শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৩

গোলামের গোলাম

একজন দরবেশের সাথে এক বাদশাহর সাাৎ হলো। বাদশাহ বললেন, আমার কাছে কিছু চান। দরবেশ বললেন, আমি আমার গোলামের গোলামের কাছে কিছু চাওয়াকে বেইজ্জতি মনে করি। এ কথা শুনে বাদশাহ রেগে গেলেন। দরবেশকে বললেন, জনাব! আমি আপনার গোলামের গোলাম হলাম কী করে? দরবেশ স্বাভাবিকভাবেই উত্তর করলেন, লোভ ও আশা আমার গোলাম। আর তুমি এই লোভ ও আশার গোলাম।
বাদশাহ ও দরবেশের এই কথোপকথন হজরত সাইয়্যেদ আলী হাজভেরি (দাতা গঞ্জিবখশ) রহ:-এর বিখ্যাত গ্রন্থ কাশফুল মাহজুব-এ উল্লেখ আছে। হজরত সাইয়্যেদ আলী হাজভেরি রহ: তার গ্রন্থে তাসাউফ ও ফকির সম্বন্ধে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘ফকির’ ওই ব্যক্তি যার মালিকানায় কোনো বস্তু নেই এবং কোনো বস্তু অর্জনেও তার মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলে না। তিনি জগতের উপকরণ বা সম্পদ থাকায় নিজেকে নিজে ধনী মনে করেন না, আবার না থাকলে নিজেকে অভাবীও মনে করেন না। তার কাছে সম্পদ (বা উপকরণ) থাকা না থাকা একই কথা।
হজরত সাইয়্যেদ আলী হাজভেরি রাহ: কাশফুল মাহজুব গ্রন্থটি লিখেছেন আজ থেকে কয়েক শ’ বছর আগে। গ্রন্থটির শিল্প ও সাহিত্যমান এত উঁচু যে, আমার মতো স্বল্পজ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিকে এই গ্রন্থটি বোঝার জন্য কয়েকবার পড়তে হয়েছে। আমি এই গ্রন্থটি তাসাউফ বোঝার জন্য পড়েছি। হজরত সাইয়্যেদ আলী হাজভেরি রাহ: এবং অপর সুফিদের সাথে আমার আত্মিক বন্ধন সেই শৈশবকাল থেকেই। আমি আমার মা-বাবার সাথে সুফিদের মাজার জিয়ারতে যেতাম। আমাকে আমার মা-বাবা সর্বদা এ কথাই বলতেন, এই সুফিগণ আল্লাহর নেকবান্দা। তারা পাক-ভারত উপমহাদেশে দ্বীনি শিার মাধ্যমে ইসলামের প্রসার ঘটিয়েছেন। আমার কখনো এটা মনে হয়নি ওই সুফিদের ইসলাম ও আমার ইসলামের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে।
১১ সেপ্টেম্বর, নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে হামলার পর আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধ শুরু করলে অনেক পশ্চিমা বুদ্ধিজীবী আমাকে বলতে শুরু করেন চরমপন্থা এক ইসলাম, উদারপন্থা এক ইসলাম, জিহাদি এক ইসলাম, সুফি এক ইসলাম, ওহাবি এক ইসলাম, বেরেলভি এক ইসলাম, শিয়া এক ইসলাম, দেওবন্দি এক ইসলাম।
বিশ্বের সব বড় ধর্মেই দল-উপদলে বিভক্ত বিভিন্ন সম্প্রদায় আছে। ইসলামেও আছে। তবে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের শাসনামলে গানবাজনা ও বিনোদনের জন্য খ্যাত কিছু ব্যক্তি হঠাৎ সুফিজমের বাঁশি বাজাতে শুরু করেন। এ লোকগুলো কিছুটা এ ধরনের বিশ্বাস ছড়াতে চাচ্ছিল, শরিয়ত ও তরিকত দু’টি ভিন্ন জিনিস। নামাজ-রোজা হচ্ছে মৌলবাদীকর্ম। অথচ নামাজ-রোজা ত্যাগ করে শুধু ‘আল্লাহ হু’ রবে সজোরে ধ্বনি তোলা আর উদ্বাহু নর্তন-কুর্দন করাই হচ্ছে সুফিজম। এ ধরনের কথা শুনে আমি বারবার কাশফুল মাহজুব গ্রন্থের কাছে ফিরে গেছি। যেখানে হজরত সায়্যেদ আলী হাজভেরি রহ: স্পষ্টভাবে বলেছেন, শরিয়তের বুনিয়াদি ভিত্তির আমল ছাড়া তরিকতের মনজিল অতিক্রম করা যায় না।
সুফিয়ায়ে কেরামের জীবনী অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, কিছু বুজুর্গ ব্যক্তি প্রেম-ভালোবাসা, শান্তি-নিরাপত্তা ও ভেদাভেদহীন সাম্যবাদের শিার মাধ্যমে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন। তারা সমকালীন মুসলিম বাদশাহদের আক্রোশেরও শিকার হন। হজরত নিজামুদ্দিন আওলিয়া রহ: ও সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের মধ্যে লড়াই হজরত আমির খসরু রহ:কেও পেরেশান করে দিয়েছিল। কাশ্মিরের শাসক সুলতান সিকান্দার হিন্দুদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে তাদের মন্দির ধ্বংস করে দেন। হজরত মির সাইয়্যেদ মুহাম্মদ হামাদানি রহ: সিকান্দারের এই জালিমানা কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেন। তাকে গিয়ে বললেন, ধর্মে বাড়াবাড়ির কোনো সুযোগ নেই। অপর দিকে খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি রহ:-এর দৃষ্টান্তও আমাদের সামনে বিদ্যমান। তিনি সুফি ছিলেন, আবার মুজাহিদও। তিনি আজমিরে হিন্দু শাসক পৃথ্বিরাজ চৌহানের অন্যায়-অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য সুলতান শিহাবুদ্দিন ঘুরির সাথে লড়াইয়ে যোগ দেন। পৃথ্বিরাজের মোকাবেলায় এই লড়াইয়ে খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি রহ:-এর বহু মুরিদ শহীদ হন। বাগদাদের হজরত আবদুল কাদের জিলানি রহ: থেকে শুরু করে দিল্লির নিজামুদ্দিন আওলিয়া রহ: ও আজমিরের খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি রহ:সহ বেশ কিছু বুজুর্গের মাজারে যাওয়া ও তাদের দর্শনগুলো অধ্যয়নের সুযোগ আমার হয়েছে। এসব বুজুর্গের ইসলাম সেটাই, যা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে এবং আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা: শিখিয়েছেন। ইসলাম শুধু ইসলামই। ইসলাম কট্টরও না, উদারও না। মুশকিল হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য কাশফুল মাহজুব পড়া ও তার নিগূঢ় তত্ত্ব বোঝা বেশ মুশকিল। তবে এই মুশকিল আসান করে দিয়েছেন প্রফেসর মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ভাট্টি। তিনি তার আসরারে রুহানিয়াত গ্রন্থে সুফিদের দর্শনকে অত্যন্ত সরল ভাষায় সঙ্কলন করেছেন।
প্রফেসর মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ভাট্টি হজরত জুনাইদ বাগদাদি রহ:-এর ভাষায় তাসাউফের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, আল্লাহর কাছে কৃত ওয়াদা পূরণ করা ও রাসূলুল্লাহ সা:-এর শরিয়তের অনুসরণ করার নামই তাসাউফ। আবদুল্লাহ ভাট্টি আরো একজন সুফিবুজুর্গ শায়খ আবদুল্লাহ তুসতারি রহ:-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, আমাদের মূলনীতি সাতটি। ০১. কুরআনের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক; ০২. রাসূলুল্লাহ সা:-এর অনুসরণ; ০৩. হালাল রুজি; ০৪. অপরকে কষ্ট না দেয়া; ০৫. পাপকে ঘৃণা করা; ০৬. তওবা এবং ০৭. আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের হক আদায় করা। সুফিদের শিা মূলত নবুয়তি শিার ধারাবাহিক রূপ। অথচ ১১ সেপ্টেম্বরের পর পাশ্চাত্য বুদ্ধিজীবীরা সুফিজমের নামে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এরা বলেন, সুফিদের মাজারে গমনকারীরা ‘ভালো মুসলমান’। আর সুফিদের যারা মানে না, তারা ‘খারাপ মুসলমান’। তাদের এই বক্তব্যের পর মাজারে মাজারে হামলা শুরু হয়। হামলাকারীদের দাবি, সুফিদের মাজারে বিদয়াত হচ্ছে। মানুষ আল্লাহর কাছে চায় না, কবরের কাছে চায়। এটা শুধু মূর্খতা ও জ্ঞানের স্বল্পতা।
প্রকৃত সুফি তারা যারা হজরত আলী হাজভেরি রহ: ও শায়খ জুনাইদ বাগদাদি রহ:-এর মতো শরিয়তের রাস্তায় চলে। প্রফেসর মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ভাট্টি সুফি ও সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা করেছেন। পার্থক্যের কারণও উল্লেখ করেছেন। সুফিদের দিয়ে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ পেতে পারে। সাধারণ মুসলমানদের েেত্র তা হয় না। সুফিদের অলৌকিক ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে তাদের রিয়াজত-মোজাহাদা অর্থাৎ আমলি সাধনা। প্রফেসর মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ভাট্টি তার আসরারে রুহানিয়াত গ্রন্থে সুফিদের শিার আলোকে লিখেছেন, অহঙ্কার থেকে বাঁচো, আল্লাহর সামনে নত হওয়ার েেত্র নিজেকে মুখাপেীহীন মনে করাও অহঙ্কার। এই গ্রন্থে বলা হয়েছে, মানুষের অন্তরে হিংসা ও ঈমানÑ এ দু’টি একসাথে থাকতে পারে না। হিংসা থেকে বাঁচো। মিথ্যা বলো না। জুলুম করো না। এই গ্রন্থে তাড়াহুড়া থেকে দূরে থাকাকেও সুফিদের গুণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা কুরআন পাকেও তাড়াহুড়া কাজের নিন্দা করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আল্লাহর ভয়। অন্তরে যদি আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয় তাহলে মানুষ খারাপ কাজ থেকে বেঁচে যাবে।
সুফিদের ইসলাম ও কুরআনের শিার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। প্রফেসর মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ভাট্টি তার গবেষণা ও পরিশ্রমের জন্য মোবারকবাদের পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা পাওয়ারও যোগ্য। তিনি আসরারে রুহানিয়াত গ্রন্থের মাধ্যমে শিখিয়েছেন, আমরা গোলামের গোলাম। আমাদের শাসক বাহ্যিক শক্তির গোলাম। আর বাহ্যিক শক্তিগুলো শয়তানের গোলাম। আমরা যদি রুহানি শক্তি অর্জন করতে পারি তাহলে এই গোলামি থেকে মুক্তি পাবো। আর রুহানি শক্তি অর্জিত হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর গোলামির মাধ্যমে।
পাকিস্তানের জাতীয় পত্রিকা দৈনিক জং, ১৪ ফেব্র“য়ারি, ২০১৩ থেকে উর্দু থেকে ভাষান্তর ইমতিয়াজ বিন মাহতাব
ahmadimtiajdr@gmail.com
* nvwg` gxi : cvwK¯—v‡bi wRI wUwfi wbe©vnx m¤úv`K
hamid.mir@janggroup.com.pk
ont� F i y �_� ��� so-hansi-font-family:SutonnyMJ;mso-bidi-language: BN’>ভারত নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ ও নিরাপত্তা বিষয়কে যেভাবে দেখে সেই দৃষ্টিভঙ্গির বিশেষ পরিবর্তন হয় নি। তবে সম্প্রতি কিছু লেখা দেখা যাচ্ছে যেখানে ভারতের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যারা ঘনিষ্ঠ তারা বাংলাদেশ নিয়ে নতুন ভাবে চিন্তা করছেন।

সুনন্দ কে দত্ত রায় মার্চের ১৪ তারিখে বিজিনেস স্টেন্ডার্ড পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন। ভারতীয় বুর্জোয়া শ্রেণির মনের কথা বেশ খানিকতা তার লেখায় ব্যক্ত হয়েছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা চাইছেন বাংলাদেশকে শুধু ভারতীয় পণ্যের বাজার হিশাবে পাওয়া ভারতের প্রধান কূটনৈতিক ল্য হওয়া উচিত নয়, চাইবার পরিসরকে আরো বড় করতে হবে। তারা চান বাংলাদেশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসংঘাতে কোন প না নিয়ে ভারত বরং দণি এশিয়ার বাজার বিকাশের দিকে মনোযোগ দিক। সেইসব নীতি সমর্থন ও গ্রহণ করা হোক যাতে বাংলাদেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধির ত্রিভুজে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সেই ত্রিভুজে বাংলাদেশ ছাড়া আছে উত্তরপূর্ব ভারত এবং বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল বার্মা যার অন্তর্গত।
একটা দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রতি ভারতীয় পুঁজির সকাতর আগ্রহ বোঝা কঠিন কিছু নয়। কার্ল মার্কস যাকে উৎপাদনের ত্রে পরিবর্ধন বলেছেন পুঁজির নিজের অন্তর্গত স্বভাবের কারণেই সেই তাগিদ তৈরী হয়। এখন প্রকাশ্যে সেটা হাজির হচ্ছে। দিল্লির রাজনৈতিক স্বার্থ আর পুঁজির স্বার্থ সমান্তরালে চলছে না। পুঁজির মুনাফা উৎপাদন ও তা বাজার থেকে উসুল করবার জন্য নতুন ত্রে চাই। দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটে এমন ‘ত্রিভুজ’ নিয়ে ভাবনা এই কারণে। এই েেত্র পুঁজির চরিত্র শুধু ভারতীয় ভাবলে ভুল হবে, তার আন্তর্জাতিক মাত্রা আছে।
এ কারণে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার নিয়ে যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, তা তারা পছন্দের মনে করছে না। শেখ মুজিবের কন্যাকে তারা উপদেশ দিচ্ছেন তার বাবা যেমন যুদ্ধাপরাধীদের মা করে দিয়ে অতীতের রক্তাক্ত ইতিহাসের ওপর চাদর টেনে দিয়েছিলেন, হাসিনারও উচিত হবে দণি আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলার মতো সত্য উদঘাটন ও ত নিরাময় জাতীয় (Truth and reconciliation) বিচারপদ্ধতি অনুসরণ করা। দণি আফ্রিকা এভাবেই পুরানা শত্রুর সঙ্গে বিবাদ মিটিয়েছে ভবিষ্যৎকে রা করবার জন্য। শেখ হাসিনাকেও সেই কাজ করা উচিত। দত্ত-রায় বলছেন শাহবাগীদের দিল্লি যেভাবে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে তাতে শেখ হাসিনার পে এই সব কাজ করা কঠিন হয়ে যাবে। ভারতীয় কূটনীতির বরং ল্য হওয়া উচিত বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধির ত্রিভুজে শামিল হতে সহায়তা করা।
নিজের যুক্তি খাড়া করতে গিয়ে দত্ত রায় শরমিন্দা না হয়ে বলেছেন, হয়তো বলা ঠিক না, তবে একাত্তর সালে যে নব্বই ল শরণার্থী ভারতে চলে গিয়েছিল তাদের অধিকাংশই ছিল হিন্দু। তারা পাকিস্তানীদের হাতে যেমন নির্যাতিত হয়েছে, তেমনি স্থানীয় মুসলমানদের নিষ্ঠুরতারও স্বীকার হয়েছে। তারা বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় নি। ভারতীয় সৈন্য বুলডোজার দিয়ে তাদের শরণার্থী শিবির ভেঙে দেয় এবং জবরদস্তি বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। তাদের বেয়নেটের ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবার জন্য ট্রাকে তোলা হয়েছিল। সেই সময় একজন হিন্দু শরণার্থীকে দত্ত রায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন সে নিজেকে কি বাংলাদেশী মনে করে? উত্তর এসেছিল, “না, আপনি আমাকে বাংলাদেশে বসবাসকারী একজন ভারতীয় বলে গণ্য করতে পারেন”।
দত্ত রায় খুব ঝুঁকি নিয়েই কথাটা বলেছেন। কারণ এর জন্য তিনি সাম্প্রদায়িক বলে নিন্দিত হতে পারেন। কিন্তু কথাটা তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের দিকে নজর ফেরাবার দরকারে তুলেছিলেন। সেটা হোল, বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠির পে যারা ভারতে লবি করছে শুধু সেই “বিশেষ লবির কথা না ভেবে ভারতকে সকল বাংলাদেশীদের কথাই ভাবতে হবে”। ভারতে এই চিন্তাটা নতুন। ভারতের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে এই চিন্তার আধিপত্য কতটা তা এখনি আমরা বুঝতে না পারলেও এই চিন্তার প্রভাব মোটেও কম নয়। দত্ত-রায় লেখাটা শেষ করেছেন এটা বলে যে “আর আগেও আমি বলেছি, সেই বাংলাদেশই ভারতের মিত্র হবে যারা পুরানা সংঘাতের প্রতিশোধ তুলতে ব্যস্ত নয়, বরং অতীতের সঙ্গে একটা রফা করে নিজের সঙ্গে নিজে মিটমাট করতে আগ্রহী”।
এ ছাড়া ভারতের আউটলুক পত্রিকায় এস এন আবদী ‘আউটলুক’ পত্রিকায় লিখেছেন। “ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কোন কূটনীতিক অথবা হিন্দু সম্প্র্রদায়ের কোন নেতা মনে করতে পারলেন না সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুধু ধর্মীয় কারণে কোন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের হাতে হিন্দুরা নিহত হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। শুধু হিন্দু হওয়ার কারণে নয়, তাদের টার্গেট করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে প্রতিপ হয়ে ওঠার কারণে”। উল্লেখ করা দরকার এস এন এম আবদী ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক রচনার পে শক্ত যুক্তি দিয়েছেন এস এন এম আবদী। তিনি বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কেবল গণতান্ত্রিক ও ধর্ম নিরপে শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার পরামর্শ দিয়েছিল ভারত, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই সব কানে তোলে নি। শেখ হাসিনাকে মতায় বসানোর কৌশল ভারত নিশ্চিত করে ফেললেও যুক্তরাষ্ট্র ঠিকই দেখতে পাচ্ছে খালেদা জিয়াকে মতায় বসানোর পরিকল্পনায় জামায়াতে ইসলামই আসল খেলোয়াড়। এস এন এম আবদীর মোদ্দা কথা হচ্ছে দিল্লির উচিত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক করা।
দিল্লির নীতিনির্ধারকরা এই সকল পরামর্শ গ্রহণ করবেন কিনা সেটা ভিন্ন বিষয়। শিণীয় বিষয় হচ্ছে মুখস্থ সূত্র দিয়ে রাজনীতির গতিপ্রকৃতি বোঝার চেষ্টা না করে আসলে বাস্তবে কী ঘটছে সেই দিকেই যারা নজর নিবদ্ধ রাখবেন, তারা জনগণকে সঠিক দিক নির্দেশনাও দিতে পারবেন।
নইলে নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন