সোমবার, ৬ জুলাই, ২০১৫

আওয়ামী লীগের নানা রঙের ইতিহাস


মোহাম্মদ জাকারিয়া (যাকারিয়াও হতে পারে) নবাব সিরাজউদ্দৌলার ওপর ৫০০ পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছেন। সিরাজউদ্দৌলার ওপর সারা বিশ্বে অনেক বই বেরিয়েছে। ১৯৮৫ সালে আমি পলাশী দিবস পালনের জন্য রাজধানীতে পোস্টারিং করেছিলাম। একটি সেমিনারেরও ব্যবস্থা করেছিলাম। সে সময়ে সিরাজ সম্পর্কে অনেকগুলো বইও সংগ্রহ করেছিলাম। কিছু বই হয়তো এখনো আছে। তবে অনেকগুলো বই জাতীয় প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটিকে দিয়েছি। দান কথাটা বললাম না প্রতিষ্ঠানের মর্যাদার খাতিরে। এখন যদি বলি, বইগুলো দেখতে চাই, তাহলে জবাব আসবে, সদস্যরা নিয়ে আর ফেরত দেননি। আমাদের দেশে বইয়ের ক্ষেত্রে এ রকম হয়ে থাকে। সারা দেশের বড় বড় সব লাইব্রেরি বা পাঠাগারে এ কাণ্ড চলছে এবং চলে এসেছে।


বিদেশী ঐতিহাসিকেরা বলেছেন- পলাশী যুদ্ধ নয়, বলতে হবে পলাশীর ষড়যন্ত্র। পলাশীর প্রভাব হলো, ইংরেজরা সুবেহ বাংলা ( বাংলা বিহার উড়িষ্যা) দখল করে কালক্রমে পুরো ভারত দখল করে। ভারতের সম্পদ দখল করে বিলেতে পাচার করে এবং ওই ক্ষমতাবলে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা দখল করে নেয়। ইংরেজরা ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখল করে সিরাজের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা ইতিহাস রচনা করতে থাকে। সেই মিথ্যা ইতিহাসকে ছাপিয়ে সত্য প্রকাশ হতে অনেক সময় লেগে যায়। সত্যকে এভাবেই পথ অতিক্রম করতে হয়। সিরাজের ক্ষেত্রে ইংরেজরা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ তিনি সত্যিই একজন দেশপ্রমিক ছিলেন। এই যুবক নবাব ইচ্ছে করলে ইংরেজদের ক্রীড়নক হয়ে সুখে থাকতে পারতেন। না, তিনি তা করেননি। বিনিময়ে তাকে জীবন দিতে হয়েছে।

২৩ জুন ছিল পলাশী দিবস। এই দিন সুবেহ বাংলা পরাধীন হয়েছে। আওয়ামী লীগের দাবি, এই দিনেই নাকি এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ববঙ্গ থেকে পূর্ব পাকিস্তান হওয়ার পর মুসলীম লীগ সরকারের নেতারা যে কারণে দেশটি স্বাধীন হয়েছে সে কারণগুলোর প্রতি নজর না দিয়ে গোষ্ঠীপ্রীতি শুরু করেছিলেন। প্রথমেই সমস্যা দেখা দিয়েছিল ভাষা নিয়ে ১৯৪৭ সালেই। মুসলীম লীগ এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত হয়ে কেন্দ্রনিভর হয়ে পড়েছিল। ফলে জনপ্রিয় বিষয়গুলোর সমাধান না করে দমননীতির আশ্রয় নেয়। মুসলীম লীগের রক্ষণশীল দক্ষিণপন্থী গ্রুপ তখন ক্ষমতায়। ফলে প্রগতিশীল বা গণমুখী গ্রুপ বাধ্য হয়ে নতুন দল গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। তারই প্রকাশ ঘঠেছে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে বিরোধী গ্রুপের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। দলের সভাপতি হলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান আর সাধারণ সম্পাদক হলেন টাঙ্গাইলের শামসুল হক। খোন্দকার মোশতাক আর শেখ সাহেব হলেন যুগ্ম সম্পাদক। ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন পর্যন্ত দলটির নাম ছিল আওয়ামী মুসলীম লীগ। আমি নিজের কানে শুনেছি, মওলানা সাহেব জনসভায় বলতেন, আমরাও মুসলীম লীগ। নুরুল আমিনের দল হচ্ছে সরকারি মুসলীম লীগ, আর আমরা হচ্ছি জনগণের (আওয়ামী) মুসলীম লীগ। আমরা কৃষক-শ্রমিকের কথা বলার জন্য আলাদা মঞ্চ তৈরি করেছি। মওলানা সাহেব আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি ছিলেন। তখন আসামে মুসলীম লীগ ক্ষমতায় ছিল। ৫৫ সালে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর দলটির নাম পরিবর্তন করে শুধু আওয়ামী লীগ করা হয়। দলের ওপর কংগ্রেস ও অদৃশ্য বাম দল ও ব্যক্তির প্রভাব বাড়তে থাকে। এটি সম্পূর্ণ নতুন দল ও নীতি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সে হিসেবে বর্তমান আওয়ামী লীগের জন্মদিন ২৩ জুন নয়। মওলানা সাহেব ৫৭ সাল পর্যন্ত দলের সভাপতি ছিলেন এবং মৌলিক ইস্যুগুলোতে দ্বিমত হওয়ায় তাকে দল থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। তখন আওয়ামী লীগ কেন্দ্র ও প্রদেশে ক্ষমতাসীন। ইতোমধ্য শেখ সাহেবকে দলের সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়। দলে শেখ সাহেবের একচ্ছত্র প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। সোহরাওয়ার্দী সাহেব ও শেখ সাহেব ছিলেন সাম্রাজ্যবাদের একনিষ্ঠ তাঁবেদার। ৭০ সাল নাগাদ আওয়ামী লীগ বা শেখ সাহেব ছিলেন বাঙালি পুঁজির মুখপাত্র। তিনি মুখে সাধারণ মানুষের কথা বলতেন। বাঙালিদের স্বার্থের কথা বলে বাঙালি পুঁজির বিকাশের জন্য কাজ করেছেন। তখন তাকে সমর্থন দিয়েছেন রেহমান সোবহান গ্রুপ। রেহমান সোবহান সাহেবদের ওপর অবাঙালি পুঁজিপতিদের বিরাট প্রভাব ছিল। এরা মুখে সমাজতন্ত্রের কথা বলতেন,আসলে ছিলেন পুঁজিপতিদের সেবক।

মওলানা সাহেব ন্যাপ প্রতিষ্ঠা করলেন। আওয়ামী লীগের সাথে তার সব সম্পর্ক ছিন্ন হলো। শেখ সাহেব তার আওয়ামী লীগ নিয়ে নিজের মতো করে চলতে লাগলেন। কালক্রমে আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিষ্ঠা লগ্নের প্রায় সব নেতাই বেরিয়ে গেলেন। ৭০ সাল নাগাদ শেখ সাহেব পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তানের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হলেন। রাজনীতিতে তিনি নতুন ধারা চালু করলেন। ৭০ সালের নির্বাচনটি হলো বাঙালি আর অবাঙালির মাঝে। এর মাধ্যমেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ লাভ করে। ফলে পূর্ববঙ্গে বাঙালি অবাঙালির মাঝে বহু দাঙ্গা হয়। সে সময়ে দলের ক্ষমতাবান শক্তি হয়ে দাঁড়াল তরুণ বিপ্লবী ও বিদ্রোহী ধারা। যাদের ওপর শেখ সাহেবের কোন প্রভাব ছিল না। তরুণরা গোপনে স্বাধীনতার দাবি তোলে। ৭০ সালের নির্বাচনে দেশের বেশির ভাগ দল অংশগ্রণ করেনি। ফলে শেখ সাহেব ১৬৭ সিট লাভ করে সারা পাকিস্তানের একমাত্র নেতায় পরিণত হন। অপর দিকে জুলফিকার আলী ভুট্টো আর সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তর না করার জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকে। পাকিস্তানের এই মহাজটিল অবস্থার সুযোগ নেয়ার জন্য ভারত অপেক্ষা করছিল। ফলে পরিস্থিতি শেখ সাহেবের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এমন অবস্থায় ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনা শাসকেরা আক্রমণ চালিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। মধ্যরাতেই শেখ সাহেব পাকিস্তানের কারাগারে চলে গেলেন। অপর দিকে লাখ লাখ মানুষ জন্মস্থান ত্যাগ করে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে অবস্থান নেয়। এ সময় ভারত সীমান্ত খুলে দিয়েছিল। ভারত সরকার আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের নেতা ও কর্মীদের তেমন কোনো সহযোগিতা করেনি; বরং ভারত সরকারের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের সাথে অন্য কোনো দল যেন যুক্ত না হয়। এ জন্য ভারত সরকার মওলানা সাহেবকে গৃহবন্দী করে রাখে। ন্যাপের মহাসচিব যাদু মিয়াকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

কলকাতায় যে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় তার বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে দাঁড়াল ছাত্রলীগের বিপ্লবী অংশ। এ কে খোন্দকারের বইয়ে এর কিছু বক্তব্য পাওয়া যাবে। বিপ্লবী ছাত্রনেতারা মুজিব বাহিনী গঠন করে আলাদা ট্রেনিং নিতে থাকেন। ছাত্রনেতারা ভবানীপুরে অফিস করে র-এর মাধ্যমে ভারত সরকারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে থাকে। এ বিষয়ে বিশদ জানার জন্য মহিউদ্দিন আহমদের জাসদের রাজনীতিবিষয়ক বইটিও পড়তে পারেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় শেখ সাহেব পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন। এ সময়ে খণ্ডিত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন ভুট্টো। তিনি জানুয়ারি মাসের ৮ তারিখে শেখ সাহেবকে মুক্তি দিয়ে ঢাকায় পাঠান। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা ঘটনাবলি শেখ সাহেবের জানা ছিল না। ফলে শেখ মণি ও তাজউদ্দীন সাহেবের দ্বন্দ্বে তিনি বিভ্রান্ত ছিলেন। অবশেষে শেখ মণির জয় হলো এবং শেখ সাহেব তাজউদ্দীনকে ক্ষমতা থেকে বের করে দিলেন। অথচ তিনি ছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী। এর মানে হলো, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ পরিবারের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হলো। অপর দিকে ভারত জাসদকে শক্তিশালী করতে থাকে।

শেখ সাহেবের বেদনাদায়ক পতনের পর শেখ হাসিনা দিল্লিতে এসে সরকারি নিরাপত্তা ও আতিথেয়তায় বসবাস করতে থাকেন। দিল্লি অবস্থানকালে শেখ হাসিনার দেখাশোনা করতেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। শেখ সাহেব পুরোপুরি ভারতীয় নীতির সমর্থক ছিলেন না। ফলে দিল্লির সাথে তার বনিবনা হচ্ছিল না। পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি( অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক কনফারেন্স) সম্মেলনে যেতে রাজি হলেন। কিন্তু ভারত এতে বাধা দিতে লাগল। ভারতের এ ধরনের ব্যবহার শেখ সাহেবের আত্মসম্মানে লাগল। তিনি জিদ ধরলেন সম্মেলনে যাবেন। ভারতের অনাকাক্সিক্ষত আপত্তি তিনি প্রত্যাখ্যান করলেন। শুরু হলো শেখ সাহেবের সাথে দিল্লির মানসিক যুদ্ধ। চীনের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার জন্য তিনি চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন। এটা ভারত একেবারেই পছন্দ করেনি। তাই অনেকের বিশ্লেষণ, শেখ সাহেবের মর্মান্তিক পতনের জন্য ভারত দায়ী। মোশতাকের সময়েই চীন ও সৌদি আরব বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব কমতে থাকে। বাংলাদেশ বাঙালি মুসলমানের দেশ হিসেবে বিকশিত হতে থাকে। জিয়াউর রহমান সাহেব ক্ষমতায় এলে ভারত সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। জিয়া সাহেবের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের স্লোগান ভারত সমর্থন করেনি। ভারত চায় বাংলাদেশ হবে শুধু বাঙালিদের দেশ, বাঙালি মুসলমানের দেশ নয়। বাংলাদেশে বহু ধর্ম ও গোত্রের মানুষ বাস করে। তারা অনেকেই বাঙালি নয়; চাকমা, মারমা, রাখাইন, গারো,মং সাহ বহু উপজাতি আছেন। তারা বাংলাদেশী চাকমা। জাতীয় সংসদে শেখ মুজিব যখন বলেছিলেন, ‘তোরা সব বাঙালি হয়ে যা’, তখন সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র লারমা এর প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা বাঙালি নই। আমরা বাংলাদেশের চাকমা। বাংলাদেশ হওয়ার পর পরই পাসপোর্টে লেখা হতো সিটিজেন অব বাংলাদেশ। এখন লেখা হয় বাংলাদেশী। ভারত চায়, পাসপোর্টে বাঙালি বা সিটিজেন অব বাংলাদেশ লেখা হোক।

জিয়াউর রহমান যে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছিলেন, তা ভারত একেবারেই সমর্থন করেনি। ফলে, ভারত শুরু থেকেই জিয়াকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। জিয়া দেশের ভেতরে যে রাজনীতি শুরু করেছিলেন, তা ছিল বাঙালি মুসলমানের রাজনীতি, যা ভারত একেবারেই সমর্থন করেনি। ভারত মনে করে, ৭১ সালে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম বা মুসলমানিত্ব ত্যাগ করেছে বাংলাদেশ। ভারত একটি নানা ধর্ম, ভাষা ও জাতির দেশ। হিন্দি কোনো জাতিরই ভাষা নয়। ভারতের দক্ষিণ ও উত্তর আজো বিভক্ত। ভারত নামমাত্র একটি সেকুলার (ধর্মহীন) দেশ। এখন সেখানে কট্টর ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ক্ষমতায়। গুজরাটে হাজার হাজার মুসলমান হত্যার পর নরেন্দ্র মোদি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন। এর মানে কংগ্রেসের তথাকথিত সেকুলার রাজনীতি ছিল একটি ভণ্ডামি। বাংলাদেশেও সেকুলার রাজনীতি একটি ভণ্ডামি। কয়েক দিন আগে আইনমন্ত্রী বলেছেন, সরকার কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন পাস করবে না। কিন্তু বাংলাদেশ কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক দেশ নয়। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বা ভোটার মুসলমান হওয়ার কারণে সরকার মাঝে মাঝে ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঝে হিজাব পরেন ও নিয়মিত নামাজ পড়ার কথা প্রচার করেন। আমি নিজেও বিশ্বাস করি, তিনি একজন নামাজি ও নিয়মিত কুরআন পাঠ করেন। কিন্তু তার দল ও সরকারের আচার-আচরণ ধর্মীয় নয়। আওয়ামী লীগের ইমেজ হচ্ছে এক শ’ ভাগ সেকুলার বা ধর্মহীন। আওয়ামী লীগবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তিকে আওয়ামী লীগ মৌলবাদী, সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও জেহাদি বলে প্রচার করে। ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের কারণে সব সরকারই ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে। হিন্দুত্ববাদী কট্টর ধর্মবাদী মোদিজী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চান। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যদি নির্বাচনবিরোধী সরকারও থাকে তাহলেও দিল্লি তাকে সমর্থন করবে। জেনারেল মইনকে দিল্লি ক্ষমতায় এনেছিল হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়ার জন্য। ৪৭ সাল থেকে ভৌগোলিক কারণে ভারত পূর্ব পাকিস্তানে তার যে স্বার্থ ছিল, তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে আসছিল। হাসিনার আমলে তার ষোলো আনা সুযোগ এসে গেছে। আর এ সুযোগ এসেছে শেখ হাসিনার কারণে। কারণ শেখ হাসিনাই একমাত্র ভারতের স্বার্থগুলোকে নিরাপদে বাস্তবায়ন করতে পারেন।

সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার একটি মতামত সভা অনুষ্ঠিত হয় মোদির ২২ দফা চুক্তি নিয়ে। মোর্চার সমন্বয়ক মোশরেফা মিশু একটি লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওই বক্তব্য সমর্থন করি। বিদ্যুৎ, সীমান্তচুক্তি, কানেকটিভিটি বা করিডোর নিয়ে অভিজ্ঞ আলোচকেরা নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন। মিশু বলেছেন, বর্তমান সরকার অনির্বাচিত, অবৈধ। ২২ দফা চুক্তি আজো জনগণের কাছে পেশ করা হয়নি। দেশের মানুষ জানে না ওই চুক্তিতে কী আছে।

বিখ্যাত চিন্তাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে বাংলাদেশ আজ পরাজিত। সর্বত্রই হিন্দির চর্চা। চৌধুরী সাহেব একজন সেকুলার বা ধর্মমুক্ত মানুষ। তাই তিনি ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশকেও ভয় পাচ্ছেন। বাম মোর্চা মনে করে, সব মত ও পথের দেশপ্রেমিক জ্ঞানীগুণী, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকদের এক মঞ্চে সমবেত হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

৫৪ সালে মুসলীম লীগের পতনের জন্য সব মত ও পথের দল ও ব্যক্তি যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছিলেন। এই ফ্রন্টের নেতা ছিলেন মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী। এই ফ্রন্টে ইসলামি দল, কংগ্রেস, কমিউনিস্ট ও আওয়ামী লীগ। বড় শরিক ছিল আওয়ামী লীগ। ফলে মুসলীম লীগের পতন হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল গণবিরোধী মুসলীম লীগের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। তখন পাকিস্তানের কেন্দ্র থেকে সমর্থন দেয়া হয়েছিল। এখন আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ভারত। ফলে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বাংলাদেশবিরোধী একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। আমাদের সবাইকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হতে চায়। এ ব্যাপারে আমেরিকা ভারতকে সমর্থন দিতে চায় বলে বহুল প্রচারিত। আমেরিকার উদ্দেশ্য চীনকে ঠেকানো। ভারতও চায় শেখ হাসিনা চীনবিরোধী বলয়ে থাকুক। চীন এখন আদর্শগত বিরোধে না গিয়ে মাড়োয়ারীদের মতো বড় বড় ব্যবসা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায়। শেখ হাসিনাও চীনকে বড় বড় ব্যবসা দিয়ে হাতে রাখতে চায়। শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশ এখন ব্যক্তিগত স্বার্থের ঝুলি এবং ভিন্ন পতাকাবাহী স্বাধীন ও সার্বভৌমত্বের নামাবলি পরা একটি বোবা রাজ্য। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নদীর পানির হিস্যা নিয়ে কথা বলতে পারে। বাংলাদেশ আজ দিল্লির হাতে অসহায় হয়ে পড়েছে। 

এরশাদ মজুমদার
লেখক : কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন