বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

১৪ বছর পরও যুদ্ধের ফল কী?

বিশ্ব কাঁপানো সেই নাইন-ইলেভেনের ঘটনা মনে পড়লে আজও শিউরে ওঠে মানুষ। ১৪ বছর আগের ভয়াবহ সে ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় তিন হাজার মানুষ। সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয় ১০ বিলিয়ন ডলারের। 
সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে ওই সন্ত্রাসী হামলা ছিল কল্পনাতীত। আর নাইন-ইলেভেনের পর বিশ্বে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ১৪ বছর পরও সেই যুদ্ধের ফল কী?
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ওই হামলার জন্য পরিকল্পনাকারী হিসেবে আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করলেও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন এ ব্যাপারে কিছু অনুমাননির্ভর ব্যাখ্যা ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। এর আগে সংঘটিত কয়েকটি দেশের মার্কিন দূতাবাসে সন্ত্রাসী হামলার কথা আল কায়দা স্বীকার করলেও ২০০১ এর ওই হামলার দায়িত্ব তারা স্বীকার করেনি। ঘটনার পর হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন ওসামা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- ওসামার কথা যদি সত্য হয়, তাহলে নাইন-ইলেভেনের জন্য দায়ী কে বা কারা ?
হামলার এ ঘটনায় সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটায়। অনেক দেশই তাদের সন্ত্রাস দমন আইনে কড়াকড়ি আরোপ করে। এছাড়া সামরিক ও গোয়েন্দা শক্তিও বৃদ্ধি করে তারা।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের গর্ব ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারসহ তিন স্থাপনায় একযোগে চালানো হয়েছিল চার-চারটি আত্মঘাতী বিমান হামলা। এদিন চারটি মার্কিন যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ৯টার দিকে চালানো হয় এই হামলা। দুটি বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত হানে। নিমেষে ধসে পড়ে ভবন দুটি৷ আরেকটি বিমান নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনে হামলা চালায় জঙ্গিরা। তবে চতুর্থ বিমানটি নিয়ে জঙ্গিরা পূর্বনির্ধারিত স্থানে হামলা চালাতে চাইলেও যাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। পেনসিলভ্যানিয়ার আকাশে বিধ্বস্ত হয় সেটি।
পরিকল্পিতভাবে চালানো নারকীয় এ ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞের জন্য জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদাকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগ। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আল-কায়েদার তখনকার নেতা ওসামা বিন লাদেনই ছিলেন হামলার রূপকার। ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আত্মগোপন করে থাকা লাদেনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী ‘নেভি সিল`।
নাইন-ইলেভেনের হামলার নেপথ্যে কী ছিল আজও তা পরিষ্কার হয়নি। দোষারোপ করা হয়েছে; কিন্তু যুক্তিতর্ক সহযোগে স্পষ্ট করা হয়নি কে বা কারা ছিল নাইন-ইলেভেনের হোতা। আর কেনই বা তারা ভয়ঙ্কর এ কাজটি করেছিল। যুদ্ধ ছাড়া পৃথিবীতে এরকম অপ্রকাশ্য আক্রমণের দ্বিতীয় কোনো নজির নেই।
খোদ আমেরিকার জনগণেরই এক বিরাট অংশ এ ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে মনে করে। অনলাইনে এ সংক্রান্ত প্রচুর তথ্য রয়েছে। যারা এসবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন খ্যাতনামা গবেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, অধ্যাপক, চলচ্চিত্রকার ও সাংবাদিক।
নাইন-ইলেভেনের ঘটনাকে যারা ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন, তাদের একটি বড় অংশের মতে এটা যুক্তরাষ্ট্রের ‘অভ্যন্তরীণ’ অথবা ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কাজ। ফরাসি সাংবাদিক থিয়েরি মেসানের লেখা ‘৯/১১ : বড় মিথ্যা’ শীর্ষক গ্রন্থে দাবি করা হয়েছে, ওই হামলার পেছনে ছিল মার্কিন প্রশাসনের একটি ডানপন্থী অংশ। তারা আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধ শুরুর অজুহাত খুঁজছিল। ওই হামলার পর ফ্রান্সের বিখ্যাত পত্রিকা লা মদঁ ‘১১ সেপ্টেম্বর : অভ্যন্তরীণ কাজ?’ শিরোনামে তিন পৃষ্ঠাব্যাপী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
প্রখ্যাত মার্কিন চলচ্চিত্রকার ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার মাইকেল মুরের ‘ফারেনহাইট ৯/১১’ (২০০৪ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘গোল্ডেন পাম’ জয়ী) তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, টুইন টাওয়ারে প্রথম বিমানটির আঘাত হানার কথা যখন প্রেসিডেন্ট বুশকে জানানো হয়, তখন তিনি ফ্লোরিডায় শিশুদের একটি স্কুলে অবস্থান করছিলেন। তাকে দ্বিতীয় বিমান আঘাত হানার কথা জানানোর পরও তিনি ভাবলেশহীনভাবে আরও অন্তত সাত মিনিট শিশুদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
পরে বুশ বলেছিলেন, তিনি ওই শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের আগেই প্রথম বিমানের আঘাত হানার কথা জেনেছিলেন। তিনি টেলিভিশনে এ দৃশ্য দেখেছিলেন। অথচ বাস্তবতা হল, প্রথম আঘাতের ভিডিওচিত্রটি সেদিন অনেক পরে দেখানো হয়েছিল। তাছাড়া ওই স্কুলের প্রিন্সিপাল বলেছেন, সেখানে বা আশপাশে কোনো টেলিভিশন ছিল না। এতে প্রশ্ন জাগে, বুশ কি তবে মিথ্যা বলেছিলেন? বলে থাকলে কেন তা বলেছেন?
বিমান দিয়ে টুইন টাওয়ার ধ্বংস করার যে দৃশ্যটি আমরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি তার সত্যতা, বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে রয়েছে বড় ধরনের প্রশ্ন। স্টিল-কাঠামোর কোনো গগণচুম্বি ভবন আগুনের কারণে ভেঙে পড়েছে, গত ১০০ বছরের ইতিহাসে এমন নজির নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ভবনে যে স্টিল ব্যবহার করা হয় তা উন্মুক্ত স্থানে অগ্নিকাণ্ডের কারণে সৃষ্ট তাপমাত্রায় গলতে পারে না। এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খ্যাতনামা ব্রিটিশ সাংবাদিক রবার্ট ফিস্কও ।
লন্ডনের দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় ২০০৭ এর ২৫ জুলাই ‘ইভেন আই কোয়েশ্চেন দ্য ‘ট্রুথ’ অ্যাবাউট ৯/১১’ শীর্ষক এক নিবন্ধে ফিস্ক লিখেছিলেন, ‘আমি বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সম্পর্কে বলছি। উদাহরণস্বরূপ, এটা যদি সত্য হয়, সবচেয়ে অনুকূল অবস্থায় কেরোসিন ৮২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পুড়ে, তাহলে টুইন টাওয়ারের স্টিলের দণ্ডগুলো- যার গলনাঙ্ক প্রায় ১ হাজার ৪৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বলে ধরা হয়- একই সময়ে ভেঙে পড়ল কীভাবে? (এগুলো ৮.১ থেকে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ভেঙে পড়েছিল)’

সে দিন টুইন টাওয়ার ধ্বংসের কয়েক ঘণ্টা পর ৩৫০ ফুট দূরের একটি ভবন ধসে পড়ে, যা নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন। এ প্রসঙ্গে রবার্ট ফিস্ক লিখেছেন- ‘ তৃতীয় টাওয়ার বা তথাকথিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবন ৭-এর ক্ষেত্রেই বা কী ঘটেছিল, যা ১১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫-২০টায় তার ভিতের ওপর ৬.৬ সেকেন্ডের মধ্যে ধসে পড়ে? এ ভবনটিকে কোনো বিমান আঘাত না করা সত্ত্বেও তা এমন সুচারুভাবে ধসে পড়ল কেন? তিনটি ভবনেরই ধ্বংসের কারণ বিশ্লেষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল দি অ্যামেরিকান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনলজিকে। কিন্তু তারা ওই তৃতীয় টাওয়ার ধ্বংসের কারণ সম্পর্কে কোনো রিপোর্ট দেয়নি। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের কারণ সম্পর্কে যে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল, সেটাকে যন্ত্রকৌশল বিদ্যার দুজন খ্যাতনামা মার্কিন অধ্যাপক ‘প্রতারণাপূর্ণ’ বলে আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ করেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগনের ওপর বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দ্বারা সুরক্ষিত ভবন এটি। পেন্টাগনের রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক রাডার ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। রয়েছে অ্যান্ড্রুস এয়ার ফোর্স ঘাঁটি, পেন্টাগনের সুরক্ষার জন্য যেখানে ১১ মাইল পর্যন্ত এলাকাজুড়ে সবসময় সতর্কতা ব্যবস্থাসহ যুদ্ধবিমান প্রস্তুত থাকে। অথচ নিউইয়র্কে কথিত হামলা শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর পেন্টাগন আক্রান্ত হলেও সেখানে কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়নি। 
প্রসঙ্গত, আজ পর্যন্ত পেন্টাগনে হামলার কোনো ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়নি। রবার্ট ফিস্ক প্রশ্ন রেখেছেন, ‘পেন্টাগনে যে বিমান বিধ্বস্ত হয়, তার যন্ত্রাংশগুলো (ইঞ্জিন ইত্যাদি) কোথায় গেল?’
রয়েছে আরও প্রশ্ন। নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পরপরই পেন্টাগন ও টুইন টাওয়ারের ধ্বংসাবশেষ তথা ঘটনাস্থলের আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল কেন? প্রেসিডেন্ট বুশ কেন ৯/১১ কমিশন গঠনে বাধা দিয়েছিলেন? শেষ পর্যন্ত যখন কমিশন গঠিত হল, তখন বুশ কেন তাতে অর্থ প্রদান বন্ধ করে দিয়েছিলেন? কমিশনের ওই ২৪টি পৃষ্ঠায় কী ছিল, যেগুলোকে কংগ্রেসম্যানরা ‘শকিং’ বলে অভিহিত করেছিলেন? ভয়াবহ এ ‘সন্ত্রাসী হামলার’ ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দারা আগে থেকে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তারপরও ‘ব্যর্থ’ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, বরং কাউকে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে! কিন্তু কেন?
এসব প্রশ্নের যথার্থ জবাব মেলেনি গত ১৪ বছরেও। নাইন-ইলেভেনের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী যারা, তাদের অবশ্যই কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। তবে এ ঘটনা আসলেই আল-কায়দা বা ওসামা বিন লাদেনের কাজ কি-না, তা প্রমাণ করা জরুরি ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করার পর ওসামাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। ২০১১ সালে তাকে ‘হত্যা’ করার আগ পর্যন্ত মাঝে মাঝে তার বিভিন্ন অডিও ও ভিডিও বিবৃতি প্রকাশ পেত। এসব বিবৃতির সত্যতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

আর অতি সম্প্রতি ওসামার মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সাবেক কর্মী এবং গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে অভিযুক্ত এডওয়ার্ড স্নোডেন। ক’দিন আগে মস্কো ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তার কাছে তথ্য-প্রমাণ আছে, ওসামা বিন লাদেন এখনও জীবিত। তিনি ভালো আছেন এবং বাহামা দ্বীপে অবস্থান করছেন। তিনি সিআইএ’র কাছ থেকে এক লাখ ডলারের বেশি মাসোহারা পাচ্ছেন। এ অর্থ সরাসরি নাসাউ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর হচ্ছে।
স্নোডেন আরও বলেছেন, সিআইএ পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে ওসামার ভুয়া মৃত্যুর আয়োজন করেছিল। তার মৃত্যু হয়েছে জানার পর কেউ আর তার সম্পর্কে জানতে চায়নি। ফলে তাকে লুকিয়ে রাখা সহজ হয়েছে। দাড়িবিহীন অবস্থায় এবং সামরিক জ্যাকেটে কেউ তাকে চিনতে পারেনি। স্নোডেন বলেছেন, এই সেপ্টেম্বরে তার লেখা একটি বই প্রকাশিত হওয়ার কথা, যেখানে তিনি লাদেনের জীবিত থাকার প্রমাণ সংবলিত তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করবেন। অবশ্য স্নোডেন এ কথা বলেছিলেন কি না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২ মে মার্কিন নৌবাহিনীর ‘সিল টিম-৬’ ওসামাকে হত্যা করেছে। তবে তার কোনো মৃতদেহের ছবি বা ভিডিও আজ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। বলা হয়েছে, ওসামার মৃতদেহ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে, অথচ মুসলিম রীতিতে তাকে কবর দেওয়ার কথা। এখন দেখার বিষয় স্নোডেন তার বইয়ে নিজের দাবির পক্ষে কী তথ্য তুলে ধরেন।
প্রসঙ্গত, নাইন-ইলেভেনের ঘটনা বিশ্বরাজনীতি তথা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছিল একটি সন্ধিক্ষণ। এই মর্মান্তিক ঘটনায় প্রাণ হারায় প্রায় তিন হাজার মানুষ। আর নাইন-ইলেভেনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বিশ্বব্যাপী যে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করে তাতে নিহত হয় অন্তত দেড় লাখ বেসামরিক মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের মূল টার্গেট ছিল জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দা এবং এর প্রধান ওসামা বিন লাদেন। এজন্য তারা আফগানিস্তানে সর্বাত্মক অভিযান চালিয়ে দখলদারিত্ব কায়েম করে। ইরাক দখলের পথও প্রশস্ত করে এ ঘটনা। শুধু আফগানিস্তান বা ইরাকে নয়, সারা বিশ্বেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রভাব পড়ে। নাইন-ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ ও অভিবাসন নীতিতে আসে বিরাট পরিবর্তন। এর শিকার হয় বাকি বিশ্বের মানুষ, বিশেষত মুসলমানরা। এমনকি খোদ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিম জনগোষ্ঠীও নানাভাবে নিগৃহীত হয়।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, এসব ঘটনা বিশ্বে জঙ্গিবাদকে আরও উসকে দিয়েছে। সিরিয়া ও লিবিয়াসহ গোটা আরব বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে অস্থিরতা। বর্তমানে ইউরোপে যে অভিবাসন সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তাও মূলত নাইন-ইলেভেন পরবর্তী বিভিন্ন পদক্ষেপেরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া। কাজেই ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র ফল কী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্বে অস্থিরতা সৃষ্টি করে তা থেকে ফায়দা লোটাই নাইন-ইলেভেন সংঘটনের উদ্দেশ্য ছিল কি না- এখন এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

লাদেনের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে একরম বিজয়ীই ঘোষণা করেছিলেন বারাক ওবামা। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। এখনো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চলছে জঙ্গি হামলা। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে। বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর তিকরিতও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী। আইএস-এর বিরুদ্ধে এখন ‘যুদ্ধ পরিকল্পনা` প্রণয়ন করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন