মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৪

ফরেন পলিসি জার্নালের নিবন্ধ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হাসিনার যুদ্ধ

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দল ধর্মনিরপেতায় বিশ্বাসী বলে তার জন্য ভারতের শক্ত সমর্থন রয়েছে। এ ছাড়া রাজনীতিতে আপাতত সেনাবাহিনীর হস্তেেপর আশঙ্কাও কমে গেছে। এ অবস্থায় দেশের ভেতরে কোনো ধরনের গণ-অসন্তোষ সৃষ্টি না হলে বাইরের চাপের কাছে মাথা নত করবেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৪ নভেম্বর অনলাইন ফরেন পলিসি জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ মন্তব্য করেছেন নিউ ইয়র্কের দ্য ক্যাপিটাল এক্সপ্রেসের সম্পাদক বি. জেড খসরু।

নিবন্ধের শিরোনাম ‘শেখ হাসিনা’স ওয়ার অন ইউনূস অ্যান্ড ইউএস’। এতে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনীর হস্তেেপর সুবিধা নিয়েছেন শেখ হাসিনা। ওই সময় নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত ছিল না বললেই চলে। ফলে নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা ছিল তার। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, তার পদেেপর ফলেই সে সময় সেনাবাহিনী আসার পথ করে দিয়েছিল। ২০০৬ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশকে যখন রাজপথের লড়াই গ্রাস করেছিল, তখন জাতিসঙ্ঘ সেনাবাহিনীকে প্রশাসনিক হাল ধরার জন্য সামনে এগিয়ে দেয়। কোনো সদস্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের এমন পদপে তার নিজস্ব সনদেরই বরখেলাপ।

নিবন্ধে আরো বলা হয়, মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেন শেখ হাসিনা যুদ্ধ শুরু করেছেন তার দু’টি ব্যাখ্যা রয়েছে। একটি হলোÑ সেনাবাহিনী মতা নিয়ে দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল। তাতে সমর্থন ছিল ড. ইউনূসের। কিন্তু হাসিনার বিদ্বেষের কারণ সেটি নয়। আসল কথা হলো, মুহাম্মদ ইউনূস একজন সুপরিচিত অর্থনীতিবিদ। সেনাবাহিনী মতা নেয়ার পরই তিনি রাজনীতি করার ঘোষণা দেন। তবে সে ঘোষণা স্থায়ী হয়নি। এ ঘোষণা শেখ হাসিনা ও তার বিরোধী খালেদা জিয়ার জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। তাই ধারণা করা হয়, ইউনূসের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা অদৃশ্য এক কূটনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেন। তাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে উৎখাতে তিনি এ লড়াই করেন এবং ২০১১ সালে তা করেই ছাড়েন। আরেকটি ব্যাখ্যা প্রচলিত রয়েছে, শেখ হাসিনার সহযোগীরা হয়তো তাকে বলেছেন যে ড. ইউনূস কিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে অর্থ দান করেছেন। এ জন্য ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এ কারণে হতাশ হন শেখ হাসিনা। এ জন্যই তিনি বলেছিলেন, নিজেকে প্রমোট করার জন্য ইউনূস যেকোনো কিছু করতে পারেন। এ ছাড়া ড. ইউনূস এক বিবৃতিতে বলেছিলেন যে, গ্রামীণ ব্যাংকের ৮ কোটি ৫০ লাখ সদস্য শুধুই এ দেশের নাগরিক নন। তারা ভোটারও। এটাকে আওয়ামী লীগের ব্যালট বাক্সের জন্য বিরাট হুমকি হিসেবে দেখা হয়।

বি. জেড খসরু তার নিবন্ধে আরো লিখেছেন, শেখ হাসিনার পিতাকে সেনাবাহিনীর কিছু জুনিয়র কর্মকর্তা হত্যা করে সপরিবারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অসন্তোষ রয়েছে হাসিনার। তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই দেশটি বাংলাদেশের ওই সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত ছিল বলে তিনি বিশ্বাস করেন। ওই অভ্যুত্থানে তার পিতা সপরিবারে নিহত হন। তবে বিদেশে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। একবার বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলামকে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের অনেক সদস্য এখনো বিশ্বাস করেন যে, তার পিতা হত্যার জন্য ওয়াশিংটন দায়ী। তিনি উইলিয়াম বি মাইলামের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ১৯৯১ সালে তার প্রধানমন্ত্রী হওয়া ঠেকাতে চেয়েছিল কি না যুক্তরাষ্ট্র। তার পিতাকে হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন মাইলাম। তিনি আরো বলেন, যদি শেখ হাসিনার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়, তাহলে তাকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই দিকে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আনতে যুক্তরাষ্ট্র তৎপরতা দেখিয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হওয়ায় তা বর্জন করে বিএনপি। এ অবস্থায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার জন্য ও বিএনপিকে তাতে অন্তর্ভুক্ত করতে হাসিনার ওপর চাপ দিতে থাকে ওয়াশিংটন। এতে শেখ হাসিনার পুরনো বিশ্বাস আরো গাঢ় হয়। তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র এখনো তার প্রতি বিরূপ। এ নিয়ে প্রকাশ্যে ােভ প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও অন্য ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ভুল করছে ওয়াশিংটন। নতুন নির্বাচন দেয়ার জন্য ওয়াশিংটন নয়াদিল্লিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। তবে ভারত মনে করেছে, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করলে তাদের নিজেদের লাভ হবে। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করছে বাংলাদেশে স্থিতিশীল গণতন্ত্র প্রয়োজন। কে মতায় থাকছে, তা দেখার বিষয় নয়।
dpuf

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন