সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বিলুপ্ত আশা ও বিবর্ণ আশাবরী


খ্যাতনামা ব্রিটিশ কবি জন ডান ১৬২৪ সালে লিখেছিলেন :
Any man's death diminishes me, because
I am involved in mankind : And therefore
never send to know for whom the bell
tolls; it tolls for thee.

কে মারা গেল সেটা গৌণ। আসল কথা হলো- একজন চলে গেল চিরতরে। এই মানবগোষ্ঠীর মধ্য থেকে আমাদের ছেড়ে চলে গেল এক বন্ধু আমাদের হ্রস্ব করে দিয়ে।
প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন হারাতে হলো পাঁচজন তরতাজা যুবকের। তারা কারো ঘর ভেঙে ডাকাতি করতে যায়নি, যায়নি কারো প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে। তারা গিয়েছিল প্রতিবাদ করতে সরকারের বিরুদ্ধে। এরাই নাকি রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার উৎস। এদের ভোটেই নাকি সরকার আসে আর যায়।
আজকাল মৃত্যু মৃদু দীর্ঘশ্বাসও আনে কি না সন্দেহ হয়। আমার পরম প্রিয় বন্ধু কবি আবু হেনা মোস্তফা কামাল একটা মর্মস্পর্শী কবিতা লিখেছিলেন। কবিতার শব্দগুলো মনে নেই। তবে তার মর্মার্থ ছিল- এক যুবক বাসচাপা পড়ে মরে পড়ে আছে মিরপুরের জনাকীর্ণ রাজপথে। দু-একজন উৎসুক পথচারী দূর থেকে উঁকি দিয়ে দেখলেন। দু-একজন নিরাপত্তাহীন সড়কব্যবস'ার ওপর কিছু মন্তব্য ছুড়ে দিতে দিতে ছুটলেন অফিসের পথে। কারো সময় নেই। আগের দিন হলে থেমে যেত জনস্রোত। যুবকটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করত। তার পরিচয় জানার চেষ্টা করত। আজ আর কারো এসব সাধারণ বিষয় নিয়ে নিজের অমূল্য সময় নষ্ট করার মতো সময় নেই।

এদের করুণ মৃত্যুতে সহানুভূতি জানিয়ে এলো না কোনো রাষ্ট্রপতির বাণী বা প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তা।
ইংরেজ ও পাকিস্তান আমলেও পুলিশ ছিল একটি বেসামরিক বাহিনী, যার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ছিল বেসামরিক প্রশাসনের হাতে। প্রতিটি বুলেট ব্যবহারের হিসাব দিতে হতো। প্রতিটি পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর তাৎক্ষণিক জবাবদিহি করতে হতো পুলিশকে। এখনকার মতো হাস্যকর ‘ক্লোজড’ ও ‘সাসপেনশন’ নয়। একজন অপুলিশ, বেসামরিক আধিকারিক বা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ ছাড়া পুলিশ কনো ব্যক্তির ওপর গুলিবর্ষণ করতে পারত না। স্বাধীন হতে হতে তারা এখন এমন এক অবস'ানে নিজেদের নিয়ে যেতে পেরেছে, যেখানে কারো কাছেই তাদের আর জবাবদিহি নেই। সরকারের পর সরকার তাদের দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থে এমন সব অন্যায় কাজে পুলিশকে দুর্ব্যবহার করেছে, তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহসও হারিয়েছে সরকারের মন্ত্রীরা। এখন হয়তো খুব শিগগিরই দেখব, মন্ত্রীরা তাদের ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করে কৃতার্থ বোধ করছেন। পুলিশ প্রধানের মর্যাদা যদি স্বরাষ্ট্র সচিবের সমান কিংবা ঊর্ধ্বে হয়, তাহলে তার রিপোর্টিং পয়েন্ট কোথায় তা জানা দরকার। কেননা পুলিশ প্রধান হচ্ছেন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের উচ্চতম পদে অধিষ্ঠিত কর্মকর্তা। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধানের অবস'ানও তাই। সরকারের সব ডিপার্টমেন্ট প্রধানের অবস'ানের মধ্যে সামঞ্জস্য আনা প্রয়োজন। পুলিশের কর্মকর্তাদের পোশাক ও অলঙ্করণ এখন পুরোপুরিই সেনাবাহিনীর আদলে। আইজিপিকে তার পদোন্নতির অলঙ্করণ পরিয়ে দিচ্ছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এটা একটা অভূতপূর্ব ব্যতিক্রম। এভাবেই ধীরে ধীরে পুলিশ দূরে সরে যাবে বেসামরিক প্রশাসন থেকে। জবাবদিহি থেকে। নিয়ন্ত্রণ থেকে। যে সরকার তার নিয়ন্ত্রণাধীন বাহিনীকে তোয়াজ করতে আরম্ভ করে, তাদের পক্ষে আর নিয়ন্ত্রণ ও চেইন অব কমান্ড পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না।

পাঁচটি প্রাণ ঝরে গেল। ৯০০ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ও এক হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। গত রোববার চারদলীয় জোটের পূর্বঘোষিত গণমিছিলে সরকারি দল ও পুলিশ বাহিনী বাধা দিয়েছে বলেই এ সংঘর্ষ ও প্রাণহানি। কিন' অকারণে বাধা দেবে কেন পুলিশ? তাহলে সংবিধান থেকে দেশের মানুষের এসব অধিকার নিশ্চিহ্ন করে দেয়াই হবে বাঞ্ছনীয়। নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার- এরা শীতে ন্যাংটা ছেলেদের মতো কাঁপছে।
আজকাল যারা পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তাদের সান-্বনা দিতে যান কেবল তাদের নিকটাত্মীয়রা, পাড়া-পড়শিরা আর কিছু বন্ধুবান্ধব। কিন' একজন পুলিশ কনস্টেবল ঢিল লেগে সামান্য আহত হলেই কমপক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেলিভিশন সহযোগে পুলিশ হাসপাতালে যান সহমর্মিতা দেখাতে। ভুল করে হোক আর ভবিষ্যতে মার খাবার ভয়ে হোক, তারা দলে দলে যান পুলিশের আহত সদস্যকে দেখতে; যান সাথে চারটে আপেল, পাঁচটা কমলালেবু আর ছয়টা ডাব নিয়ে। অবাক লাগে না?- যে মার খেয়েছে, গুলিবিদ্ধ হয়েছে, নিহত হয়েছে- তাদের যারা ভোট দিয়ে সেবা করতে পাঠিয়েছিল এবং আবার যাদের কাছে ভোট ভিক্ষা করতে যেতে হবে- তাদের মৃত্যুর প্রতিও নেই কোনো সমবেদনা, কোনো দুঃখপ্রকাশ, কোনো ক্ষতিপূরণ?

প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, র‌্যাবের বা পুলিশের এনকাউন্টারে বা হেফাজতে আর কারো মৃত্যু হবে না। কিন' তার পরও ঘটে যাচ্ছে মৃত্যুর ঘটনা। এর মাত্র দুটো ব্যাখ্যা হতে পারে। পুলিশ হয়ে গেছে উচ্ছৃঙ্খল ও অবাধ্য অথবা ইঙ্গিতে তাদের বলা হয়েছে এসব নির্দেশ উপেক্ষা করতে। গণতান্ত্রিক ব্যবস'াপনায় পুলিশ বাহিনী নিয়ন্ত্রিত হবে হয় কেন্দ্রীয় সরকারের অসামরিক আধিকারিকদের দিয়ে অথবা নির্বাচিত স'ানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের দিয়ে। মেয়র অথবা ইউনিয়ন কাউন্সিল বা উপজেলা পরিষদের অধীনে চাকরি করতে হবে তাদের। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একজন পুলিশ প্রধানের অধীনে ঢাকা থেকে সারা দেশের ১৬ কোটি মানুষের নিরাপত্তা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা কেনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। গ্রহণযোগ্য হতে পারে না যে তারা নিজেরাই জবাবদিহি করবে নিজেদের কাছে। আগেকার সময়ে পুলিশ নিয়ন্ত্রিত হতো অসামরিক প্রশাসন দিয়ে। রাজনৈতিক সংঘর্ষ এড়িয়ে প্রশাসন আলোচনায় বসত বিক্ষুব্ধদের সাথে। আমাদের অভিজ্ঞতায় শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই বিষয়টির একটা সাময়িক সুরাহা হয়ে যেত। সংক্ষুব্ধরা সুবিচারের আশ্বাস পেত। সরকার পেত সমাধানের সুযোগ। দাবি যুক্তিযুক্ত হলে সমাধানের সুপারিশ স'ানীয় প্রশাসনই করত সরকারের উচ্চপর্যায়ে। একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়ার সুযোগ থাকত অনেক বেশি। এখন বিক্ষোভ হলে পুলিশ আর সংক্ষুব্ধরা একেবারে মুখোমুখি। তাতে সঙ্ঘাতই অনিবার্য হয়ে ওঠে। আর হচ্ছেও তাই। বিক্ষোভ মানেই সংঘর্ষ। কেননা মধ্যবর্তী হস্তক্ষেপ ও সুরাহার আর কোনো সুযোগ নেই। নেগোসিয়েশন একটা ‘স্কিল’। এটা স্বীকার করে নিতেই হবে। আজকাল নেগোসিয়েশনের কোনো সুযোগ থাকছে না বলেই এত সংঘর্ষ, এত মৃত্যু।

পুলিশের জন্মলগ্ন থেকেই মারার জন্য নয়, অত্যাচারের জন্য নয়, জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য নিয়েই তাদের তৈরি করা। রাজা অগাস্টান খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে রোম শহরকে ১৪টি ওয়ার্ডে (ভিসি) বিভক্ত করেছিলেন পুলিশি কর্মকাণ্ডকে আরো জোরদার করতে। যেখানেই ক্ষমতা প্রয়োগ জড়িত থাকে, সেখানেই স্বাভাবিক কারণেই ক্ষমতার অপপ্রয়োগ ও ক্ষমতাকে অত্যাচারের হাতিয়ার রূপে অপব্যবহারের সুস্পষ্ট সম্ভাবনা থাকে। সে জন্যই ক্ষমতা প্রয়োগের নিবিড় তাৎক্ষণিক তত্ত্বাবধানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সম্রাট অগাস্টান রোম পুলিশের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের জন্য সাতটি ভিসিতে ১৪ জন ভিকোম্যাজিস্ট্রেসি নিয়োগ করেন।
১৮২৯ সালে ব্রিটেনে চালু হয় দ্য মেট্রোপলিটন পুলিশ অ্যাক্ট। ইউনিফরম পরা বেতনভুক্ত অসামরিক পুলিশ বাহিনীর সৃষ্টি এখান থেকেই। কিন' এটা ছিল পুরোপুরি ‘প্রিভেনটিভ’ পুলিশিং। তাদের প্রত্যাশিত গুণাবলি ছিল : সহনশীলতা, নৈর্ব্যক্তিকতা, আর পেশাদারি মনোভাব। তাদের ক্ষমতার ভিত্তি ছিল : (১) দ্য ক্রাউন, (২) দ্য ‘ল’ এবং দ্য ‘কনসেন্ট’ অব ‘দ্য সিটিজেনরি’।
আমাদের দেশের বাস্তবতায় কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীকে বিকেন্দ্রীকরণ আশু প্রয়োজন। তা ছাড়া রেলওয়ে আদালত, ট্র্যাফিক, কারাগার, ইমিগ্রেশন বন বিভাগ, মৎস্য বিভাগ, পুলিশের ‘ইনভেস্টিগেশন’, ‘প্রটোকল’, ‘নারকোটিক ও ড্রাগ’ ইত্যাদি দায়িত্বের জন্য কেন্দ্রীয় ও একক কর্তৃত্ব অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এসব ডিপার্টমেন্ট ‘মেইন’ পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দিতে হবে। তাদের নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণও হতে হবে পৃথক। তাদের ইউনিফরম হবে অন্য রকমের। ট্রাফিক আইন ভাঙলে ট্র্যাফিক স্কাউট গ্রেফতার বা জরিমানা করতে পারবে। এতে ক্ষমতা বণ্টনে একটা শুভ ভারসাম্যতা আসবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এতে করে সাধারণ পুলিশের ওপর বহুবিধ কাজের চাপও অনেকাংশেই কমে আসবে। ক্ষমতার একক ব্যবহারের মনোভাবেরও পরিবর্তন হবে বলে ধারণা করা যায়। ল্যাটিন ভাষায় উদ্বেগটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে :
"Quis custodiet ipso custodes" (who guards the guardians?)

রাজনৈতিক সংঘর্ষে পুলিশ কখনোই বেআইনি, অসাংবিধানিক অথবা দলীয় কোনো নির্দেশে কোনো কাজ করতে পারে না। এই মনোভাবকে পুলিশের মৌলিক প্রশিক্ষণের মধ্যে আন্তরিক অর্থে সুদৃঢ় করতে হবে। সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় যাদের বেতন-ভাতা-ইউনিফরম-কোয়ার্টার- তাদের দায়িত্ব পালনকালে এ কথা মনে রাখতে হবে। রাখলে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে ওভাবে নির্যাতন করার কথাও ভাবতে পারত না পুলিশ বাহিনী। তারা তো ব্যস্ত নিজেদের সুবিধা বাড়াতে। আর অফিস সাজাতে। কোনো প্রচণ্ড ট্রাফিক ‘জ্যামে’ কোনো দিন দেখেছেন পুলিশ প্রধান বা পুলিশের ট্র্যাফিক প্রধানকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নাগরিকদের দুর্ভোগ লাঘবে সচেষ্ট হতে? না, তাতে সম্মানহানি হবে। ডিএমপি কমিশনার চলেন-বলেন তো মন্ত্রীর মতো। ক’দিন পরপর পরিদর্শন করেন থানা, রাত্রিতে থানার হাজত। যাক ফিরে আসি মূল ক্ষোভে। মানুষের অস্বাভাবিক কোনো চাওয়া নেই পুলিশের কাছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ অ্যাক্টে তারা এমন সব ধারা রচনা করেছেন, তারা যাকে ইচ্ছা ধরতে পারবে, মারতে পারবে- কিন' তাদের কিছু করা যাবে না। সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অজুহাতে যে কাউকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় কত হাজার কোটি টাকার উৎকোচ আদায় করেছে ডিএমপি তার হিসাব দিতে পারবে না। পারা যায় না। চেইন অব কমান্ড উঠে গেছে, যত পরিদর্শক নিয়োগ পাচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি কমে যাচ্ছে পরিদর্শন। পুলিশের পকেটে রিভলবারের পরিবর্তে ফাস্ট এইড মেডিক্যাল বক্স থাকা কি সম্ভব? যে হাত দিয়ে মানুষ পেটায়, সে হাত দিয়ে কোনো সিনিয়র সিটিজেনকে তার বাড়ি থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া কোনো দিন সম্ভব হবে কি? বগলের ‘বেটন’ ফেলে দিয়ে কোনো ছোট ছেলে বা মেয়েকে তাদের নরম দুটো হাত ধরে মরণফাঁদের মতো সড়কগুলো পার করে দেয়া কি একেবারেই নিষিদ্ধ? একটা হারিয়ে যাওয়া ছেলে বা মেয়েকে তার নিশ্চিন্ত ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া? একটা আত্মীয়-সঙ্গীবিহীন বৃদ্ধ মানুষের বাড়িতে অথবা পথে পড়ে থাকা মরদেহ তার নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দিলে কি ইউনিফরমের ভাঁজ ভেঙে যাবে? দাগ লেগে যাবে?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত অনিচ্ছায় বললেন, পুলিশের সাথে সংঘর্ষে যারা মারা গেছে তাদের জন্য তিনি ‘দুঃখিত’। ঘটনার পর তার বিবৃতি এত সংক্ষিপ্ত, এতটা হৃদয়হীন? তিনি আরো বললেন : ‘পুলিশের তো এ রকম গুলি করার কথা ছিল না?’ তাহলে তাদের গুলি চালানোর হুকুম কে দেয়? তাদের কি আদৌ কারো আদেশ নেয়ার প্রয়োজন হয় বর্তমান ব্যবস'ায়?
কেবল এই পাঁচটি মৃত্যুই নয়। সমপ্রতি শেয়ার ব্যবসায় সর্বস্বান্ত হয়ে দু’জন যুবক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তাতে কার কী? অপরাধীদের নাম উচ্চারণ করতে ভয় পান অর্থমন্ত্রী। ফালানীর কাঁটাতারের ঝুলন্ত লাশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমেই বললেন : ‘ফালানী তো আমাদের দেশের কেউ নয়, সে তো ভারতীয় নাগরিক!’ বিএসএফের গুলিতে একজন বাংলাদেশী নিহত ও আরেকজন গুরুতর আহত হলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বললেন : ‘ও রকম হয়েই থাকে বর্ডারে। এখনো হচ্ছে, আগেও হয়েছে, আগামীতেও হবে।’ এরা জীবনে যদি আবার ভোটভিক্ষা চাইতে আসেন, তখন শুনিয়ে দিয়েন যা তার প্রাপ্য। যে চুক্তির শর্তাবলি জাতি আজো জানতে পারেনি, তার বাস্তবায়ন হয়ে যাচ্ছে। তিতাস নদী ভরাট করে মাটির বাঁধ দিয়ে ভারতীয় ট্রাক ও পণ্য পারাপার হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না। মার্চের ১২ তারিখে বিরোধী দলের পূর্বনির্ধারিত ও পূর্বঘোষিত রাজনৈতিক কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি করার ঘোষণা দিয়েছে সরকারি দল। এ যেন পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাধানো। কাঁদছে গণতন্ত্র, কাঁদছে ভবিষ্যৎ। হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেল মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিবের হৃদয়বিদারক এক ভবিষ্যদ্বাণী :
‘রঞ্জ সে খুঁগ্যর হুয়া ইনসাঁ
তা মিট যাতা হ্যায় রন্ধ
মুশকিলে মুঝ প্যর প্যড়ি ইবেনি
কে আসাঁ হ গ্যজি।।
ইউহি গ্যর রোতা রাহা গালিব
তো এ্যয় এ্যহলে জাহাঁ
দেখনা ইন ব্যস্তিওঁকো তুম্
কে বিরাঁ হ গ্যয়ি।।’

- দুঃখে এভাবে রক্তাক্ত হতে থাকলে সয়ে যাবে দুঃখ
আমার ওপর বিপদ পড়েছে এত যে ব্যথাই লাগে না আর।
- আর এভাবেই যদি ক্রন্দনরত থাকে গালিব
তাহলে দেখো এসব জনপদ একদিন জনশূন্য হয়ে যাবে।

মোহাম্মদ আসাফ্ উদ্দৌলাহ্
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন