আধুনিকায়ন, শিল্পায়নের প্রতি অনেক বেশি দায়বদ্ধ। এক সময়ের শিষ্য নেহেরুর আধুনিকায়নের প্রতি গান্ধীর বাঁকা দৃষ্টি ছিল। অবশ্য এটা ছিলো নেহেরুর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, যা গান্ধীর থেকে ধার করা নয়।

গান্ধী বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, পরোক্ষ প্রতিরোধ ও অহিংসবাদ যেকানো অবস্থায়, যেকোনো সময় কার্যকর। এমনকি জার্মানির নাৎসীদের মতো কলঙ্কিত শক্তির ক্ষেত্রেও। পরে অবশ্য তিনি নিজের মতাদর্শকে পরিমার্জনা করেছিলেন। সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, ব্রিটিশরা তাদের নিজেদের প্রকৃতিগত কারণে এই প্রক্রিয়ায় সাড়া দেবে। অন্য কোনো অত্যাচারীরা যা পারতো না।

গান্ধীর অহিংসবাদই ভারতের স্বাধীনতা এনেছে। ফলে অহিংসবাদ সর্বোতভাবে স্বীকৃত পন্থা বলে বিবেচিত হয়েছে। (এই দৃষ্টিভঙ্গি পরম নিষ্ঠার সঙ্গে ভারত ও ভারতের বাইরের সকলেই গ্রহণ করেছেন)। তবু ভারতীয় আন্দোলনে সত্যিকার অর্থে তখনো হিংস্রতার প্রশ্রয় ছিল। আর এই হিংস্রতা-উচ্ছৃঙ্খলা গান্ধীকে এতই হতাশ করেছিল যে, তিনি স্বাধীনতা উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রতিবাদ হিসেবে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকেন। তা ছাড়া ব্রিটেনের ওপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভঙ্গুর অর্থনীতির প্রভাব এবং যেমন ব্রিটিশ লেখক পেট্রিক ফেন্স তার ‘লিবার্টি অব ডেথ: ইন্ডিয়াজ জার্নি টু ইন্ডিপেন্ডেন্স এন্ড ডিভিশন’ পুস্তকে দাবি করেছেন, তিরিশের দশক থেকে রাজআমলাতন্ত্রের ক্ষমতা ধসে পড়তে শুরু করেছিল। ফলে ভারতের ওপর থেকেও সেই আছর সরে যাচ্ছিল। আর এতে করে গান্ধীর সব পদক্ষেপ স্বাধীনতার পক্ষে যাচ্ছিল। খুব সম্ভবত ভারতকে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে গান্ধীর পদ্ধতিই মূল কারণ ছিল না।

ইংরেজরা ছিল এর আপাত কারণ। কিন্তু গভীর ও প্রগাঢ় ঐতিহাসিক শক্তিগুলো কাখ্ক্ষিত অভিঘাত তৈরি করেছিল।

এখনকার দিনে খুব কম সংখ্যক লোক গান্ধীর জটিল ব্যক্তিত্ব, তাঁর অবদান ও ঋণগুলোর দ্ব্যর্থ প্রকৃতি কিংবা ভারতের স্বাধীনতার প্রকৃত কারণগুলো নিয়ে ভাবতে গিয়ে থামে না। আজকের সময় হচ্ছে দ্রুততার, স্লোগানের। আমাদের হাতে বহুমাত্রিক সত্যকে আত্তীকরণের তেমন সময় নেই। সবচেয়ে রূঢ় সত্য এই যে, দেশে দিন দিন তিনি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন। গবেষক সুনীল খিলনানী যেমন দেখিয়েছেন যে, ভারত আজ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, কিন্তু গান্ধীর দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো সম্পূর্ণ ধর্মীয়। যা হোক, তিনি হিন্দু জাতীয়তাবাদ থেকে অবশ্য সরে দাঁড়িয়েছিলেন। ভারতীয় অস্তিত্বকে পুরাতন উপাখ্যান থেকে আলাদা করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। ‘তিনি ভারতের জনপ্রিয় ধর্মীয় ঐতিহ্য থেকে পুরাণ কাহিনিকে অনুমাননির্ভর ইতিহাসের থেকে অনেক বেশি শিক্ষণীয় মনে করতেন।

এটা কাজে লাগেনি। আজকের ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদ ভারতীয় জনতা পার্টিরূপে গজিয়েছে। সম্প্রতি ভোট চলাকালে গান্ধী ও তাঁর মতাদর্শ একদম উচ্চারিত হয়নি।

একুশ বছর আগে লেখক বেদবেধা গান্ধীর শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক সহযোগী। সি. রাজাগোপালার (স্বাধীন ভারতের প্রাক্তন গভর্নর জেনারেল) সঙ্গে আলাপ করেছিলেন। গান্ধীর অবদান সম্পর্কে তাঁর অভিমত তেমন মন্ত্রমুগ্ধকর কিছু ছিল না। কিন্তু আজকের ভারত মুক্তবাজার পুঁজিবাদের দিকে ছুটেছে। যে সত্যরব উঠেছে: ‘আধুনিক টেকনোলজি, অর্থ ও ক্ষমতা প্রভৃতির জৌলুস এতই লোভনীয় যে, আমি বলতে চাই কেউই এটাকে ঠেকাতে পারবে না। হাতজোড়করা গান্ধীবাদীরা, যারা এখনো তাঁর দর্শনে বিশ্বাস করে যে, সরল জীবন চাই, সরল সমাজের জন্য। কিন্তু এর পুরোটাই খামখেয়ালি।

তাহলে মহত্ত্ব কী? কিসে এটা লুকিয়ে আছে? তাহলে কী এখনো তার পথ অনুসরণের শক্তি পরম সমাদরের যোগ্য হবে?

জওহরলাল নেহেরুর কথা ধরলে যিনি ছিলেন গান্ধীর অনুস্মরণীয় ইমেজ। তিনি বলেন, ১৯৩০-এর দিকে আমি যখন তাঁকে লাঠি হাতে দেখিছি, সেই হেঁটে যাওয়ার মধ্যে ছিল তীর্থযাত্রীর মতো সত্য, সঠিক, শান্ত, সংকল্প ও ভীতিহীন কিছু। যে তীর্থযাত্রী তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফিরছে তীর্থযাত্রায়, যা উদ্দেশ্যহীন ও নিষ্কর্মক।’

নেহেরুরর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী পরে বলেছিলেন যে, ‘তাঁর কথার চেয়ে তাঁর জীবনই ছিল বড়ো নৈতিক শিক্ষা।’ আজকের দিনে ওই নৈতিক শিক্ষা, ওই বার্তা বরং ভারতের বাইরে বেশি আকর্ষণীয় হয়েছে। আলবার্ট আইনস্টাইন এরকম অনেকের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি গান্ধীর অবদানকে প্রশংসা করেছিলেন। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, দালাইলামা এবং বিশ্বের সকল শান্তিকামী আন্দোলনকারী তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। গান্ধী কসমোপলিটন ইমেজ ত্যাগ করে একটি দেশ লাভ করেন এবং পরবর্তী জীবনে তিনি বিশ্ব নাগরিক হন। তাঁর প্রেতাত্মা এখনো হয়তো বিকর্ষী, স্মার্ট, কঠিন ও সর্পিল। আর হাঁ, এপার-ওপার গ্লোবাল ম্যাককালচারকে এড়িয়ে যাবার ব্যাপারে অনেক বেশি নৈতিক। গান্ধীবাদী বুদ্ধিজীবীগণ এই নতুন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে। গান্ধীভক্তি থেকে গান্ধীবাদী বুদ্ধিজীবীরাই একটা চমৎকার অস্ত্র। আর পরোক্ষ প্রতিরোধ? আমরা অপেক্ষায় থাকবো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন