বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫

সিরিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের নেপথ্যে কে?

সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক অভিযান দেশটিতে গৃহযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। সেখানে রাশিয়ার এ হস্তক্ষেপের পেছনে কলকাঠি নেড়েছে কে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশ্লেষণমূলক এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইরানই সেই দেশ।

গত জুলাইয়ে মস্কোয় ইরানের এক শীর্ষ জেনারেলের সফরই ছিল সিরিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করার প্রথম পদক্ষেপ।সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে নতুন করে সমর্থন করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি রাজনৈতিক চুক্তির মধ্য দিয়ে ইরান-রাশিয়ার নতুন জোটটাও হয় তখনই। ইরানের ওই জেনারেলের নাম কাসেম সোলেইমানি।  ইরানের রেভল্যুশনারী গার্ড এর বিশেষ শাখা কুদস ফোর্সের কমান্ডার তিনি।এ বাহিনীরনিয়ন্ত্রণ সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির হাতে।

রাশিয়া সিরিয়ায় হামলা করলে কিভাবে গৃহযুদ্ধে নাজুক অবস্থায় থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ জয়লাভ করবেন এবং মধ্যপ্রাচ্য রাশিয়ার নাগালেরমধ্যে থাকবে সে পরিকল্পনাটি দেন সোলেইমানি।

যদিও রাশিয়া দাবি করে আসছে, আসাদের অনুরোধেই তারা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে জড়িয়েছে।

সোলেইমানি রাশিয়াকে বুঝিয়েছিলেন, আসাদ কয়েকটি অঞ্চলে যুদ্ধে হারলেও, তাকে এ যুদ্ধে জেতানো সম্ভব, যদি মস্কো হামলায় অংশ নেয়। তার এযুক্তি অবশেষে মেনে নেয় রাশিয়া।কয়েকমাসের পরিকল্পনার পর চরমপন্থিদের দমনের নামে শুরু হয় আসাদ বিরোধীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা। গত সপ্তাহ থেকে রাশিয়া সিরিয়ায় বিমানহামলা শুরু করেছে। 

বিদ্রোহীদের ওপর এ বিমান হামলা চলার পাশাপাশি সেখানে স্থল অভিযানের জন্য ইরানের বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের প্রবেশ থেকেই এটি ষ্পষ্ট যে, কয়েকমাস ধরেই এ পরিকল্পনা চলেছে। ঊর্ধ্বতন এক আঞ্চলিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন,  সোলাইমানি এরই মধ্যে সিরিয়ায় স্থল অভিযানের দেখভাল শুরু করেছেন। রাশিয়া ও ইরানের যৌথসামরিক অভিযানও তদারকি করছেন তিনি।

ওই সূত্র আরো জানান, ইরানের হয়ে অভিযান পরিচালনার জন্য খামেনিই সোলেইমানিকে নিয়োগ করেন। এরপর সোলেইমানি মস্কো যান এবং বিষয়টিনিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। মস্কোর বৈঠকের পর তিনি বেশ কয়েকবার সিরিয়াও গেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রের কমান্ডার হিসেবে নিজের ভূমিকা বাড়াতে সোলেইমানি বরাবরই আগ্রহী। ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেওইরানি সেনাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

মস্কো বৈঠকের সময় সোলেইমানি সিরিয়ার মানচিত্র নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি দেখান, আসাদ বিরোধিরা সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে অগ্রসরহচ্ছে। ওই এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসাদকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে তারা। ভূমধ্যসাগরে রাশিয়ার একমাত্র নৌ-ঘাঁটিটি সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দরনগরী তারতাউসে অবস্থিত।

সোলেইমানি এভাবে সিরিয়ার যুদ্ধাবস্থার চিত্র তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের পতনের বিষয়টি বুঝতে পেরে সতর্ক হয়ে যায় রাশিয়া। তারা বুঝতে পারেসিরিয়ার শাসন ব্যবস্থা সত্যিই হুমকির মুখে। সোলেইমানি তখন তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, সবকিছু নতুন করে শুরু করার সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। হাতের সবগুলো তাস এখনও শেষ হয়নি। গৃহযুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপের আগে ইরান আসাদ বাহিনীর পাশপাশি যুদ্ধ করার জন্য শিয়া মিলিশিয়াদের সংগঠিত করতে সাহায্য করেছে। এছাড়া, পরামর্শেরজন্য ইরানের রেভলুশনারি গার্ড বাহিনীর সামরিক বিশেষজ্ঞদের সিরিয়ায় পাঠিয়েছে। তাদের কয়েকজন সেখানে প্রাণও হারিয়েছে।

অন্যদিকে, রাশিয়া আসাদ বাহিনীকে অস্ত্র দেয়ার পাশপাশি কূটনৈতিক ভাবে পশ্চিমা কোপের হাত থেকে দামেস্ককে রক্ষা করেছে। রাশিয়ার কারণেই জাতিসংঘ,পশ্চিমা বিশ্ব এবং যুক্তরাষ্ট্র আসাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

তবে এরপরও বিদ্রোহীদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না আসাদ। সিরিয়ার আসাদবিরোধী প্রতিবেশী দেশেগুলো বিদ্রোহীদের সাহায্য করছে।

সিরিয়ায় চার বছর ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত আড়াই লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

1 টি মন্তব্য:

  1. আমেরিকা ইউরোপ তালেবান-আল কায়দা-আইএস তৈরি করে যেভাবে মধ্যপ্রাচ্য তথা বিশ্বব্যাপী যে তুঘলকি কারবার শুরু করেছিল তাতে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল। রাশিয়া অপেক্ষা করছিল উপযুক্ত সময় ও পরিস্থিতির জন্য,সেই সাথে নতূন কিছু অস্ত্রের পরীক্ষার সফলতার জন্য। ইরান তার নিরাপত্তার কারণে আসাদকে সাথে রাখতে চায়। আর মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সিরিয়াকে টিকে থাকতে হলে রাশিয়ার সহযোগিতা অপরিহার্য কারন সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আমেরিকার তল্পিবাহক ছাড়া আর কিছুই নয়।

    উত্তরমুছুন