শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১২

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ভারতশাসিত বান্টুস্তানে পরিণত করার চেষ্টা করছেন


ইকোনমিস্টকে ইশরাক চৌধুরী

বাংলাদেশে একটি অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে বলে যে প্রচারণা চলছে, সে সম্পর্কে ওই ঘটনার অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি ইশরাক চৌধুরী বলেছেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তবে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ভারতশাসিত ‘বান্টুস্তান’-এ পরিণত করার জন্য গোপন অভ্যুত্থান চালিয়ে যাচ্ছেন; তিনি ও অন্য জাতীয়তাবাদীরা এর বিরোধী। তিনি বলেন, ‘সরকার অভ্যুত্থানচেষ্টার কথা বললেও ওই দাবির সমর্থনে কোনো সৈন্য চলাচল, অস্ত্রশস্ত্র বা অন্য কিছুই দেখাতে পারেনি’। গত বৃহস্পতিবার রাতে লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী পত্রিকা ইকোনমিস্টে ইশরাক চৌধুরী ওই দাবি করেন। প্রতিবেদনটি ‘টারবুলেন্ট হাউজ : দি আর্মি ক্লেইমস টু হ্যাভ থর্টটেড অ্যা ক্যু শিরোনামে’ প্রকাশিত হয়। ছাপানো পত্রিকাটি ২৮ জানুয়ারি দিল্লি থেকে প্রকাশিত হবে।
প্রতিবেদনটি শুরু করা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা গওহর রিজভীর বক্তব্য দিয়ে। তিনি জানান, অঙ্কুরেই অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সেনা অভ্যুত্থানটি ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ষড়যন্ত্রকারীর সংখ্যা ছিল ১৬ এবং এদের কেউ কেউ সেনাবাহিনীতে কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত মধ্যমপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বাকিরা প্রবাসী। তিনি দাবি করেন, যেসব প্রখ্যাত ব্যক্তিকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাদের নামসংবলিত একটি তালিকা এবং যেসব জেনারেলকে ‘সম্ভাব্য অংশীদার’ করার কথা ভাবা হয়েছিল তাদের নামসংবলিত আরেকটি তালিকা তদন্তকারীরা পেয়েছেন।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সফল ও ব্যর্থ সব মিলিয়ে গত ৪০ বছরে বাংলাদেশে কয়েক ডজন ক্যু হয়েছে; তবে ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র যেভাবে অভ্যুত্থানটির বিবরণ দিয়েছেন, তা বিরল। তিনি অভ্যুত্থানকারীদের নাম প্রকাশ করেন এবং অন্যদের বিদ্রোহে উসকানি (ই-মেইল ও ফেসবুকে পোস্টিংয়ের মাধ্যমে) দেয়ার জন্য তাদের অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কট্টর ইসলামপন'ী।
অভ্যুত্থানটি সম্পর্কে সরকারি ভাষ্য হলো, বিরোধীরা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে উৎখাত করতে চেয়েছিল। এদের মধ্যে রয়েছে ইসলামপন'ী, যাদের অনেককে ২০০০-এর প্রথম দশকে নিয়োগ করা হয়েছিল এবং তারা চলমান যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরোধী।
রিজভী বলেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণ অক্ষুণ্ন রয়েছে এবং ঢাকার ‘পরিসি'তি সম্পূর্ণ শান্ত’। রাজনীতিতে উর্দিধারীদের না জড়ানোর জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখানোর জন্যও তিনি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে জানানো হয়, তবে এই দৃষ্টিভঙ্গি সবাই সমর্থন করেন না। যেসব বাংলাদেশী ভাষ্যকার সাধারণত বেশ সরব থাকেন, এ ঘটনার পর তারা মন্তব্য করার অনুরোধ এড়িয়ে যান। ফোনে আড়িপাতা নিয়ে প্রবল সন্দেহ রয়েছে অনেকের।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনার অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে অভিযুক্ত ইশরাক চৌধুরীর সাথে আলাপ করে ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে। বর্তমানে বিদেশে আত্মগোপনকারী ইশরাক স্বীকার করেন যে, গ্রেফতার করা ব্যক্তিরা তার বন্ধু। তবে তারা ধর্মান্ধ নয় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ তার বাড়ি থেকে মদ, ব্র্র্যান্ডি, হুইস্কি উদ্ধার করেছে, কোনো অস্ত্র নয়। তিনি বলেন, সরকার অভ্যুত্থানচেষ্টার কথা বললেও ওই দাবির সমর্থনে কোনো সৈন্য চলাচল, অস্ত্রশস্ত্র বা অন্য কিছুই দেখাতে পারেনি।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ইশরাক আহমদ উদার পরিবারের সদস্য এবং তিনি সাবেক উচ্চপদস' কর্মকর্তা। ইশরাক বলেন, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে’ যুদ্ধ করেছিলেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ভারতশাসিত ‘বান্টুস্তান’-এ পরিণত করার জন্য যে গোপন অভ্যুত্থান (পড়ঁঢ়-নু-ংঃবধষঃয নু ঝযবরশয ঐধংরহধ) চালিয়ে যাচ্ছেন, তিনি ও অন্য জাতীয়তাবাদীরা এর বিরোধী।
ইশরাক আরো কিছু অভিযোগ করেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস'া র-এর গোয়েন্দারা বাংলাদেশে সক্রিয় রয়েছে। তিনি দাবি করেন, দুই বছর ধরে ঢাকায় বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস'ার সদর দফতরে র-এর একটি অফিস রয়েছে এবং ভারতকে সরাসরি সাবমেরিন ক্যাবল যোগাযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, ভারতীয়রা বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক নজরদারি চালাচ্ছে এবং বাংলাদেশ থেকে সন্দেহভাজনদের অপহরণ করছে। তিনি বলেন, ভারতের ইন্ধনে দাড়িওয়ালা যেকোনো লোকের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ইসলামের অনুসারী সবাই ঢালাওভাবে বিষোদগারের শিকার হচ্ছেন এবং তাদের তালেবান বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
ইকোনমিস্টকে দেয়া বক্তব্যে গওহর রিজভী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ভারতীয় কোনো ধরনের উপসি'তি সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণভাবে অনবহিত’। তিনি অবশ্য এটুকু স্বীকার করেন, শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ইসলামপন'ীদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলো উচ্ছেদের ভারতীয় দাবিও পূরণ করা হয়েছে এবং ভারতে বিচার করার জন্য বাংলাদেশী নয় এমন অনেককেও সীমান্তের ওপারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আরো বাড়বে। তিন বছর আগে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ৮১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ শতাংশ। ৮ জানুয়ারি ডেইলি স্টারে প্রকাশিত জনমত জরিপে তথ্যটি দেয়া হয়েছে। এতে ৭৪ শতাংশ জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়কব্যবস'াকে বাতিল করে সংবিধান সংশোধনীকে তারা ঠিক মনে করেন না। আর এটি সি'তিশীলতা নস্যাতের আশঙ্কাও সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ৪০০ বছর আগে মোগল সম্রাটরা এই ভূখণ্ড শাসন করার সময়ে বেশ হিমশিম খেয়ে বাংলাকে ‘গোলযোগপূর্ণ ভূমি’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এত দিনে পরিসি'তির পরিবর্তন হয়েছে সামান্যই।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন