রবিবার, ১২ জুলাই, ২০১৫

নিম্ন মধ্য আয়ের রহস্যকোথায়?


হঠাৎ করেই যেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের শিখরে উঠতে শুরু করেছে! বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্নমধ্য আয়ের দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পর সরকারি প্রচার প্রচারণায় এমন একটি আবহ দিতে চেষ্টা করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হবে এমন ভবিষ্যৎবাণীও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মুখ থেকে শোনা যাচ্ছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ যেখানে নজীরবিহীন অর্থনৈতিক সঙ্কটে হাবুডুবু খাচ্ছে, ব্যবসাবাণিজ্যে মন্দার কারণে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়ায় দিনমজুররা কাজ পাচ্ছে না, ডেভলপারদের তৈরী বাড়িঘর বিক্রি না হওয়ায় জায়গার দাম বৃদ্ধির পরিবর্তে কমতে শুরু হয়েছে, তেমন এক সময়ে অর্থনীতির উন্নয়নের জোয়ার কিভাবে বইতে শুরু করল যে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নি¤œ মধ্য আয়ের দেশ হয়ে গেল?

বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবনিকাশ 
বিশ্ব ব্যাংক মাথা পিছু জাতীয় আয় হিসাব করে স্বল্প আয়, মধ্যম আয় এবং উচ্চ আয়ের অর্থনীতির শ্রেণী বিন্যাস করে। মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে আবার নিম্ন ও উচ্চ মধ্যম এই দু’ভাগে ভাগ করা হয়। এবার ২০১৬ সালের জন্য বিশ্ব ব্যাংক তাদের এটলাস পদ্ধতিতে তিন বছরের গড় মাথা পিছু আয় হিসাব করে দেখেছে যে, বাংলাদেশসহ তিনটি দেশ স্বল্প আয়ের শ্রেণী থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের শ্রেণীতে প্রবেশ করেছে। বিশ্ব ব্যাংকের নিয়ম অনুসারে পর পর তিন বছরের বিনিময় হারভিত্তিক গড় মাথাপিছু জাতীয় আয় যদি ১ হাজার ৪৫ ডলারের বেশি হয় তাহলে সেই দেশটিকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর এ আয় যদি ৪ হাজার ১২৫ ডলার অতিক্রম করে তাহলে সেই দেশটিকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। আর এই জাতীয় আয় যদি ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার পেরিয়ে যায় তাহলে সেটিকে চিহ্নিত করা হয় উচ্চ আয়ের দেশ হিসাবে। বিশ্ব ব্যাংকের এ হিসাবে বাংলাদেশের তিন বছরের মাথাপিছু জাতীয় আয়ের গড় ১ হাজার ৪৫ ডলার অতিক্রম করায় বাংলাদেশকে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশের শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

ভিত্তি বছর পরিবর্তনে বেড়েছে আয়
মাথাপিছু জাতীয় আয় দু’ কারণে বাড়তে পারে। প্রথম কারণ হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাবার কারণে। অর্থনীতির বিকাশ হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি হলে আনুপাতিকভাবে মাথাপিছু জাতীয় আয় বাড়ে। দ্বিতীয়ত, জাতীয় আয়ের হিসাবের যে বাস্কেট বা পণ্য তালিকা রয়েছে তাতে নতুন কোনো খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তাতেও মোট জাতীয় আয় এবং মাথাপিছু জাতীয় আয় দুটোই বাড়ে।
গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৫/৬ শতাংশ হারে বিকাশ লাভ করেছে। এ সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় মাথাপিছু জাতীয় আয় প্রতি বছর বেড়েছে। এ ছাড়া এ সময়টাতে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল হওয়ায় টাকার মান সংকোচনের হারের চেয়ে টাকার বিনিময় হার সংকোচন কম ছিল। এ কারণে স্থির টাকার হিসাবে মাথাপিছু জাতীয় আয় যা বেড়েছে ডলারের হিসাবে জাতীয় আয় বেড়েছে তারচেয়েও বেশি। 

এর বাইরে বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরো জাতীয় হিসাবের ভিত্তি বছর পরিবর্তন করার ফলে এক লাফে ১৫ শতাংশের মতো জাতীয় আয় বেড়ে গেছে। এ আয় আগেও ছিল কিন্তু তা ছিল হিসাবের বাইরে। ভিত্তি বছর পরিবর্তন করে পরিসংখ্যান ব্যুরো সে আয়কে হিসাবের মধ্যে নিয়ে এসেছে। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের স্থির জাতীয় আয় হিসাবে প্রথম ভিত্তি বছর ধরা হয়। এ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি খুব বেশি বিস্তৃত ছিল না। বিশেষত শিল্প খাতের বিকাশ ছিল একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে । এ সময় ৩০ শতাংশের বেশি জাতীয় আয় আসত কৃষি খাত থেকে। শিল্পের আয় ছিল তার অর্ধেকের কাছাকাছি । সেবা খাতের আয়ও এখনকার চাইতে অনেক কম ছিল। 

১৯৮৪-৮৫ সালে জাতীয় আয়ের ভিত্তি বছর প্রথম পরিবর্তন করা হয়। এই ভিত্তি বছর পরিবর্তনের কারণে জাতীয় আয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য। এ সময় বাংলাদেশের শিল্প ও সেবা উভয় খাতের বিকাশের ফলে এই দুই খাতের অবদান জাতীয় আয়ে বৃদ্ধি পায়। জাতীয় আয়ে কৃষি ও শিল্প খাতের অবদান সম পর্যায়ে চলে আসে। সেবা খাতের আয়ও অনেক বেড়ে যায়্ । কৃষি খাতের কিছু নতুন খাত বিশেষত কিছু নতুন শস্যকে আয়ের আওতায় নিয়ে আসা হয়। শিল্প খাতের মধ্যে অনেক নতুন খাত সংযোজিত হয়। অন্য দিকে ব্যবসাবাণিজ্যসহ অনেক সেবা উপখাত প্রথম বারের মতো জাতীয় আয়ে সংযোজিত হয়। এ সময়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কারিগরি সহায়তায় জাতীয় আয় হিসাবের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দেয়ার প্রচেষ্টা চলে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে এ ব্যাপারে নেয়া হয় একটি বিশেষ প্রকল্প। এরপর জাতীয় আয়ের ভিত্তি বছর ঠিক করা হয় ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরকে। এ সময়ে আরো কিছু নতুন উপখাতকে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে সেবা খাতের এ ধরনের সংযোজন ছিল বেশি। এ সময় জাতীয় আয়ের ভিত্তি সম্প্রসারণের কারণে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় ৩০ শতাংশ। 

সর্বশেষ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জাতীয় আয়ের নতুন ভিত্তি বছর ঠিক করা হয়। কয়েক বছর দুই ভিত্তি বছরের হিসাব একসাথে প্রকাশ করা হলেও এখন সর্বশেষ ভিত্তি বছরকে জাতীয় আয়ের হিসাবের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহন করা হয়েছে। এবার নতুন ভিত্তি বছরে খাত সম্প্রসারণের কারণে জাতীয় আয় ১৫ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ অর্থবছরে পূরনো ভিত্তি বছর অনুসারে যেখানে দেশের জাতীয় আয় ছিল ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সেখানে নতুন ভিত্তি বছর অনুসারে জাতীয় আয় দাঁড়ায় ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। এ সময়ে কৃষি খাতে নতুন ২৪টি শস্যকে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে এ খাতের আয় বাড়ে ৯ শতাংশ, আর শিল্প খাতে নতুন কিছু পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করায় আয় বাড়ে ৫ শতাংশ । সেবা খাতে ইন্টারনেট সার্ভিস রিক্রুটিং এজেন্সি, ডেকোরেশন সার্ভিসসহ বেশ কিছু খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে আয় বাড়ে ১৬ শতাংশ। এতে জাতীয় আয়ে সার্বিক কৃষি খাতের অবদান এসে দাঁড়িয়েছে ১৬ শতাংশের কোঠায়। শিল্প খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ২৯ শতাংশের কাছাকাছি। বাকি ৫৫ শতাংশ আয় আসছে সেবা খাত থেকে, যার মধ্যে সর্বাধিক ১৪ শতাংশ আয় আসে ব্যবসাবাণিজ্য থেকে। 

বর্তমানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০১০-১১ বছরকে ভিত্তি ধরে জাতীয় আয়ের হিসাবের কাজ শুরু করছে। এতে আরো নতুন নতুন উপখাত সংযোজন হবে। আর একই সাথে জাতীয় আয়ও আরেক দফা বাড়বে। এভাবে ভিত্তি বছর পরিবর্তন বা উৎপাদন ভিত্তির হিসাব সম্প্রসারণের কারণে জাতীয় আয় বাড়লে একটি মানসিক তৃপ্তি ঘটার ব্যাপার থাকে কিন্তু তাতে জনগণের প্রকৃত আয়ের কোন কম বেশি হয় না। যেটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে ঘটে থাকে। 
পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুসারে নতুন ভিত্তি বছর ধরে বিদায়ী ২০১৫ অর্থবছরের মাথা পিছু জাতীয় আয় ছিল ১৩১৪ ডলার। পুরনো ভিত্তি বছর হিসাব করা হলে এ আয় ১১০০ ডলারের বেশি হতো না। এভাবে যত বার ভিত্তি বছর পরিবর্তন ও সম্প্রসারণ হবে ততবার জাতীয় আয় বাড়বে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একই সাথে বাড়লে মাথাপিছু জাতীয় আয় বছর আটেক পর ২ হাজার ডলার পেরিয়ে যেতে পারে। তখনও নিম্ন মধ্য আয়ের পর্যায় থেকে বাংলাদেশ অনেক দূরে থাকবে। উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করার কথা নিছক অলীক স্বপ্ন দেখানো ছাড়া আর কিছু নয়। 

এলডিসি থেকে বেরোনোর লাভ ক্ষতি
সরকারিভাবে স্বল্প আয়ের দেশের স্তর থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে যাবার কথা বলা হলেও জাতি সঙ্ঘের যে এলডিসি দেশের তালিকা রয়েছে তাতে বাংলাদেশের অবস্থান অক্ষুণœ আছে। বিশ্ব হিসাবে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে চলে গেলেও বাংলাদেশ জাতি সঙ্ঘের স্বল্পোন্নত দেশÑএলডিসি’র তালিকাতেই থাকবে। এ তালিকা থেকে বেরোতে হলে অর্থনীতির নাজুকতা, মানব উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয়Ñ এই তিনটি সূচক অতিক্রম করতে হবে। পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাক্ষরতা ও স্বাস্থ্য সূচক দিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন বিবেচনা করা হয়। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার জন্য বিবেচনায় নেয়া হয় কৃষি উৎপাদনে অস্থিরতা, অটেকসই রফতানি ও সেবা আয়, অনানুষ্ঠানিক তৎপরতার ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরতা, বাণিজ্যিক পণ্যে রফতানি কেন্দ্রীভূত থাকা, অর্থনৈতিক বিকাশে অবরুদ্ধতা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উদ্বাস্তু জনসংখ্যার আধিক্যের ওপর। এর মধ্যে বাংলাদেশ মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ১৯০ ডলার হবার প্রথম সূচকটি অতিক্রম করলেও অন্য দুই সূচক অতিক্রম করতে পারেনি। তবে শেষোক্ত সূচকটি বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ অবশ্য তিনটির মধ্যে দু’টি সূচক অতিক্রম করতে পারলে এলডিসি দেশের তালিকা থেকে বের হবার আবেদন করতে পারে। 

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হবার মনস্তাত্বিক আনন্দ যাই থাক না কেন, এর জন্য মূল্যও রয়েছে অনেক। বিশ্ব ব্যাংক আইএমএফ এবং বিভিন্ন দাতা দেশ থেকে রেয়াতি শর্তে যে ঋণ বাংলাদেশ এখন পাচ্ছে তার অনেকখানি কমে যাবে এই উত্তরণের পর। ইউরোপীয় এবং অন্যান্য বাজারে বাংলাদেশ এখন যে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে সেটি মূলত এলডিসি দেশ হিসাবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আন্তর্জাতিক বাজারে রেয়াতি সুবিধা প্রাপ্তির অনেক কিছু আর থাকবে না। ফলে সরকার রাজনৈতিক কৃতিত্ব নেবার প্রবণতা থেকে এলডিসি থেকে বের হবার উদ্যোগ নিলেও এতে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসাবাণিজ্যে কতটা লাভ ক্ষতি হবে সেটি পাঁচ বার ভাবতে হবে। 

আয় বাড়ছে, বাড়ছে বৈষম্য
মাথা পিছু জাতীয় আয় বাড়লে সব মানুষের আয় বাড়ে এমন মনে করার কোন কারণ নেই। আয় বৃদ্ধিটা কোন শ্রেণীর হচ্ছে সেটিই মুখ্য বিবেচ্য থাকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যানের জাতীয় পর্যায়ের পরিবারভিত্তিক আয় বণ্টন চিত্রে দেখা যায় ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১০ সালে দরিদ্রতম ৫ শতাংশ এবং এর ওপরের ডিসাইল এক এবং ডিসাইল দুই অর্থাৎ দরিদ্রতম ২৫ শতাংশের আয় কমে গেছে। আয় বেড়েছে ধনী ৫০ শতাংশের । এতে দেখা যায় জাতীয় আয় বৃদ্ধির সুফল ধনীরা যেভাবে পাচ্ছে সেভাবে পাচ্ছে না গরীব মানুষ । এভাবে জাতীয় আয়ের অসম বণ্টন প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশের গরীব মানুষ আরো গরীব হতে থাকবে। ধনীরা ফুলেফেঁপে উঠবে। 

আয় বাড়ছে, তবু কেন হাহাকার 
সরকারের প্রকাশ করা হিসাবনিকাশে দেশ কেবলই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় আয় বাড়ছে। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে নি¤œ মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। তবু ৫/১০ বছর আগেও সাধারণ মানুষের মধ্যে যে খরচ করার সামর্থ্য ছিল সেটি এখন দেখা যাচ্ছে না। এটি নি¤œ বিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি অপেক্ষাকৃত সচ্ছলদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। সাধারণত দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বাস্তবতা বোঝার জন্য ঈদবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণসূচক। আরেকটি সূচক হলো জমি বা প্লাট বিক্রি। ঢাকার ফুটপাথের অনেক হকারের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এর আগের বছরগুলোতে যে পরিমাণ ব্যবসা করেছে তার ধারেকাছেও এবার করতে পারছে না। অথচ এবার দেশে এক ধরনের শান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি রয়েছে। একই ধরনের চিত্র পাওয়া যাচ্ছে মৌচাক গাওছিয়া এবং এ পর্যায়ের বিপণিবিতানগুলো থেকে। বসুন্ধরা কর্ণফুলি বা ইস্টার্ন প্লাজার দোকানদারদের বক্তব্য অনুসারে তাদের ব্যবসার অবস্থা আরো খারাপ। 

কেন এ হাহাকার অবস্থা সর্বত্র? চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, গ্রেফতারবাজি তথা অবৈধ উপার্জনের রমরমা অবস্থা গত কয়েক বছর ধরেই চলছে। এই শ্রেণীর হাতে উদ্বৃত্ত তহবিল থাকলেও বাজারে সে টাকা ব্যয়ের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। বিদেশী ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ আমানত বৃদ্ধি আর সিঙ্গাপুর, কুয়ালামপুর, ব্যাংকক, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশীদের বাড়িঘর কেনার প্রবণতা বৃদ্ধির মধ্যে এর জবাব রয়েছে। সরকার আনুকূল্যে যারা এখন অঢেল টাকার মালিক হচ্ছেন তারা সেই টাকা বিদেশে পাচার করছে। অন্য দিকে বিরোধী দলের সমর্থকদের ব্যবসা-বাণিজ্য চালানোর পরিবেশ থাকছে না রাজনৈতিক কারণে। নির্বিচারে মামলা, হয়রানি ও পুলিশি অত্যাচারের কারণে দেশের বিপুল জনশক্তির আয় দুর্নীতিবাজদের পকেটে চলে যাচ্ছে। এর ফলে ঈদবাজারে যেমন দুরবস্থা নেমেছে, তেমনিভাবে শহরে ডেভেলপাররা যে সব বাড়িঘর বানাচ্ছে তা বিক্রি হচ্ছে না। জায়গা জমির দাম গেছে কমে। তবে প্রাইভেট গাড়ি এবং এসি বিক্রির হার তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। সারকারি রাজনৈতিক আনুকূল্যপ্রাপ্তদের অধিক হারে বিলাসী জীবনযাপনের প্রবণতার কারণে এটি হয়ে থাকতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন